প্রবাসে সফল বাঙালি ইসকান্দার আলী
প্রবাসের মতো অচেনা কোনো জায়গায় সঙ্গী বা সহযোদ্ধা যদি না থাকে তাহলে কেবল এককভাবে মনের অদম্য ইচ্ছা শক্তির জোরে সামনে এগিয়ে যাওয়াটা খুবই কঠিন। কিন্তু কাজের প্রতি একাগ্রতা, জনগণের জন্য ভালোবাসা, নিজের অধ্যবসায় ও লক্ষ্যে পৌঁছানোর লক্ষ্যে যদি স্থির থাকে তাহলে হিমালয় পর্বতও অতিক্রম করা কোনো দুঃসাধ্য কাজ নয়। এমনই এক দুঃসাধ্য কাজ করে সফল হয়েছেন ইসকান্দার আলী।
প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য আর সুখী ও সমৃদ্ধিশালী দেশ সুইজারল্যান্ডের বুকে বাংলা মায়ের এক সফল নায়কের সার্থক এক গল্পের রূপকার হলেন এই ইসকান্দার আলী। সুইজারল্যান্ডের ক্যান্টন জোরা ডিস্ট্রিক্ট ডেলেমোতে মাত্র হাতে গোনা চার থেকে পাঁচটি বাংলাদেশি পরিবারের বসবাস। আর এখানে ভোটারের সংখ্যা কমপক্ষে ১৭ হাজারের ওপরে। অনুমান করা যায়, এই সিংহভাগ ভোটারের মধ্যে বাঙালি পাঁচটি পরিবারের ভোটারের সংখ্যা শূন্য শতাংশেরও নিচে। আবার এই ১৭ হাজার ভোটারের মধ্যে ০.১ শতাংশেরও কম এথনিক মাইনরিটি। অর্থাৎ স্থানীয় সুইশ ভোটাররাই সর্বাধিক, অল্প কিছু ভোটার আছেন আলবেনিয় ও কসোভো যা নেহাতই সংখ্যায় অপ্রতুল। জাতীয়ভাবে যেমন স্থানীয়ভাবেও সোশ্যালিস্ট পার্টি এখানে জনপ্রিয়। এই সোশ্যালিস্ট পার্টির সদস্য হিসেবে ইসকান্দার আলী গত পাঁচ বছর ধরে কাউন্সিলরের দায়িত্ব পালন করছেন।
এত অল্প বা শূন্য বাংলাদেশি ভোটারদের ওপর ভরসা করে কেমন করে তিনি এত জনপ্রিয় ও ভোটে জয়লাভ করলেন, সেই বিস্ময়ের কথা বলতে গিয়ে তিনি বললেন, সুইজারল্যান্ডের রাজনীতিতে একজন দলীয় কর্মী ও নেতারা প্রথমেই বিবেচনা করে ব্যক্তিকে, ব্যক্তির ট্র্যাক রেকর্ড, সততা এবং কাজের প্রতি তার কমিটমেন্ট ও পরিকল্পনা। এখানে দলীয় সদস্যরা তিনি কোনো পার্টি করেন সেটা আগে দেখেন না। অবশ্যই দলীয় প্রার্থীকে তারা সমর্থন করেন, কিন্তু ভোটের ক্ষেত্রে যদি দেখেন অপজিশন প্রার্থী তুলনামূলকভাবে ভালো তাহলে তিনি দলীয় প্রার্থীকে ভোট না দিয়ে অপজিশন প্রার্থীকে ভোট দেন। এখানেই সুইজারল্যান্ডের জনগণ ও গণতন্ত্রের মাহাত্ম।
ইসকান্দার বলেন, ‘সুইশ জনগণ আমার দলীয় পরিচয়ের পাশাপাশি বিগত বছরগুলোতে দলীয় কাজ ও জনকল্যাণে আমার কাজকে, কমিটম্যান্টকেই বিবেচনা করেছেন।’
ইসকান্দার আলী বর্তমানে স্থানীয় সোশ্যালিস্ট পার্টির দায়িত্বেও রয়েছেন। দল তাকে এই গুরুদায়িত্ব দিয়েছে তার কাজ দেখে। তিনিও জনগণের সেবা করে যাচ্ছেন।
বাংলাদেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা, দলীয় প্রার্থী, আনুগত্য আর ভোটের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরে ইসকান্দার বলেন, ‘আমাদের নির্বাচনী ব্যবস্থায় পরিবর্তন না আনলে সত্যিকারের গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের উন্নয়ন আর জাতীয় উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা যাবে না। ভোটের ক্ষেত্রে দলীয় আনুগত্য থাকার ব্যবস্থা দলীয় সদস্য এবং দলের মধ্য থেকে বিলুপ্তির ব্যবস্থা আর সেই সঙ্গে শিক্ষাও জরুরি।
তিনি বলেন, ‘সুইজারল্যান্ডের নির্বাচন কমিশন, দলগুলো, দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে যার যার কাজে কেউ বাধা হয়ে দাঁড়ায় না। আমাদের নির্বাচন কমিশনকেও নিজেদের দায়িত্ব, কর্তব্য সম্পর্কে পূর্ণ ওয়াকিবহাল যেমন হতে হবে, সেই সঙ্গে নির্বাচন কীভাবে সুচারু ও সুষ্ঠুভাবে দলীয় প্রভাবমুক্ত হয়ে স্বাধীনভাবে জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগের ব্যবস্থা চালু করতে হবে। মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে আগে। সরকারকে নির্বাচন কমিশনের কাজে কোনোভাবে হস্তক্ষেপ করা থেকে আইনগতভাবে বাধ্যবাধকতা থাকতে হবে, সেই সঙ্গে সেটা চর্চাও করতেও হবে।
ফিরে আসার সময় কাউন্সিলর ইসকান্দার আলী বললেন, বাংলাদেশের জনগণ ওনার জন্য যেন দোয়া করেন, যাতে উনি প্রবাসের মাটিতে দেশের ভাব মূর্তি আরও উজ্জ্বল করতে পারেন।