গত ৩০-শে জুন ২০১২ সংবাদ পত্রের পাতা জুড়ে বিশ্ব ব্যাংক কর্তৃক পদ্বা সেতুর চুক্তি বাতিলের সংবাদের সাথে সাংসদ রাশেদ খান মেননের প্রেস কনফারেন্স এর খবর ছোট করে হলেও বেশ গুরুত্বসহকারে প্রকাশিত হয়েছে।অবশ্য গত সপ্তাহ থেকে বাজেটের উপর আলোচনায় জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে রাশেদ খান মেনন আগামী জাতীয় নির্বাচন বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের রুপরেখা পরিস্কার করার কথা যেমন বলেছেন,একইভাবে সংবিধান সংশোধনীর প্রস্তাবও করেছেন।
রাশেদ খান মেনন একদিকে সাংসদ,ওয়ার্কাস পার্টির নেতা,একইসাথে ক্ষমতাসীন মহাজোটের শরীক দলের প্রভাবশালী সদস্যও।সুতরাং মহাজোট সরকারের ব্যার্থতা এবং সাফল্যের দায়ভারও তার এবং তার দলের-যদিও নানান টানা-পোড়নে ওয়ার্কাস পার্টির এই নেতা যুক্তির কষ্টি পাথরে ব্যার্থতার সিংহ ভাগ আওয়ামীলীগের কাধে চাপাবেন।যুক্তিও এক্ষেত্রে অকাট্য।তথাপি তিনি এবং তার দল বর্তমানে ক্ষমতার অংশীদার,হউক মন্ত্রীত্ত্ববর্জিত।তাতো মানতেই হবে।
০২)
সংবিধানের নব সংস্করণের এই অবস্থায় যখন উপনীত হয়,তখন সংবিধান সংশোধনী কমিটির যে ক-জন সদস্য ছিলেন,রাশেদ খান মেনন ছিলেন তাদের অন্যতম।বাবু সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত সেদিনই সংসদে রাশেদ খান মেননের সংবিধান সংশোধনীর প্রস্তাবের সমালোচনা করেছেন বেশ তীর্যকভাবে।এখানেই শুধু নয়,সেনগুপ্তের মতো সাম্প্রতিক কালের কালোবিড়ালের পশ্চাতে ছুটতে গিয়ে উল্টো ঘোড়ার জব্দ হওয়ার মতো নাটকের জন্মদাতা সাম্প্রদায়িক শব্দের বেড়াজালে মেনন-ইনুকে কোপোকাত করার একহাতও তিনি সংসদে দেখিয়েছেন।
মহাজোট সরকারের এই সংবিধান সংশোধনী নিয়ে সুশীল সমাজ,বিজ্ঞ রাজনৈতিক নের্তৃবৃন্দ,আইন ও সংসদ বিশেষজ্ঞদের মধ্যে অনেক মতানৈক্য রয়েছে,তা আমরা প্রতিদিনই সংবাদ পত্রের পাতায় দেখতে পাচ্ছি।সংবিধান সংশোধনীর পর আওয়ামীলীগ নিজ শরীকদের কাছ থেকে খুব একটা বাধা বা মৃদুভাবে হলেও তেমন বিরুধীতার মুখোমুখী হয়নি।যেমনভাবে বিএনপি এবং এর শরীকদলগুলো করে চলেছে।
০৩)
সরকারের তিন বছর পার হওয়ার মাথায় হঠাৎ করে জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে রাশেদ খান মেননের এই সংবিধান সংশোধনীর প্রস্তাব অবশ্যই বেশ তাৎপর্য বহন করে।আওয়ামীলীগের নের্তৃত্ত্বাধীন মহাজোট সরকার চাইতেছে দলীয় সরকারের অধীনে যেকোন ভাবেই হউক অন্তর্বর্তীর তকমা পরিয়ে নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে,যা বিএনপি এবং তার মিত্ররা কিছুতেই মানবেনা বলে ধরেই নেওয়া যায়।সরকারের সকল বক্তব্য,বিবৃতি,প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য থেকে শুরু করে মন্ত্রী ও নীতি-নির্ধারকদের সকল বক্তব্য এবং কর্মকান্ডে তাই প্রতীয়মান হচ্ছে।সরকারের ভিতরকার শরীক দলের সাংসদ হিসেবে রাশেদ খান মেনন নিশ্চয়ই আওয়ামীলীগের এই অগণতান্ত্রিক মনোভাবের কথা বেশ ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন বলেই এতোদিন পর,হউক মন্ত্রীত্ব না পেয়ে,দেশ ও জনগণের স্বার্থে সঠিক সময়ে সঠিক কথা বলে অবশ্যই যথার্থ কাজটি করেছেন।পরবর্তীতে দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে সংবিধানের ১২৩(৩) অনুচ্ছেদের অসঙ্গগতির কথা খোলাখুলিভাবে প্রকাশ করে একজন যোগ্য সাংসদ ও দায়িত্বশীল রাজনীতিক হিসেবে আবারো নিজেকে দেশবাসীর কাছে তুলে ধরেছেন।
০৪)
সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের নের্তৃত্ত্বাধীন কমিটি সংবিধানের বর্তমান অবস্থায় ১২৩ এর ৩ এর অনুচ্ছেদ অনুসারের নির্বাচনকালিন সময়ে সংসদ সদস্যদের প্রিভিলেজ সংক্রান্ত সেকশন সুকৌশলে জিইয়ে রেখে দলীয় সরকারের অধীনে অন্তর্বর্তী সরকারের তকমা লাগিয়ে নিজেদের সাংসদদের বিশেষ সুযোগ করে দিয়ে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার এই সমূহ আশংকার কথা ব্যারিষ্টার মওদূদ,ব্যারিষ্টার রফিকুল,শাহদীন মালিক,ডঃ কামাল হোসেনরা বেশ আগে থেকেই বলে আসছিলেন,আমাদের সরকারী দলের বিজ্ঞ ও জানু সাংসদ আর নেতারা কানেই তুলছিলেননা,উল্টো সংবিধানের দোহাই দিয়ে অন্তর্বর্তী দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের সাফাই গেয়ে যাচ্ছিলেন।রাশেদ খান মেনন যেন সেই হাটে হাড়ি ভেঙ্গে দিলেন।
০৫)
অনেকেই বলছেন,মেনন কোন কিছু না পেয়ে এখন ভিতরের এই ষড়যন্ত্রের কথা প্রকাশ করেছেন, আবার কেউ কেউ বলছেন,বাইরের গরম অবস্থার কথা বিবেচনা করে নির্বাচন পরবর্তী নিজের অবস্থান স্বচ্ছ ও গণরোষ থেকে বাচানোর জন্য আগে-ভাগে নিজের অবস্থানের গ্রহণযোগ্যতা তুলে ধরেছেন।অনেকে এটাও বলতেছেন,সংসদীয় কমিটির সভাপতি হিসেবে বিভিন্ন অনৈতিক কাজ করে নিজের আখের গুছানো থেকে জনগনের মন ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করতে এবং মহাজোট সরকারকে নিজের দূর্ণীতিবিমুখ রাখতে চাপে রেখে আরো ফায়দা হাসিলের তার রাজনৈতিক কৌশল বলে মনে করছেন।
বিভিন্ন গোষ্টীর বিশ্লেষণে সত্য যাই থাকুক না কেন, বিরাজমান বাস্তবতায় আগামী নির্বাচন নিয়ে মহাজোট সরকারের কূট-কৌশল দৃঢ়তার সাথে ফাস করে দিয়ে সংবিধান সংশোধনীর প্রস্তাব করে যথার্থ কাজটিই করেছেন।
আওয়ামীলীগের এখন উচিৎ হবে, আগামী নির্বাচন স্বচ্ছ, অবাধ ও নিরপেক্ষ এবং সকল দলের অংশগ্রহণে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের যুৎসই ফর্মূলা খোজে বের করে স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের ব্যাবস্থা করা।কারণ ক্ষমতায় থাকার কারণে আওয়ামীলীগের উপর দায়-দায়িত্ত্ব অনেক,এবং মুক্তিযুদ্দ্বে ও স্বাধীনতা সংগ্রামে নের্তৃত্ত্বদানকারী দল হিসেবে গণতন্ত্রিক ব্যাবস্থা সমুন্নত করার দায়িত্ত্বও আওয়ামীলীগের।এক্ষেত্রে অন্যের উপর দূষ চাপিয়ে আওয়ামীলীগ পার পেতে পারবেনা।কেননা দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন কোন অবস্থাতেই যে নিরপেক্ষ এবং অবাধ ও স্বচ্ছ এবং একইসাথে গ্রহণযোগ্য হবেনা,তা সকলেই যেমন জানেন,আওয়ামীলীগ দলীয় প্রধান থেকে শুরু করে সাধারণ সদস্য সহ একজন কট্রর আওয়ামীলীগারও তাতে ভেতর থেকে মনে –প্রাণে বিশ্বস করেন বলে আমার বিশ্বাস।এখন শুধু ইগো ত্যাগ করে গণতান্ত্রিক মন-মানষিকতা নিয়ে এগিয়ে আসলেই দেশ ও জাতির জন্য মঙ্গল বয়ে নিয়ে আসবে।ধন্যবাদ রাশেদ খান মেনন ভাই অবশেষে সত্য কথনের জন্য।
tweet@salim1689 . salim932@googlemail.com.
02nd July 2012.UK