আমার এক প্রিয় পাঠক দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আমাকে লিখেছেন, দেশের সাম্প্রতিক অবস্থার প্রেক্ষিতে তার নিজস্ব এবং পারিবারিক মানবাধিকার কিভাবে ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে, তার প্রত্যক্ষ বর্ণনা তিনি আমাকে অত্যন্ত দুঃখের সাথে তুলে ধরেছেন।আজিমুল হক নামের এই প্রিয় পাঠক আমাকে লিখেছেন, তারা পাঁচ ভাই, তিন ভাই দাড়ি-টুপি,পা-জামা-পাঞ্জাবী পরিধানে অভ্যস্ত। তিনি আরো লিখেছেন, ঐতিহ্যগতভাবে তিনি এবং তার পরিবার আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত, কস্মিনকালেও আজিমূল হকের পরিবার আওয়ামীলীগের রাজনীতির বিপক্ষে কোন শক্তির আশ্রয়, প্রশ্রয় কিংবা সমর্থনের চিন্তাও করেননি। পাঠক আজিমূল হক আরো লিখেছেন, আওয়ামীলীগের একনিষ্ঠ সৈনিক হিসেবে এবং একজন সাচ্চা মুসলমান হিসেবে তিনি এবং তার পাঁচ ভাই পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়েন, মসজিদে নিয়মিত যাতায়াত করে থাকেন। তিনি আরো লিখেছেন, তিনি এসএসসি পর্যন্ত পড়া-লেখা করেছেন। আমাদের সময় তিনি পড়েন, কারণ এখানে সাহসের সাথে সত্য উচ্চারণ করা হয়।
এই পর্যন্ত আজিমূল হকের লেখাটি হলেই ভালো হতো, আমিও অনেক স্বস্তিবোধ করতাম। প্রিয় পাঠক, শিউড়ে উঠি আজিমূল হকের লেখার নীচের অংশ পড়ে। তিনি লিখেছেন, গত ০৮ ই মে ২০১৩ পুলিশ স্থানীয় বাজারে এসে তাকে এবং তার ভাইদের রেড করে এক বিভ্রতকর অবস্থার মুখোমুখি করে। পুলিশ উনার ভাইদের কাছে জানতে চায়, কেন দাড়ি রেখেছেন,টুপি পরিধান করেন ? তাহলে কি হেফাজতের সাথে কোন কানেকশন আছে ? ইত্যাদি নানান উদ্ভট প্রশ্নবাণে জর্জরিত ও হেনস্থা করে। অবশেষে আজিমূল তাদের কাছে আওয়ামীলীগের পরিচয় দেওয়ার পরেও শুধুমাত্র দাড়ি-টুপি-পাজামা-পাঞ্জাবী পরিধানের জন্য পুলিশ ৮ তারিখে তাদেরকে হেফাজতের তান্ডবের সহযোগী হিসেবে সনাক্ত করার প্রাণান্ত চেষ্টা করে বলে তিনি তার চিঠিতে আক্ষেপ করে লিখেছেন।তিনি আমার কাছে জানতে চেয়েছেন, তার এবং তার পরিবারের মানবাধিকারের বেহাল অবস্থার কথা।কারণ ঐদিনের পর থেকে তিনি এবং তার পরিবার মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে ছট-ফট করছেন।তার ভাষায়- দিস ইজ টু মাচ স্যার।
একজন আজিমূল হকের মনের আকুতি আজ সারা বাংলাদেশের অসংখ্য আজিমূলের, যারা না পারছেন বলতে, না পারছেন সইতে। পুলিশের কাজ হলো দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন।কোন অবস্থাতেই দেশের সাধারণ নাগরিকদের হেনস্থা ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করা নয়। আজকে দাড়ি-টুপি ওয়ালা দেখলেই হেফাজতী-জামাতী-শিবিরের লোক ভাবার এক মারাত্মক সাইকোম্যানিয়া সমাজের উপর থেকে নীচ পর্যন্ত ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে অত্যন্ত সুকৌশলে, যা মোটেই সুশাসনের লক্ষণ নয়। কিছুদিন আগেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজে প্রকাশ্যে স্বীকার করেছেন, অনেক দাড়ি-টুপি ওয়ালা আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে সমানভাবে ঐতিহ্যগতভাবেই সক্রিয়। তারপরেও একশ্রেণীর রাজনীতিবিদ, ছাত্রলীগের উচ্ছৃঙ্খল ক্যাডার আর প্রশাসনিক ক্ষমতা প্রয়োগকারী অহেতুক ভাবে বা ঢালাওভাবে দাড়ি-টুপি ওয়ালাদের উপর আক্রমণ ও পীড়ন বাড়ার কারণে আজকে সাধারণ নাগরিকদের জীবন মানের নিরাপত্তা ও মানবাধিকারের প্রশ্নটি সামনে এসে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে, এনাফ ইজ এনাফ। এভাবে একটি দেশের ভিতরে অমানবিক রাজনৈতিক অপ-সংস্কৃতি চলতে পারেনা, চলতে দেয়া যায়না। সরকারের উপর থেকে যদি সুশাসন ও রাষ্ট্রের নাগরিকদের জান-মালের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা এবং মানবাধিকার রক্ষা ও প্রতিষ্ঠার নিশ্চয়তা না দেয়া হয়, সিগন্যাল যদি যথাযথভাবে না পৌঁছানো হয়, তাহলেতো দেশের অরাজক পরিস্থিতির এই সুযোগে সুবিধাবাদী ও স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী অপ-তৎপরতা ও ক্ষমতার অপ-প্রয়োগ করার সুযোগ পাবে।তাই সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল এই ব্যাপারে আশু দৃষ্টি দিবেন বলেই আশা রাখি। আমাদের বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থায় উদারনৈতিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চর্চা ছাড়া বিদ্যমান সমস্যার বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ খুব কমই রয়েছে- কেননা প্রফেসর আলান বল-এর উক্তি এক্ষেত্রে বিশেষ প্রণিধান যোগ্য, তিনি বলেছেন, >If one were concerned to emphasize civil liberties, one might distinguish liberal democracies from non-liberal democracies and discuss the emphasis that certain civil freedoms appear to receive in political systems of the former type.
সংসদীয় গণতন্ত্রে উদারনৈতিক নাগরিক স্বাধীনতা সংরক্ষণ ছাড়া সুশাসন আশা করা যায়না। আর যায়না বলেই সংসদীয় ব্যবস্থায় একব্যক্তির সীমাহীন স্বেচ্ছাচারী শাসন যে নানা অসঙ্গতি ও সীমাহীন সমস্যার পাহাড় জমা করে দেশ-জাতি-জনগণ-প্রশাসনকে করে তুলে নাকাল, সেটাতো আমরা সকলেই হাড়ে-হাড়ে টের পাচ্ছি। তার উপর আওয়ামীলীগ খোদ নিজে থেকেই রাজনীতির ময়দানে চরম সহিংসতা, অরাজকতা ও উচ্ছৃঙ্খলতার জন্ম দিয়ে, নিজ দলীয় থেকে শুরু করে রাজনীতির ভেতর ও বাইরের সবকটা ষ্টেকহোল্ডারদের মাঝে অবিশ্বাস, সন্দেহ, হানাহানি সৃষ্টি করে রাজনীতির ময়দানে সব কটা ফ্রন্ট ওপেন করে দিয়ে খেলা শুরু করেছেন। এটা বিরাজমান সংঘাত, অচলাবস্থা নিরসনের জন্য সহায়ক নয়। এখানে শেখ হাসিনা খেলছেন নিজের মতো করে। অধিকাংশ পার্টির নীতি-নির্ধারনী, নেতা-কর্মী জানেননা একটু পরের চাল কি হবে বা হচ্ছে ? ১৪ দলের জোটভুক্ত নেতাদের বক্তব্য-বিবৃতির মধ্যে বড় অসামঞ্জস্য বিদ্যমান। যদিও মাজে-মধ্যে একসুরের মৃদু-মন্দ হালকা বাতাস হেলতে দেখা যায়, কিন্তু বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই ক্ষমতাসীন জোটের মধ্যে সমন্বয়ের বড় অভাব।ফলে সন্দেহ-অবিশ্বাস দানা বেধে চলছে। সরকারের ব্যর্থতার দায়ভার ১৪ দলীয় জোট জোটগতভাবে নিতে নারাজ।হেফাজত ইস্যুতে জোটের মধ্যে রয়েছে নানা মত। এই অবস্থায় আওয়ামীলীগ দলীয় অহমিকা আর নিজেদের চালে দলের ভিতর, বাইর, জোটের ভিতরে, বিরোধীবলয়ে, ইসলামিক ফ্রন্ট ও শক্তি সমূহের মধ্যে, ডান-বাম-মধ্যপন্থী সকল ক্ষেত্রেই শত্রু তৈরি করে ফেলেছে। ক্ষমতাসীন জোটের শরীক জাতীয় পার্টির নেতা হোসেইন মোহাম্মদ এরশাদ প্রকাশ্যেই বলেছেন, দেশ দুভাগে আজ বিভক্ত- আস্তিক ও নাস্তিক ইস্যুতে। এরশাদ আরো একধাপ এগিয়ে বলেছেন, বেশ দৃঢ়তার সাথেই বলেছেন, হেফাজত তাণ্ডব করেনি। ক্ষমতাসীন ও ১৪ দলের ষ্ট্যাটম্যান্ট, প্রেসনোট আর মনোভাবের সাথে এরশাদের বক্তব্য আকাশ-পাতাল ব্যবধান। তাহলে কি ধরে নেবো এরশাদ সঠিক বলেছেন, যেহেতু ক্ষমতাসীন সরকার ও জোটের মধ্য থেকে এই বক্তব্যের কোন প্রতিবাদ করা হয়নি, এমনকি অতীতের মতো এরশাদ সাহেব হুট করে নিজের বক্তব্য থেকেও সরে আসেননি। ইতিমধ্যে আবার খবরে প্রকাশ সরকার তলে তলে হেফাজতের সাথে আপোষ-মীমাংসায় জাতীয় পার্টির আনিসুল ইসলাম মাহমুদ কে দিয়ে দূতিয়ালি শুরু করে দিয়েছেন। একদিকে সমঝোতা অন্যদিকে মন্ত্রীদের হেফাজত বিরোধী মারমুখী বক্তব্য-জনমনে বিভ্রান্তি ও অরাজকতার বিষ-বাষ্প ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। জাতি সংঘের মহাসচিব বান কি মুন সংলাপের আহবানে শেখ হাসিনার প্রশংসা করেছেন বলে খবরে প্রকাশ। বেশ আশার কথা। কেননা আমজনতা, দেশবাসী সকলেই চায় সংলাপ, গঠনমূলক সংলাপ। বায়বীয় কিংবা রাস্তা-ঘাটে নয়। আর আমাদের নিজেদের ঝগড়া-বিবাদ মিটানোর জন্য খোদ জাতি সংঘের বিশেষ দূত সংলাপের আহবান জানাতে দুই দলের প্রধান নেত্রী সহ সুশীল সমাজের সকল পক্ষের সাথে দেখা করে সংলাপের বিষয়ে সকলের মনযোগ আকর্ষণ করে চলেছেন। জাতি সংঘের এই প্রতিনিধি মিঃ তারানকোর সংলাপের মধ্যস্থতা অবশ্যই আশাব্যঞ্জক এবং আমরা সকলেই চাই এর মাধ্যমে রাজনৈতিক অচলাবস্থা ও সহিংস রাজনীতির দরজা চিরতরে বন্ধ হউক। তারানকো যখন দুই দলের নেত্রী আর সুশীল সমাজের সকলের সাথে সংলাপ নিয়ে বৈঠক করেছেন, একই সাথে মার্কিন দূত মজিনাও বিএনপি নেতা মীর্জা ফখরুলের সাথে ঘন্টাব্যপী বৈঠকের খবরও পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। ইতিমধ্যে তারানকো জার্মান,মার্কিন,ইতালি,কানাডা সহ সকল ইউরোপীয় দূতাবাসের সাথে রুদ্ধ-ধার বৈঠক করেছেন, উদ্দেশ্য আমাদের রাজনৈতিক অচলাবস্থার পথ ও ফর্মুলা আবিষ্কার। এই যখন দূতিয়ালি বিএনপি তখন বলছে, সংলাপের মতো অবস্থা সৃষ্টি হয়নি, বা তাদের ভাষায় তত্বাবধায়ক বা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যাপারে সংলাপ হতে হবে। তারানকো সহ আওয়ামীলীগ শর্তহীনভাবে সংলাপ চাচ্ছে। এদিকে মজীনা আবার নিজ বাসভবনে ডঃ মোহাম্মদ ইউনূসকে সম্বর্ধনা দিয়েছেন। দিতেই পারেন, দূষের কিছু নেই। কিন্ত বিরাজমান রাজনৈতিক অচলাবস্থার প্রেক্ষিতে এই সম্বর্ধনা অবশ্যই বিরাট এক প্রশ্ন ও ছকের আগাম বার্তা খুলে দিয়েছে বলে অনেকের ধারণা।
এই যখন বিদেশী বন্ধুদের দূতিয়ালির চাল-চিত্র ঠিক তখনি দীপু মণি বসলেন প্রিন্ট সম্পাদক, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া ও সিওদের সাথে।খবরে প্রকাশ বৈঠকে সম্পাদক ও সিওরা স্পষ্টত: ফলপ্রসূ, কার্যকর সংলাপের তাগিদ দিয়েছেন। অনেক সম্পাদকই আগ বাড়িয়ে আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফকে সংলাপের চিঠি নিয়ে খালেদা জিয়ার কাছে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।আশার কথা দীপু মণির সাথে সম্পাদকদের ফলপ্রসূ বৈঠকের পর ধারণা করা যায়, সরকারের সদিচ্ছা থাকলে এই লেখা প্রকাশের আগেই সংলাপের ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়ে যাবে। আর তা যদি না হয়, তবে জাতি হিসেবে আমাদের কপালে আরো দুর্ভোগ পোহাতে হবে-তাতে কোন সন্দেহ নাই।
মনে রাখা দরকার, নিজেদের ভিতরের ঝগড়া-ফ্যাসাদ মিটানোর জন্য দাওয়াত দিয়ে, বা উপযাচিত হয়ে, কিংবা পত্র-মারফত অভিযোগ করে বিদেশী বন্ধু-মেহমানদের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক কোন্দল মীমাংসার জন্য ডেকে আনা বা সুযোগ করে দেয়া কোন বুদ্ধিমানের কাজ নয়। এরকম ক্ষেত্রে বরং সমস্যা আরো জটিল আকার ধারণ করার বিস্তর প্রমাণ এবং দৃষ্টান্ত রয়েছে। বিশ্বের কোথাও এইরকম অবস্থার সুযোগে কোন বিদেশীরা সঠিক সমাধানের পরিবর্তে বরং আগ্রাসনের বীজ রোপণের সকল ক্ষেত্র এমন করে বুনে থাকে, যা বিশ্বের ইতিহাসের দিকে তাকালেই সহজেই অনুমেয় হয়। ওবায়দুল কাদের এবং হাসানুল হক ইনু ( হাসানুল হক ইনু –এইবার যথার্থই বলেছেন) অত্যন্ত পরিষ্কারভাবে বলেছেন, নিজেদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে বিদেশী বন্ধুদের আহবান বা হস্তক্ষেপ জাতির জন্য অপমানজনক। সত্য, সুন্দর এবং বাস্তব বক্তব্য যথাসময়ে উপস্থাপনের জন্য এই দুই নেতাকে আন্তরিক ধন্যবাদ। রাজনৈতিক নেতারতো এইরকম গুণ এবং দেশ প্রেম থাকা চাই। শত চাপ এবং ভয়ভীতির উর্ধ্বে উঠে জাতির সামনে সঠিক বক্তব্য প্রদান কেবল মাত্র রাজনৈতিক নেতৃত্বের দ্বারাই সম্ভব।
তারানকো বা মজিনা এসে যদি আমাদের নিজেদের সাথে মোলাকাত করে রাজনৈতিক সবক, নসিহত, ফর্মুলা বাতলে দিয়ে আলোচনা, সংলাপের আহবান করতে পারেন ( অবশ্যই ভালো কথা এবং সেজন্য তাদের ধন্যবাদ), নেত্রীরা যদি তাদের কাছে নিজেদের বক্তব্য উপস্থাপন, অভিযোগ, পরামর্শ, দাবী করতে পারেন, তাহলে নিজেদের এই সমস্যা নিজেদের উদ্যোগে করতে বাধা কোথায় ? দেশ চালাবেন, দল চালাবেন, একে অন্যকে দোষারোপ করতে পারবেন, তাহলে একজন আরেকজনকে সরাসরি কথা বলতে, আহবান জানাতে, টেলিফোন করতে, চিঠি লিখতে, দাওয়াত করতে বাধা কোথায় ? সামান্যতম লজ্জা-শরম থাকলে এভাবে পুরো জাতিকে নিয়ে তামাশা করে খেলা খলতে পারেননা। দলীয় বড়ত্ব, আত্ম-অহমিকা, পারপ্সপরিক জেদাজেদি ভুলে গিয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণে একে অন্যকে সরাসরি ফেইস করুন, দেখবেন অনেক সমস্যা আপনা-আপনিই সমাধান হয়ে যাবে। যে কাজ নিজেরাই করতে পারি, সরাসরি একে অন্যকে ফেইস করার মাধ্যমে যে সমস্যা আপনা থেকেই মিঠে যায়, তার জন্য অযথা রক্তপাত আর বিদেশীদের টেনে এনে লাভ কি ? আমরা অনেক সংলাপের উদ্যোগ ও সমঝোতার ফর্মুলা ইতিপূর্বে দেখেছি। কোন কিছুই ওয়ার্কেবল হয়নি। এরশাদ সরকারের সময় কমন ওয়েলথ মহাসচিবের দূত স্যার নিনিয়ানের সংলাপের মধ্যস্থতাও আমরা দেখেছি, মরহুম জলিল-মান্নান-এর সংলাপ ও দেখেছি, কাজের কাজ কিছুই হয়নি। মাঝখান থেকে অনেক অঘটন, রক্তপাত ও অহেতুক সংঘাত ও জাতীয় সম্পদ ধ্বংস করা ছাড়া আর কিছুই হয়নি। তারানকো বা মজিনা বা অন্য কোন উপায়ে সংলাপ খুব একটা ফলপ্রসূ হওয়ার আশা করাটা সুদূর পরাহত। আজকে দীপু মণির সাথে সম্পাদক ও সিওরা যেমন করে বলেছেন ফলপ্রসূ সংলাপের জন্য এখনি সৈয়দ আশরাফকে গঠনমূলক এবং ইতিবাচক মনোভাবনিয়ে খালেদা জিয়ার কাছে চিঠি নিয়ে যাওয়া উচিৎ; দেশ ও জনগণের সাথে আমিও আশা করি কেবলমাত্র দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনাই পারেন এই অরাজক ও হিংসার রাজনীতি থেকে দেশকে রক্ষাকল্পে ফলপ্রসূ সংলাপের সূচনা করতে। এখানে শেখ হাসিনাকেই গুরুত্ব দিয়ে এই কারণেই বললাম, কেননা শেখ হাসিনা শুধু দলীয় প্রধান ও জোট নেত্রীই নন, একই সাথে তিনি সরকারেরও প্রধান। আর সরকারের প্রধান হিসেবে শেখ হাসিনা ও তার দল ও কেবিনেটের দায়-দায়িত্বও বেশী। দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান হিসেবে সরকারকেইতো এগিয়ে আসতে হবে, দেশ ও জাতির জান-মালের নিরাপত্তার অঙ্গীকার আর সুষম উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে শেখ হাসিনা ও তার সরকার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন – সুতরাং ফলপ্রসূ সংলাপ করে রাজনৈতিক অচলাবস্থা ও হিংসা-হানাহানির রাজনীতি পরিহার করে রাজনৈতিক সুস্থতা পুনরায় ফিরিয়ে আনার দায়িত্বও তাদের। পাশাপাশি বিরোধীদল হিসেবে বিএনপিরও সরকারের ইতিবাচক মনোভাব ও আহবানে ইতিবাচক (পজিটিভ) সাড়া দেয়া উচিৎ- এছাড়া অন্য কোন গণতান্ত্রিক পন্থা আছে বলে আমার জানা নেই। দুই নেত্রী কি তাই করবেন ?
Salim932@googlemail.com
12th May 2013.UK