ধর্মীয় গোঁড়ামি একুশ শতকের যুদ্ধের মূল কারণ-টনি ব্লেয়ারের নিবন্ধ

ধর্মীয় গোঁড়ামি একুশ শতকের যুদ্ধের মূল কারণ-টনি ব্লেয়ারের নিবন্ধ

সৈয়দ শাহ সেলিম আহমেদ, লন্ডন

ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার সম্প্রতি গার্ডিয়ান,টেলিগ্রাফ, অবজারভার ইন্ডিপেন্ডেন্ট সহ মূলধারার পত্রিকায় কট্টর মৌলবাদের সাথে আজকের একুশ শতকের যুদ্ধের সূত্রের পুনরায় উত্থাপন করে বিতর্ক তুঙ্গে এনে দিয়েছেন। টনি ব্লেয়ার গত সপ্তাহে তার ফেইথ ফাউন্ডেশনের ব্যানারে বহুল প্রচারিত পত্রিকায় কলাম লিখে আলোচনার লাইম লাইটে তার ইরাক যুদ্ধের ধর্মীয় গোঁড়ামির বিপরীতে তার নিজের অবস্থানের সূত্র উল্লেখ করেছেন।

ব্লেয়ার তার আর্টিকেলে লিখেছেন, পশ্চিমা বিশ্ব টেররিজমের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে কেননা সরকার সমূহ দেখতে পেয়েছে কট্টর ধর্মীয় গোঁড়ামি মূলত আজকের বিশ্বের সবচাইতে বড় কনফ্লিক্টের কারণ।

ব্লেয়ার তার নিবন্ধে যুদ্ধের ও সন্ত্রাসের কারণ সিরিয়া থেকে নাইজেরিয়া হয়ে ফিলিপাইন্স সকল জায়গায়ই ঐ একই ধর্মীয় গোঁড়ামি এবং কট্টর মৌলবাদ ও ধর্মীয় উগ্রতাকে সন্ত্রাসের কারণ হিসেবে চিহ্নিত করে মন্তব্য করেছেন, এই সব ক্ষেত্রেই একটাই বিষয় সাধারণত: দেখা যায়, আর তাহলো উগ্র ধর্মীয় জঙ্গিবাদ এই সব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য স-চতুরতার সাথে মানুষকে ধোঁকা বা ঠকিয়ে ও মিস ইউজ করে ধর্মীয় বিশ্বাসের অপব্যাখ্যা দাঁড় করিয়ে মূলত ধর্মীয় এবিউজ করে পরিস্থিতি জঙ্গিবাদের দিকে উস্কে দেয়।

ব্লেয়ারের মতে, আজকের যুগে রাষ্ট্র সমূহের প্রধান সমস্যা হচ্ছে ধর্মীয় ঐ জঙ্গিবাদ ও গোঁড়া সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করা, এটা একধরনের এক ভয়াবহ ফেনোমেনা। কেননা এসব কর্মকাণ্ড সহজে অনলাইন, বয়স এবং সর্বক্ষেত্রে সহজেই ছড়িয়ে পড়ে। বিগত দশকে বা বিশের দশকে যেমন করে এটা সম্ভব ছিলো সহজে আইডেন্টিফাই করে এই রিলিজিয়াস বা সাংস্কৃতিক আগ্রাসন ও উগ্রতা রুখে দেয়া সহজ ছিলো রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে, একুশ শতকে সেটা আসলেই বড় এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে।

ব্রিটেনের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার ২০০৩ সালে ইরাক ইন্টারভেনশনে যৌথ বাহিনীর সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণায় নেমেছিলেন, যেখানে তিনি আজকে এসে বলছেন ঐ সময় লিবারেল ডেমোক্রেসি অতি মাত্রায় রাজনীতিকীকরণ করা হয়ে গিয়েছিলো বলে মনে করা হচ্ছে।

যদিও ব্লেয়ারের খুব কাছের লোকজন টনিকে এখনো তার অতীত ইরাক যুদ্ধ নিয়ে পশ্চিমাদের সাথে দ্বিমত না করে বরং তিনি ভবিষ্যতের সরকার প্রধানদের জন্য নিজের উপদেশ বা নির্দেশনা হিসেবে লিখেছেন, আগামীতে সরকারগুলোকে ধর্মীয় এই উগ্র সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডকে ইস্যু করে সঠিক আইডেন্টিফাইয়ের মাধ্যমে ধর্ম এবং রাজনীতিকে সমানভাবে এবং কার্যকর ভাবে ওয়ার্ল্ড লিডাররা যাতে এজেন্ডা হিসেবে এগিয়ে নিয়ে যান, সেজন্যে ব্লেয়ার বলেন, দিস ইজ এ ষ্ট্রাগল দ্যাটস অনলি জাস্ট বিগিনিং

ব্লেয়ার লিখেছেন, ধর্মীয় সংহতি বা ধর্মীয় সহানুভূতিশীল পূর্ণ সম-ব্যবস্থা একুশ শতকের পৃথিবীর দেশ সমূহ এবং সরকার প্রধান মূহের মধ্যে শান্তিপূর্ণ অবস্থা বজায় রাখা সম্ভব।

ব্লেয়ার তার আর্টিক্যালের মাধ্যমে তার ফেইথ ফাউন্ডেশনের অনলাইন ডাটা যা তিনি হার্ভার্ড ডিভাইনিটি স্কুলের সহযোগিতায় পরিচালিত এই অনলাইন ফোরাম- যাকে তিনি মনে করছেন পৃথিবীর বৃহৎ ডাটা এনালাইসিস ও তথ্য সরবরাহের জন্য সহায়ক এই রিলিজিয়াস এবং কনফ্লিক্টের জন্যে। বর্তমানে তিনি এই ফেইথ ফাউন্ডেশন পরিচালনা করছেন এবং বিশ্বের বহু দেশে এই বিষয়ে তিনি বক্তৃতা দিয়ে চলেছেন।

টনি ব্লেয়ার তার নিবন্ধে বলেছেন,যেখানে বিশ্ব তার নিজস্ব সিকিউরিটি এবং নাগরিকদের প্রোটেকশনের জন্যে পদক্ষেপ এককভাবে এমনকি মিলিটারি একশনও কার্যকর হবেনা বা ফল নিয়ে আসবেনা, যদিনা ধর্মীয় ঐ উগ্র সন্ত্রাসবাদের প্রকৃত রুটের কারণ অনুসন্ধান করে পদক্ষেপ না নেয়া হয়

গত বছর সামারের সময় চিলকোটের রিপোর্ট যখন প্রকাশিত হয়, তখনি টনি ব্লেয়ারের ঐ ইরাক যুদ্ধের যৌক্তিকতা নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে উঠে। সর্বত্রই তখন আলোচিত হয় ব্লেয়ার ও বুশ দুজনে  অতি রাজনৈতিক কারসাজির মাধ্যমে পশ্চিমা বিশ্বের কাছে সাদ্দামের সরকার প্রশাসনকে সিকিউরিটি ও  এ অঞ্চলের ও আগামী বিশ্বের নিরাপত্তার জন্য বিরাট হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করে যুদ্ধে দেশ সমূহকে নিয়েছিলেন, যা এখন অনেক প্রশ্নেরই উত্তর অনুচ্চারিত রয়ে গেছে।

ব্লেয়ার তাই তার নিবন্ধে লিখেছেন, ইরাক আক্রমণ এবং ঐ অঞ্চলে ডেমোক্রেসির অনুপস্থিতিতে ধর্মীয় উগ্রবাদী ও ঐ অঞ্চলের নিরাপত্তার উপর হুমকির উপস্থিতিতে জনগণের ফ্রিডম, মানবাধিকার ও গণতন্ত্র সুপ্রতিষ্ঠা এবং একই সাথে বিভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠীর মধ্যে সহনশীলতা রক্ষা ও আনয়নের জন্যে তাদের ঐ সময়ে অংশগ্রহণ অপরিহার্য হয়ে উঠেছিলো। আজকের মধ্যপ্রাচ্যের দেশ গুলোর মধ্যে এবং মধ্যপ্রাচ্যের সংকটের মূলে মূলত ঐ বিষয়গুলো নেগেটিভলি উপস্থাপিত হয়েছে এবং এই সব সমূহ অতি ক্ষুদ্রভাবে এড্রেস করা হচ্ছে বলে তার ধারণা।

কিন্তু সমালোচকরা বলছেন, ঐ সময় ইরাক এবং আফগানিস্তান অতি মাত্রায় আধুনিক গণতান্ত্রিক শাসনের কথা বলে মূলত অতিমাত্রায় রাজনীতিকীকরণ করে ধর্মীয় উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসের মূল কারণকে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছিলো, যার ফলে গণতন্ত্র আজ হুমকি এবং উপেক্ষিত অথচ এক ধরনের গণতন্ত্র ম্যানিয়া হয়ে দেখা দিয়েছে।কারণ বিভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠীর ভিতরকার দ্বন্ধ, আর ধর্মীয় সংঘাত এই উগ্র ধর্মীয়দের এড্রেস করা থেকে রয়ে যায় আড়ালে।

রয়াল ইন্টারন্যাশনাল ইন্সটিটিউট সার্ভিসের ডিরেক্টর জনাথান আইল ব্লেয়ারের এনালাইসিসের সমালোচনা করে বলেছেন, রাজনৈতিক নেতাদের জানা উচিত ছিলো ঐ সব দেশের ধর্মীয় বিভিন্ন গোষ্ঠীর ভিতরকার দ্বন্ধ-সংঘাতের ইতিহাস এবং বিভিন্ন গোষ্ঠীর কালচার, রিলিজিয়াস ম্যাটার, এতে লাক অব ইনফরমেশনকে দায়ী না করে রাজনৈতিক নেতাদের প্রকৃত ইনফরমেশন অবগত ও সঠিকভাবে এড্রেস না করে ইন্টারভেনশনে জাতিগুলোকে জড়িত করার ফলে কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যায়নি, বরং সমস্যা আরো ভিন্ন রূপে ভিন্ন আঙ্গিকে ধর্মীয় উগ্রতা ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে।

Salim932@googlemail.com

01st February 2014, London.

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *