Home » লন্ডন নিউজ » আমার লেখা বইঃ প্রবাসীদের প্রতি(ড্রাফট কপি)-

আমার লেখা বইঃ প্রবাসীদের প্রতি(ড্রাফট কপি)-

পূণশ্চঃ এই বইটি আমি লেখার পর ইমেইল করে পাঠাই,যুক্তরাজ্য জেএসডি-র নেতা ছমির উদ্দীনের কাছে, যা তিনি নির্ধারিত কাজের পর আবার আমার কাছে ফেরত পাঠানোর কথা থাকলেও অস্পষ্ট কোন এক কারণে তিনি আমার কাছে আর পাঠাননি, অথচ দাদার ইনষ্ট্রাকশন ছিলো আমার কাছে পাঠানোর-যাতে ফাইনাল করতে পারি।পরে শুনলাম ছমির ভাই ইমেইল থেকে অন্যদের সাহায্য নিয়ে আমাকে না জানিয়ে ঢাকা থেকে এটা বই আকারে নিজের ও নিজের ঘোষিত কমিটির নাম দিয়ে আমার লেখা এই বইটি ছাপানোর কাজে হাত দিয়েছেন।প্রকৃত সত্যের আলোকে এবং পাঠকদের অবগতির জন্য তাই আমি ড্রাফট(অরিজিন্যাল) কপি -যা আমি তৈরী করেছিলাম দাদার সাথে দীর্ঘ আলাপের পর, সেটা এখানে তুলে রাখলাম—

                      বাংলাদেশের রাজনৈতিক

                      অর্থনৈতিক সংস্কারে

১০ দফা          প্রবাসীদের ভূমিকা

                      এবং                

                      আ স ম আবদুর রব-এর

                       দশ দফা প্রস্তাব

                       রব ভাই এর ছবি

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি, যুক্তরাজ্য

জি,এম, নাজিম চৌধুরী, মুক্তিযোদ্ধা ও ডাইরেক্টর বেতার বাংলা, লন্ডন, সৈয়দ এ মাবুদ, মুক্তিযোদ্ধা, জেএসডি যুক্তরাজ্য, আলহাজ্ব ছমির উদ্দিন, আহবায়ক- যুক্তরাজ্য জেএসডি, সৈয়দ শাহ সেলিম আহমেদ-জনসংযোগ,১০ দফা বাস্তবায়ন ও ১৪ দলীয় প্রস্তাবনা ইউ কে, চৌধুরী শাহেদ কামাল টিটো জেএসডি যুক্তরাজ্য, বুলবুল চৌধুরী জেএসডি যুক্তরাজ্য, আব্দুর রব খান নেওর মিয়া, জেএসডি যুক্তরাজ্য

প্রবাসীদের প্রতি ডাকসুর সাবেক ভিপি, স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতা, স্বাধীনতার প্রথম পতাকা উত্তোলক,জেএসডির কেন্দ্রীয় সভাপতি ও দশ দফা কর্মসূচীর প্রস্তাবক আ স ম আবদুর রব-এর শুভেচ্ছা বাণী-

 

ডান পাশে ছোট করে আ স ম আবদুর রবের ছবি

 

শুভেচ্ছা বক্তব্য-

 

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ধারার প্রবর্তন আজ সময়ের দাবী।রাজনীতির এই পরিবর্তনের পথে প্রধান বাধা ব্রিটিশ-পাকিস্তানী আদলে প্রণীত ১৯৭২ সনের সংবিধান।এই সংবিধান আজ শুধু অগ্রহণীয়ই নয়, অকার্যকরও।

 

বাংলাদেশকে একুশ শতকের উপযোগী করে গড়ে তুলতে হলে সংবিধানের আমূল পরিবর্তন আনা ছাড়া অন্য কোন পথ নেই। ব্রিটিশ-পাকিস্তানী মডেলের যে শাসন ব্যবস্থার দ্বারা দেশ পরিচালিত হচ্ছে, তার বিপরীতে যে শাসন-ধারার প্রয়োজন, সেটা হবে সম্পূর্ণভাবে নতুন ধারার রাজনীতি।

 

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য চিরাচরিত প্রথা বাদ দিয়ে চালু করতে হবে নতুন অর্থনৈতিক কর্মসূচী। এই অর্থনৈতিক কর্মসূচীকে বিশ্বায়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে পরিচালিত করার জন্যও নতুন ধারার রাজনীতি অত্যাবশ্যক।

 

এই সব বিবেচনায় রেখে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি দশ দফা ( ১০ দফা ) কর্মসূচী জাতির কাছে উপস্থিত করেছে।

 

জেএসডির রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কর্মসূচী বাস্তবায়নের জন্য প্রবাসী বাঙ্গালীদের অংশগ্রহণ কেবল জরুরীই নয়, অত্যাবশ্যকও।সেই লক্ষ্যে যুক্তরাজ্য জেএসডির পক্ষ থেকে বর্তমান পুস্তিকাটির প্রকাশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

 

এই উদ্যোগ গ্রহণের জন্য আমি যুক্তরাজ্য সামাজিক আন্দোলন-এর নেতৃবৃন্দকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি ।

 

শুভেচ্ছান্তে

 

আ স ম আবদুর রব

সভাপতি

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি

ডিসেম্বর, ২০১২।

 

 

 

 মূল বক্তব্য-

সুপ্রিয় প্রবাসী ভাই ও বোনেরা,

আসসালামু আলাইকুম।

বাংলাদেশ নামক এই রাষ্ট্রটি স্বাধীন হওয়ার ৪০ বছর পার হতে চলেছে । আমাদের সমসাময়িক কালে স্বাধীনতা লাভ করে অনেক দেশ ও জাতি উন্নতির উঁচু শিখরে অবস্থান করে চলেছে । অথচ আমরা প্রতি নিয়ত ঝগড়া, ফ্যাসাদ, মারামারি, হানাহানি, আর একে অন্যকে কি করে ঘায়েল করা যায়, কি করে রাষ্ট্রীয় সম্পদ আত্মসাৎ করে লুটে-পুটে খাওয়া যায়, আমারা সেই চেষ্টায়ই আছি।

বাংলাদেশ নামক এই রাষ্ট্রটি স্বাধীন ও সার্বভৌম করতে এই প্রবাসী জনগণ নিজেদের কষ্টার্জিত ঘাম,শ্রম আর মেধার বিনিময়ে অর্জিত মুদ্রা খরচ করে দেশের মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসী সরকার সহ মুক্তিযোদ্ধাদের এবং জাতীয় নেতৃবৃন্দ ও দল সমূহকে সহায়তা দান করেছি । দেশ স্বাধীন হওয়ার এতো বৎসর হয়ে গেলো, অথচ প্রশাসন ও দেশ পরিচালনায় আমাদের এই প্রবাসীদের প্রতিনিধিত্ব সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও পলিসি বাস্তবায়নে অংশ গ্রহণ দূরে থাকুক, আমাদের ভোটাধিকারের সাংবিধানিক স্বীকৃতি পর্যন্ত মেলেনাই।বিমান বন্দরে হয়রানী, প্রবাসীদের সহায়-সম্পত্তির সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা প্রদান, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রবাসীদের অহেতুক হয়রানী বন্ধে সব সরকারই আজ পর্যন্ত কার্যকর কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে  ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে চলেছে।এক শ্রেণীর রাজনীতিক, দালাল, পুলিশের লোক মিলে মিশে প্রবাসীদের মামলা-মোকদ্দমা জর্জরিত করে অহেতুক হয়রানীর মাধ্যমে নিজেদের আখের গোছাতে থাকেন ব্যতিব্যস্ত।

আমাদের প্রবাসীদের মধ্যেও কিছু প্রবণতা আছে । এক শ্রেণীর নেতা-নেত্রীর দ্বারা ব্যাবহ্রত হয়ে দিনের পর দিন ঐ সব দেশীয় কু-রাজনীতির চিরাচরিত দলা-দলিতে ব্যস্ত হয়ে পরি । এতে আমরা নিজেরা যেমন প্রতারিত হই, অপরদিকে ঐ সব অপ-রাজনীতির হোতাদের স্বার্থে নিজেরা ব্যাবহ্রত হই। নিজেদের ঘাটের পয়সা ও শ্রম অযথা নষ্ট করি । একইভাবে দেশে গিয়ে সেই সব নেতা-নেত্রীর ডিমান্ড মেটাতে ব্যর্থ হয়ে নানান ঝামেলায় পড়ে নিঃস্ব হয়ে প্রবাসে আবার ফেরত আসার অনেক কলঙ্ক ও লজ্জাজনক ঘটনার কথা প্রায়ই আমরা অবগত হই।

আমরা প্রবাসী জনগণ এবং সর্বোপরি দেশের জনগণের বৃহত্তর স্বার্থ, দেশের স্থিতিশীলতা, জাতীয় উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা, বাংলাদেশকে যুগের সাথে মিলিয়ে আধুনিক উন্নত সমাজ বিনির্মাণের লক্ষ্যে আপনাদের সকলের সদয় অবগতির জন্য আমাদের প্রস্তাবাবলী এখানে তুলে ধরছি । আশা করবো আপনাদের সুন্দর পরামর্শ, মতামত, ও সহযোগিতা এবং সমর্থন আমরা পাবো । আমাদের উদ্দেশ্য মহৎ, আপনার-আমার-সকলের অধিকার, ক্ষমতা, কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা এবং সাংবিধানিক স্বীকৃতি সহ দেশ ও জাতির সকল সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও পলিসি বাস্তবায়নে আপনার-আমার-সকলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আমাদের এই প্রস্তাবনা । আগামীতে আর কোন সুরত আলীর নির্মম হত্যা কিংবা আর কেউ যেন  অপ্রীতিকর ঘটনার স্বীকার হতে না হয়, আমরা সেই সুরক্ষা নিশ্চিতকরণের আন্দোলন আপনাকে পাশে হিসেবে পেতে চাই।

কেননা, বাংলাদেশের মূল জিডিপির সিংহভাগ যোগানদাতা হলও এই প্রবাসী।প্রবাসীদের প্রেরিত কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে করে রেখেছে সচল।এমনকি গত ভয়াবহ বিশ্ব-আর্থিক মন্দার সময়ও বাংলাদেশের অর্থনীতি খুব একটা চাপের মধ্যে ছিলোনা, তার মূল কারণ হলও প্রবাসীদের প্রেরিত বৈদেশিক মুদ্রা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে মোটামুটি একটা মজবুত ভিত-এর উপর রেখেছে।অথচ এই প্রবাসীদের বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় নীতি-নির্ধারনী ও পলিসি প্রণয়ন, সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশ গ্রহণের নেই কোন সাংবিধানিক অধিকার।প্রবাসীদের নিত্য-নৈমিত্তিক সমস্যাবলী এবং সুযোগ-সুবিধা দেখ-ভাল করার মতো নেই কোন কার্যকর আইনি কাঠামো ও সংস্থা।

দেশে প্রবাসীদের বিনিয়োগের নেই কোন সুন্দর সাবলীল পরিবেশ।এক্ষেত্রে যে কজন অল্প প্রবাসী বহু কাঠ-খড় পুড়িয়ে দেশের উন্নয়নের কথা চিন্তা করে বিনিয়োগ করেছেন, তাদের সকলেরই রয়েছে এতো ভয়াবহ অভিজ্ঞতা, যা অনেকেই পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে আবার প্রবাসে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন।

প্রবাসী পরিবারের জমি-জামা,বাসা-বাড়ী,ব্যবসা, ইত্যাদি আর ইদানীংকালের ছেলে-মেয়ের বিবাহ নিয়ে জটিলতা ও এক শ্রেণীর দালাল-ফড়িয়াদের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সাথে মিলে অহেতুক হয়রানী ও মামলা-মোকদ্দমার জালে ফেলে বিপর্যস্ত করে তোলার তিক্ততা কম-বেশী সকল শ্রেণীর প্রবাসীর কম-বেশী রয়েছে নানান অভিজ্ঞতা।

কাস্টমস ক্লিয়ারিং ও এম্বারকেশন, ডিস-এম্বারকেশন, ট্রানজিট প্যাসেঞ্জারের ফ্লাইটের সময় ঢাকা,সিলেট,চট্টগ্রাম বিমান বন্দর সহ ফিরতি যাত্রায় বিমান বাংলাদেশের টিকেট কনফার্ম,রি-কনফার্ম করার নামে অযথা হয়রানী ও ঘুষ প্রদান না করে বিমান বন্দরে হয়রানী ও টিকেট ইস্যুর অপারগতা-প্রবাসীদের দীর্ঘদিনের এতোসব সমস্যা কোন রাজনৈতিক দল বিশেষ করে বাংলাদেশের প্রধান বড় দুই দল ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েও এই ব্যাপারে নেয়নি কোন  নীতি-নির্ধারনী কার্যকর পদক্ষেপ। ফলে প্রবাসী প্রতিনিয়ত বিমান বন্দর সমূহে হচ্ছেন প্রতারিত, নিগৃহীত ও হয়রানীর শিকার, কারো কারো জীবন পর্যন্ত বিমান বন্দরে নিভে গেছে । অথচ এর কোন প্রতিকার এখনো করার নেই কোন উদ্যোগ।

 

 

প্রিয় প্রবাসী ভাই ও বোনেরা,

আমরা তাই মনে করি, এমন এক রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা তথা সাংবিধানিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে যাতে, প্রবাসীদের দৈনন্দিন সমস্যা সমূহ দেখ-ভাল ও তাৎক্ষনিক সমাধানের লক্ষ্যে যেমন প্রতিষ্ঠা করতে হবে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়, একই সাথে আমাদের রাষ্ট্রীয় নীতি-নির্ধারনী, জাতীয় অর্থনৈতিক কাউন্সিল, পার্লামেন্ট, সহ তথা আইন প্রণয়ন, বাস্তবায়ন, সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রবাসীদের প্রতিনিধির সমন্বয়ে সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও কার্যকারিতা থাকতে হবে।পার্লামেন্ট ও অর্থনৈতিক কাউন্সিলে প্রবাসীদের প্রতিনিধি থাকতে হবে, যাতে সকল আইন প্রণয়ন, বাস্তবায়নে প্রবাসীদের অংশ গ্রহণ নিশ্চিত করা হয়।ফলে প্রবাসীদের বিরাজমান সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান হবে । আইন প্রণয়ন ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রবাসীদের অংশগ্রহণের ফলে প্রবাসী বিনিয়োগ সহজতর এবং তাদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির আইনগত ভাবে সুরক্ষিত হবে । আমাদের জাতীয় উন্নয়নও ত্বরান্বিত হবে । প্রবাসী পরিবার ও দেশে বসবাসরত সকল নাগরিক একই সুযোগ-সুবিধা রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃত হওয়ার ফলে সামাজিক বৈষম্য ও আর্থিক শৃঙ্খলা পরিলক্ষিত হবে।দালাল-লুটেরাদের দৌরাত্ম বন্ধ হবে।

প্রবাসী ভাই ও বোনেরা,

বাংলাদেশের বিগত ৪০ বছরের রাজনীতির চড়াই-উৎরাই আর ঘটনা প্রবাহের প্রেক্ষিতে, যুগের চাহিদা, সমাজ শক্তির বিকাশ ও সামাজিক বিন্যাস, রাজনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে জেএসডি এবং আ স ম আবদুর রব ঘোষিত দশ (১০ দফা) দফা ভিত্তিক যুগান্তকারী এক রাজনৈতিক কর্মসূচী নিয়ে জাতির সম্মুখে হাজির।বিশ্ব রাজনৈতিক পরিস্থিতি, বাঙ্গালির জাতীয় ইতিহাসের ধারায় অংশীদারিত্বের গণতন্ত্রের আলোকে, সার্ক ভূ-রাজনৈতিক আলোকে,বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক কাঠামোর দার্শনিক ভিত্তির আলোকে,শ্রমজীবী-কর্মজীবী-পেশাজীবী জনতার অধিকার-ক্ষমতা-কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আ স ম আবদুর রব প্রণীত দশ (১০ দফা) দফাই আগামী দিনের বাংলাদেশের উন্নয়ন ও বিনির্মাণে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে বলে আমাদের বিশ্বাস।আর বাংলাদেশের বিরাজমান রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক এবং সামাজিক-রাজনৈতিক-প্রশাসনিক সমস্যা সমূহ সমাধানের লক্ষ্যে এই দশ (১০ দফা) দফার কোন বিকল্প নেই।

 

প্রিয় প্রবাসী ভাই-বোনেরা ,

সমাজ বিকাশের নতুন নতুন সম্ভাবনাকে বিকশিত করে তোলার জন্য পুরনো বিজাতীয় শক্তির বিরুদ্ধে আপোষহীন সংগ্রামের ঐতিহ্য নিয়েই বাঙ্গালি জাতির জন্ম। স্বাধীনতা যুদ্ধে উপনিবেশিক স্বৈরাচারী শক্তিকে পরাভূত করে বাঙালি জাতি বীরত্বের পরিচয় দিয়েছে। গত ৮০ বছর ধরে এ দেশের নেতৃবৃন্দ জাতির উর্ধমুখী আকাঙ্ক্ষাকে উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হয়েছে।তাই জনগণ আজ হতাশ ও বিক্ষুব্ধ।রাজনৈতিক দলগুলো দেউলিয়া ও দিশেহারা।এখন জাতি চায় এমন একটি রাজনৈতিক কর্মসূচী-যা শান্তি দেবে, সংহতি দেবে, উন্নয়ন আর প্রগতির নতুন যুগের সূচনা করবে।কিন্তু এক্ষেত্রে উপনিবেশিক ধাঁচের রাজনৈতিক দলগুলি ব্যর্থ  ও অক্ষম।একমাত্র জেএসডিই জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষার সার্থক প্রতিনিধি। যারা সংগ্রামে আপোষহীন ও নির্মম; আবার শান্তির জন্য আন্তরিক ও অঙ্গীকারাবদ্ধ।স্বাধীনতাযুদ্ধের ৪০ বছর পরে জাতি যখন দেশ গড়া ও উন্নয়নের এমনি একটি কর্মসূচী ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশের কামনায় উন্মুখ-ঠিক সেই মুহূর্তেই  বিশিষ্ট রাজনৈতিক-দার্শনিক-সিরাজুল আলম খান- দাদা কর্তৃক উপস্থাপিত অংশীদারিত্বের গণতন্ত্র-এর আলোকে জেএসডি দশ-দফা (১০ দফা) কর্মসূচী হাজির করেছে-যা শান্তি ও জাতীয় সংহতির যুগোপযোগী দিগদর্শন। এই কর্মসূচীর ভিত্তিতে বাঙালি শ্রমজীবী,কর্মজীবী ও পেশাজীবীরা তাদের উর্ধমুখী রাজনৈতিক চাহিদার আলোকে সুসংহত হয়ে নতুন রাজনৈতিক শক্তিতে পরিণত হবে ।

 

জেএসডির এই দশ-দফা (১০ দফা) কর্মসূচী নীচে সংযোজন করা হলোঃ-

১) দুই কক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট গঠন করতে হবে।নিম্ন কক্ষ গঠিত হবে রাজনৈতিক দলের মনোনয়ন প্রাপ্ত অঞ্চল ভিত্তিক, নির্বাচিত প্রতিনিধি নিয়ে।উচ্চ কক্ষ গঠিত হবে অদলীয় ভাবে শ্রমজীবী-কর্মজীবী-পেশাজীবী,নারী,স্থানীয় সরকার ও অন্যান্য জাতিসত্তার প্রতিনিধি নিয়ে।

২)বাংলাদেশে এক কেন্দ্রিক সরকার ব্যবস্থার পরিবর্তে ফেডারেল গভর্নমেন্ট ব্যবস্থা থাকবে।

৩)বাংলাদেশে ৯টি প্রদেশ গঠন করতে হবে।প্রদেশগুলো হবে-ক)ময়মনসিংহ খ)পার্বত্য চট্টগ্রাম গ) বরিশাল ঘ) রাজশাহী ঙ)রংপুর চ) সিলেট ছ) খুলনা জ)চট্টগ্রাম ঝ)ঢাকা ।

প্রত্যেক প্রদেশ প্রাদেশিক সরকার থাকবে।ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী,রংপুর, খুলনা, সিলেট, কুমিল্লা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর মহানগরসমূহ থাকবে কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল হিসেবে।প্রাদেশিক সরকার ও মহানগরী সমূহের প্রতিনিধি উচ্চ কক্ষে থাকবে।

৪)কেন্দ্রে থাকবে জাতীয় ঐকমত্যের সরকার।দলীয় আসন সংখ্যার আনুপাতিক হারে সরকারের মন্ত্রীসভা গঠিত হবে।

৫) অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য উচ্চ কক্ষ তত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্ব পালন করবে।এর মাধ্যমে তত্বাবধায়ক সরকারের জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে।জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সাথে উপ-জেলা ও সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে।সিটি কর্পোরেশন সমূহে সিটি মেট্রোপলিটন সরকার গঠন করতে হবে।

৬)বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ পৃথক করতে হবে।বিচারক নিয়োগ ও সাংবিধানিক ব্যাখ্যার জন্য সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করতে হবে।

৭)নির্বাচন কমিশনকে সাংবিধানিকভাবে নির্বাহী ক্ষমতা প্রদান করতে হবে।

৮)প্রবাসী মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রত্যেক উপজেলায় প্রবাসীদের বিনিয়োগের জন্য উপজেলা শিল্পাঞ্চল এলাকা গঠন করতে হবে।

৯)গ্যাসের প্রকৃত মজুদ নির্ধারণ করে দেশের প্রয়োজন ও চাহিদা পূরণ করে জাতীয় স্বার্থে ঐকমত্যের ভিত্তিতে গ্যাস বিতরণের সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

১০)সার্ক এর আলোকে উপ-আঞ্চলিক অর্থনৈতিক জোট গঠন করতে হবে।

এখানে সিরাজুল আলম খান দাদার বই থেকে একটি উক্তি উল্লেখ করতে চাই, যা বিশেষ প্রণিধানযোগ্য।আর তা হলও, যে আইন ও বিধির দ্বারা বিদেশী শাসকেরা শাসন করে, সে আইন ও বিধিকে বদলিয়ে নিজেদের উপযোগী শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করাই হলও স্বাধীনতার মূলকথা।বিদেশী শাসক বদলিয়ে দেশীয় শাসকদের ক্ষমতায় বসিয়ে ঔপনিবেশিক আমলের রাষ্ট্রীয় কাঠামো এবং শাসনব্যবস্থা দিয়ে দেশ পরিচালনা করা জনগণের জন্য এক ধরনের পরাধীনতা; যাকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় অভ্যন্তরীণ উপনিবেশবাদ।

 

আসুন সকলে মিলে আমরা যুগ যুগ ধরে চলে আসা এই আভ্যন্তরীণ পরাধীন মুক্ত স্বাধীন দেশের উপযোগী সংবিধান প্রণয়ন ও স্বাধীন দেশের উপযোগী জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার সমন্বয়ে শ্রম-কর্ম-পেশার জনগণের মেধা-শ্রম-যোগ্যতা কাজে লাগিয়ে তাদের সত্যিকার অর্থে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার মালিক, তাদের অধিকার, ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে বাংলাদেশকে উন্নত বিশ্বের সাথে নিয়ে চলি।

আপনাদের অসংখ্য ধন্যবাদ সহ

আলহাজ্জ্ব ছমির উদ্দিন                                               সৈয়দ শাহ সেলিম আহমেদ

আহবায়ক, যুক্তরাজ্য জেএসডি                লেখক,সাংবাদিক,১০-দফা ও ১৪ দফা

জনসংযোগ সমন্বয়ক ইউ,কে,

জি, এম, নাজিম চৌধুরী

উপ-দেষ্টা

সৈয়দ এ মাবুদ, বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা, জেএসডি-ইউ,কে

চৌধুরী শাহেদ কামাল টিটো, জেএসডি,ইউ,কে

আব্দুর রব খান নেওর মিয়া, জেএসডি ইউ,কে

বুলবুল, প্রাক্তন ছাত্র নেতা, জেএসডি, ইউ,কে

 

১) বৃহত্তর যুক্তরাজ্য ভিত্তিক ১৭ সদস্যের আহবায়ক কমিটি গঠন-

আহবায়ক কমিটি- ১ জন আহবায়ক

২ জন যুগ্ম-আহবায়ক

১৪ জন সদস্য — এই ১৭ সদস্যের কমিটি করা

২) ইংল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, ওয়েলস প্রত্যেক স্থানে ১১ সদস্যের আহবায়ক কমিটি

গঠন-

৩) ইংল্যান্ডের লন্ডন শহর, বার্মিংহাম, ম্যানচেস্টার, ব্রাডফোর্ড, নিউক্যাসল, সান্ডারল্যান্ড,

পিটার বরা, শেফিল্ডস, রচডেইল, কার্ডিফ, ব্ল্যাকবার্ন,ব্ল্যাকপুল, প্রভৃতি শহর ও সিটিতে

৭-১১ সদস্যের আহবায়ক কমিটি গঠন-

০৪)সাধারণ পর্যায়ে থাকবে সমর্থকদের নিয়ে ৩ সদস্য বিশিষ্ট  কমিটি গঠন-যেখানে ১ জন

টিম লিডার সহ এই ধরনের বহু সংখ্যক টিম গঠন করা যাবে-

সাংগঠনিক কর্মকান্ডঃ-

১) ঢাকা থেকে প্রকাশিত ও প্রচারিত এতদ সম্পর্কিত প্রচার-পত্র ও পুস্তিকা পাঠ ও বিতরণ

২) স্থানীয় পর্যায়ে নিজেদের উদ্যোগে লিফলেটিং এবং পুস্তিকা প্রকাশ করা

৩) প্রতি তিন মাসে একবার সভা করে নিজেদের মতামত তুলে ধরা

৪) প্রবাসীদের স্বার্থ-সংরক্ষণের জন্য যেমন প্রবাসীদের ভোটাধিকার, ১০ জন প্রবাসী

প্রতিনিধি পার্লামেন্টের উচ্চ-কক্ষে থাকার ব্যবস্থা, প্রবাসীদের অর্থায়নে বিভিন্ন শিল্পে ও

অঞ্চলে বিনিয়োগের নিরাপত্তা প্রদানের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ-

 

ইতিহাসের পাতা থেকে:-

 

(রাজনৈতিক তাত্ত্বিক সিরাজুল আলম খান- এর লেখা থেকে সংকলিত)

 

বাঙ্গালীর জীবনে দু`বার জাগরণ এসেছিলো;বাংলার ইতিহাস থেকে এর প্রমাণ পাওয়া যায়।বর্তমানে বাঙ্গালী তৃতীয় জাগরণের ধাপ অতিক্রম করছে।অন্যভাবে বলা যায় বাঙ্গালী তৃতীয় জাগরণের পর্যায়ে রয়েছে।

ষোড়শ খ্রিষ্টাব্দে শ্রী চৈতন্যদেবের আবির্ভাব ও বৈষ্ণব ধর্ম, অপরদিকে মুসলিম সুলতানদের রাজত্বকাল ইসলামী সংস্কৃতির প্রসার উভয়ই বাঙ্গালী জীবনে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছিলো।প্রথম জাগরণের এ সময়কালের মুসলিম সুলতান ছিলেন আলাউদ্দিন হোসেন শাহ ( ১৪৯৩-১৫১৯)।

পরবর্তী উনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে ইংরেজি শিক্ষার প্রসার এবং ইউরোপীয় দর্শন ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রভাবে বাংলা দ্বিতীয় বারের মতো নব জাগরণ-এর আলো দেখতে পেলো।একেই বলা হয় উন-বিংশ শতাব্দীর বেঙ্গল রেনেসাঁ- যা দ্বিতীয় জাগরণ হিসেবে পরিচিত।

এই দুই জাগরণ ছিলও ক্ষণস্থায়ী।তা হওয়াটাই স্বাভাবিক । কেননা এই জাগরণের উন্মেষ ঘটেছিলো কেবলমাত্র নাগরিক সমাজের উঁচু শ্রেণীর মধ্যে এবং সেখানেই সীমাবদ্ধ ছিলও। আমরা জানি, যে কোন সুদূরপ্রসারী পরিবর্তন স্থায়িত্ব পায় তখনই যখন তা সমাজের প্রতিটি শ্রেণী এবং পর্যায়কে ছুঁয়ে যায়।

“পাশ্চাত্য দেশের পণ্ডিতদের ধারণা ছিলও ষোড়শ এবং উনবিংশ শতাব্দীর সেই দুই জাগরণের পর বাঙ্গালী আর কখনো একক সত্ত্বা ফিরে পাবেনা। তারা হয়তো পাকিস্তানী বাঙ্গালী কিংবা ভারতীয় বাঙ্গালী হয়ে পরিচিত থাকবে।তাই বাংলাদেশের জন্মক্ষণ পর্যন্ত বাংলা এবং বাঙ্গালী ছিলও তাদের কাছে এক বিস্মৃতির পর্যায়ে চলে যাওয়া জাতির পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন স্বরূপ।“

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাঙ্গালীর জাতি-রাষ্ট্র বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা সেই ধারণা ভেঙ্গে দিলো। বাঙ্গালীর হাজার বছরের ইতিহাসে এ এক বিশাল অর্জন।

বাঙ্গালী এখন তৃতীয় জাগরণের পর্যায় অতিক্রম করছে।এই জাগরণ পূর্ববর্তী দুটি জাগরণ থেকে ভিন্ন ধরনের।এই জাগরণে বাঙ্গালীর জীবন ও সমাজের ভিত্তিমূলে অর্থাৎ উৎপাদন ব্যবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনছে।

তৃতীয় জাগরণ চীন,ইংরেজ,ফরাসী,আরবি ভাষাভাষীদের সমতুল্য হবে এই বাঙালি জনগোষ্ঠী।শুধু ভাষা, অঞ্চল অথবা ধর্ম-বর্ণ নয়, বরং বাঙালি কৃষক,বাঙালি শ্রমিক, বাঙালি প্রকৌশলী, বাঙালি ডাক্তার, বাঙালি কূটনীতিক, বাঙালি শিল্পী-সাহিত্যিক, বাঙালি আইনবিদ, বাঙালি সৈনিক ইত্যাদি পরিচয়ে পরিচিত হবে।

বিশ্বের কোন দেশ আজ আলাদা বা বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকতে পারেনা। আবার কোন দেশ নিজস্ব ভিত্তি বা শিকড়হীন হয়েও চলতে পারেনা।

প্রয়োজনীয় কিছু কথা:-

বাংলাদেশ বর্তমানে দু`ধরনের সংকটে নিমজ্জিত।প্রথমটি হলও- ঔপনিবেশিক ধাঁচের শাসনব্যবস্থা বনাম জনগণের আশা-আকাক্ষা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় শাসনব্যবস্থার অভাব। দ্বিতীয়টি হলও- বড় দুটি দলসহ প্রায় সব রাজনৈতিক দলের ঘুম পাড়ানী কর্মসূচীর সঙ্গে জনগণের সম্পর্কহীনতা। এই দুই কারণে বাংলাদেশের রাজনীতিতে অস্থিরতা লেগে আছে, ধারাবাহিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে বাধা আসছে চক্রাকারে। এর ফলে সামাজিক অস্থিরতা ক্রমেই বেড়েই চলছে।

১৯৭২ সালে বাংলাদেশের সংবিধান রচনা এবং কার্যকর করা হয়।এই সংবিধান ব্রিটিশ, ভারত ও পাকিস্তানি রাষ্ট্র-কাঠামোরঅনুকরণেই প্রণীত হয়। এই সময় থেকেই বাংলাদেশে ঔপনিবেশিক আদলের রাষ্ট্র কাঠামো ও শাসন ব্যবস্থার শুরু। এটি কার্যত বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী।

১৯৭২ সালের সংবিধান দলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জনগণের মধ্যে অপ্রয়োজনীয় প্রতিযোগিতামূলক আচরণকে উস্কে দেয়।এর ফলে জনগণের মধ্যে অনৈক্যের ফাটল দিন দিন বাড়ছে এবং বার বার সহিংসতার মুখোমুখি হচ্ছে। এ ধরনের দলীয় রাজনীতির আড়ালে আবির্ভূত হয়েছে সন্ত্রাসী, দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ী, টিকাদার, মাস্তান এবং জঙ্গিবাদী গোষ্ঠী । জাতীয় সংসদ বিত্তশালী ও অযোগ্য ব্যক্তিদের টকিং ক্লাবে (talking club) পরিণত হয়েছে।অন্যদিকে এই দলীয় রাজনীতির সুযোগে প্রসার ঘটেছে মৌলবাদের। যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার স্বাধীনতার পর পরই হওয়া উচিৎ ছিলও, তখন তা-না করার কারণেই আজ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দীর্ঘসূত্রিতার বেড়াজালে আবদ্ধ।

৪০ বছরের ব্যবধানে বর্তমান সংবিধানের আমূল পরিবর্তন প্রয়োজন। তা-না করে, বারবার ছোট ছোট দু`একটি বাদে সব সংশোধনই করা হয়েছে ব্যক্তি, গোষ্ঠী ও দলীয় স্বার্থে।এখন বাংলাদেশের সংবিধান যে অবস্থায় আছে(১৫তম সংশোধনীর পর) তা কেবল অপ্রয়োজনীয়ই নয়, অকার্যকরও। বিগত ৪০ বছরে পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থাসহ সকল ক্ষেত্রে কম বেশী পজিটিভ পরিবর্তন এসেছে।বাংলাদেশ এই ধারা থেকে পিছিয়ে থাকতে পারেনা।আর তার পূর্ব শর্ত হচ্ছে, আমাদের সংবিধানের আমূল সংশোধন এবং আধুনিকায়ন। অথচ উল্টো ১৯৭২-এর সংবিধানে ফেরত যাওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।এর অর্থ হলও-গোটা জাতিকে অতীত মুখী করা।শৈশবের জামা কাপড় যুব বয়সের শরীরে ব্যাবহার করা যেমন বেমানান এবং যা সার্কাসের ক্লাউন বা ভাঁড়-এর মতো দেখায়, এটা তার চেয়েও হাস্যকর।

১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত ২৪টি বছর পাকিস্তানী শাসক-শোষকদের বিরুদ্ধে বাঙ্গালিদের আন্দোলনের ধারা ছিলও গণতান্ত্রিক।১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৬২ সাল থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত ছাত্র-যুব সমাজের সাহসী সাংগঠনিক পদক্ষেপ ছিলও স্বাধীনতা আন্দোলন প্রস্তুতির পর্যায়কাল।৬২-৬৯ সময়কালে ছাত্র-যুবকদের গোপন সংগঠন নিউক্লিয়াস, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৬ দফা ভিত্তিক আন্দোলন, সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ এবং স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ১১ দফার আন্দোলন ছিলও ১৯৭১ সালের পট পরিবর্তনের প্রস্তুতিমূলক কর্মমুখর ইতিহাস।

……………………………………………………………………………………‌

গণতান্ত্রিক আন্দোলন ধাপে ধাপে এগিয়ে ছাত্র-আন্দোলন, শ্রমিক-আন্দোলন, গণবিক্ষোভ, গণঅভ্যুত্থান এবং ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে জনগণের ম্যান্ডেটের মাধ্যমে গোটা বাঙালি জাতি ঝাঁপিয়ে পড়ে স্বাধীনতার লড়াইয়ে।১৯৭১ সালের ২রা মার্চ আ স ম আবদুর রব কর্তৃক স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন, ৩রা মার্চ শাহজাহান সিরাজ কর্তৃক স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ, ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বংবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণ এবং ২৬-২৭ শে মার্চ চট্টগ্রাম থেকে বাঙালি সৈনিকদের পক্ষ হয়ে মেজর জিয়াউর রহমানের আহবান এসবই ছিলও বাংলাদেশকে স্বাধীন করার লক্ষ্যে বিশেষ বিশেষ দিক-নির্দেশনা।

……………………………………………………………………………………

যেকোনো জাতির জীবনে স্বাধীনতা আসে একবারই। এই স্বাধীনতার অর্থ হলও মানুষে মানুষে পুরনো বৈষম্যমূলক সম্পর্কের অবসান ঘটিয়ে সমাজের বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠী-সম্প্রদায়ের মধ্যে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করা।রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থার সর্বস্তরে ও পর্যায়ে সৌহার্দ্যমূলক অবস্থা সৃষ্টি করা।যার ফলে মানবিক মূল্যবোধ, উন্নত জীবন এবং মহৎ চিন্তার সংস্পর্শে আসার দ্বার উন্মুক্ত করা।

অথচ আমরা দেখি, অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় ও সামাজিক ক্ষেত্রে ঔপনিবেশিক আমলের শিল্প মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যকার পুরনো মালিক-শ্রমিক সম্পর্ক স্বাধীন বাংলাদেশেও সেই একই রকম।

বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, অথচ এখনো রাষ্ট্র ও জনগণের সম্পর্ক যে তিমিরে ছিলও সেই ব্রিটিশ পাকিস্তানী আমলের মতোই রয়ে গেছে, কেবল পোশাক-নাম বদল হয়েছে।১৯৭২ সালের ১০-ই জানুয়ারি পর্যন্ত সারা বাংলাদেশ শাসিত হলও প্রবাসী সরকারের অধীনে মুক্তিযোদ্ধাদের দ্বারা, কিন্তু কোথাও কোন চুরি-ডাকাতি-ছিনতাই-রাহাজানি হয়নি । অথচ ১৯৭২ সালের ১১-ই জানুয়ারি থেকেই আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে দলীয় সরকারের দ্বারা দেশ শাসনের ফলে যে দারোগা থানার দায়িত্বে ছিলেন পাকিস্তানী শাসনের সময়, তিনি আবার স্ব-পদে বহাল হলেন বাংলাদেশের দারোগা হয়ে, একই অবস্থা হলও সর্ব ক্ষেত্রে, ফলে চুরি-ডাকাতি-আর অশান্তি বাড়তে থাকলো।এখানে মালিক-শ্রমিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একই ব্রিটিশ-পাকিস্তানী সম্পর্ক রয়ে গেলো, কোন পরিবর্তন হলোনা,শুধু নাম বদল হলও। এই মালিক-শ্রমিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে পলিসি গ্রহণ ও বাস্তবায়নে তথা সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে নতুন সম্পর্ক গড়ার জন্যই আমাদের সংগ্রাম ও কর্মসূচী।সেটাই হলও স্বাধীনতা সংগ্রামের মূল কথা।

 

আমরা যদি প্রত্যেকের শাসন ব্যবস্থা পরিচালনায় যার যার চিন্তা অনুযায়ী ব্যবস্থা দিতে পারি, তাহলে-তো আজকে যে অফিসার ঘুষ,চুরি,ডাকাতি করে, সে তা করবেনা।এই চাহিদা পূরণ ও যোগান দেওয়ার জন্যই আমাদের এই কর্মসূচী- দাদার নয়া ধারার দ্বিতীয় ধারার রাজনীতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

বাংলাদেশ ভারত, নেপাল,ভুটান,বার্মা,  চীনের কূনমিং প্রদেশ পর্যন্ত অঞ্চলের জন্য ট্রানজিট, করিডোর যাই বলা হউক না কেন, ড্রাইভিং ফোর্স হিসেবে আভির্ভূত হবে, যেখান থেকে বাংলাদেশ থাকবে কেন্দ্রস্থলে, তখন বাংলাদেশ ও এই অঞ্চল ফায়দা লুটে নেবার মতো শক্তিশালী অবস্থানে চলে আসবে।

৭২ এর সংবিধানে ফিরে যাওয়ার অর্থই হলও পুরো জাতিকে পেছনের দিকে ফিরিয়ে নেওয়া।তাই এই সংবিধানের কোন সংশোধনী নয়, বরং আমূল পরিবর্তন প্রয়োজন।এই সংবিধান আমাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে অক্ষম,আজকের যুগে এটা একেবারেই অচল।বাংলাদেশে গত ৪০ বছরের রাজনীতি ও প্রশাসনে ঔপনিবেশিক আমলের মন-মানসিকতার প্রাধান্য রয়েছে। এখানে রাজনৈতিক নেতারা হয়ে গেছেন ব্রিটিশ-পাকিস্তানী কায়দায় শাসক আর আমলারা হয়ে গেছেন ক্ষমতার মালিক।রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থায় নারীর ক্ষমতায়নের বিষয়টি ঔপনিবেশিক আমলের নিয়মে পুরুষের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।সংবিধানে নারীর অধিকারের কথা থাকলেও শাসনব্যবস্থায় নারীর ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব নেহাত সামান্যই।এখানে বুদ্ধিজীবীরা দলীয় আনুগত্য প্রকাশ করে বুদ্ধিবৃত্তির জগতকে করেছে অপমানিত।সে কারণে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডসহ চিন্তা ও মনন জগতে গড়ে উঠতে পারেনি মহৎ কোন দৃষ্টিভঙ্গি। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের সংবিধান রচনা শেষে জনমত যাচাইয়ের পর্যায়ে আমরা সংবিধানকে পুরোপুরি বর্জন না করে নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভালো হিসেবে গ্রহণ করেছিলাম, যা আজকের যুগের চাহিদা পূরণে ও জনগণের পাহাড় সমান সমস্যা সমাধানেঅক্ষম।সে জন্য এই সংবিধানের দুর্বলতার সুযোগে গণতান্ত্রিক ধারা বার বার ব্যর্থ হয়েছে, সংসদীয় গণতন্ত্রের নামে এক ব্যক্তির স্বেচ্ছাচারী ও দলীয় শাসন প্রবর্তিত করে গণতন্ত্রকে জনগণের অধিকার, ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব থেকে সাত-সমুদ্র দূরে ঠেলে দিয়েছে।

রাষ্ট্র-কাঠামোর প্রয়োজনে জনগণের অধিকার, ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার উপযোগী শাসন পদ্ধতির প্রণয়ন, সামগ্রিক জাতীয় উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার নৈতিক চেতনা ও নবতর সামাজিক ব্যবস্থার প্রবর্তনের লক্ষ্যে সংবিধান ও রাষ্ট্র বিষয়ক ১৪ দফার রাজনৈতিক কর্মসূচীর প্রতি দেশের সংবিধান বিশেষজ্ঞ, ছাত্র, শ্রমিক, পেশাজীবীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন। এই ১৪-দফার অন্যতম উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, ০১)ফেডারেল পদ্ধতির কেন্দ্রীয় সরকার ব্যবস্থা, ০২) নিম্ন কক্ষ ও উচ্চ কক্ষ সমন্বয়ে দেশের জাতীয় সংসদ হবে দুই কক্ষ বিশিষ্ট- যেখানে নিম্ন কক্ষে থাকবে ৩০০শত সদস্য বিশিষ্ট, আর উচ্চ কক্ষে থাকবে বিভিন্ন শ্রেণী-কর্ম-পেশা-প্রবাসী-নারী প্রতিনিধির সমন্বয়ে ২০০শত সদস্য০৩) জাতীয় সংসদের সকল দলের সংসদ সদস্য নিয়ে একটি জাতীয় ঐকমত্যের সরকার গঠন,যেখানে সদস্য প্রত্যাহারের বিধান থাকবে০৪)বাংলাদেশকে ৭ অথবা ৯টি প্রদেশে বিভক্ত করণ ০৫) সংসদের উচ্চ কক্ষ থেকে নির্বাচিত নির্দলীয় বা অদলীয় সদস্যদের মধ্য থেকে রাষ্ট্রপতি অন্তর্বর্তীকালীন তত্বাবধায়ক সরকার গঠনের ব্যবস্থা ০৬) স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠন ০৭)রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচন০৮) উভয় কক্ষ থেকে সদস্য নিয়ে সংসদীয় কমিটি গঠন ০৯)জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল গঠন ১০) সাংবিধানিক আদালত গঠন ১১)৯০০ সদস্যের জাতীয় অর্থনৈতিক কাউন্সিল গঠন-যেখানে সর্বস্তরের শ্রেণী ও পেশার প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করে সিদ্ধান্ত ও পলিসি গ্রহণে নিশ্চয়তা থাকবে ১২) স্থায়ী বিচার বিভাগীয় কাউন্সিল গঠন ১৩) সার্ক এর আওতায় বাংলাদেশ,নেপাল,ভুটান,ভারত(১০টি অঞ্চল),মায়ানমারের দক্ষিণাংশ,চীনের কুনমিং প্রদেশ নিয়ে উপ-আঞ্চলিক অর্থনৈতিক জোট গঠন করার প্রস্তাব করেছেন। ১৪)অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রসঙ্গে মাইক্রো ক্রেডিট কর্মসূচী ছাড়াও উপ-জেলা ও পৌর শিল্পাঞ্চল গঠন, প্রতিটি শিল্প এলাকায় ৩০০ কোটি টাকা (প্রত্যেক প্রবাসীর দুই লক্ষ ডলার হিসেবে) বিনিয়োগ করে অনুমান করা যায় ৪ লক্ষ ৫০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা সম্ভব, ২০২০ সাল নাগাদ বছরে প্রতি নাগরিকের আয়ের পরিমাণ দুই লক্ষ টাকা নির্ধারণ টার্গেট ইত্যাদি রয়েছে।এর ফলে ১০ বছরে ৫ কোটি মানুষের কর্মসংস্থান নিশ্চিত হবে।

এই ১৪ দফা কর্মসূচীর নির্যাস আ স ম আবদুর  রব সাহেব ১০ দফা ভিত্তিক জেএসডির কর্মসূচী ভুক্ত করে রাজনৈতিক আন্দোলন হিসেবে জাতির সামনে তুলে ধরে এগিয়ে যাচ্ছেন।বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন, অদলীয় ছাত্রলীগ, সামাজিক আন্দোলন পরিষদ,১৪ দফা চেতনা পরিষদ, সামাজিক শক্তি, পেশাজীবী পরিষদ, নারীর রাজনৈতিক আন্দোলন, প্রবাসীদের সংগঠন সহ নানান সংগঠন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।সিরাজুল আলম খান দেশ ও জনগণের সত্যিকার উন্নয়ন, সকল শ্রেণী-কর্ম-পেশার মানুষের কর্তৃত্ব-অধিকার-ক্ষমতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এবং রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও অর্থনৈতিক অরাজকতা বন্ধের লক্ষ্যে এই ১৪ দফার কোন বিকল্প নেই। সে লক্ষ্যে সকলকে এই দ্বিতীয় ধারার নয়া রাজনীতিতে অংশ গ্রহণ করার আহবান জানাই।এই লক্ষ্যে সকলকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে অদলীয় ভিত্তিতে বিভিন্ন সমাজ শক্তি সমূহের সাথে মিলে ছোট ছোট গ্রুপের ১৪ দফা কর্মসূচীর প্রচার ও প্রসারের লক্ষ্যে কমিটি গঠন করতে তিনি সুপারিশ করেছেন।

দেশ ও জাতির ভাগ্য উন্নয়নে ও রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনতে বাংলাদেশে সত্যিকারের প্রতিনিধিত্বশীল গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থা ও প্রবাসীদের প্রতিনিধিত্বশীল সহ সংবিধানের আমূল পরিবর্তনের এই নবতর আন্দোলনে সকলের অংশ গ্রহণ জরুরী।

 

শেষ কাভার পৃষ্ঠা—-

যে আইন ও বিধির দ্বারা বিদেশী শাসকেরা শাসন করে, সে আইন ও বিধিকে বদলিয়ে নিজেদের উপযোগী শাসনব্যবস্থা করাই হলও স্বাধীনতার মূলকথা।বিদেশী শাসক বদলিয়ে দেশীয় শাসকদের ক্ষমতায় বসিয়ে ঔপনিবেশিক আমলের রাষ্ট্রীয় কাঠামো এবং শাসনব্যবস্থা দিয়ে দেশ পরিচালনা করা জনগণের জন্য এক ধরনের পরাধীনতা; যাকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় অভ্যন্তরীণ উপনিবেশবাদ- সিরাজুল আলম খান দাদা

      যোগাযোগ: dadasak1941@hotmail.com. Web:serajulalamkhan.co.uk

শুভেচ্ছা মুল্যঃ ১ পাউন্ড।

প্রকাশনায়: জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি, যুক্তরাজ্য

সর্বপ্রকারের যোগাযোগ: ছমির উদ্দিন মোবাইল০৭৯০৮৬১০৭০৮, সেলিমঃ০৭৯২৭৩৭৬৫৩৪ salim932@googlemail.comwww.facebook.com/SyedShahSalimAhmed- ,সৈয়দ এ মাবুদ………………শাহেদ কামাল টিটো………..  JSDUK ইমেইল:.ukkjsd……@.       Dada: www.facebook.com/Serajul Alam Khan এবং দ্বিতীয় ধারার রাজনীতি .

Please follow and like us:
Pin Share

Add a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Follow by Email
YouTube
Pinterest
LinkedIn
Share
Instagram
error: Content is protected !!