Home » Featured » প্রিয় রুনা লায়লা- লন্ডনে আপনার অনুষ্ঠান এবং কিছু কথা

প্রিয় রুনা লায়লা- লন্ডনে আপনার অনুষ্ঠান এবং কিছু কথা

সৈয়দ শাহ সেলিম আহমেদ-লন্ডন থেকে

 

রুনা লায়লা- একজন খ্যাতিমান গুনী শিল্পী, বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের সঙ্গীত জগতকে এক উঁচু মাত্রায় নিয়ে গেছেন সন্দেহ নেই। জাতীয় আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অনেক নামী দামী পুরুষ্কারেও ভুষিত হয়েছেন এই গুনী কিংবদন্তী শিল্পী। এরকম একজন গুনী শিল্পীর সান্নিধ্য পাওয়া সত্যি অনেক সৌভাগ্যের ব্যাপার। বাংলাদেশের সঙ্গীত জগতে বিশাল এক অবদান আজকের এই কিংবদন্তীতুল্য শিল্পী রুনা লায়লার।সেজন্যে নমস্য আপনাকে। হ্নদয়ের সবটুকু শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার অর্ঘ আপনার করকমলে।আপনি আমাদের গর্ব, আমাদের অহংকার। লন্ডনের সিটি প্যাভিলিয়নে এবং আপনার প্রেস কনফারেন্সে নিজে দেখেছেন উপচে পড়া ভীড় আর বাঙালি ললনা আর ছেলেদের মন প্রাণ উজাড় করে নেচে গেয়ে আপনার সাথে কেমন বিমোহিত ও উত্তাল হয়েছেন, অনেক আবেগে আপ্লুত হয়ে আপনাকে সালাম করে বিনম্র শ্রদ্ধা জানিয়েছেন- যা আপনার প্রাপ্য। সঙ্গীতের এক উজ্জ্বল তারকা খ্যাতির শীর্ষে আজও আপনি অবস্থান করছেন- আপনার খ্যাতি সেটাই নির্দেশ করে। আমৃত্যু আপনি সেই স্থানে, বাঙালির আদরের ভালোবাসার মণিকোঠায় আপনি থাকবেন সন্দেহ নাই।ডক্টর শেফ তথা কোলকাতার বাঙালি ডাক্তার প্রফেশনালরা আপনাকে লন্ডনে এনে বিরল এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন- সেজন্যে ধন্যবাদ তাদেরকেও।

 

০১)১৯৭০ সালের স্মৃতিতে হঠাত ফিরে যেতে ইচ্ছে করছে– আমার প্রিয় কিংবদন্তী এই শিল্পীর লন্ডনের কনসার্ট, যা ফেস বুকের মাধ্যমে দেখার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। কারণ আমি রুনা লায়লার কনসার্টে যাওয়ার আগ্রহ পাইনি। নিজেকে অনেক বুঝিয়েছি- অনেক প্রশ্ন করেছি, রুনা লায়লার সাথে ব্যক্তিগতভাবে তিন মাস আগে কথাও হয়েছে, কনসার্ট নিয়ে, এমনকি এই কনসার্টের প্রথম প্রমো চ্যানেল আইতে আমিই করেছিলাম।তারপরেও কেন জানি যেতে পারিনি। পূর্ব প্রজন্মের অনেকের কাছ থেকে যে তথ্য পেয়েছিলাম- সেকারণে যাওয়ার আগ্রহ হয়নি।যদিও ঢাকায় সাংবাদিকতার হাতে খড়ির সুবাদে সামনাসামনি অনুষ্ঠান দেখার সৌভাগ্য হয়েছিলো।ফিরে আসি সেই ৭০ সালের স্মৃতির পাতায়। তখনও লন্ডনে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তি যুদ্ধের আন্দোলনে উত্থালভাব আসেনি। লন্ডনের প্রবাসীরা সেদিন রুনা লায়লার মতো তখনকার সব চাইতে জনপ্রিয় শিল্পীর কাছে গিয়েছিলেন- লন্ডনে বাংলাদেশের জন্য একটা কনসার্ট করার জন্য। উদ্যোক্তাদের ধারণা ছিলো- রুনা লায়লার মতো খ্যাতিমান শিল্পীকে দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে লন্ডনের মতো জায়গায় কনসার্ট হলে সেটা হতো অসম্ভব এক সাড়া জাগানো অনুষ্ঠান। বিশ্ব মিডিয়ায় সেটা ব্যাপক সাড়া পড়ে যেতো। উদ্যোক্তাদের রুনা লায়লা জানিয়ে দিয়েছিলেন- তিনি বাঙালিদের জন্য গান করেননা। উদ্যোক্তারা সেদিন আহত হয়েছিলেন সত্য। কিন্তু এই বাঙ্গালিরা আমার প্রিয় শিল্পী রুনা লায়লাকে মুকুটহীন সম্রাজ্ঞী বানিয়ে রেখেছেন। লন্ডনের সিটি প্যাভিলিয়নে সেটাও তারা দেখিয়ে দিয়েছেন।অথচ রুনা লায়লা তার অধিকাংশ সময়ে(ফেস বুকের কল্যাণে পাওয়া) উর্দু ও হিন্দি ভাষায় কথা বলেছেন। যুক্তিসঙ্গত কারণে বলতেই পারেন। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শিল্পী আন্তর্জাতিক ষ্টেজে বিভিন্ন ভাষায় কথা বলতেই পারেন। কিন্তু অধিকাংশ দর্শক বাঙালি- বাঙালি শিল্পী হিসেবে গর্ব করে রুনা লায়লার মতো জাতীয় শিল্পী উর্দু হিন্দির সাথে সমানভাবে যদি বাংলা ভাষায়ও কথা বলতেন বুকটা গর্বে ভরে উঠতো।শিল্পীর কোন সমালোচনা নয়, বরং জাতীয় পর্যায়ে মুকুটহীন সম্রাজ্ঞীর আসনে বসা শিল্পীর কাছ থেকে সেটা আশা করতেই পারি। কেননা, শিল্পীকে বাংলাদেশ টেলিভিশন এবং বাংলাদেশ সরকার শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা একইসাথে সম্মানদেখিয়ে একটি কক্ষ বরাদ্ধ করে দিয়েছেন- যেখানে দরজায় লেখা আছে ম্যাডাম রুনা লায়লা। এহেন জাতীয় পর্যায়ের এই শিল্পী যখন বাইরে যাবেন, তখন গোটা বাংলাদেশ তার সাথে যাবে সেটাই স্বাভাবিক। মুক্তিযুদ্ধের অগনিত শহীদ জায়া জননী ভাই বোন আর প্রিয় মাতৃভুমির বাংলা মা- যাবে সেটাইতো স্বাভাবিক।

 

০২) রুনা লায়লার অনুষ্ঠানের টিকেট নিয়েও হলো অনেক কেচ্ছা তেলেসমাতি। রুনা লায়লারমতো  জাতীয় শিল্পী লন্ডনের মাটিতে অনুষ্ঠান করবেন, স্বাভাবিকভাবেই লন্ডনের বাঙালি খ্যাতিমান ব্যাক্তিত্বরা আমন্ত্রিত হবেন- এমন আশা করাটা খুব একটা অন্যায় নয়। কেননা রুনা লায়লা শুধু একজন শিল্পী নন- গোটা বাংলাদেশের সম্পদ। যারা রুনা লায়লাকে নিয়ে কিংবা রুনা লায়লা নিজে যখন করবেন, তখন কিছু নির্দিষ্ট বাঙালি কমিউনিটির সম্মানিতদের আমন্ত্রিত রাখা সৌজন্যতা শুধু নয়, দেশ মার্তৃকার গুনী শিল্পীর সম্মান ও উচ্চতার কথা বিবেচনায় নিয়ে এমনটা করাই যেতো। ব্রিটেনের বিভিন্ন মিডিয়ায় যেভাবে খুজে খুজে টিকেট আবদার করে নিয়ে আসা- অনেকটা দৃষ্টিকটু লেগেছে। তাছাড়া কোলকাতার বাঙালি ভাই বোনদের কাছ থেকে মিডিয়ার কর্ণধারদের পরিচয় দিয়ে টিকেট চেয়ে আনাটাও কতোটুকু যুক্তিসঙ্গত- একবারের জন্য কেউ ভাবেননি। টিকেট যেমন আবদার করে নিয়ে আসা, সেই সাথে অনূষ্ঠান রেকর্ড আর অনুষ্ঠানের উপস্থাপনার জন্য, বক্তব্য দেয়ার জন্য বাহানা- সব কিছুতেই চাওয়া পাওয়ার বিষয় কেন থাকবে ? কোলকাতার বাঙালি ভাই বোনেরা না চিনতে পারে লন্ডনের বাঙালি কমিউনিটির বা মিডিয়ার কর্ণধারদের, রুনা লায়লার কী চিনতে বাধা আছে নাকি ?মিডিয়ার লোকজনদেরও যে দুষ নেই তা বলবোনা। চেয়ে নিবেন কেন ?

 

০৩) তবে তার মধ্যে যে ব্যতিক্রম বাঙালি নেই– সেটা বলবোনা। অনেক বাঙালি ভাই বোনের সাথে কথা হয়েছে, জিজ্ঞেস করেছি, এতোবড় অনুষ্ঠান হতে যাচ্ছে, আপনারা যাচ্ছেন না কেন ? নাকি টিকেট পাননি বা নিমন্ত্রন পাননি। অন্তত দুজনকে পেয়েছি, যাদের মধ্যে অফ এয়ারে একজন জানিয়েছেন- যার গান আমরা বাজাই সারাটি জীবন অকাতরে, তার গান দেখার জন্য কেউ আমাদেরকে বলার প্রয়োজন মনে না করলে যাই কী করে ? তবে চ্যানেল আইয়ের এমডি রেজা আহমেদ ফায়সাল চৌধুরী শোয়েবকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, রুনা লায়লা আমাদের বাঙালির সম্পদ, বাঙালির অহংকার। সেই শিল্পী আমাদের মিডিয়ার লোকজনকে না চেনারতো কারণ দেখিনা। চ্যানেল আই বাংলাদেশে রুনা লায়লাকে বিশাল সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছে। সুতরাং চ্যানেল আই লন্ডনে আছে কিনা সেটাতো আমাদের চাইতে রুনা লায়লা ভালো করেই জানেন। আমি বিনয়ের সাথে বললাম- আপনার জন্য ভিআইপি টিকেট আয়োজকরা দিয়েছেন- আপনি যান। শোয়েব ভাই বিনয়ের সাথে ভিআইপি টিকেত ফিরিয়ে দিয়ে বললেন, রুনা লায়লার অনুষ্ঠান- আপনি দিবেন কেন আমাকে ? যুক্তি অকাট্য।

 

০৪)আমি আগেই বলেছি, রুনা লায়লা আমাদের জাতির গর্ব, অহংকার। তার প্রতিটি কাজ, প্রতিটি পদক্ষেপ গোটা বাংলাদেশের সাথে জড়িত।রুনা লায়লার অনুষ্ঠানে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের শত শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা আর ১৯৫২ সালের বাংলা ভাষার জন্যে পাকিস্তানী হায়েনাদের বুলেটের মুখে প্রাণ বিসর্জন দেয়া সালাম, বরকত, সহ অগনিত শহীদের প্রতি শ্রদ্ধার ছিটে ফোটা নিদর্শন স্বাভাবিকভাবে বেশীভাবে আশা করি। একই সাথে আশা করি, জীবনে অনেক টাকা সম্পদ খ্যাতি এই শিল্প এবং সঙ্গীত আপনাকে এনে দিয়েছে- মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে মনের মণিকোঠায় আমৃত্যু থাকার জন্য বাঙালি মিডিয়ার সাথে ব্যারিয়ারবিহীন অবস্থায় মিশুন- পড়ন্ত বেলায় জনতার ভালোবাসায় সিক্ত হউন, সেটাই চাই। সেই সাথে কোলকাতার চ্যারিটির জন্য কাজ করার পাশাপাশি বাঙালি গরীব অসহায় নিঃস্ব ছেলে মেয়েদের সাহায্যার্থে চ্যারিটির কাজে নিজেকে একটু বিলিয়ে দিন- দেখবেন মনে ও আত্মায় বিশাল এক শান্তি পাবেন- যা তুলনাহীন। প্রিয় রুনা লায়লা আপনাকে লন্ডন থেকে অভিনন্দন।

 

salim932@googlemail.com

25th Sept 2016, London.

 

Please follow and like us:
Pin Share

Follow by Email
YouTube
Pinterest
LinkedIn
Share
Instagram
error: Content is protected !!