সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ইমিগ্রেশন নিয়ে অতি উৎসাহী বিতর্ক সতর্কতার সাথে মোকাবেলা করার পরামর্শ দিয়েছেন বর্তমানে ক্ষমতাসীন কোয়ালিশনের শরিক কনজারভেটিভ পার্টি এবং লিবারেল ডেমোক্রেট বোধগম্য কারণে একাট্টা ইমিগ্রেশনের ব্যাপারে বেশ কঠিন এবং বলা যায় মজবুত যত একশন নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা যায়, সেই সব সকল পদক্ষেপ দ্রুততার সাথে নিয়ে চলেছে। একই সাথে ইলেক্ট্রনিক এবং প্রিন্ট মিডিয়ায় কোয়ালিশন সরকারের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরুন ও তার কেবিনেটের হোম সেক্রেটারি থেরেসা মে অত্যন্ত কঠোর এবং তির্যক ভাষায় ইমিগ্রেশন নিয়ে কঠিন থেকে কঠিণতর নীতিমালার পক্ষে সাফাই ও বক্তব্য দিয়ে চলেছেন।
সম্প্রতি বিরোধী-নেতা লেবার দলীয় প্রধান ডেভিড মিলিব্যান্ডও এই ইমিগ্রেশনের ব্যাপারে সরকারের নীতির অনেকটা কাছাকাছি বক্তব্য দিয়ে বেশ আলোচনার ঝড় তুলেছেন।ক্যামেরুন যেমন করে ইমিগ্র্যান্টদের ইংরেজি জানা ও দক্ষতার উপর গুরুত্ব দিতেছেন, তেমনি করে মিলিব্যান্ডও একই সাথে ইংরেজি জানা ও ইংরেজির দক্ষতার উপর গুরুত্ব দিয়ে বক্তব্য দেওয়ার পর পরই সংবাদ পত্র ও সুধীমহলে ঝড় বয়ে যায়। আর এই অবস্থায় লন্ডনের ইংরেজি গণমাধ্যম সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ইমিগ্র্যান্টদের ব্রিটেনের জন্য ভালো ( পজিটিভ) দাবী করে চলমান বিতর্ককে অত্যন্ত সচেতনভাবে মোকাবেলা করার জন্য তিনি পরামর্শ দিয়েছেন। টনি ব্লেয়ার আরও বলেছেন, ইমিগ্রেন্ট বিষয়ে লাগামহীন কথা-বার্তা ব্রিটেনে বরং বর্ণবাদ ও জাতিগত দাঙ্গাকে উস্কে দিতে পারে। সাম্প্রতিককালে ইমিগ্র্যান্টদের নিয়ে রাজনীতিবিদদের নানা মন্তব্যের জবাবে টনি এসব কথা বলেন।
এদিকে গত ডিসেম্বরের (২০১২)মাঝামাঝি সময়ে টুটিংহামে লেবার দলের সভায় বক্তৃতা কালে বর্তমান দলনেতা এড মিলিব্যান্ড বিগত লেবার সরকারের ইমিগ্রেশন নীতিমালার সমালোচনা করে একে ভুল ডাইরেকশন হিসেবে চিহ্নিত করেন। মিলিব্যান্ড নিজেকে ইমিগ্র্যান্ট পরিবারের সন্তান দাবী করে ব্রিটেনের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে ইমিগ্র্যান্টদের অসামান্য অবদানের কথা স্বীকার করলেও মিলিব্যান্ড ইমিগ্রেশন নিয়ন্ত্রণে পক্ষে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন।তিনি বিগত লেবার সরকারের সমালোচনা করে বলেন, লেবার সরকার ইমিগ্রেশন নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। পর্যবেক্ষকরা মিলিব্যান্ড এর সমালোচনাকে কনজারভেটিভ ও ইউকে ইন্ডিপেন্ডেন্ট পার্টির ইতি-পূর্বেকার লেবার সরকারের ইমিগ্রেশন পলিসির সমালোচনার সমর্থন হিসেবেই দেখছেন।
ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর পরই ইমিগ্রেশনের ব্যাপারে কঠোর মনোভাব গ্রহণ করে আসছে।ইতিমধ্যে তারা ইমিগ্রেশন আইনের ব্যাপক পরিবর্তন করে ব্রিটেনে নতুন ইমিগ্র্যান্ট আসার পথ অনেকটাই রুদ্ধ করে দিয়েছে। বর্তমান ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ সরকারের প্রধান ডেভিড ক্যামেরুন থেকে শুরু করে হোম সেক্রেটারি থেরেসা মে সহ প্রায় সকলেই ইমিগ্র্যান্টদের ইংরেজি দক্ষতা ও ব্রিটেনের সংস্কৃতি চর্চা নিয়ে সমালোচনা করে আসছেন।
সম্প্রতি হোম সেক্রেটারি থেরেসা মে পার্লামেন্টে এবং দলীয় বিভিন্ন ফোরামে ইমিগ্রেশনকে প্রধানতম সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, ব্রিটিশরা মূলত ইমিগ্র্যান্টদের কারণে ঘর-বাড়ীর উচ্চ মূল্য গুণতে হচ্ছে।
ইমিগ্র্যান্টদের নিয়ে এমনসব নেতিবাচক প্রচারণা ও বক্তব্যের জবাবে সাংবাদিকরা ব্রিটেনের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের মুখোমুখি হলে তিনি বলেন, তার সময়কার ইমিগ্র্যাশন নীতিকে অত্যন্ত সময়োপযোগী দাবী করে বলেন, ইমিগ্রেশন ব্রিটেনের জন্য ভালো।ব্রিটেনে আসা ইমিগ্র্যান্টরা এ দেশের অর্থনীতি ও সংস্কৃতিতে ইতিবাচক অবদান রেখে চলেছেন। কোনভাবেই এই সব ইমিগ্র্যান্টদের বলির পাঠা বানানো উচিৎ হবেনা।তিনি আরও বলেন, ইমিগ্র্যান্ট বিষয়ে সচেতনভাবে কথা বলা উচিৎ, কেননা তিনি মনে করেন এই বিষয় সতর্কতার সাথে মোকাবেলা করা উচিৎ হবে। তাতে ব্রিটেনের জন্য মঙ্গলই হবে, নতুবা অনেক সমস্যার সৃষ্টি করবে। এ সময় তার সময়কার ইমিগ্রেশন নীতিমালাকে সময়োপযোগী উল্লেখ করে বলেন, অবশ্যই গণ-ইমিগ্রেশনকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং অবৈধ ইমিগ্র্যান্টদের ব্রিটেন থেকে বিতাড়িত করতে হবে।প্রশ্ন হলো আমরা কিভাবে সে কাজটি করবো সেটাই হলো গুরুত্বপূর্ণ।
কনজারভেটিভ দলীয় অপর এক প্রভাবশালী সদস্য লন্ডনের মেয়র বরিস জনসন থেরেসা মের সাম্প্রতিক বক্তব্যের সমালোচনা করেছেন।ইমিগ্র্যান্টদের কারণে ব্রিটেনের ঘর-বাড়ির দাম বাড়ার কারণ অবান্তর বক্তব্য। তিনি থেরেসার এই বক্তব্যের কোন যুক্তি খুঁজে পান না বলে মন্তব্য করেছেন।
ইউকে ইন্ডিপেন্ডেন্ট পার্টি মূলত ইমিগ্র্যান্টদের ঘোরতর বিরোধী, একইভাবে ব্রিটিশ ন্যাশনাল পার্টি আর একধাপ এগিয়ে সব ইমিগ্র্যান্টদের বের করে দেওয়ার প্রচার-প্রোপাগান্ডায় ব্যস্ত।
অতি সম্প্রতি ব্রিটেনের আদম শুমারি প্রকাশের পর থেকে ইমিগ্র্যান্টদের বিষয়ে রাজনীতিবিদদের মধ্যে এই বিতর্ক আরও ব্যাপকভাবে শুরু হয়েছে।সাম্প্রতিক আদম শুমারির রিপোর্টে দেখা যায়, ব্রিটেন এবং ওয়েলসে গত এক দশকে জনসংখ্যা ৭ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ কোটি ৬১ লক্ষ। এর মধ্যে ইমিগ্র্যান্টদের সংখ্যা প্রায় ৭৫ লক্ষ। এ বিপুল ইমিগ্র্যান্টদের ৩৮ লক্ষই এসেছে গত ১০ বছরে। মূলত আদমশুমারির এমন তথ্যই ইমিগ্রেশনের বিষয়ে নতুন করে আলোচনার ঝড় তুলে।
অন্যদিকে ইংরেজি দৈনিক ইন্ডিপেন্ডেন্ট এর এক জরীপে দেখা যায়, ইমিগ্র্যাশন ইস্যুতে ইউকিপ পার্টির জনপ্রিয়তা গত এক মাসে ৩ শতাংশ থেকে ৯ শতাংশে উন্নীত হয়েছে, যা এযাবৎ কালের দলটির জনপ্রিয়তায় রেকর্ড পরিমাণ উন্নীত বলে জরীপে উল্লেখ করা হয়েছে। আর দলটির এমনতর জনমত জরীপের প্রভাব পড়েছে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির উপর।জরীপে দেখা গেছে, গত এক মাসে কনজারভেটিভ দলের জনপ্রিয়তা ৪ শতাংশ কমে হয়েছে ৩১ শতাংশ। আর এর ফলে লেবার দল প্রথমবারের মতো কনজারভেটিভ সরকারের উপর ১০ শতাংশ লিড নিতে সক্ষম হয়েছে।লেবার দলের সমর্থন বর্তমানে ৪১ শতাংশ, যা আগের মাসের চেয়ে ১ শতাংশ কম।
ইতিপূর্বে কোয়ালিশন সরকার ক্ষমতায় এসেই ব্রিটেনে পড়তে আসা বিদেশী ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য নানাবিধ কড়াকড়ি আরোপ করে ইমিগ্রেশন আইনের ব্যাপক পরিবর্তন সাধন করেছে, যা একটা চলমান প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে সরকার এতে পরিবর্তন করছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিদেশী ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য আরও পরিবর্তন-এর আভাস ইতিমধ্যেই দেওয়া হয়েছে। এদিকে ইউকে বর্ডার এজেন্সি ব্রিটেনে অবৈধভাবে বসবাসরতদের বিরুদ্ধে ব্যাপক ধর-পাকড় অব্যাহত রয়েছে।রেস্টুরেন্ট, টেকওয়ে, শপ, গ্রোসারী, ফ্যাক্টরি সর্বত্রই অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
বশ্য সরকারের এই ধরনের পরিবর্তনের সমালোচনা করে ক্যাম্পেইন শুরু করতে দেখা গেছে।
তথ্যসূত্র: বাংলা মিডিয়া,লন্ডন
দৈনিক ইন্ডিপেন্ডেন্ট
বিবিসি ইউ কে
দৈনিক টেলিগ্রাফ
Salim932@googlemail.com
3rd January 2013.UK