সুদীপ চক্রবর্তী- জন্ম বৃহত্তর সিলেটের হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জে। পেশা শিক্ষকতা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্য কলা বিভাগের তরুণ শিক্ষক সুদীপ। কাজ করেন নাটক, থিয়েটার নিয়ে। একাধারে নাট্যকার ও নির্দেশক। মঞ্চেও কাজ করেছেন। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র সহ থিয়েটার অলিতে গলিতে হেটে চলেন নির্বিঘ্নে। যেখানেই নতুনত্ব, নাটক-কলার ঘ্রাণ, সেখানে সুদীপের পদচারণা।ঢাকাস্থ ব্রিটিশ কাউন্সিলের তত্বাবধানে বেশ কিছু চমকপ্রদ উপস্থাপনা করেছেন সুদীপ।ভ্রমণ ও কাজ দুটো নিয়ে সমান তালে বেরিয়েছেন দেশের এই প্রান্ত থেকে ঐ প্রান্ত। ভারত, নেপাল, মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র সহ অনেক দেশেই বাংলা নাটক নিয়ে বেরিয়েছেন, প্রদর্শনী করেছেন।
বর্তমানে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র লন্ডন এবং কবি লেখক শামীম আজাদের সহযোগিতায় সুদীপ চক্রবর্তী লন্ডনে। তিনি আগামী ২রা নভেম্বর থেকে লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটস অনুষ্ঠিতব্য সৃজন অব বাংলা ড্রামা উৎসবে যোগ দেয়ার জন্য ব্রিটেন অবস্থান করছেন।
ব্রাডি আর্ট সেন্টারে ডি এল রায়ের জীবন ও কর্মের উপর অনুষ্ঠানের এক ফাকে কথা হয় তরুণ এই সৃজনশীল শিক্ষক ও নাট্য নির্মাতা ও কর্মীর সাথে।সহাস্যে নিজের পরিচয় দিয়ে এগিয়ে এলেন। এক পাশে চেয়ার নিজেই টেনে নিয়ে বলতে শুরু করলেন।
সুদীপ বললেন, নাটকের মাধ্যমে এখানকার বাঙালি জনগোষ্ঠীর বিশেষ করে বৃহত্তর সিলেটের সকল প্রবাসী ও এই প্রজন্মের সকলের কাছে জীবন ঘনিষ্ঠ আমাদের বাঙালি সংস্কৃতির যে আদি ও অকৃত্রিম ঐতিহ্য, তাকে সকলের কাছে সহজ ও বোধগম্য করে উপস্থাপনের মাধ্যমে যোগসূত্র স্থাপন করার লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
সুদীপ বলেন অত্যন্ত চমৎকার ও প্রাঞ্জল ভাষায়। সুদীপের কথার বাচন ভঙ্গীর মধ্যে আঞ্চলিকতার কোন টান নেই।মাঝে মধ্যে বরং কিছুটা কোলকাতার আদি বাংলার উচ্চারণের রেশ সুদীপের কথার মধ্যে এক রকমের অলংকার হয়ে ফুটে উঠে। সুদীপ বলতে থাকেন, ২০১৪ সালে লন্ডন বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র শেক্সপিয়রের নাটক বাংলা ভাষায় এবং সিলেটের বাংলা উচ্চারণে রূপান্তর করে উপস্থাপনের টার্গেট নিয়ে কাজ শুরু করেছেন। মূলত: সে কারণে শামীম আপার উৎসাহে লন্ডনে আগমন।আমরা শুধু শেক্সপিয়রের নাটক সিলেটী বাংলায় রূপান্তরিত করেই উপস্থাপন করবোনা, এখানে আমরা সিলেটের ভাটিয়ালী গান, সুর, বাউল আব্দুল করিম, লালন শাহ, হাসন রাজা, মরমী গান, নৌকা বাইচ, লাঠি খেলা, ষাঁড়ের লড়াই। মোরগের খেলা, গোল্লা ছুট ইত্যাদি সিলেটের ঐতিহ্যবাহী বাংলা সংস্কৃতিকে আমরা এখানকার জনগণের ভাষায় সিলেটী বাংলায় প্রদর্শন করতে চাই।
সুদীপ আরো বলেন, আমরা এই লন্ডনের বাঙালি সিলেটী শিল্পী, কলা-কুশলী, নতুন পুরনো, তরুণ-তরুণীদের নিয়ে ওয়ার্কশপের আয়োজন করবো। আমরা তাদেরকে রিক্রুট করে প্রয়োজনীয় ওয়ার্কশপ ১ মাস ব্যাপী প্রতিদিন চার ঘণ্টা হিসেবে লন্ডনে কাজ হবে। তার পরে আমরা সেটা প্রদর্শনীতে যাবো।
আমাদের এই কাজে সহযোগিতার হাত নিয়ে এগিয়ে এসেছেন লন্ডন বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র।সাথে আছেন উদীচী যুক্তরাজ্য, সত্যেন সেন স্কুল অব পারফর্মিং আর্ট।
সুদীপ আরো যোগ করেন, সিলেটের বাংলা আসলেই এর সমৃদ্ধ এক ইতিহাস ভাণ্ডার।কালের আবর্তে এর অনেক পুরনো অনেক ইতিহাস, ঐতিহ্য হারিয়ে যেতে চলেছে। আমরা এই কাজের মাধ্যমে সিলেটের বাংলাকে মূলধারার বাংলার সাথে একীভূত করে সুন্দর ভাবে নিয়ে যেতে চাই। আমরা দেখিয়ে দিতে চাই, কোন আঞ্চলিকতার অজুহাতে তার সমৃদ্ধ ঐতিহাসিক ঐতিহ্য মণ্ডিত ভাণ্ডার সমূহ নষ্ট ও পেছনে পড়ে থাকতে পারেনা। আর সে কারণে আমরা বিশ্বখ্যাত শেক্সপিয়র নাটক বেছে নিয়েছি আমাদের সিলেটী বাংলার মাধ্যম হিসেবে।সিলেটী বাংলাকে উপহাস নয়-মর্যাদার আসনে নিয়ে প্রদর্শনীর মাধ্যমে উপস্থাপনই সুদীপের প্রয়াস বললেন।
সুদীপ বলেন, আগ্রহী বাংলাদেশীদের বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র লন্ডন অথবা শামীম আজাদের সাথে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করেছেন।
Salim932@googlemail.com
29th October 2013.