সৈয়দ শাহ সেলিম আহমেদ: ব্রিটেনের পুলিশ বাহিনী ট্র্যাডিশনালি মূলত অস্র বহন করেনা, যেভাবে সচরাচর বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলে দেখা যায়। তবে ব্রিটেনের বেশ কিছু বাহিনী আছে, যারা অস্র বহন করে থাকে, যখন দায়িত্ব পালনরত থাকে। এই প্রেক্ষিতে বিগত সহো এটাক, ৯/১১, তারপর মোম্বাই এটাক, নাইরোবির শপিং মলে এটাক, আর গত শুক্রবারে প্যারিসে একের পর এক হামলার প্রেক্ষিতে ব্রিটেনের এন্টিটেরোরিজম আইন রিভিউ নিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে বক্তব্য এসেছে, যা খুবই গুরুত্বের দাবী রাখে।
সাধারণতঃ ব্রিটেনের মোস্ট সিনিয়র কাউন্টার টেরোরিজম অফিসিয়াল প্যারিস এটাকের পর ব্রিটেনের নিরাপত্তা নিয়ে এই এন্টি টেরোরিজম আইন ও বিদ্যমান পরিস্থিতি পর্যালোচনা, মনিটরিং এবং সমন্বয় করে থাকেন ও চলেছেনও।যে কারনে আমরা দেখি গোয়েন্দা তথ্যে ব্রিটেনের উপর অধিক ঝুকি না থাকলেও প্যারিসে হামলার পর পরই ব্রিটেনের উচ্চ মাত্রার নিরাপত্তা সতর্কতা ও এলার্ট জারি করা হয়েছে। কেননা হাই অফিসিয়ালরা প্রাপ্ত তথ্যের আলোকে ব্রিটেনে সন্ত্রাসী হামলার ঝুঁকি থেকে মুক্ত মনে করছেননা।
প্যারিসের সন্ত্রাসীদের আক্রমনের পর পরই ব্রিটেনের প্রাইম মিনিস্টার ডেভিড ক্যামেরন, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, এমআই ফাইভ এর সিনিয়র সিকিউরিটি অফিসিয়ালদের ব্রিফ করা হয় সাথে সাথেই।এর পর পরই ব্রিটেনে হাই এলার্ট সিভিয়ার হিসেবে জারি করা হয়।গত জানুয়ারিতে চার্লি হ্যাবডো আক্রমনের পর থেকেই ব্রিটেনে সিকিউরিটি এলার্ট বৃদ্ধি সহ সিকিউরিটি এক্সারসাইজ প্রসার করা হয়।কিছুদিন আগে ব্রিটেনে সন্ত্রাসী আক্রমন মোকাবেলায় ও পর্যবসিত হলে সব চাইতে বৃহৎ এক্সারসাইজ লন্ডনের বুকে অনুষ্ঠিত হয়- যেখানে প্রায় সকল ধরনের বাহিনী ছাড়াও গোয়েন্দারা অংশ নিয়েছিলেন।
২০০৮ সালের মোম্বাই আক্রমনের পর ব্রিটিশ সিকিউরিটি সংস্থা গুলোতে অতিরিক্ত ওয়েপন সরবরাহের মাধ্যমে এব্যাপারে ব্যাপক নিরাপত্তা পরিকল্পনা ও সরঞ্জাম ঢেলে সাজানো হয়।
ইতোমধ্যেই স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড স্পেশাল ফোর্সের স্টাইলে নতুন এক আর্মড ফোর্স তৈরি করেছে কাউন্টার টেরোরিস্ট থ্রেট এর মোকাবেলা করার জন্যে। এই ফোর্সে আছেন ১৩০ জন স্পেশাল টেরোরিষ্ট ফায়ার আর্মস এক্সপার্ট অফিসারবৃন্দ- যাতে হেলিকপ্টার থেকে রশি দিয়ে নামা(ছত্রী সেনার ন্যায়) এবং বিল্ডিং স্টর্মিং ক্ষেত্রে জিম্মি উদ্ধার ও স্কুলের শিশুদের উদ্ধারে যাবতীয় প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ও দক্ষ একদল অফিসারদের সমন্বয়ে এই ইউনিট সাজানো হয়েছে।
তাদের কাছে আছে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির আগ্নেয়াস্র এসআইজি ৫১৬, এবং তাদের নির্দেশনা রয়েছে মাথায় গুলি করার। সাধারণতঃ ট্রেইন্ড শুটারদের বুকে গুলি করার বিধান থাকলেও এই ইউনিটের রয়েছে প্রয়োজনের ক্ষেত্রে সরাসরি মাথায় গুলি করার ক্ষমতা।
মোম্বাই কিংবা নাইরোবির ওয়েস্টগেট শপিং মলের মতো কিংবা আরো খারাপ আক্রমনের সময়ে এই ইউনিটের পাশাপাশি আর্মি স্পেশাল ফোর্স রিজার্ভ রাখা আছে, যা দ্রুত এবং সঙ্গে সঙ্গে রেসপন্স করা যায়।
কিন্তু ২০০৪ সালের মাদ্রিদে ট্রেন স্টেশনের আক্রমনের পর প্যারিসের আক্রমন আরো ভয়াবহ হওয়াতে এন্টিটেরোরিজম আইনের রিভিউ নিয়ে ভাবছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও হাই সিনিয়র অফিসিয়ালরা। কোবরা মিটিঙে সেটাই বিস্তারিত আলোচিত হয়েছে।
যদিও ব্রিটেনের এবং প্যারিসের কাউন্টার এক্সপার্টরা পৃথিবীর সবচাইতে সেরা এক্সপার্ট হিসেবে খ্যাতি রয়েছে, তারপরেও ফ্রান্সের এই আক্রমন নতুন করে রিভিউ সামনে এনে দিয়েছে।
পুলিশ, কমিউনিটির নাগরিকবৃন্দ সকলেরই সমান দায়িত্ব ব্রিটেনের বুকে যে কোন সন্ত্রাসী কার্যক্রম যাতে পরিচালিত হতে না পারে, একই সাথে সন্ত্রাসীদের যে কোন ঝুকি মোকাবেলায় সকলের ঐকান্তিক সহযোগিতা, সমর্থন, সোচ্চার জরুরী।
15 November 2015, London.