Home » কলাম » ডেট লাইন ১১ আগষ্ট ২০১২, শ্বাসরুদ্ধ্বকর ৭২ ঘন্টার অবসান-

ডেট লাইন ১১ আগষ্ট ২০১২, শ্বাসরুদ্ধ্বকর ৭২ ঘন্টার অবসান-

ডেট লাইন ১১-ই আগষ্ট ২০১২ ; অবরুদ্ধ সান্ডারল্যান্ড মুসলিম সমাজ

শ্বাস রুদ্ধকর ৭২ ঘন্টার অবসান

সৈয়দ শাহ সেলিম আহমেদ

 

গত ১০-ই আগষ্ট দিবাগত রাত এগারোটার কিছু পরে মসজিদে মুসল্লীরা যখন তারাবীর নামায পড়ছিলেন, তখন একদল শ্বেতাঙ্গ হঠাৎ করে সান্ডারল্যান্ডস্থ হেনডন জামে মসজিদে জানালায় ইট-পাথরের টুকরো দিয়ে ঢিল ছুড়তে থাকে, এতে মসজিদের কাচের জানালা ভেঙ্গে মুসল্লীদের উপর এসে পড়ে।ঐ সময় বয়োবৃদ্ধ্ব মুসল্লীসকল এবং তাবলীগ জামায়াতের কিছু সদস্য নামাযরত ছিলেন।তারাবীর নামায চলাকালীন সময়ে ঐ শ্বেতাঙ্গ গ্রুপ মুসল্লীদের গালিগালাজ করে ঢিল ছুড়তে থাকে, এক পর্যায়ে প্রচন্ড বেগে ঢিল আসতে থাকে, আল্লাহর আশেষ রহমতে এতে তেমন কেউ আহত হননি।

তারাবীর দুরাকায়াত নামায শেষে মুসল্লীরা বেরিয়ে আসলে শ্বেতাঙ্গ ঐ গ্রুপ পালিয়ে যায়, যাওয়ার সময় উচ্চ স্বরে শাসিয়ে যায়, তারা খুব শীগ্রই মসলমানদের এই সব মসজিদ জ্বালিয়ে দিবে।

উল্লেখ্য সান্ডারল্যান্ড এর হেনডন এলাকা বাংলাদেশীদের বৃহৎ অংশ বসবাস করেন।তরুণ ও বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই রাতের বেলা টেকওয়ে ও রেষ্টুরেন্টে কাজ করে থাকেন, হেনডনের ঐ মসজেদে ঐ সময় কেবলমাত্র আগের প্রজন্মের মুরুব্বী ও বয়োজ্যেষ্টরা প্রথম জামায়াতে শরীক হয়ে থাকেন।রাতের শিফটের তরুণ ও রেষ্টুরেন্ট ষ্টাফদের বৃহৎ অংশ রাতের শেষভাগে দ্বিতীয় জামায়াত চেষ্টার রোডের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে শরীক হয়ে থাকেন।

বেশ কিছুদিন হলো সান্ডারল্যান্ড এ পাকিস্তানী মুসলিম কমিউনিটি তাদের নিজস্ব একটি মসজিদের প্লানিং পার্মিশনের জন্য সান্ডারল্যান্ড কাউন্সিলে এপ্লিকেশন করা নিয়ে স্থানীয়ভাবে অল্প সংখ্য কট্রর শ্বেতাঙ্গদের দ্বারা সৃষ্ট বিতর্ক চলে আসছিলো।সম্প্রতি কাউন্সিল পাকিস্তানী মসজিদ এর প্লানিং পারমিশন অনুমোদন করলে এর বিরোধী প্রাক্তন কাউন্সিলর লিবারেল ডেমোক্রেট পল ডিক্সন এর নের্তৃত্ত্বে খুব সামান্য সংখ্যক প্রতিবাদী হয়ে উঠলে কট্রর বিএনপি- (ব্রিটিশ ন্যাশনালিষ্ট পার্টি) এটাকে মোক্ষম হাতিয়ার হিসেবে নেয়।বিএনপি এটাকে মুসলিম বিরোধী প্রচারণার অংশ হিসেবে স্থানীয় কট্রর শ্বেতাঙ্গ সমর্থকদের নিয়ে মসজিদে মসজিদে হামলার অংশ হিসেবেই হেনডন মসজিদে আক্রমণ করা হয়েছে বলে স্থানীয়দের ধারণা।

পাকিস্তানী মসজিদের অনুমোদনের ফলে বিএনপি ১১-ই আগষ্ট স্থানীয় মিলফিল্ড পাকিস্তানী নতুন মসজিদ স্থল ঘেরাওয়ের ঘোষণা দেয়, তারা এখানে কোন অবস্থাতেই মসজিদ হতে দিতে চায়না।এই লক্ষ্যে পত্রিকা, লিফলেট ও অনলাইনে প্রচারণা করে সারা ব্রিটেনের বিভিন্ন শহর থেকে কট্রর বিএনপি সমর্থকদের নিয়ে ঐ স্থান ঘেরাওয়ের ঘোষণা দিলে প্রশাসন নড়ে চড়ে বসে।আগের রাতের মসজিদে আক্রমণের প্রেক্ষিতে এবং ১১ ই আগষ্টের ঘেরাও উপলক্ষ্যে পুলিশ বাংলাদেশী পাকিস্তানী সহ সকল মুসলমান কমিউনিটির সাথে মিটিং করে, সান্ডারল্যান্ডে অবস্থিত প্রধান বড় মসজিদ চেষ্টার রোডের কেন্দ্রীয় জামে মস্ক, হেনডন জামে মস্ক, মিলফল্ড পাকিস্তানী মস্ক এর নিরাপত্তা প্রদানে সারাক্ষণ টহল অব্যাহত রাখে এবং ১১ই আগষ্ট মুসল্লীরা যাতে বিশেষ সতর্কতা অবস্থায় চলা-ফেরা করেন, সেজন্য উপদেশ প্রদান করে।পাশাপাশি সারা সান্ডারল্যান্ড বিশেষত ঐ তিন মসজিদের নিরাপত্তা টহল জোরদার করে, পুলিশ দিবারাত্রি ২৪ ঘন্টা ষ্ট্যান্ড বাই মসজিদের গেইটে ও সংলগ্ন এলাকায় টহল চালু রাখে।বিএনপির এহেন প্রচারণায় ফলে মুসল্লী ও পরিবারের মধ্যে এক ভীতিকর অবস্থার সৃষ্টি হয়।

১১ ই আগষ্ট বিএনপি সারা ব্রিটেন থেকে মাত্র ৪০/৫০ জনের কিছু অধিক লোকের সমাবেশ করতে সক্ষম হয়, যেখান থেকে অনবরত মুসলিম বিদ্দ্বেষী বক্তব্য ও প্রচারণা চালাতে থাকে। পুলিশের বিশেষ নিরাপত্তা কর্ডন থাকায় বিএনপি ঘন্টা খানেক পর সমাবেশ সমাপ্তি করে চলে যায়।আগের দিন থেকে পুলিশের বিশেষ এলার্ট ও এডভাইস থাকায় সমাবেশ স্থলে তাই তেমন কোন মুসলমান জড়ো হননি।ইউনিটি অর্গানাইজেশনের চেয়ার তাহির খান সহ স্থানীয় লেবার দলীয় সদস্য আব্দুল মুহিত এবং হেনডন বাংলাদেশী কমিউনিটির শতাধিক তরুণ সমাবেশ স্থলে উপস্থিত থেকে বিএনপির এই প্রচার-প্রপাগান্ডার প্রতিবাদ করতে থাকেন।

১০ ই আগষ্ট রাত থেকে পুলিশ এতো বেশী নিরাপত্তা মূলক ব্যাবস্থা ও বিশেষ তল্লাশী ব্যাবস্থা গ্রহণ করে যে, তাতে স্থানীয় মুসলিম কমিউনিটি আশ্বস্থ হলেও এক ভীতিকর, শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়।কারণে সময়ে সময়ে বিভিন্ন মসজিদের বিশেষ করে পাকিস্তানী মসজিদের আশ-পাশে বিভিন্ন গ্রুপের আনা-গোণা চলতে থাকায় মুসল্লীদের মধ্যে নিরাপত্তা নিয়ে শংকা ও উদ্ভেগ দেখা যায়। এতে অনেক পরিবারের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়ে।কারণ ঐ দিন অনেক পরিবার বিশেষ নিরাপত্তাহেতু ঘরের মধ্যে সারাক্ষণ আটকা পড়েছিলেন।বলা যায় শেষ পর্যন্ত একরকম নির্বঘ্নে বিএনপির ঐ বর্ণবাদী প্রচারণা ও সমাবেশ শেষ হওয়ায়  স্থানীয় কমিউনিটির মধ্যে শোকরিয়া আদায় করা হয়।এ ব্যাপারে সান্ডারল্যান্ড বাংলাদেশী কমিউনিটির নের্তৃবৃন্দ বলেন, আমরা যখনই হেনডন মসজিদে আক্রমণের কথা জানতে পারি, তখনই স্থানীয় পুলিশের সাথে যোগাযোগ করি এবং পর্যাপ্ত নিরাপত্তা প্রদানের আহবান জানাই, যাতে এই রকম অহেতুক ঘটনা আর না ঘটে, আশার কথা স্থানীয় প্রশাসন যথেষ্ট ভালো পদক্ষেপ গ্রহণ করে, ফলে কমিউনিটির মধ্যে অনেকটা স্বস্থির ভাব বিরাজ করছে।এর আগে গত বৎসর কে বা কারা চেষ্টার রোড কেন্দ্রীয় মসজিদে রাতের বেলা এশার নামাজের সময় জানালার ছিদ্র দিয়ে মদের বোতল ছুড়ে মেরে ছিলো, তাছাড়া কেন্দ্রীয় মসজিদে প্রায়ই শ্বেতাঙ্গ এক গ্রুপ সন্ধ্যা ও রাতের বেলা কিছু দিন পর পরই মুসল্লীদের উপর হানা দিয়ে থাকে, কাউকে কাউকে রাস্তায় উত্যক্ত করারও নজির রয়েছে।বছর চারেক আগে বারোকোটের প্রখ্যাত মাওলানা চেষ্টার রোড কেন্দ্রীয় মসজিদে নামায পড়ে গাড়ীতে উঠার সময় ঐ গ্রুপের হামলার শিকার হয়েছিলেন, যদিও পুলিশ এদের বিরুদ্ধে বেশ সক্রিয়।

উল্লেখ্য ব্রিটেনের বিভিন্ন শহরে একাধিক মসজিদ মাদ্রাসা আছে, মসজিদ নিয়ে ব্রিটেনের আর কোন শহরে শ্বেতাঙ্গরা বা স্থানীয় বাসিন্দারা এতো প্রতিবাদ,সমাবেশ প্রপাগান্ডা করতে দেখা যায়নি।ব্যাতিক্রম কেবল সান্ডারল্যান্ড সিটি, এখানে অল্প কিছু ব্যাক্তি এটাকে নিউজ কাভারেজ দিয়ে জাতীয় ইস্যু বানানোর এক মতলবে আছে, এদের সাথে কখনো স্থানীয় জনগণের সমর্থন নেই, এরা কট্রর গ্রুপ হিসেবে পরিচিত।ব্রিটেনের লন্ডন, লেষ্টার, ব্লাকবার্ণ, ব্রাডফোর্ড এর মতো শহরে মসজিদ মাদ্রাসা ভরপুর, প্রেষ্টন এ বাংলা,উর্দু,ইংরেজী সাইন দিয়ে ট্র্যাফিক সিগন্যালের সাথে মেইন রোডে নির্দেশনা দেওয়া আছে মসজিদ,মাদ্রাসার দিকনির্দেশনা।লন্ডন শহরে এলএমসিতেতো মাইকে আযান দিয়ে নামায পড়া হয়।কোথাও এরকম কোন বাধা নেই।সান্ডারল্যান্ড ব্রিটেনের অন্যান্য শহর থেকে অনেক পেছনে পড়ে আছে, লেখা-পড়ার মান অত্যন্ত নিম্ন পর্যায়ে, শিল্প-সংস্কৃতির চর্চা নাই বললেই চলে,মুসলমান কমিউনিটি খুবই মাইনরিটি।

বর্তমানে স্থানীয় কাউন্সিল লেবার দলীয় সকল সদস্য দ্বারা পরিচালিত ।সান্ডারল্যান্ড সিটি কাউন্সিলের সাথে যোগাযোগ করে জানা যায়, মাত্র এক হাজারেরও উপরে কিছু সংখ্যক ব্যক্তির প্রতিবাদ এই মসজিদের বিরুদ্ধে কাউন্সিলে জমা হয়েছিলো, যাদের অধিকাংশ ব্রিটেনের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা।মজার ব্যাপার হলো স্থানীয় মিলফিল্ড এলাকার অর্থাৎ যেখানে মসজিদের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, সেখানকার ০.০১% এর কম সংখ্যক সাদা বাসিন্দা মসজিদের বিরুধীতা করেছেন বলে কাউন্সিল সূত্রে জানা গেছে। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পুলিশের বিশেষ টহল টিম তিন মসজিদের সন্নিকটে টহল দিতে দেখা গেছে।

Salim932@googlemail.com

12th August 2012.UK

Please follow and like us:
Pin Share

Add a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Follow by Email
YouTube
Pinterest
LinkedIn
Share
Instagram
error: Content is protected !!