Home » কলাম » জাতি বিধ্বংসী এই গেইমের শেষ কোথায় ?

জাতি বিধ্বংসী এই গেইমের শেষ কোথায় ?

জাতি বিধ্বংসী এই গেইমের শেষ কোথায় ?

সৈয়দ শাহ সেলিম আহমেদ

আমি সারা বিশ্বের কাছ থেকে হাত পেতে নিয়ে আসি, চাটার দল সব সব খেয়ে ফেলে- বঙ্গবন্ধু। রাজনীতিকে আমি রাজনীতিবিদদের জন্য কঠিন করে দেবো- জিয়া । বাংলাদেশে সবই সম্ভব- এরশাদ

তিন সময়ের তিন বিখ্যাত ব্যক্তিত্বের, যারা আবার বাংলাদেশের রাজনৈতিক ঘটনা প্রবাহের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত, এক কথায় বলতে গেলে বাংলাদেশের উত্থান-পতন, সৃষ্টি-লয়-ক্ষয়িষ্ণু অবস্থান ও প্রেক্ষিতের সাথে উপরে উদ্ধৃত তিন মহানায়ক, তিন রাষ্ট্রনায়কের নাম বিশেষ এক অধ্যায় হিসেবে ইতিহাসের পাতায় লিখিত রয়েছে এবং বলা যায় বাঙালি জাতির ইতিহাস যতদিন থাকবে, এই তিন মহানায়কের নাম একের সাথে অপরের নাম আপনা থেকে, একে অপরের সাথে লেগেই থাকবে। তার অর্থ এই নয় যে, এখানে একজনের সাথে আরেকজনের তুলনীয় করা হচ্ছে। তা মোটেই নয়, বরং অবস্থানগত রাজনৈতিক সাযুজ্য তুলে ধরতেই তিনজনের বিখ্যাত তিনটি উক্তি এখানে উল্লেখ করলাম, যা আজকের রাজনীতির ঘটনা প্রবাহে অনেক অজানা সূত্র একই অবস্থায় গ্রথিত।

আজকের বাংলাদেশের বিরাজমান ক্রমবর্ধমান সহিংস অবস্থা, একে অন্যের সাথে অসভ্য ও অসামাজিক আচরণ, পুলিশের মারমুখী ও বেপরোয়া আক্রমণ, জামায়াত-শিবিরের তাণ্ডব, গুম, গুপ্ত হত্যা, বিরোধী রাজনীতি দমনের নামে গুলি,টিয়ার-শেল নিক্ষেপ, বিএনপি অফিসে পুলিশের ধ্বংসযজ্ঞ, শাহবাগের প্রজন্ম চত্বর থেকে যে আশার আলো সঞ্চারিত হয়েছিলো, পর্যায়ক্রমে সেই মঞ্চ থেকে সুচতুরতার সাথে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করার সুদূর পরিকল্পনা এবং তাকে ঘিরে আলেম-ওলামা-মাশায়েখদের কর্মসূচী ঘোষণা- যা উপরের তিন মহানায়ক-নায়ক, রাষ্ট্র নায়কদের বিখ্যাত সেই সব উক্তির কথাই বার বার মনে পড়তে থাকে। ভাবছি, ১৯৭১-৭২-৭৩ সালের বাংলার অবিসংবাদিত মহানায়ক বঙ্গবন্ধু মুজিবের বড় আক্ষেপের সাথে চাটার দল সব খেয়ে ফেলে সেই উক্তি, আর ১৯৭৮-৭৯ সালের মরহুম রাষ্ট্রপতি, আমি মেজর জিয়া বলছি— সেই মেজর জিয়ার রাজনীতি কঠিন করে দেয়ার উক্তি আর ১৯৮৩-৮৪-৮৫ সালে সাবেক রাষ্ট্রপতি হোসেন মোহাম্মদ এরশাদের এদেশে সবই সম্ভব উক্তির বাস্তবতার নির্যাস আর সার্থকতার এক সফল রূপ আজো বাংলার রাজনীতির ভাগ্যাকাশে কতো সফলতার সাথে আষ্টে-পিষ্টে জড়িয়ে আছে।৪২ বছরের বাংলাদেশের বর্তমান হিংস্র রাজনৈতিক ঘটনা প্রবাহের দিকে তাকালে মনে হয় মুজিব-জিয়া-এরশাদ তিনি জনই ঋষির মতো অসাধারণ মন্তব্য করে বাঙালির ললাটে একে দিয়েছিলেন-যা আজো বড় বাস্তব এবং নির্মম সত্য।

বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক সহিংসতা ও খুন-খারাবীতে বাঙালি স্বাধীনতার ৪২ বছর পরেও প্রতি নিয়ত ভালোবাসার মতো স্বাধীনতাকে বিসর্জন বা হারাতে হচ্ছে। রাজধানী শহর থেকে জেলা শহর পর্যন্ত প্রতিটি শহরে ঘর থেকে বের হওয়ার সময় প্রত্যেক বাঙালিকে নিজের, পরিবারের ও সমাজের বুকে লালিত ভালোবাসা এবং মৌলিক ও মানবিক স্বাধীনতা ও মূল্যবোধ হারানোর ও রক্ষার  নিরন্তর সংগ্রাম করতে হচ্ছে।রাষ্ট্রবিজ্ঞানী হেনরী ডব্লিউ নেভিনসন যেমন করে বলেন, ভালোবাসার মতো স্বাধীনতার জন্য আমাদের নিরন্তর সংগ্রাম করতে হয়; ভালোবাসার মতো স্বাধীনতাকেও প্রতিদিন নতুন করে জয় করে নিতে হয়। আমরা সর্বদা ভালোবাসার মতো স্বাধীনতাকেও হারাচ্ছি, কারণ প্রত্যেক বিজয়ের পর আমরা ভাবি আর কোন সংগ্রাম ছাড়াই বিজয়ের ফল স্থিরচিত্তে উপভোগ করা যাবে। আমাদের বাংলাদেশের বিরাজমান রাজনৈতিক সংঘাত, ক্রমবর্ধমান খুন-খারাবী, অসহিঞ্চু  দম বন্ধ হওয়া রাজনৈতিক গুমট এই পরিবেশ হেনরী নেভিনসনের এই বিখ্যাত উক্তি ও মূল্যায়নকে আরো প্রকটভাবে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় আর তাচ্ছিল্য করে বলে উঠে… আসলে বাঙালির স্বাধীনতার সংগ্রাম কখনো শেষ হবার নয়। কারণ স্বাধীনতা আজ পুলিশের বুটের তলায় যেমন পিষ্ট, একইসাথে বাসের আগুনে জ্বলসে-পুড়ে মরা কাঠ হওয়া মানুষের কঙ্কাল দেহ, কিংবাতো বিবেকহীন ক্ষমতার অন্ধমোহে আবিষ্ট অর্বাচীন পাষণ্ড রাজনৈতিক নেতার খিস্তি-খেউরের ঠোটের চিপায় আবদ্ধ, পল্টনে, বায়তুল মোকাররমে,কানসাটে,রাজশাহীর তাণ্ডবে বধির বিবেক বন্দী অবস্থায় ল্যাংড়া-আতুর হয়ে আছে। স্বাধীনতা আজ গণতন্ত্রের এক নায়কী রূপে ডাস্টবিনের উচ্ছিষ্ট খাবারের মধ্যে, স্বাধীনতা আজ রাজাকার,নব্য রাজাকারের রূপকী উৎসবের মাতাল গরম হাওয়ায়, স্বাধীনতা আজ বিশ্বজিতের আত্মা চাপাতির কোপে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে নির্মম আকুতির মধ্যে ঘুর-পাক খাচ্ছে, স্বাধীনতা আজ বিরোধী মত ও পথের দমন-পীড়নের মধ্যে রক্তগঙ্গা বইয়ে দেয়ার উন্মত্ত প্রতিযোগিতার মধ্যে হাবি-ডুবু খাচ্ছে। আসলেই নেভিনসনের ভাষায়, স্বাধীনতার যুদ্ধ কখনো শেষ হয়না, কারণ এ এক নিরন্তর সংগ্রাম ।          

১১ মার্চ ২০১৩ বাংলাদেশের বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলের বদৌলতে সরাসরি সম্প্রসারিত অবস্থায় পুলিশ কর্তৃক বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপির অফিসের ভিতরে ঢুকে নারকীয় পন্থায় চোর-ডাকাত ধরার মতো হাতুড়ী দিয়ে তালাবন্ধ দরজা ভেঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের একে একে কারো কলারে, কারো পেছনে ধরে, যে ভাবে গাড়ীতে বা প্রিজন-ভ্যানে উঠানো হলো, তা কি কোন গণতান্ত্রিক সরকারের অধীনে কোন রাষ্ট্রীয় সংস্থার দ্বারা কাম্য হতে পারে? আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় বিশাল ম্যান্ডেট নিয়ে গণতান্ত্রিক পন্থায় ক্ষমতায়  এসে অগণতান্ত্রিক পন্থায় দেশ পরিচালনার একের পর এক যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে চলেছে, তা আমাদের দীর্ঘ সংগ্রাম আর আন্দোলনের দ্বারা অর্জিত আঁতুড় এই গণতন্ত্রকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে, তা নিয়ে দেশের সাধারণ জনগণ আজ বড় শঙ্কিত। আওয়ামীলীগ বড় বেশী অঘটন ঘটাতে ও দৃষ্টান্ত স্থাপনে ওস্তাদ।না হলে সরকারের উপর মহলের ইঙ্গিত ও পার্মিশন ছাড়া কোন অবস্থাতেই পুলিশের পক্ষে এতো ন্যাক্কারজনকভাবে একটি বৃহৎ বিরোধীদলের অফিসে ঢুকে জোর-জবরদস্তী করে দরজা ভেঙ্গে নেতা-কর্মীদের ধরে নিয়ে প্রিজন-ভ্যানে উঠিয়ে নিয়ে যেতে পারতোনা।গণতান্ত্রিক সরকারের দাবীদার সরকারের কাছ এই রকম তাণ্ডব কোন অবস্থাতেই সভ্য সমাজ আশা করেনা।মহাজোটের শরীক হোসেন মোহাম্মদ এরশাদ দলীয় কার্যালয়ে এই রকম পুলিশী তাণ্ডব সমর্থন না করার কথা দ্ব্যার্থহীন ভাষায় বলেছেন, যদিও এরশাদ সাহেবের কথা ও কাজের মধ্যে আজকাল খুব একটা মিল পাওয়া যায়না।তারপরেও মন্দের ভালো, অন্তত খারাপকে খারাপ হিসেবে একবারের জন্যে হলেওতো তিনি উচ্চারণ করেছেন। সেজন্য তাকে ধন্যবাদ।একই চিত্র অন্যভাবে হলেও আমরা বিএনপির আমলে দেখেছি, তাই বলে কি বিএনপির খারাপ দৃষ্টান্তকে আওয়ামীলীগ চর্চা করে নতুন প্রজন্মকে বিশাল ম্যান্ডেট দেয়ার পুরুস্কার দিবে?যদি তাই হয়, তাহলে জনকল্যাণ কি ভাবে হবে?

বিএনপি অফিসে পুলিশের তাণ্ডবের পরে টেলিভিশন সংবাদ মারফত ১৪দলীয় জোটের সংবাদ সম্মেলন দেখছিলাম। অহেতুক বক্তব্য দিতে পারঙ্গম মোহাম্মদ হানিফ অবশ্য এইবার বেশ শালীন ভাবে রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন, যা পত্র-পত্রিকায় এসেছে পরবর্তীতে, হানিফের শালীন রাজনৈতিক বক্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। কিন্তু সবকিছু ওলট-পালট করে দিয়ে একেবারে লাজ-লজ্জা ভুলে গিয়ে মোহাম্মদ নাসিম এবং পরবর্তীতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ম,খা, আলমগীর যেভাবে প্রেসের সামনে ঔদ্ধত্যপূর্ণ অশালীন অরাজনৈতিক সুলভ বক্তব্য দিয়েছেন, তা শুনে স্রোতা মাত্রই লজ্জায় মুখ ঢাকার পথ খুঁজেছেন। ওয়ান-ইলেভেনের সময় এই নাসিম এবং ম,খা,আলমগীরের জেল-জরিমানার ফলে সেদিনের তাদের আকুতি জনতার দৃষ্টি কেড়েছিলও, কিন্তু তাদের অসৌজন্যমূলক, অশালীন, পেশীসূলভ, অরাজনৈতিক বক্তব্য শুনে দেশ থাকা অনেক নিরীহ জনগণ শিউড়ে উঠেন, ইতারে সেই সব উষ্মা ও আতংকের খবর টেমসের পারে প্রতিনিয়ত চলে আসতেছে।মোহাম্মদ নাসিম এবং ম,খা,আলমগীর অত্যন্ত অভদ্র জনিত ভাষায় বিরোধী রাজনৈতিক দলকে যখন কটাক্ষ করেন, তখন নিজেদের অজান্তে তারা তাদের চরিত্র জনগণের সামনে খোলাসা করে চলেছেন। এইসব নেতারা যদি এসির ঠাণ্ডা বাতাস থেকে বেরিয়ে রাস্তায় গরম হাওয়ায় নিজেদের বক্তব্যের সত্যাসত্য যাচাই করে নিতেন, জাতি হিসেবে যেমন আমরা উপকৃত হতাম, একইসাথে দল হিসেবে আওয়ামীলীগও অনেক উপকৃত হতো।

পৃথিবীর কোন সভ্য, ডেমোক্রেটিক দেশে এই রকম খোঁড়া এবং বানানো ভুয়া যুক্তি উপস্থাপন করে প্রকাশ্য তালা ভেঙ্গে, বাথরুম থেকে শুরু করে সব কটা রুম একেবারে তছ-নছ করে নেতা-কর্মীদের আটক করার কোন নিয়ম কোথাও দেখা যায়নি, ব্যতিক্রম শুধু বাংলাদেশ।এই রকম অবস্থা ও ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে কি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কায়েম করা যাবে কিনা সন্দেহ। আওয়ামীলীগ বর্তমানে সভ্যতার সকল রীতি-নীতি ভুলে গিয়ে বিরোধীমত দমন-পীড়নের যে পন্থা অবলম্বন করে দেশ চালাচ্ছে, তা মোটেই গণতন্ত্রের জন্য শুভ লক্ষণ নয়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা গণতন্ত্রের জন্য এটাকে একটা অশনি সংকেত হিসেবে দেখছেন।

০২) বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক ঘটনা প্রবাহে আরো কতো যে প্রাণহানি হবে, তা কেবল আল্লাহ পাকই জানেন। রাজনৈতিক এই বিশৃঙ্খলার সুযোগে একশ্রেণীর অতি উৎসাহী পুলিশের ভূমিকা বেশ বড় আকারের প্রশ্নবোধক চিহ্ন হয়ে আছে। ১৮দলের বিক্ষোভের সময় তিনজন নারী সাংসদকে যেভাবে হেনস্থা করে পুলিশের ভ্যানে উঠিয়ে নেয়া হলো, তারপর একজন নারী সাংসদকে যেভাবে চলন্ত গাড়ী থেকে ধরতে না ধরতে যেন উনি পড়ে গেলেন রাস্তায়-এমন ভাবে ফেলে গাড়ী হুট করে চলে গেলো- তা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।এইভাবে দিনে-দুপুরে নারী সাংসদদের রাস্তায় শুয়ে থাকা, ঠেনে হিঁচড়ে গাড়ীতে উঠানো-এইসব নোংরা অপকৌশল কে বা কারা করতে পুলিশকে নির্দেশ করেছে, তা অবশ্যই খতিয়ে দেখা দরকার। কারণ এটাকে যেন-তেন সাধারণ ব্যাপার বলে উড়িয়ে দেবার অবকাশ নেই। প্রকাশ্যে নারী সাংসদদের এতোবড় অপমান, অথচ বিবেকবান রাজনৈতিক নেতা-নেত্রী, সাংসদ আর খোদ মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানের নীরবতা-অবাক না হয়ে পারিনা। আমরা কি ক্রমাগত পশু রাজত্বের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি?আজকে এরা বিরোধী সাংসদ বলে হেনস্থা করলে, কাল সেটা যে আমার উপর আসবেনা, তা কি করে হয়? এই রকম অসভ্য সংস্কৃতি চালু করার ম্যন্ডেটতো জনগণ মহাজোটকে দেয়নি।

ইদানীং আওয়ামীলীগের নেতাদের বক্তব্য বড় অশালীন ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ। বিরোধী কোন মতকেই যেন-তেনভাবে ওরা একেবারে মাটিচাপা দেয়ার জন্যে ওটে-পড়ে লেগে আছে। এই অবস্থায় কেউ সরকারের কোন সমালোচনা করলে বা কোন প্রকারের স্বাভাবিক বিরোধিতা করলেই তার গায়ে সহজ এক তকমা রাজাকারের সহচর, নব্য রাজাকার সহ উদ্ভট সব তকমা গায়ে লাগিয়ে দেয়া হয়। এর নামতো গণতন্ত্র নয়। এইভাবে গণতন্ত্র কোনভাবেই বিকাশলাভ করতে পারেনা। গণতন্ত্র একটা চলমান প্রক্রিয়া এবং তার জন্য চাই উপযুক্ত পরিবেশ, আর সরকারের কাজ হলো সেই সুন্দর পরিবেশ তৈরি করে দেয়া। আওয়ামীলীগ সরকার তা না করে বরং সারাদেশকে এক ধরনের আতংক আর জিম্মি অবস্থার মধ্যে রেখে চলেছে।মানুষ আজ বড় শঙ্কিত।

এদিকে বিএনপি এবং তাদের মিত্রদের ক্রমাগত হরতাল আহবান দেশকে ভয়াবহ এক অবস্থার মধ্যে নিপতিত করে চলেছে।ঘন-ঘন হরতাল দেশের অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য কোনভাবেই সহায়ক নয়। আওয়ামীলীগের ক্রমাগত অসহিঞ্চু আচরণ এবং বিএনপি সহ বিরোধীদের একগুঁয়েমির জন্য বাঙালি জাতিকে আরো কতো যে খেসারত দিতে হবে, তা কেবল মাত্র সময়ই বলে দিবে।

আওয়ামীলীগ-বিএনপি নিজেদের রাজনৈতিক দাবী-দাওয়া নিয়ে কৌশল-পাল্টা-কৌশল করবে, দেন-দরবার করবে, রাজনীতির মাঠ গরম করে রাখবে, মিছিল-মিটিং করবে, এটাই স্বাভাবিক। তাই বলে এই রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড করতে গিয়ে একে অন্যের সাথে হিংস্র, বন্য পশুর মতো আচরণ করবে, গুয়েবলসীয় থিওরি সাজিয়ে জনগণকে ধোঁকা দিবে, বাসে, টেম্পো, সিএনজিতে আগুন দিবে, হত্যা-অগ্নিসংযোগ করবে, গাড়ী ভাংচুর করবে, জোর-জবরদস্তী করবে- এর নামতো গণতন্ত্র নয়, এর নামতো রাজনীতি নয়।আওয়ামীলীগ-বিএনপি,জামায়াত, জাসদ,ওয়ার্কাসপার্টি, সব কটা রাজনৈতিকদলই সমান অপরাধে অপরাধী।এই সব অপসংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে না আসলে আমাদের জাতির কপালে দুর্ভোগ রয়ে যাবে বৈ কমবেনা। আর রাজনৈতিকদলগুলোর বক্তব্য, বিবৃতি, কর্মকাণ্ড দেখে মনে হয়না, তারা এই সব নোংরা পেশী শক্তি থেকে বেরিয়ে এসে সুস্থ প্রতিযোগিতামূলক রাজনৈতিক চর্চা করবে? সুস্থ, সুন্দর, প্রতিযোগিতামূলক রাজনীতি চর্চা করলে দেউলিয়া, অশিক্ষিত আর সন্ত্রাসী রাজনীতিবিদদের রাজনীতির মাঠ থেকে বিদায় নিতে হবে। এটা তারা ভালো করে বুঝে বলেই রাজনীতির ময়দানে পেশী আর উচ্ছৃঙ্খল কর্মকাণ্ড চালু রেখেছে। কিন্ত এভাবে আর কতো?

0৩) এক সময়ের ডাক সাইটে ছাত্রনেতা, স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সাবেক ছাত্রনেতা ও আজকের অভিজ্ঞ ব্যবসায়ী নূরে আলম সিদ্দিকীর একটা লেখা মানব জমিনে পড়ছিলাম। নূরে আলম সিদ্দিকী একজন মনে-প্রাণে আওয়ামীলীগ ঘেঁষা লোক, যদিও মাজে-মধ্যে সত্য কথনের জন্য আওয়ামীলীগ হাই কমান্ড তার উপর নাখোশ হয়ে থাকেন। নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন খুব সুন্দর ভাবে, কাব্যিক ভাষায় ছন্দ মিলিয়ে বক্তব্য দেয়ার ঝুড়ি মেলা ভার এই প্রাক্তন ছাত্রনেতার। বাস্তবতার পীঠে অনেক সময় দলীয় আনুগত্যের কারণে(যদিও তিনি প্রকাশ্যে কোন দল করেননা, তথাপি নিজেকে আওয়ামীলীগার ও বঙ্গবন্ধুর একনিষ্ঠ সৈনিক দাবি করেন)যুক্তির বেড়া জালে সত্যকে অনেক সময় চেপে যাওয়ার দুর্দমনীয় এক সাহসী উচ্চারণের নাম নূরে আলম সিদ্দিকী। তবে তিনিও বেশ যুক্তি সহকারে সত্য অকপটে স্বীকার করে নিয়েছেন, বলা যায় নিজের মতামত খুব স্পষ্টভাবে মানব জমিনে তুলে ধরেছেন।এখানে আর তা পুনরুল্লেখ না করেই নূরে আলম সিদ্দিকীকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি, সত্য মত প্রকাশের জন্য।

একই কথা প্রযোজ্য মুক্তিযুদ্ধের আরো এক বীর সেনানী, বিখ্যাত কাদেরিয়া বাহিনীর প্রধান বীর মুক্তিযোদ্ধা কাদের সিদ্দিকী। কাদের সিদ্দিকীর রাজনৈতিক দর্শন ও ফেরারী রাজনৈতিক জীবনের প্রত্যাবর্তনের ব্যাপারে অনেকের প্রশ্ন ও দ্বিমত থাকতেই পারে, কিন্তু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তি সংগ্রামে কাদের সিদ্দিকীর অবদান অনস্বীকার্য, যা ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। এতে কোন সন্দেহ নেই। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নিষ্ঠুরভাবে শহীদ হওয়ার সময় ও পরে ৫৬ হাজারের বর্গমাইলের এমনকি নিরাপদ দূরত্বে প্রবাস থেকেও কারো বুকের এতোটুকু সাহস হয়নি প্রতিবাদ করার , সেখানে এই মুক্তিযোদ্ধা কাদের সিদ্দিকীই দেশের ভিতর থেকে প্রতিবাদই নয়, প্রতিরোধ পর্যন্ত গড়ে তুলেছিলেন। জীবনবাজী রেখে এই মুক্তিযোদ্ধার সেদিনকার ইতিহাসের পাতা উল্টে দেয়ার সেই সব ঘটনা প্রবাহ অনেকের কাছে আজো রোমাঞ্চকর ইতিহাস হয়ে আছে। আজকের প্রজন্ম  সেই সবের কিছুই যেমন দেখেনি, একইভাবে সত্যিকারের ইতিহাস না জানার কারণে দু-একটি সত্য বাক্য আওড়ানোর কারণে বাংলার এই শার্দূলকে রাজাকারের মতো ন্যক্কারজনক উপাধি দেয়ার মতো দুঃসাহস দেখানোতে জাতি হিসেবে আমরা যেমন লজ্জিত হই, একইসাথে একটি সুন্দর নয়া প্রজন্মের জাগরণী সম্মিলনী স্রোতকে কতিপয় অর্বাচীন ও হীনমন্যের রাজনৈতিক অতি বাম আর তথাকথিত অসাম্প্রদায়িকতার সস্তা(! সকল ক্ষেত্রে নয় এবং সকলের ক্ষেত্রে নয়, তারা শুধু যারা ভোটের বাক্সে জামানত হারাবেননা, নিজের ভোট ছাড়া পরিবারের আর কারো ভোটটি পর্যন্ত পাবেননা, জীবনে কখনো কেবলামুখী হয়ে সেজদা করেনি, তারা ) বুলি বা তকমা এঁটে দেয়ার হীন ষড়যন্ত্র, যা জাগরণ মঞ্চকে অতি সূক্ষ্মভাবে(মাফ করবেন, এই শব্দ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী থেকে ধার নেয়া) ব্যবহার করে গোটা সুন্দরের মঞ্চটিকে সিংহভাগ মুসলমানের দেশে আস্তিক-নাস্তিক বিভাজনের রেখা ঠেনে, গোটা দেশের জনগণ ও পরিস্থিকে এক অসহনীয় অবস্থার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। এই অবস্থা কি বাংলাদেশের স্থিতিশীলতার ও উন্নয়নের পথে সহায়ক নাকি অন্তরায় ?- আজ সময় এসেছে সকলকে সেই সব ভাববার। কেননা প্রতিনিয়ত হেইট(হেইট একধরনের ক্রাইম, আর ক্রাইমকে ক্রাইম হিসেবেই দেখা উচিৎ ) সমাজ ও রাষ্ট্রের বুকে ছড়িয়ে দিয়ে, একইসাথে রাষ্ট্র ও সমাজের বুকে ও পক্ষ থেকে হেইট লালন ও পরিচালন করে সমাজ ও রাষ্ট্রে কখনো শান্তি, স্থিতিশীলতা আনয়ন করা যায়না, সম্ভব নয়। আর দীর্ঘমেয়াদী হেইট ক্রাইম গোটা পরিস্থিতিকে ও আগামী দশকের প্রজন্মকে করে তুলবে আরো উগ্র, আরো হেইট এবং অসহিঞ্চু- যা আমাদের গোটা সমাজব্যবস্থাকে করে তুলবে এক অস্থিতিশীল, সমাজের বুকে নানা বিষ-বাষ্প, নানা অপকর্মই শুধু জন্ম দিবেনা, সমাজকে ভেঙ্গে-চুড়ে ছার-খার করে তুলবে, যাতে ফায়দা লুটবে আজকের তথাকথিত অ-জনপ্রিয় অতিবাম তাত্ত্বিক, অধার্মিক(বা বক ধার্মিক)নেতাদের। সুতরাং এখনি নিতে হবে দেশ ও জাতির স্বার্থে সঠিক সিদ্ধান্ত। আর কোন রাজনীতি-রাজনীতি ও ক্ষমতারোহনের গেইম খেলার সময় আর নয়। দুই রাজনৈতিক দল এবং দুই নেত্রী (কে কম-বেশী অপরাধ হিসেব-নিকেশ করে দেশের জনগণের কোন উপকার হবেনা)দয়া করে আলোচনার টেবিলে বসুন। দেশের সাধারণ জনগণের কথা একবারের জন্যে হলেও ভাবুন। আপনাদের দুজনের ও দুটি রাজনৈতিক দলের ক্ষমতার খেলায় গোটা বাংলাদেশের জনগণ কেন খেসারত দিবে? আপনারা দুজনে এবং আপনাদের দুই রাজনৈতিক দল দেশটাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন? জনগণের তা জানার অধিকার আছে।জবাব দিতেই হবে।

কিন্তু কে শুনবে কার কথা? একজন নিজেকে মুক্তিযুদ্ধের সোল এজেন্ট মনে করেন, আরেকজন নিজেকে গণতন্ত্রের একচ্ছত্র দাবীদার মনে করেন। তাদের সাথে আছেন তাদের সাঙ্গ-পাঙ্গ, তারাওতো কম যাননা। দু-নেত্রী যখন চোখ মুজে আরামে পেছেনে মনের রীল ঘোরান, তখন সেসব খুব আরামপ্রদভাবে উপভোগ করেন। এই আরাম- অসম্ভব এক সুখ এনে দেয় তাদের দেহ ও মনে, যা অন্য কেউ উপলব্ধি কিংবা অন্য কোন উপমা দিয়ে তুলনীয় হতে পারেনা। আর একশ্রেণীর বিদ্বান আর পণ্ডিত আর পেশাজীবীরা আছেন সেই সবের রসদ যোগাতে। এই মিলিত ভয়ংকর অপরাধীদের কারো কোন সন্তান দেশের কোন বিদ্যালয়, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মাদ্রাসায় পড়েনা। কারণ তাদের সন্তানেরা থাকে বিদেশের সুন্দর, উন্নত, নিরাপদ পরিবেশে। তাই তাদের এই দেশের লাখো-কোটি নিরন্ন জনতার সন্তানদের জন্য প্রকৃত মমতা, মহব্বত আর ভালোবাসা মেকী হতে বাধ্য। এই সহজ সত্য উপলব্ধি আমার দেশের খেটে খাওয়া মানুষের হলেও প্রকৃত দেশ প্রেমিক এবং সঠিক নেতৃত্বের অভাবহেতু তারা না পারছে উঠে দাড়াতে, না পারছে নিজের দক্ষতা যাচাইয়ের ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে।ফলে বাংলাদেশে অভাব-অনটন এবং অনাচার লেগেই আছে।

০৪) গণতন্ত্রের সূতিকাগার বলে খ্যাত ইংল্যান্ড, আমেরিকায় ব্লাসফেমী আইন, রাষ্ট্র ধর্ম, খ্রিষ্টীয় রীতি-নীতি পালনে ও লালনে তেমন কোন বাধ্য-বাধকতা যেমন নেই, তাই বলে কেউ কখনো খ্রিষ্টীয় ধর্ম কিংবা খ্রিস্টান ধর্ম চর্চা, রাষ্ট্রীয় ও সামাজিকভাবে পালনে কেউ কখনো আমাদের মতো উচিত-অনুচিত বা করা যাবে বা যাবেনা কিংবা রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন বা ব্যবহার করা যাবেনা, এমন কথা কেউ কখনো ভুলেও উচ্চারণ করাতো দূরে থাকুক, স্বপ্নেও কেউ ভাবেনা। খোদ খ্রিস্টান দেশে যদি তাদের নিজস্ব ধর্মীয় বিধি-নিষেধ সরকারিভাবে পালনে এমনকরে সমালোচনা না করা হয়, তাহলে শতকরা নব্বইভাগ মুসলমানের দেশে সরকারী হউক বা বেসরকারিভাবে হউক ধর্মীয় বিধি-নিষেধ পালন বা চর্চা কিংবা ছোট-খাট ইসলামী দল থাকলে কি এমন ক্ষতি হয়ে যায়, সেটা আমার বোধ গম্য নয়।জানাজা পড়তে, মসজিদে নামায পড়তে, কূলখানি করতে, মিলাদ করতে, মুসলমানি ও আক্কিকা করতে যদি মাওলানার দরকার পড়ে, তাহলে একজন মাওলানা নিরিবচ্ছিন্নভাবে ধর্মীয় বিধি-নিষেধ লালন-পালন করলে কি এমন ক্ষতি হয়ে যায়? বাঙালির হাজার বৎসরের সংস্কৃতিতে যদি ক্ষতি না হয়ে থাকে, তাহলে আজকের বাংলাদেশে কেন ক্ষতিকর হবে? ভারতের হিন্দুত্ববাদি দলের লাল কৃষ্ণ আদভানি, বালথেকারে, জগজীবন রাম,  স্ব-ঘোষিত নাস্তিক সালমান রুশদী থেকে শুরু করে কোরআন অবমাননাকারী মার্কিন পাগল ধর্মযাযক, এমনকি ডেনমার্কের সেই উন্মাদ কার্টুনিস্ট বা মিসরীয় বংশোদ্ভূত নকৌলা বাসেলী  পর্যন্ত নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে নিয়ে এতো নোংরা এবং অশ্লীল মন্তব্য করার দুঃসাহস দেখায়নি, অথচ মুসলমানের দেশে গণতন্ত্রের লেবাসে অবাধ মত-প্রকাশের তথাকথিত স্বাধীনতা ভোগ করে আমার নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিয়ে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে বক্তব্য প্রকাশ এবং তাকে ঘিরে নোংরা রাজনীতি-রাজনীতি খেলা, একইসাথে নারকীয় তাণ্ডব- সবই একই সূত্রে গ্রথিত, একই অপরাধে অপরাধী। আর ক্ষমতাসীন দায়িত্বশীল দল হিসেবে আওয়ামীলীগ এর দায় কিছুতেই এড়াতে পারেনা। এখানে হয় সরকার জ্ঞান-পাপী, নয় ভণ্ডামির আশ্রয় নিয়েছে, নয়তো কলকাঠি নেড়ে বাজারে ছেড়ে দিয়েছে, রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য। যেভাবেই হউক, এই ধরনের রাজনৈতিক গেইম দেশ ও জাতির জন্য মঙ্গলজনক নয়।নাটের গুরু হিসেবে এর দায়ে আসামীর কাঠগড়ায় একদিন দাড়াতে হবে অবশ্যই- সমাজের বুকে বিশৃঙ্খলা ও অনাচার সৃষ্টি ও ছাড়ানোর জন্য। সরকারের কাজ হলো দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন, ভালো কাজের সহায়ক ও মন্দ কাজের বিরুদ্ধে অবস্থান। কিন্তু সরকার এক্ষেত্রে দুপক্ষকেই সমান্তরালে ( ৭১ এর পরাজিত শক্তি জামাত সহ) এগিয়ে দিয়ে বল মাঠে ছেড়ে দিয়ে দর্শক ও কখনো কখনো সাক্ষী-গোপাল হয়ে থাকে। সরকারেরতো আর যাই হউক রেফারীর ভূমিকায় থাকা উচিৎ ছিলো। তা না করে সর্বনাশা আত্মঘাতী খেলা আজ দেশের ভিতরে ভাইয়ে-ভাইয়ের মধ্যে ব্রিটিশদের মতো সেই আদিম নীতি পুনরায় চালু করে দিয়ে নিজেকে আবার ক্ষমতার মসনদে কি করে নিয়ে আসা যায়- এই ধরনের জাতি বিধংসী খেলা কখনোই জনগণের জন্য কল্যাণকর নয়, বরং বিশৃঙ্খলা ও মারামারির বীজ বপন স্বার্থকভাবেই করে দিলো-বঙ্গবন্ধুর ভুলের খেসারত ৪২ বছর ধরে  জাতিকে বয়ে বেড়াতে হচ্ছে, শেখ হাসিনা সরকারের খাম-খেয়ালির রাজনৈতিক গেইম এই জাতির কপালে আগামী কয়েক দশক পর্যন্ত বয়ে বেড়াতে হবে, যদি না এখনো কোন মাহাথির অলৌকিকভাবে জন্ম  না নেন।

জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ: একটি সমীকরণ-

জামায়াত নিষিদ্ধে বিএনপির পাল্লা ভারী বৈ কমবেনা, আওয়ামীলীগ নীতি-নির্ধারণী সেকথা ভালো করেই জানে।আর জানে বলেই ত্রি-মুখী গেইম নিয়ে রাজনীতির মাঠ উচ্ছৃঙ্খল করে রেখেছে নিজেদের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার জন্যে।অতি সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত সিলেটে সাংবাদিকদের কাছে বলেছেন, সংবিধানে ধর্মীয় দল নিষিদ্ধের কোন বিধান নেই। এটা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ এক রাজনৈতিক বক্তব্য, যা পর্দার অন্তরালের কলকাঠি যারা নাড়া-চাড়া করছেন, তারাই এই বক্তব্য অর্থমন্ত্রীর জবানিতে জাতিকে অবহিত করিয়েছেন। তারা এক ঢিলে এখানে দুই পাখি মারার গেইম মাঠে ছেড়ে দিয়েছেন।যুদ্ধাপরাধীর বিচার যারা চাচ্ছেন, শাহরিয়ার কবির সহ প্রজন্ম চত্বর দিনরাত জামায়াত শিবির বন্ধের দাবী জানিয়ে আসছে। মানবাধিকার কমিশন বলছে, সরকারের নির্বাহী আদেশে জামায়াত শিবির বন্ধ করা যায়। সংবিধান বিশেষজ্ঞদের প্রায় সকলেই একই মত কিছুটা ভিন্ন মাত্রায় প্রকাশ করেছেন। আজকের নাগরিক সেমিনারে সকল বিশেষজ্ঞ এবং বক্তারা জামায়াত শিবির নিষিদ্ধের পক্ষে মতামত দিয়েছেন। দেখা যাচ্ছে, একদিকে জনমত জামায়াত শিবির নিষিদ্ধের পক্ষে, আওয়ামীলীগের নেতারাও মাঠে-ময়দানে সোচ্চার একই বক্তব্যে। কিন্তু তারপরেও জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ হচ্ছেনা কেন ? হবেনা। কারণ নিকট অতীতের ৭২-৭৩-৭৪ এর রাজনৈতিক ঘটনা প্রবাহ আওয়ামীলীগের কাছে খুব একটা সুখকর নয়। ঐ সময় যখন জামায়াত-শিবির পরাজিত শক্তি হিসেবে একেবারে নিষ্ক্রিয় এবং ক্ষয়িঞ্চূ এক রাজনৈতিক অস্তিত্বহীন দল ছিলো, তখন বঙ্গবন্ধু সরকারের পাহাড় সমান জনপ্রিয় সরকারের বিপরীতে তখনকার তরুণ প্রজন্মের আর মুক্তিযোদ্ধাদের সমন্বয়ে গঠিত প্রতিবাদী রাজনৈতিক সংগঠন জাসদের এবং গণবাহিনীর হাজারো লাখো তরুণের সাথে জামায়াতের শত-সহস্র রাজনৈতিক কর্মী মিশে গিয়ে আওয়ামীলীগ সরকারের বারোটা বাজিয়ে দিয়ে পতন ত্বরান্বিত করেছিলো। তাতে শত বিতর্ক এবং যুক্তি দাঁড় করানো হউক না কেন, বাস্তবে কিন্তু তাই ঘটেছিলো। আজকে যখন একই সময়ের তরুণ প্রজন্ম  আর জাতির দাবী অনুযায়ী জামায়াত-শিবির যখন নিষিদ্ধ করা হবে, তখন একই কায়দায় জামায়াতের হাজার হাজার সদস্য বিএনপি ও ১৮ দলের সাথে মিশে যাবে, এতে কোন সন্দেহ নাই ( কেউ কেউ ভুল পাল্টে আওয়ামীলীগে মিশে যাবে ক্ষণিকের জন্য। তাতে যে বিষফোঁড়া সমাজ ও রাষ্ট্রে প্রকাশ্যে ছিলো, তা আবার ছদ্মবেশে ক্ষত হয়ে অনাচার সৃষ্টি করবে আরো দুর্দমনীয়ভাবে)। তাতে আওয়ামীলীগের এতো সাধের, এতো পরিশ্রমের সাজানো নাটক আর খেলার রঙ্গ-মঞ্চ তছ-নছ হয়ে যাবে। আর আওয়ামীলীগ জেনে-শুনে তা হতে দিতে পারেনা। সে কারণে আওয়ামীলীগ নিজে থেকে বিএনপিকে সজোরে পরামর্শ দিয়ে চলেছে জামায়াতের সঙ্গ ছেড়ে সংলাপের পথে আসার জন্য। কিন্তু এইবার বিএনপি আওয়ামীলীগের পাতানো ফাঁদে পা দিবে বলে মনে হয়না।কারণ, যে যত কথাই বলুন, বিএনপি এখন ঘাত-প্রতিঘাতের পর অনেক সামলে এগুতে শুরু করেছে।সেজন্যে সেদিন টকশোতে সামসুজ্জামান দুদু ঠিকই বলেছেন, আমরা জামাতকে ছাড়ছিনা, কারণ আমরা ছেড়ে দিলেতো আওয়ামীলীগ নিয়ে নেবে।

আর জামায়াত-শিবিরের ধ্বংসাত্মক ও তান্ডবপূর্ণ হিংস্র রাজনৈতিক কর্মকান্ডের প্রেক্ষিতে একটাই কথাই তাদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, ১৯৭১ সালে এর চাইতে ভয়াবহ তাণ্ডব ও হত্যাযজ্ঞ চালিয়েও তোমাদের শেষ রক্ষা হয়নি। এইবারে একই তাণ্ডব চালিয়ে তোমাদের ফিরে আসার সকল পথ তোমরা নিজেরাই বন্ধ করে দিতেছ।যে আইডলজিই তোমরা ধারণ করনা কেন, কোথাও ধ্বংসের রাজনীতি করে কেউ বেশীদিন ঠিকে থাকার নজির নেই। নিকট অতীতে বঙ্গবন্ধু মুজিবের বিশাল রক্ষীবাহিনী, জাসদের সুশৃঙ্খল গণবাহিনী- যা আবার সামরিক বাহিনীর সাথে সম্পৃক্তছিলো, তোমাদের চাইতে বিশাল ক্যাডার নেটওয়ার্ক থাকা সত্বেও আজ রক্ষীবাহিনী এবং গণবাহিনী ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়ে আছে। রক্ষীবাহিনী ও গণবাহিনীর তুলনায় তোমাদের ক্যাডার নেটওয়ার্ক এবং প্রশিক্ষণ নেহায়েতই সামান্য, জনতার বাধ-ভাঙ্গা জোয়ারে তোমাদের স্থান ধোপে টিকবেনা, জারমুনির ফেনার মতো ভেসে যাবে। তাই সময় থাকতে ভুল শোধরে সত্যিকারের গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে ফিরে আসাটাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। তাতে তোমাদের যেমন লাভ, জাতি হিসেবে আমরাও অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত হত্যাযজ্ঞ থেকে রক্ষা পেয়ে যাবো।

Salim932@googlemail.com

15th March 2013.UK.

Please follow and like us:
Pin Share

Add a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Follow by Email
YouTube
Pinterest
LinkedIn
Share
Instagram
error: Content is protected !!