সৈয়দ শাহ সেলিম আহমেদ- লন্ডন থেকে
আধুনিক গণতন্ত্রের সূতিকাগার আর গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সবচাইতে সুন্দর ও দৃশ্যমান যে ব্যবস্থা দেশে বিদেশে এতো প্রশংসিত, বিশেষ করে ক্ষমতার পরিবর্তনে ব্রিটেনের যে নির্বাচনী ব্যবস্থা সর্বমহলে আদর্শতম এক ব্যবস্থা হিসেবে স্বীকৃত ও সিকিউর ব্যবস্থা হিসেবে সমাদৃত- ব্রিটেনের সেই নির্বাচনী ব্যবস্থায় প্রধান ব্যবস্থা ভোটার রেজিস্ট্রেশন সহ পুরো ইলেক্টোরাল সিস্টেম মিলিয়ন মিলিয়ন জালিয়াতির প্রমাণ আর ভুলে ভরা ব্যবস্থা নিয়ে- ব্রিটিশ সরকারের ১০ নম্বর ডাউনিং ষ্ট্রীটের সাথে জড়িত, সরকারের থিংক ট্যাংক হিসেবে পরিচিত, সংবিধান বিশেষজ্ঞ মাইকেল পিন্টু-ডোচস্কিনিস্কির রিপোর্টে সেই ভয়াবহ জালিয়াতির তথ্য উদঘাটিত হয়েছে। তার ৫২ পৃষ্ঠার ইলেক্টোরাল ওমিশন-পলিসি এক্সচেঞ্জ রিপোর্ট নামক ডোসিয়ারে ব্রিটিশ ইলেক্টোরাল পলিসি সিস্টেমের সিরিয়াস ফ্রডের ব্যাপারে রিপোর্ট প্রকাশ করেছেন, একই সাথে সুপারিশমালাও তুলে ধরেছেন।
পলিসি এক্সচেঞ্জ রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, ব্রিটেনের নির্বাচন কমিশন ভোট জালিয়াতি রোধে ব্যবস্থা গ্রহণে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে।
রিপোর্টে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, ২০০৫ সাল থেকে নির্বাচনী ব্যবস্থার ত্রুটির ফলে এই ভোট জালিয়াতি বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০০৫ সালে ইলেক্টোরাল রোলের ভুল ভ্রান্তি যেখানে ৭ মিলিয়ন ছিলো, সেখানে বর্তমানে এসে ১৩ মিলিয়ন এবং ১৫.৫ মিলিয়ন পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। অর্থাৎ সেই ভুল ভ্রান্তি থেকে ভোট জালিয়াতিও আনুপাতিক হারে ও ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ইলেকশন কমিশন প্রতিরোধ করতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে।
মজার ব্যাপার হলো, ব্রিটিশ নির্বাচন কমিশন আজকে এসে স্বীকার করছেন, কমিশনে ৭ মিলিয়ন ভোটার তালিকায় মিসিং রয়েছে এবং ৫ মিলিয়ন ভোটার সঠিকভাবে সন্নিবেশিত হয়নি বা সঠিকভাবে তালিকাভুক্ত করা হয়নি। তার মানে বিগত সব নির্বাচনেই এই ৭ মিলিয়ন এবং ৫ মিলিয়ন ভোটার কোন কোনভাবেই সঠিকভাবে কাস্টিং ভোটের গণনার আওতায় আসেননি বা অতিরিক্ত গণনা অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন, যেহেতু মিসিং এবং ইন-একুরেটলি তালিকাভুক্ত হয়ে আছে।
পলিসি এক্সচেঞ্জ রিপোর্টে বলছে, ভোট জালিয়াতি এটা একটা বড় ধরনের সমস্যা- যেখানে ২০০১ সালে ১৮টি কেসের মাধ্যমে ৩৭ জন লোকের জেল সেন্টেন্স হয়েছে। এতে বলা হয়েছে নির্বাচন কমিশনকে অবশ্যই সঠিক কাজ (রাইট জব) করতে হবে, যাতে ভোটার এনগেঞ্জম্যান্টের ব্যাপারে পলিসি ও প্রমোটিং প্রভাবান্বিত করা বন্ধ করতে হবে, যা তারা রেগুলেটরি করতে ব্যর্থ হয়েছে। পলিসি এক্সচেঞ্জ বলেছেন সম্পূর্ণ নতুন এক স্ট্যান্ডার্ড কমিশন কেবল সেটা রুখতে পারে সঠিক ভাবে।
সংবিধান বিশেষজ্ঞ মাইকেল পিন্টু-ডোচিস্কিনিস্কি বলেছেন, নির্বাচনী ব্যবস্থাপনা ভোটার তালিকা ও ভোটার তালিকা অন্তর্ভূক্তি এবং ভোটার ফর্ম লিপিবদ্ধ করনে সারা দেশব্যাপী মারাত্মক ত্রুটি লক্ষণীয়- বিশেষ করে সম্প্রতি টাওয়ার হ্যামলেটসে ভোটার তালিকা ও ফর্ম অন্তর্ভুক্তির ব্যাপারে জালিয়াতি সুস্পষ্ট- যাতে নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রম ও কার্যকর নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে, যাতে দেখা গেছে কমিশন তার রেগুলেটরি দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন, অথচ ভোটার যোগ্য সকলকে সঠিক ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে নির্বাচনে ভোট প্রদান গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নাগরিকের মৌলিক অধিকার।
পলিসি এক্সচেঞ্জ রিপোর্টে ভোটার জালিয়াতি রোধে কাউন্সিল ট্যাক্সে স্মল রিবেট দিয়ে হলেও নাগরিকদের ভোটার রেজিস্ট্রেশনে উদ্বুদ্ধ করার, যাতে ফাইন আরোপ না করার, তাতে প্রত্যেক বাসা-বাড়ির যারা ভোটার রেজিস্ট্রেশনের যোগ্য, তাদের ফর্ম ফিল-আপের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করা। এক্ষেত্রে একজন ব্যক্তির জন্য একটি ফর্ম রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থা করার কথা বলেছেন।
পলিসি এক্সচেঞ্জ সুপারিশে বলেছেন, বর্তমানের হাউস হল্ড(বাড়ির মধ্যেকার ফর্ম ফিল না করে) রেজিস্ট্রেশন না করে ইন্ডিভিজুয়ালি( এককভাবে একজন একজন করে ফর্ম ফিল-আপ) রেজিস্ট্রেশন করলে সেটা হবে অধিক নিরাপদ এবং জালিয়াতি রোধে সক্ষম হবে।
এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের একজন মুখপাত্র বলেন, আমরা জানি ৭.৫ মিলিয়ন বাড়ির ভোটাররা সঠিকভাবে নিবন্ধিত নন, তার অর্থ এই নয় যে বর্তমান সিস্টেমে ভোটার রেজিস্ট্রেশনকে কেউ আন্ডারএস্টিমেট করা ঠিক হবেনা, কেননা নতুন ব্যবস্থায় আমরা ভোটার রেজিস্ট্রেশন যাতে সঠিক ভাবে সম্পন্ন হয় এবং যথাযথভাবে পরীক্ষা- নিরীক্ষার মাধ্যমেই সম্পন্ন করার নিশ্চিত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে তিনি জানালেন।
কমিশনের মুখপাত্র আরো জানালেন, আমরা প্রত্যেক অভিযোগ এবং কেসকে ও ভোট জালিয়াতির অভিযোগকে অবশ্যই সিরিয়াসলি নিয়েছি, পুলিশ ও ইলেক্টোরাল এডমিনিস্ট্রেটর এর সাথে সমন্বয় করে কাজ করছি, একই সাথে নিশ্চয়তা দিচ্ছি, যাতে সকল অভিযোগসমূহ অবশ্যই পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে যাচাই বাছাই এবং তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে সকল মেজর নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগেই সেই সকল কাজ নিশ্চিত করা হবে যথাযথভাবে।
তিনি আরো জানালেন, এ বছরের শুরুতেই আমরা ভোটার লিস্ট জালিয়াতির ক্ষেত্রে ১৬টি ক্ষেত্র চিহ্নিত করেছি, অন্যান্য এরিয়া সহ টাওয়ার হ্যামলেটস-লন্ডন এলাকায়, যেখানে আমরা এই জালিয়াতির রোধকল্পে অধিকতর শক্তিশালী সিস্টেম আরোপের বিকল্প প্ল্যানও উপস্থাপন করেছি। এমনকি আমরা ভাবছি এ ব্যবস্থাকে আরো অধিক শক্তিশালী করার জন্য ভোটার আইডি কার্ড চালু করার।
পলিসি এক্সচেঞ্জ রিপোর্টের পিডিএফ এর জন্য নীচের লিংকে ক্লিক করুন প্লিজ-
http://www.policyexchange.org.uk/images/publications/electoral%20omission.pdf
23 October 2014, London.