সৈয়দ শাহ সেলিম আহমেদ
ওয়াশিংটন উড্রো উইলসন সেন্টারের সিনিয়র স্কলার, বাংলাদেশের সাবেক মার্কিন এম্বাসাডার উইলিয়াম বি মাইলাম নিউ ইয়র্ক টাইমস এবং পাকিস্তানের ট্রাইব্যুন পত্রিকায় বাংলাদেশের বর্তমান নির্বাচন উত্তর শাসনব্যবস্থা নিয়ে এক নিবন্ধ লিখেছেন, যা প্রকাশিত হয়েছে ১৩ জানুয়ারি ২০১৩। পাঠকদের জন্যে এখানে সেই নিবন্ধের সংক্ষিপ্ত অংশ তুলে ধরা হলো।
মাইলাম লিখেছেন, রাজনৈতিকভাবে বাংলাদেশ বর্তমানে বিগত ৪০ বছরের মধ্যে সকল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করছে। গত ৫ তারিখের নির্বাচন বাংলাদেশকে ওয়ান-পার্টির শাসন ব্যবস্থায় ফিরিয়ে এনেছে। একজন রাজনৈতিক পণ্ডিতের ভাষ্যে মাইলাম লিখেছেন, পরবর্তী টার্গেট হলো এক ব্যক্তির শাসন- একদলীয় শাসন ব্যবস্থার দিকে দেশকে নিয়ে যাওয়া, ইতিহাস মূলত তাই বলে। বলাই বাহুল্য ১৯৭২ সালের তলাবিহিন ঝুড়ির বাংলাদেশ সব সময়ের জন্য উদাহরণ হয়েই কি রয়ে যাবে?
মাইলাম আরো লিখেছেন, বর্তমান অবস্থার জন্য আওয়ামীলীগ সম্পূর্ণরূপে দায়ী। বিএনপি-প্রধান বিরোধীদল, যে নিরপেক্ষ, ফ্রি, ফেয়ার, ক্রেডিবল নির্বাচনের মাধ্যমে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করতো বলেই জনমতে সেটাই প্রতিফলিত হয়েছে আগেই। এই দল এর আগে নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে দুই বার ক্ষমতাসীন হয়েছিলো। তারপরেও বিএনপি এই নির্বাচন বয়কট করে- নিরপেক্ষ তত্বাবধায়ক সরকারের দাবীতে। এ নির্বাচন আগে থেকেই ধারণা করা হয়েছিলো, আওয়ামীলীগ জনরায়কে ক্ষমতার দাপটে নিজেদের দিকে নিয়ে যাবে এবং বিএনপিকে সম্পূর্ণরূপে এর বাইরে রাখবে।
২০১৪ সালের বাংলাদেশের রাজনীতি অস্থির এবং সহিংসতায় পূর্ণ সেই ১৯৭৫ থেকে দারিদ্রসীমার নীচে মানুষের বসবাস।যদিও বর্তমানে বাংলাদেশ ৭৫ পরবর্তী সেই দরিদ্রতা আগের তুলনায় কমে এসেছে, তারপরেও জনগণ এখনো গরীব তথাপি এদেশ বিগত দুই দশকের মধ্যে প্রবৃদ্ধির হার ক্রমেই বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছে এবং এর বর্তমান প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি পেয়েছে। গত দুই দশকের মধ্যে দেশটির গার্মেন্টস শিল্প আশাতীত উন্নতি সাধন করেছে, মাস এডুকেশনের ফলে এর জনগণের শিক্ষার হার এবং হেলথি পিপলের সংখ্যা আশানুরূপ বৃদ্ধি পেয়েছে।
তারপরে, মাইলাম এই পর্যায়ে এসে লিখেছেন, ক্লিয়ারলি বলা যায়, ৫ তারিখের নির্বাচনে বাংলাদেশের জনগণের মতামতের প্রতিফলন হয়নি। বলা হচ্ছে ৪০ শতাংশ ভোট নির্বাচনে পড়েছে- ৩০০ আসনের মধ্যে ১৪৭ আসনের এই নির্বাচনে। কিন্তু নিরপেক্ষ অবজার্ভার এবং ভোটের দিন ব্যালট পেপারের ছড়াছড়ি এবং নির্বাচনী কেন্দ্রে সহিংসতা প্রেক্ষিতে বলা যায় ২০ শতাংশের ভোটের বেশী কাস্ট হয়নি, যা পর্যালোচনা করে নির্বাচনী এক্সপার্টদের মতে ১২ শতাংশের কাছাকাছি হবে বলে বিশ্বাস।অথচ ১৯৮৬ সালে ৮৬ শতাংশ, ২০০১ সালে ৭৪ শতাংশ, জানুয়ারি ১৯৯৬ এ ৭৫ শতাংশ এবং ১৯৯১ সালে ছিলো ৫৫ শতাংশ।
মাইলাম এখানে এসে লিখেছেন, ইতিহাস সাক্ষী, ক্ষমতাসীন শাসক যখন একদলীয় শাসনের দিকে যায়, তখন যে নির্বাচনের আয়োজন করে, সেটা বৈধ অবৈধর ধার ধারেনা, জনগণের মতামতের তোয়াক্কা করেনা, বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের জেলে পুরে, প্রতিবাদকারীরাই তাদের শত্রুতে পরিণত হয়ে থাকে, দেশের অর্থনীতির বারোটা বাজিয়ে থাকে-ঋণের ভারে জর্জরিত করে ফেলে, যেখান থেকে স্বৈরতান্ত্রিকভাবে দেশ পরিচালনা করে থাকে এবং সেই অবস্থা থেকে বের হয়ে আসা কঠিন হয়ে পড়ে। আওয়ামীলীগ সরকার নির্বাচনের আগে থেকে সেই স্বৈরতান্ত্রিক আচরণ শুরু করে, বিরোধী নেতা কর্মীদের জেলে পুরে। বিএনপির অধিকাংশ নেতা কর্মীদের জেলে বন্দী করে। আওয়ামীলীগ নির্বাচনের সময় জামায়াতে ইসলামীর তাণ্ডবে জামায়াতের সাথে বিএনপির সহযোগিতা প্রচারণা হিসেবে কাজে লাগায়, যে জামায়াত চায় বাংলাদেশকে ইসলামী রাষ্ট্র বানাতে।
গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রাখতে আগামী নির্বাচনের বিকল্প নেই। তবে সেই পর্যন্ত সময়ে একব্যক্তির ও একদলীয় শাসনে বিরোধীদল কি শেষ করে দেয়া হবে ? প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনেও আগামী নির্বাচন এবং এর সময়ের নিশ্চয়তা নিয়েও সংশয় ।আগামী নির্বাচনের অনিশ্চয়তা ও সময়ের মধ্যে বিরোধীদলীয় ফোর্স ধ্বংস করে দেয়া হবে ? বিরোধীদল কি সেই সময় পর্যন্ত ঠিকে থাকতে পারবে একদলীয় স্বৈরশাসনের যাঁতাকলে ?
বিএনপির জন্য এক ঐতিহাসিক চ্যালেঞ্জ। ফ্রি ফেয়ার, ট্রান্সফরমেশনাল, মডার্ণাজাইজেশন ও ডেমোক্রেটিক সিস্টেম অব্যাহত রাখতে (এবং ইনশটিটিউশন রি-বিল্ডিং সহ)পাশাপাশি সেক্যুলার সহ এর ভাইব্রেন্ট ইকোনোমি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বিএনপিকে ঐতিহাসিক ভূমিকা নিতে হবে। বেগম জিয়াকে ১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধীদের ন্যায় বিচার নিশ্চিত করে দেশকে নিরপেক্ষ বিচারক ব্যবস্থায় তার সহযোগী জামায়াতের যুদ্ধাপরাধীদের ন্যায় বিচার প্রদান করা- আর এতোসবের মধ্যেও সবচাইতে বড় কঠিন কাজ হলো ডাইন্যাস্টি পলিটিক্স থেকে ডেমোক্রেটিক সিস্টেমে দল এবং দেশকে নিয়ে আসার চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশের সামনে।
(অরিজিনাল টেক্সট থেকে সংক্ষিপ্ত করে প্রকাশ করা হলো)
১৩ জানুয়ারি ২০১৪।