সৈয়দ শাহ সেলিম আহমেদ- লন্ডন থেকেঃ ইউরোপিয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেন যদি বেরিয়ে যায় অথবা প্রস্তাবিত সংস্কার কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে ব্রিটেন যদি ইউনিয়নের মধ্যে রয়ে যায়- তাহলে বৃহত্তর অর্থে- সামাজিক, আর্থিক, রাজনৈতিক, ব্যবসায়িক এবং কূটনৈতিক স্বার্থে ব্রিটেনের লাভ লোকসান নিয়ে শুরু হয়ে গেছে জল্পনা-কল্পনা। সরকারের বিভিন্ন এজেন্সি এবং ইন এন্ড আউটউভয় ক্যাম্পেইনরদের পক্ষ থেকেও শুরু হয়েছে লাভ লোকসানের হিসেব-নিকেশ। ব্রিটেন বলেই কথা। যে কোন কাজ করার আগে পজিটিভ নেগেটিভ সকল দিকই ব্রিটেন সকল সময় বিবেচনা করে থাকে এবং হুট করে কোন সিদ্ধান্ত নেয়না। সম্ভাব্য শুধু নয়, আগামী ১০০ বছর পরে কি হতে পারে- সেই হিসেব আগেই করে থাকে।
সেন্টার ফর ইকোনোমিকস এন্ড বিজনেস রিসার্চ সংক্ষেপে সিইবিআর হলো এই সব তথ্য উপাত্ত ডাটা বিশ্লেষণ করে রিপোর্ট প্রকাশ করে থাকে। এদের এনালাইসিস এবং রিপোর্ট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এখানে যারা কর্মরত, তারা সকলেই নানা খ্যাতিমান পেশায় নিয়োজিত এবং নানা ক্ষেত্রেই দক্ষতায় সমৃদ্ধ । সিইবিআর এর অর্থনীতিবিদ, পরিসংখ্যানবিদ আর সেই সাথে প্রশাসনিক সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও রিসার্চাররা মিলে সম্প্রতি একটি মূল্যবান রিপোর্ট প্রকাশ করেছেন। সেই রিপোর্টে বলা হয়েছে-
০১) ব্রিটেন যদি ইউরোপিয় ইউনিয়নের মধ্যে থাকে, ইউনিয়নের সংস্কার করেই থাকে, তবে ২০৩০ সালের মধ্যে ব্রিটেনের ৭৯০,০০০ নতুন চাকুরীর সুযোগ সৃষ্টি হবে, পাশাপাশি ব্রিটেনের অর্থনীতিতে ৫৮ বিলিয়ন প্রবৃদ্ধি যোগ হবে
আর যদি বেরিয়ে যায়,
০২) ব্রিটেন যদি ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যায় তাহলে উল্লেখিত ৫৮ বিলিয়ন ইকোনোমিক গ্রুথ সহ ৭৯০,০০০ হাজার জব লস হবে।
এই সতর্কবানী দিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে লন্ডনের এই সেন্টার ফর ইকোনোমিকস এন্ড বিজনেস রিসার্চ।
এই রিপোর্ট ইন ক্যাম্পেইনরদের জন্য করা হয়েছে বুঝা গেলেও রিপোর্ট বলছে, এনার্জি, ট্রান্সপোর্ট, ফাইন্যান্স তথা সিঙ্গেল ডিজিটাল মার্কেটের ফলে ব্রিটেনেরঅর্থনীতিতে ২.৮% জিডিপি তথা ২,৮৩২ পাউন্ড করে প্রতিটি বাসা বাড়ির হিসেব কষেই বলা হচ্ছে বৃদ্ধি পাবে বা যোগ হবে।
কিন্তু সংস্কার নেগোশিয়েট না করে ব্রিটেন যদি বেরিয়ে যায় তাহলে সিঙ্গেল মার্কেটের সুফল থেকে ব্লক হয়ে যাবে-রিপোর্ট বলছে।২০১৭ সালের রেফারেন্ডামের মাধ্যমে ব্রিটেনকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে ইউরোপিয় ইউনিয়নে থাকবে নাকি বেরিয়ে যাবে।ডেভিড ক্যামেরন অবশ্য চাচ্ছেন ইউরোপিয় ইউনিয়ন এবং এর মার্কেটের সংস্কার করতে।
ইউনিয়নে থাকার পক্ষের নেতাদের বক্তব্য-
মার্কস এন্ড স্পেন্সারের সাবেক বস ইন ক্যাম্পেইনরের চেয়ার স্টুয়ার্ট রস বলেন, এটা খুব সহজ কাজ নয়। কেননা ইতোমধ্যেই আউট ক্যাম্পেইনররেরা তাদের বক্তব্য দিয়ে ব্রিটেনের লোকজনকে এর থেকে বাইরে নিয়ে এসেছেন।আমরা মনে করি ইউরোপিয় ইউনিয়নের মধ্যে থাকলে ব্রিটেন আরো শক্তিশালি হবে সকল ক্ষেত্রেই। তিনি আরো বলেন, না ভোটের তথা বেরিয়ে গেলে প্রথম পাচ বছর আপনি কিছুই এর প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখতে বা বুঝতে পারবেননা। আসল সমস্যা শুরু অর্থাৎ এর নেগেটিভ ইমপ্যাক্ট শুরু হবে প্রথম পাচ বছর পর।লর্ড রস বলেন, এটা কোন স্বল্প মেয়াদি টার্ম নয় যে, আপনি আজ রোববার ভোট দিলেন ইউরোপিয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে আসার জন্য, আর সোমবার সকালেই এর প্রতিক্রিয়া দেখবেন- এমন কোন কিছুই নয়। এটার প্রতিক্রিয়া হবে গভীরে।
ইউনিয়ন থেকে বের হওয়ার নেতাদের বক্তব্য-
আউট ক্যাম্পেইন যারা করছেন, সেই গ্রুপের ডিরেক্টর স্যার ডোমিনিক কামিংস বলেন, রাজনীতিবিদেরা অনেক ওয়াদা করেন সংস্কারের জন্য, বিপরীতে প্রতি বছরই ইইউ আরো অধিক ক্ষমতা ও অর্থ কুক্ষিগত করছে, ভোগ করছে।সংস্কার হচ্ছেনা।
তিনি বলেন, আমরা যদি ইইউ থেকে বেরিয়ে আসার পক্ষে ভোট দেই তাহলে, আমরা ফ্রি ট্রেড ডিল করতে পারবো এবং ইউনিয়নের সুপ্রিমেসির একক ক্ষমতা ও আইন ব্রিটেনের উপর চাপিয়ে দেয়া থেকে মুক্ত হবো।
(চলবে)
পাদটীকা-
২০১৭ রেফারেন্ডাম- মেজর এক ইস্যু। ব্রিটেনের ভবিষ্যতের অনেক কিছুই নির্ভর করছে। সেজন্যে নারী এশিয়ান ম্যাগাজিন এই রেফারেন্ডামের পূর্ব পর্যন্ত ইন এন্ড আউট ক্যাম্পেইনের সর্বশেষ ও তাৎক্ষনিক সংবাদ, সংবাদ বিশ্লেষণ, ধারাভাষ্য নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করবে ধারাবাহিকভাবে। আজ প্রকাশিত হলো দ্বিতীয় পর্ব। প্রথম পর্ব প্রকাশিত হয়েছে ইতোমধ্যেই।
প্রথম পর্বের নাম ছিলো- ….ইন এন্ড আউট ক্যাম্পেইন-ব্রিটেন কি ভেঙ্গে যাবে, নিউজের লিঙ্ক-
http://www.nariasianmagazine.com/%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A6%9F%E0%A7%87%E0%A6%A8-%E0%A6%8F%E0%A6%AC%E0%A6%82-%E0%A6%87%E0%A6%89%E0%A6%83-%E0%A6%87%E0%A6%A8-%E0%A6%8F%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A1-%E0%A6%86%E0%A6%89/
18th October 2014, London.