সৌদি রাজপরিবারের ঘনিষ্ট এবং সৌদি আরবের অত্যন্ত প্রভাবশালী ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান আল-তায়েফ টেকনিক্যাল কোম্পানি লিমিটেড এর প্রেসিডেন্ট, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং এর উপর উচ্চতর ডিগ্রিধারী ইঞ্জিনিয়ার আবদুল আজিজ ওমর এম হালাওয়ানির সাথে সাক্ষাত, পবিত্র মসজিদে নববীতে ফজরের নামাজের পরে, এশরাক নামাজ শেষে রওজাতুল জান্নাত থেকে বেরিয়ে হযরত জিব্রাইল(আঃ) গেইটের সামনে।
ভদ্র লোকের সাথে সাক্ষাতের পর্বটি বেশ আকর্ষনীয়। পর পর কয়েকদিন রওজাতুল জান্নাতে(বেহেশতের বাগান) আমার উপস্থিতি দীর্ঘসময় ধরে একেবারে প্রথম কাতারে কেমন করে, একই স্থানে অবস্থান করে, দোয়া দুরুদ করি- ইঞ্জিনিয়ার সাহেব কেমন করে লাখো লোকের ভীড়ের মধ্যে লক্ষ্য করলেন, বুঝতেই পারিনি। ভদ্রলোক রওজাতুল জান্নাতেই নামাজের শেষে দোয়ার পরে বাহক(পুলিশের বিশেষ শাখার লোক মারফত) আমাকে উনার কাছে বিনয়ের সাথে নিলেন, কাছে ডেকে মহব্বতের সাথে বসালেন। খাতির যত্নে আমি বিস্মিত এবং অভিভুতও বটেই। যে পুলিশ বা নিরাপত্তার লোকজন রওজাতুল জান্নাতে ঢুকতে শান্তি শৃঙ্খলার স্বার্থে সবাইকে বাধা দেন, সেই নিরাপত্তার লোকজন হঠাত করে যেন খাতির যত্নের সাথে তাকাতে শুরু করলেন।বুঝতে পারলাম, এই ভদ্র লোক সরকারের উপর মহলের লোক। নিরাপত্তার দায়িত্বে সকলেই উনাকে খুব সহনীয় ও তোয়াজ করছেন।
ইঞ্জিনিয়ার সাহেবের সাথে বসে দোয়া দুরুদ ( পঞ্চম দিনে ) করার পর বেশ সকাল বেলা যখন বের হয়ে আসবো, তখন উনিও আসলেন একই পথে। রসুলুল্লাহর রওজার একেবারে সামনে যখন দাঁড়ালাম, তখন ইঞ্জিনিয়ার সাহেব হাত ইশারা করে মনের ইচ্ছা জানতে চাইলেন। সম্মতিতে বললেন থামতে। অবাক বিস্ময়ে, মনে হলো সমগ্র পৃথিবী আমার সামনে এসে হাজির। নিরাপত্তার লোকজন চাবি হাতে- রওজার দরজার চাবি। আমি হতবাক – এও কী সম্ভব ? কিন্তু সেটাই হলো আমার জীবনে। বুঝে নিলাম, সারারাত যে রওজাতে সালাম দিয়ে মনের কানে বার বার জানতে চাইছি, আমার সালাম কী পৌঁছেছে রসূলুল্লাহর দরবারে।আজ বুঝে গেলাম, আল্লাহ চাইলে সালামের জবাব এভাবেই আসে।
যে জিব্রিল গেইটে নিরাপত্তার লোকজন কাউকে দাড়াতেই দেয়না। জিব্রিল গেট দিয়েও ঢুকার সুযোগ এই মহান ভদ্রলোকের কল্যাণে।
ইঞ্জিনিয়ার সাহেব এখানেই থামেননি , রওজা মোবারক থেকে বেরিয়ে আমি যখন হোটেলের পথে যাবো, ধন্যবাদ দিয়ে, ঠিক তখনি উনি যেতে দিলেননা। মদীনায় রওজার পাশেই নিজ বাসভবনে নিয়ে গেলেন। বিশাল বাড়ির আঙিনায় পৌছে নিজেকে খুব ছোট মনে হলো। রাজকীয় সব কিছু, চাকচিক্যময়, জৌলুসে ভরপুর।
ইঞ্জিনিয়ার সাহেব নিজের গল্প বলতে লাগলেন….
তারপর মসজিদে কুবায় নিয়ে গেলেন নিজে ড্রাইভ করে।সেখান থেকে মদীনার উপকন্ঠে দামী রেস্তোরায় খাওয়ালেন।
ভদ্রলোকের কল্যাণে অগত্যা সেদিনের ফ্লাইট রিশিডিউল করতে হলো। মদীনার বিখ্যাত স্থান সমূহ দেখালেন, রসূলুল্লাহ ( সাঃ) স্মৃতি বিজড়িত অসংখ্য স্থানসমূহ পরিদর্শন করালেন- সেই সব স্থান, যা সাধারণের সহজেই প্রবেশ অসাধ্য।ভদ্রলোককে সব জায়গায়ই নিরাপত্তার দায়িত্বে এবং উচ্চ পদস্থ সকলেই সমীহ করলেন।
বিদায় নিয়ে আসার সময় নিজের কার্ড হাতে দিয়ে মোবাইল নাম্বার সহ লিখে দিলেন এবং সৌদি আরবে থাকাকালিন সময়ে যেকোন সমস্যায় যোগাযোগ করতে বললেন। আসার সময়ে খুব ছোট করে অত্যন্ত স্নেহের সুরে বললেন, সৌদি যতদিন থাকবো, ততোদিন যেন কোথাও নিজের জার্নালিজম পরিচয় না দেই।