সৈয়দ শাহ সেলিম আহমেদ– সুইজারল্যান্ড থেকে
সুইজারল্যান্ডের ছোট্র ছিম ছাম সুন্দর এক শহর ডেলেমো- ফ্রান্সের একেবারে সন্নিকটে। এই ডেলেমোতে মাত্র ৪ থেকে ৫টি বাংলাদেশী পরিবারের বসবাস। এখানকার সুইশ বাংলাদেশী এসোসিয়েশন এর কর্ণধার কাজী আসাদুজ্জামান, প্রেসিডেন্ট ইমরান খান মুরাদ, সেক্রেটারি কে এম হাসান, আর স্থানীয় বাংলাদেশী কাউন্সিলর সোশ্যালিষ্ট পার্টির নেতা ইসকান্দার আলীর অক্লান্ত প্রচেষ্টায় সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন শহর যেমন জেনেভা, বাসেল, জুরিখ, লুসান ইত্যাদিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশীদের একত্রিত করে পালন করেন বৈশাখী মেলা। নাম দিয়েছেন বাংলাদেশ ফেস্টিভ্যাল। তাদের আয়োজনে কয়েকশত বাংলাদেশীদের উপস্থিতিতে দেশীয় হরেক রকমের পীঠা, টাঙ্গাইলের সূতি কাপড়, সেলোয়ার কামিজ, আর নানা পদের মজাদার খাবারের দোকানে ছিলো উপচে পড়া ভীড়। ডেলেমো স্থানীয় কমিউনিটি সেন্টারের তিল ধারনের স্থান ছিলোনা। দুপুরের মধ্যেই পুরো মিলনায়তন ভরে বাইরের মাঠ পর্যন্ত বাংলাদেশী, স্থানীয় সুইশ অধিবাসী, আর নানা এথনিক মাইনোরটির নারী পুরুষের প্রচুর মাগম ঘটে।
অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ক্যান্টন জোরার হোম মিনিস্টার মিস নাতালি বার্থোলো, ডেলেমোর মেয়র ডামেমিয়া চাওপি, সুইডিশ ন্যাশনাল পার্লামেন্ট মেম্বার পিয়ারে অ্যালিন ফ্রেডজ, মহিলা সোশ্যালিস্ট পার্লামেন্টারি গ্রুপের ডেপুটি মোর্যাল ভ্যামডা, বেতার বাংলার সিইও নাজিম চৌধুরী, বাংলাদেশ এম্বাসাডরের প্রতিনিধি মোহাম্মদ হোসেন সরকার।
অনুষ্ঠানে সুইডিশ পার্লামেন্টের সদস্য পিয়ারে অ্যালিন ফ্রেডজ বলেন, বাংলাদেশ যদিও দরিদ্র, তথাপি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, যা এর ঐতিহ্যকে আরো বিকশিত করে তুলেছে বিশ্ব দরবারে। বিশ্ব জলবায়ূ ও কার্বন নিঃস্বরনের সব চাইতে ক্ষতিগ্রস্থ দেশ সমূহের মধ্যে বাংলাদেশ এবং সকলের উচিৎ, বিশেষ করে বাংলাদেশের উচিৎ জলবায়ূর ক্ষতিকর প্রভাব ও কার্বন নিঃস্বরনের ক্ষতিকর অবস্থার প্রেক্ষিতে সহযোগিতার জন্য বিশ্ব দরবারে তুলে ধরা ও কাজ করা। বাংলাদেশ ফ্যাস্টিভ্যালে বাংলাদেশীদের ট্রাডিশনাল পাজামা-পাঞ্জাবী আর শাড়ী ও চূড়ির ভুয়সী প্রশংসা করেন সুইডিশ এই এমপি।
তিনি আরো বলেন, কার্বন নিঃস্বরনের ফলে অর্থাৎ বিশ্বের জলবায়ূর বৈরি প্রকোপ যদি আরো কিছুটা বৃদ্ধি পায় তবে বাংলাদেশ আগামিতে মালদ্বীপের মতো এক অবস্থায় পড়ে যাবে- যা থেকে নিস্কৃতির জন্য এখনি কাজ করা উচিৎ । কারণ বাংলাদেশ ও এর জনগন অসম্ভব এক সুন্দর দেশ, এর জনগন আতিথেয় পরায়ণ।
Home Minister
সুইশ এই এমপি বলেন, বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী বাংলা নববর্ষ উদযাপন সুন্দর এক ভ্রাতৃত্ব ও এক হয়ে চলার শিক্ষা দেয়- যা সকলকে অনুপ্রাণীত করে।
বাংলাদেশ শত দরিদ্রতার মধ্য দিয়ে চললেও এর গণতান্ত্রিক কাঠামো ও গণতন্ত্রের প্রতি জনসাধারণের ভালোবাসা সত্যি বিরল। পিয়ারে এল্যান ফ্রেডজ বাংলাদেশীদের আন্তরিক অভিনন্দন জানান সেই সাথে।
অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নাতালি বার্থেলো বাংলাদেশ ফ্যাস্টিভ্যালের ভুয়সী প্রশংসা করে বলেন, আজকের এই অনুষ্ঠান প্রমাণ করে বাংলাদেশী জনগনের কালচার অনেক সমৃদ্ধ এবং সকল দল মত নির্বিশেষে সকলের জন্য অবারিত। তিনি বাংলাদেশী জনগনের প্রশংসা করে আরো বলেন, এখানকার সমাজে বাংলাদেশীদের ইন্টেগ্রেশনের সব চাইতে সুন্দর উদাহরণ হলো আজকের এই সুন্দর ফ্যাস্টিভ্যাল।
মেয়র ড্যামিয়া চাওপি বলেন, বাংলাদেশের খাবার ও ট্র্যাডিশন অবশ্যই প্রশংসার দাবীদার। বাংলা সঙ্গীত অনেক সমৃদ্ধ এবং রীচ এক সংস্কৃতি। আমাদের সুইশ কালচার ও সোসাইটিতে বাংলাদেশীদের ইন্টেগ্রেশনের শ্রেষ্ঠ প্রমাণ হলো কাউন্সিলর ইস্কান্দার আলী। এ সময় তিনি তার বিরোধী দল সোশ্যালিষ্ট পার্টির পত্রিকা অনুষ্ঠানে দেখিয়ে বলেন, এখানে ইসকান্দার আলীর সোশ্যালিষ্ট পার্টির নেতা হিসেবে তার কাজের ও দক্ষতার মূল্যায়ন তুলে ধরা হয়েছে, সত্যি সেটা প্রশংসনীয়।
ম্যোরেল ভ্যামডা সুইশ সমাজে বাংলাদেশী নারীদের অংশ গ্রহণমূলক কাজে আরো এগিয়ে আসার আহবান জানান।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ভ্যায়োলিনে বাংলাদেশী জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেন স্কুল ছাত্রী বাংলাদেশী মেয়ে কাজী অরন্য অর্নি। অতিথিদের ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানায় চার বাংলাদেশী স্কুল ছাত্রী যথাক্রমে নীলাঞ্জনা, নিলিমা, অদৃতি, অর্নি ।
অনুষ্ঠানে স্থানীয়দের মধ্য দিয়ে বক্তব্য রাখেন সালাহ উদ্দিন ইরান, ডেলোমোর মাসুদ কামাল, মিনহাজ চৌধুরী, কাউন্সিলর ইসকান্দার আলী, বাসেলের মোশাররফ হোসেন, জুরিখ থেকে নাজমুল হাসান, নাজনিন কাদরী, আলাউদ্দিন শেখ, রিপন,
বক্তব্য রাখেন ইয়াসিনসালাউদ্দীন ইরান, মাসুদ কামাল দেলেম, মিনহাজ চৌধুরী, আহম্মেদ লিটন, মোশাররফ হোসেন বাসেল, নাজমুল হাসান মল্লিক জুরিখ, নাজমি কাদরিও ভিন দেশী (আলবানী) থাকে দেলেম তে, সুইস বাংলাদেশ এসোসিয়েশনের-ইমরান খাঁন সভাপতি, এম শামীম সহ সভাপতি, কে এম হাসান সাধারন সম্পাদক, আলাউদ্দীন শেখ, রিপন, ইয়াছিন , কাজী আসাদুজ্জামান সদস্য, প্রমুখ।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে ছিলো মনোজ্ঞ সঙ্গীতানুষ্ঠান। সঙ্গীত পরিবেশন করেন তপন চৌধুরী, শাহনাজ সুমি, সুমন শরীফ, মিনহাজ দীপন প্রমুখ। নৃত্য পরিবেশন করেন অদিতি রায়।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত প্রত্যেককেই সুইশ বাংলাদেশ এসোসিয়েশন মধ্যাহ্ন ভোজে আপ্যায়িত করেন।
Salim932@googlemail.com
24th May 2016, Switzerland.