পর্যালোচনাঃ- টাওয়ার হ্যামলেটসের বাংলা ল্যাঙ্গুয়েজ স্কুল ফান্ডিং কর্তনের মুখে বন্ধ হয়ে যেতে পারে

পর্যালোচনাঃ- টাওয়ার হ্যামলেটসের বাংলা ল্যাঙ্গুয়েজ স্কুল ফান্ডিং কর্তনের মুখে বন্ধ হয়ে যেতে পারে

সৈয়দ শাহ সেলিম আহমেদ

 

আজ থেকে প্রায় ২৫-৩০ বছর আগে, যখন এই মাল্টিকালচারাল সোসাইটিতে কেবল ইংরেজি ভাষাই শিক্ষার ও চালুর প্রচলন ছিলো, তখন এই কমিউনিটির কয়েকজন গুনীজন আর সমাজ কর্মীদের উদ্যোগ আর অদম্য সাহসিকতা ও ঐকান্তির দেন দরবারের ফলে, ইংরেজি শিক্ষার পাশাপাশি নিজ নিজ মার্তৃভাষা শেখার জন্য ল্যাংগুয়েজ স্কুল চালুর ব্যবস্থা করা হয়। যখন শুরু হয়েছিলো, তখন সেই সব ব্যবস্থা করাটা ততো সহজ সাধ্য ছিলোনা। নানাবিধ বাধা বিপত্তি পেরিয়ে সেদিন ল্যাঙ্গুয়েজ শেখার একটা য্যুতসই ব্যবস্থা আমাদের অগ্রজ মুরুব্বীরা চালু করেছিলেন। সেই প্রচেষ্ঠার সাথে অনেকের প্রচেষ্ঠায় স্থানীয় কাউন্সিলকেও সম্পৃক্ত করা হয়।

 

৩০ বছর ধরে যিনি বিকেলে সপ্তাহে দুই ঘন্টা ক্লাসে বাংলা শেখানোর কাজ করতেন নিজ ছেলে মেয়ে ও এই কমিউনিটির শত হাজারো ছেলে মেয়েদের, আজ সেই বয়োবৃদ্ধ শিক্ষকের কন্ঠে এক হতাশা ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। চতুর্দিকে তিনি যেন সেই অন্ধকার যুগের কালো এক ছায়া দেখতে পাচ্ছেন। কিন্তু কেন এই হতাশা, কেন এই উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা ? বাংলা পোষ্টের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের মাধ্যমে পাঠকদের জন্য আমরা যথাসাধ্য সেই বিষয়ে খুটি নাটি আলোকপাতের মাধ্যমে তুলে ধরার চেষ্টা করবো। প্রিয় পাঠক, বাংলা পোষ্ট সব সময়ই কমিউনিটির সেবায় নিবেদিত।কমিউনিটির কল্যাণ আর মহৎ কাজের সঙ্গী বাংলা পোষ্ট।

 

বাংলা স্কুল, বাংলা ভাষা, সংস্কৃতি আর টাওয়ার হ্যামলেটসঃ

 

৩০ বছর আগে টাওয়ার হ্যামলেটস বারাতে কমিউনিটির জনগন নিজেদের ছেলে মেয়েদের নিজেদের কালচার, ভাষা, সংস্কৃতির সাথে যোগসূত্র আর পরিচয় যাতে শেকড়ের সাথে অব্যাহত থাকে, উত্তর প্রজন্মের ছেলে মেয়েদের কাছে যেন নিজের বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি হারিয়ে না যায়- সেজন্য সম্পূর্ণ ভলান্টারিভাবে নিজেদের উদ্যোগে বিকেল বেলা সপ্তাহের একদিন বা দুদিন অথবা ঘন্টা খানেকের জন্য বাংলা স্কুল চালু করেন। এরকম স্কুল যেমন হ্যার উড বাংলা স্কুল- যেমন ১৯৮৬ সালে যখন প্রতিষ্ঠা করা হয়, তখন কমিউনিটির বাবা মায়েরা একটি চার্চের মধ্যে এই বাংলা স্কুলটি চালু করেছিলেন। এরকম স্কুল আরো অনেকগুলো ধীরে ধীরে ভলান্টারি ভাবে চালু হয়েছিলো।উদ্দেশ্য ছিলো- বাঙালি ছেলে মেয়েদের নিজেদের কালচারের সাথে পরিচয় ও সম্পৃক্ত রাখা।হ্যারউড স্কুল ১৯৮৮ সালে তখন কাউন্সিলে গ্র্যান্টের জন্য আবেদন করলে কাউন্সিল মেইন্ট্যান্যান্স বাবত বছরে ৫,০০০ পাউন্ড করে গ্র্যান্ট অনুমোদন করেন।এই মেইন্টান্যান্স গ্র্যান্ট মূলত প্রতিষ্ঠানের রেন্ট, লাইটিংস, এডমিন খরচ ইত্যাদির জন্য কাউন্সিল কর্তৃক অনুমোদিত হিসেবেই প্রদান করা হতো।

 

সময় যতো এগুতে থাকলো, টাওয়ার হ্যামলেটসে বাঙালি পরিবারের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকলো।আস্তে আস্তে কাউন্সিলে বাঙালিদের প্রতিনিধিও পাঠানো শুরু হলো অধিক হারে। পালাক্রমে সময়ের প্রয়োজনে বাংলা স্কুলের সংখ্যাও বাড়তে থাকলো, বাংলা টিচারও কর্ম সংস্থান হতে থাকলো।

 

বাংলা স্কুলের সংখ্যা-

 

এরই ধারাবাহিকতায় টাওয়ারহ্যামলেটসে কমিউনিটি ল্যাঙ্গুয়েজ সার্ভিস এর তত্ববধানে, ল্যাঙ্গুয়েজ সাপোর্ট হিসেবে টাওয়ার হ্যামলেটসে ৬৩টিরও বেশী রেজিস্ট্রিকৃত বাংলা স্কুল রয়েছে। এর বাইরেও ব্যক্তিগত ও সম্পূর্ণ কমিউনিটির সাপোর্টে আরো বেশ কয়েকটি বাংলা স্কুল রয়েছে, যা হিসেবে নিলে ১৩৪টির মতো দাঁড়ায়। ৬৩টির মধ্যে ৪৮টি স্কুল টাওয়ার হ্যামলেটস দ্বারা সরাসরি ফান্ডেডকৃত, বাকী ১৫টি পার্টলি কিংবা শুধুমাত্র ল্যাঙ্গুয়েজ সাপোর্ট হিসেবে কিছু মাত্র অনুদানের ভিত্তিতে পরিচালিত হয়ে থাকে। 

 

কমিউনিটি ল্যাঙ্গুয়েজ সার্ভিস-সিএলএসঃ

 

এই সার্ভিসের অধীনে ছিলো সকল ল্যাঙ্গুয়েজ সার্ভিস, স্কুল সহ অন্যান্য ভাষা যেমন বাংলা ছাড়াও চায়নিজ, আরবি, সোমালি, স্প্যানিশ, ইত্যাদি ভাষা। বাংলা স্কুল শুরু থেকেই এই কমিউনিটি ল্যাঙ্গুয়েজ সার্ভিসের অধীনে ছিলো। আগের মেয়র বিদায়ের প্রাক্কালে লেবার দল এই ল্যাঙ্গুয়েজ সার্ভিসকে পরিবর্তন বা মুভ করে কালচারাল ডিপার্টম্যান্টের অধীন নিয়ে যান । আগে সিএলএস অধীনে এর হেড ছিলেন জনাব জামাল উদ্দীন, যা বর্তমানে এর হেড হলেন আইডিয়া ষ্টোর। এই পরিবর্তন যখন করা হয়, জানা যায়, বিভিন্ন সূত্র থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে, কোন রকম কনসাল্টেশন করা হয়নি, এমনকি টিউটরদেরও কোন মতামত নেয়া হয়নি।

 

বাংলা স্কুল প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য-

 

০১) শুরুতে যখন বাংলা স্কুল চালু করা হয়, তখন মূলত কমিউনিটির বাঙালি প্রজন্মের ছেল মেয়েদের নিজ ভাষা, কৃষ্টি, ভ্যালু, সংস্কৃতি চর্চার সাথে সাথে নিজ দেশের সাথে সংযোগ আর সেই সাথে নিজস্ব আদব- কায়দা চর্চা ও রক্ষার উদ্দেশ্যেই করা হয়েছিলো।

 

০২) পরবর্তীতে বাংলা ভাষা বহুজাতিক ভাষার মধ্যে অন্যতম আকর্ষনীয় ভাষা হওয়াতে জিসিএসইতেও বাংলা পাঠ্যক্রম অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় এবং বাঙালি ছেলে মেয়েদের নিজ ভাষায় জিসিএসইতে সহজেই ভালো গ্রেড লাভে আগ্রহ ক্রমেই বাড়তে লাগলো।

 

লুতফুর রহমান যুগ-

 

টাওয়ার হ্যামলেটসের সাবেক নির্বাহী মেয়র লুতফুর রহমানের সময়কালিন বাংলা ল্যাঙ্গুয়েজ সাপোর্ট অন্যান্য ভাষার সাথে ভালো সাপোর্ট ও অনুদান পাওয়ার ফলে রাতারাতি আকর্ষিত হতে থাকে। কিন্তু লুতফুর রহমানের বিদায়কালিন সময়ে বাংলা ল্যাঙ্গুয়েজ সার্ভিস প্রচলিত সিএলএস সার্ভিসের আন্ডার থেকে সরিয়ে নতুন কালচারাল সার্ভিসের অধীন স্থানান্তরিত হয়েছিলো বলে বলা হচ্ছে ।

 

জন বিগসের সময়ে-

 

বর্তমান নির্বাহী মেয়র টাওয়ার হ্যামলেটসের বাংলা স্কুল সার্ভিস চালু ও ল্যাংঙ্গুয়েজ সার্ভিস চালু রাখার পূর্ণ সহযোগীতা প্রদান অব্যাহত থাকার কথা বার বার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন নানা অনুষ্ঠান ও বক্তব্যের মাধ্যমে। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, জন বিগসের সময়ে লেবার পার্টির কাউন্সিলরদের দ্বারাই ল্যাঙ্গুয়েজ সাপোর্ট সার্ভিসের ফান্ড কর্তন হয়েছে বলে কমিউনিটির নেতৃস্থানীয়, শিক্ষক, এবং ব্রিটিশ বাংলাদেশী টিচার্স এসোসিয়েশন অভিযোগ করেছেন। তাদের অভিযোগ, জন বিগস যেখানে বলছেন সহযোগিতা ও সাপোর্ট অব্যাহত রাখবেন, সেখানে বর্তমান কেবিনেট এর সময়েই ফান্ড কর্তন হয়েছে। যদিও তারা বলছেন, আগের কেবিনেটের ধারাবাহিকতায়ই তারা করছেন। কিন্তু যুক্তিতে সেই বক্তব্যের হিসেব মিলছেনা.৩০ বছর ধরে চলে আসা ফান্ডিং সাপোর্ট এই কেবিনেটের সময়েই কর্তন হয়েছে। প্রশ্ন সেখানেই মূলতঃ।

 

অফস্টেড ইনসপেকশন-

 

জানা গেছে, সম্প্রতি টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল ভাড়া করে নিয়ে আসে অফসটেডের দুজন ইনসপেক্টরকে, যারা টাওয়ার হ্যামলেটসের বাংলা স্কুল পরিদর্শন করছেন রিপোর্ট দেয়ার জন্য। বিটিএ, শিক্ষক, কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ রেগুলেটরি সংস্থা অফস্টেডের ইনসপেকশনের বিরোধীতা না করলেও যেভাবে অফস্টেড বিনা নোটিশে এবং পরবর্তীতে আলোচনার পর ৪৮ ঘন্টা আগে নোটিশ দিয়ে আসার কথা থাকলেও কোথাও কোথাও ৩৬ ঘন্টার নোটিশে ক্লাসে ঢুকে ফাইল পত্র তন্ন তন্ন করে খুঁজে খুজে দেখছেন, সরে জমিনে ছাত্র ছাত্রীদের সাক্ষাতকার নিচ্ছেন, শিক্ষকদের জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। এসবের কোন কিছুতেই অনাপত্তি না থাকলেও তাদের বক্তব্য হচ্ছে, যেখানে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের মধ্যে উপযুক্ত পরিদর্শক ও এক্সপার্ট রয়েছেন, সেখানে তাদের দ্বারা পরিদর্শন না করে হঠাত করে সপ্তাহের দুই ঘন্টা করে প্রায় ভলান্টারি সেক্টরের মতো এহেন কমিউনিটি ল্যাঙ্গুয়েজ স্কুলগুলোতে অফস্টেডের মতো অতি মূল্যবান, দক্ষ ও এফিশিয়েন্ট কর্তাদের দ্বারা যখন তখন অতি সূক্ষ্ম থেকে সূক্ষ্ম পরিদর্শনের আদৌ উদ্দেশ্য কি ?

 

যেভাবে ফান্ড কর্তন-

 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, লোকাল কাউন্সিল যে সব ফান্ডিং করে থাকে, আবেদন পাওয়ার পরে যাচাই বাছাই করেই করে থাকে। এতে সেন্ট্রাল গভর্ণম্যান্টের খুব একটা হাত নেই। প্রতি ৩ বছর অন্তর অন্তর ফান্ডিং এর জন্য আবেদন করা হয়ে থাকে। বাংলা পোস্টের অনুসন্ধানী টিমের দ্বারা দেখা গেছে, গত বছর ৩শত ৭৪টি(প্রায়) অর্গেনাইজেশন লোকাল কাউন্সিলে ফান্ডিং এর জন্য আবেদন করেছিলেন। এর মধ্যে লোকাল কাউন্সিল ১৭৫টি আবেদন নাকচ করে দেয়। এতো বিপুল সংখ্যক আবেদন নাকচ- দীর্ঘ দিনের ইতিহাসে এই প্রথম বলেও জানা গেছে।এবং এর মধ্যে ১৬টি বাংলা স্কুল ফান্ডিং এর জন্য আবেদন নাকচ করা হয়।

 

উদীচী অনেকগুলো সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের সাথে সপ্তাহে দুই ঘন্টা করে ছেলে মেয়েদের বাংলা স্কুলে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত করতো। দীর্ঘদিন ধরে উদীচী এই কার্য্যক্রম করে আসছিলো।কিন্তু এখন আর তাদের পক্ষে এই বাংলা স্কুল সেবা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হবেনা, যেহেতু তাদের ফান্ড থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।

 

 

বাংলাদেশী টিচার্স এসোসিয়েশন-বিটিএঃ

 

গত ৫ মার্চ ২০১৬ বাংলাদেশী টিচার্স এসোসিয়েশন (বিটিএ) এই অবস্থার প্রেক্ষিতে কমিউনিটির নেতৃবৃন্দ সহ শিক্ষক ও ভলান্টারি সেক্টরে কর্মরত এবং কাউন্সিলরদের নিয়ে এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করেছিলো। সেখানে শিক্ষকবৃন্দ সহ সকল নেতৃবৃবৃন্দ টাওয়ার হ্যামলেটসে বাংলা স্কুলের ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন। সেই সাথে সকলে মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে এব্যাপারে সোচ্চার ও আরো সচেতন হওয়ার তাগিদ দেয়া হয়।একই সময়ে সভায় সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয় যে নির্বাহী মেয়রের সাথে সাক্ষাত করে ইতোপূর্বে দেয়া ওয়াদার প্রেক্ষিতে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য জানার চেষ্টা হেতু নতুন করে বৈঠকের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

 

এ ব্যাপারে আমরা সরাসরি কথা বলি কমিউনিটির অনেকের সাথে। সেই সাথে শিক্ষক, ভলান্টারি সেক্টরের নেতৃবৃন্দ, সিএলএস এর অফিসের সাথেও যোগাযোগ করি। টাওয়ার হ্যামলেটসের নির্বাহী মেয়রের বক্তব্য জানার জন্য মেয়র বরাবর ইমেইল, রাজনৈতিক সচিব বরাবর ইমেইলের কপি এবং অফিসে টেলিফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করি। এ রিপোর্ট লেখার সময় পর্যন্ত অনেকেরই বক্তব্য আমরা পেয়েছি , মেয়র জন বিগস, বিটিএ সেক্রেটারি সিরাজুল বাসিত চৌধুরী ও কমিউনিটি নেতা কে এম আবু তাহেরের বক্তব্য আমরা রেকর্ড করি। এখানে তাদের বক্তব্য আমরা তুলে ধরলাম।

 

জন বিগস

নির্বাহী মেয়র

টাওয়ার হ্যামলেটস-

এ ব্যাপারে টাওয়ার হ্যামলেটস বারার নির্বাহী মেয়র জন বিগস বলেন, কমিউনিটি ল্যাঙ্গুয়েজ সার্ভিসকে আমি সমর্থন করি। কিন্তু সাবেক মেয়রের বিশৃঙ্খলার জন্য অধিকাংশ ফান্ডিং এর সিদ্ধান্ত সরকার নিযুক্ত কমিশনারদের হাতে চলে গেছে। এর মানে হচ্ছে, কাউন্সিল কেবল লবি করতে পাড়বে কিন্তু সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে পারবেনা। তারপরও কমিশনাররা কয়েকটি প্রজেক্টে ফান্ড দিয়েছেন।

 

মেয়র বলেন, থার্ড সেক্টরে সহায়তার ক্ষেত্রে টাওয়ার হ্যামলেটসের গর্বিত ইতিহাস এবং ঐতিহ্য রয়েছে। কমিউনিটি ল্যাঙ্গুয়েজ সার্ভিস আমাদের কমিউনিটির গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এটা ভাষা শিক্ষা দেয়ার পাশাপাশি কমিউনিটির বৈচিত্রকে সমৃদ্ধ করে চলেছে।

 

বিগস আরো বলেন, বিটিএ- এর উদ্বেগের বিষয়টি গুরুত্বের সাথে নিয়েছি। তবে এর মান যাচাইয়ের প্রচেষ্টাকে অফস্টেড ইনসপেকশন অথবা এই সার্ভিসের জন্য হুমকী হিসেবে আখ্যায়িত করা ভুল। এর সর্বোচ্চ সেবার মান এবং ভ্যালু ফর মানির বিষয়টি দেখা কাউন্সিলের দায়িত্ব।

 

 

সিরাজুল বাসিত চৌধুরী

সেক্রেটারি-বিটিএ-

এ ব্যাপারে সিরাজুল বাসিত চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, অফস্টেড এর ইনসপেকশনের বিরোধী আমি নই। তবে বাংলা স্কুলে অফস্টেড যেভাবে বা যে পদ্ধতিতে পরিদর্শন করছে, আমার কাছে সেটা শোভনীয় মনে হয়নি। তার মতে, কাউন্সিলের হেড বা ডেপুটি হেড স্কুল পরিদর্শন বা নিরীক্ষণ করতে পারতেন, সেখানে কমিউনিটির এই দুই ঘন্টার বাংলা স্কুলের অফস্টেডের মতো এতো এক্সপার্টদের দিয়ে নিরীক্ষণ কতোটুকু যুক্তিসঙ্গত- সেটাই আমার প্রশ্ন। বাংলা স্কুলের সান্ধ্যকালিন ক্লাস অফস্টেডের যে গাইড লাইন সেই আওতায় আসেনা, কাউন্সিলের মধ্যে অনেক বড় ও দক্ষ এক্সপার্ট থাকা অবস্থায়।

 

সিরাজুল বাসিত চৌধুরী বলেন, ফান্ডিং কাটের ফলে আমাদের কমিউনিটির ছেলে মেয়েদের মধ্যে কালচার গ্যাপ সৃস্টি হবে, যদি অর্থাভাবে বাংলা স্কুল বন্ধ হয়ে যায়। আর আনসোশিয়েবল আওয়ার এর মধ্যে আমাদের ছেলে মেয়েদের জন্য নিজেদের ভাষা, সংস্কৃতি, জাতীয় উৎসব, ঈদ, পার্বন, বৈশাখ, ইত্যাদি যেভাবে শেখানো ও পালন করা হয়, সে সব শিক্ষনীয় থেকে বঞ্চিত হবে, বরং এই সময়ে নানা অসামাজিক কাজে লিপ্ত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থেকে যায়, যা বাংলা স্কুল চালু থাকায় তারা নানা কৃষ্টি ও কালচারালমূলক কর্মকান্ডের মাধ্যমে জড়িত হয়ে সৃজনশীলতার সাথে জড়িয়ে নিজেদের উতকর্ষ বিকাশে নিবেদিত থাকে।ছেলে মেয়েরা তা থেকে বঞ্চিত হবে।

 

কে এম আবু তাহের চৌধুরী

লেখক, সাংবাদিক, কমিউনিটি নেতা-

Kalam Choudhury's Profile Photo

জিজ্ঞেস করা হলে কমিউনিটি নেতা কে এম আবু তাহের চৌধুরী বলেন, কমিউনিটি সার্ভিস ডিপার্টম্যান্টের অধীনে সোমালি, আরবী, চায়নিজ, বাঙালি, হিন্দি, উর্দু, মঙ্গোলিজ প্রভৃতি ভাষা শিক্ষা ও প্রসারে সাপোর্ট সার্ভিস প্রদান করা হয়ে থাকে, যা আগে সিএলএস করতো। বর্তমানে তা আইডিয়া ষ্টোরের তত্বাবধানে নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, হ্যার উড স্কুলে তিনি শিক্ষকতা সাথে জড়িত ছিলেন, তিনি জানেন, তারা স্কুলটি একটি চার্চে নিজেদের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। পরবর্তীতে কাউন্সিল মেইন্ট্যান্যান্স গ্র্যান্ট তাদের দিলে সপ্তাহে দুই ঘন্টা বাংলা স্কুল চালু হয়। যে গ্র্যান্ট দেয়া হতো তা শুধু মাত্র বিল্ডিং রেন্ট, লাইটস, এডমিন খরচের জন্য দেয়া হতো। আবু তাহের চৌধুরী বলেন,২০/২৫ বছর ধরে কাউন্সিল ১৭৫ জন টিউটরকে যথাযথ পরীক্ষার মাধ্যমেই নিয়োগ দিয়েছিলো, যেখানে তিনি নিজেও ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমে নিয়োজিত হয়েছিলেন।কাউন্সিল তাদেরকে ইন্ডাকশন ট্রেনিং সবই দিয়েছিলো। ১৯৮৮ সালে প্রোপার ইন্টারভিউ এর মাধ্যমে প্রথম টিচার নিয়োগ দেয়া হয়।কাউন্সিল বিগত ৩০ বছর ধরে এই স্কুলগুলোকে সাপোর্ট প্রদান করে আসছিলো। হঠাত করে গ্র্যান্ট কর্তনের ফলে স্কুলগুলো আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবে। তিনি বলেন, অবস্থা দৃষ্ঠে মনে হচ্ছে, পরিকল্পিতভাবে বাংলা স্কুলগুলো বন্ধের পায়তারা চলছে।

 

উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, জিসিএসইতে বাংলা নিয়ে আমাদের ছেলে মেয়েরা অন্যদের তুলনায় এ গ্রেড, এ ষ্টার পেয়ে যাচ্ছে।এটাও বাংলা বন্ধের একটা অঘোষিত অজুহাত।

 

তিনি বলেন, ৩৫/৪০ বছর ধরে কমিউনিটি প্রজেক্ট চালু আছে। এখন এই কমিউনিটি প্রজেক্টগুলোতে অর্থ কাটা হচ্ছে। অফস্টেডের পরিদর্শন নিয়ে তিনি বলেন, আমার স্কুলেও পরিদর্শন করেছেন উনারা। উনারা আমার স্কুল পরিদর্শনের পর আমাকে সেটিসফ্যাক্টরী বলেও মন্তব্য করেছেন। কিন্তু যে ভাবে করা হচ্ছে সেটা শোভনীয় নয়। নিয়ম হলো প্রয়োজনীয় নোটিশ সার্ভ করে আসা। এক্ষেত্রে সেরকম হচ্ছেনা, যদিও আলোচনার পর সম্মত হয়েছেন ৪৮ ঘন্টার নোটিশ সার্ভ করে পরিদর্শনে আসবেন।লুতফুর রহমানের এরা বিষয়ে আবু তাহের চৌধুরী বলেন, ১ মিলিয়ন পাউন্ড গ্র্যান্ট তিনি দিয়েছিলেন কমিউনিটি প্রজেক্টগুলোতে। বিপরীতে ৫০ হাজার পাউন্ড কর্তন করা হয়েছে ল্যাঙ্গুয়েজ সার্ভিস থেকে।

 

প্যারেন্ট ও ভলান্টিয়ারদের বক্তব্য-

 

সাম্প্রতিক ঘটনাবলী ও ফান্ড কর্তনের প্রেক্ষিতে অনেক পরিবার, পিতা মাতা এবং ভলান্টারি সেক্টরের কর্মরতদের অনেকেই শংকিত এবং উদ্বিগ্ন। তাদের সকলেরই মতামত হলো, কাউন্সিলের উচিত কমিউনিটি প্রজেক্টগুলো চালু রাখা, সান্ধ্যকালিন বাংলা স্কুলগুলো আরো ভালোভাবে রান করার সাপোর্ট প্রদান অব্যাহত রাখা।

 

একটি নির্মোহ বক্তব্য-

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কমিউনিটি এক্টিভিষ্ট এবং রাজনৈতিক সংগঠণের সাথে জড়িতরা বলেছেন, কেবল মাত্র আবেগ আর প্রচলিত সেন্টিম্যান্ট নিয়ে পুরো বিষয়টি দেখলে নির্মোহ বিশ্লেষণ ও সঠিক চিত্র ফুটে উঠবেনা। তাদের মতে, আমাদের নিজেদেরও অনেক ত্রুটি বিচ্যুতি রয়েছে। ফান্ডের যথাযথ ব্যবহার, তথা প্রকল্পের সঠিক ও আইনানুগ ব্যবহার, এডমিনের খরচ প্রকল্প গাইড লাইন অনুযায়ী না হওয়া, একই সাথে উপযুক্ত ট্রেনিং না থাকা- সব মিলিয়ে বিগত মিস-ম্যানেজম্যান্টের কারণও সেজন্যে অনেকটা দায়ী। এখন দেখতে হবে, পুরো বিষয়টিকে নিয়মের মধ্যে নিয়ে এনে কেমন করে এই প্রশাসন সহযোগিতা করে ও ফান্ড অব্যাহত রাখে- সেজন্য লিয়াজো করা উচিৎ  । আর স্কুলের রেগুলেটরি সংস্থা অফস্টেডের ইনস্পেকশন স্বাভাবিক- এতে শঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। অর্গেনাইজেশনে যদি গলদ থাকে, কেবল শংকা সেখানেই বলেও তাদের অভিমত।

 

অন্যান্য কমিউনিটির বক্তব্য এবং সবশেষে-

 

সোমালিয়ান, চায়নিজ, প্রভৃতি কমিউনিটির লোকজনদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তারাও উদ্বিগ্ন ফান্ড কর্তনের ফলে। তবে আশাবাদী এই কারণে, জন বিগস যেহেতু বাংলাদেশী টিচার্স এসোসিয়েশন এবং বিভিন্ন কমিউনিটির সাথে অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় বলেছেন, ল্যাঙ্গুয়েজ সার্ভিসের প্রতি সাপোর্ট অব্যাহত রাখার জন্য তিনি কাজ করবেন, তাই শত বাধা বিপত্তি আর দুর্যোগের এই ঘন ঘটার মধ্যে বিভিন্ন কমিউনিটি আর বাংলাদেশী পরিবার ও পিতা মাতারা আশার আলো বুকে লালন করে আছেন, নির্বাহী মেয়র জন বিগস জনগনের প্রতিনিধি হিসেবে বাংলা স্কুলগুলো টিকিয়ে রাখার জন্য সর্বাত্মক সহযোগিতা অব্যাহত রাখবেন- এখন সবাই তাকিয়ে আছেন জন বিগসের দিকে।

 

Salim932@googlemail.com

15th March 2016, London

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *