সৈয়দ শাহ সেলিম আহমেদ
ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক, ঐতিহাসিক স্যার রিচার্ড ইভান্স ব্রিটিশ কোয়ালিশন এডুকেশন সেক্রেটারি মাইকেল গোভকে তির্যক ভাষায় সমালোচনা করে বলেছেন, “আমার মনে হয়, ন্যাশনাল হিস্ট্রি কারিকুলামের প্রস্তাবনায় মিঃ গোভ নিশ্চিতভাবে এক ডঙ্কি”। তিনি আরো যোগ করে বলেন, “এ ডংকি হো প্রিটেন্ডস টু বি এ লায়ন”। স্যার ইভান্স এমন এক সময় এডুকেশন সেক্রেটারিকে নিয়ে এমন মন্তব্য করলেন, যখন জিসিএসই সহ স্কুলগুলোর রেজাল্ট ও কারিকুলাম নিয়ে ব্যাপক পরিবর্তন বা সংস্কারের কথা আলোচিত হচ্ছে, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ইতিমধ্যে ছাত্র ছাত্রীদের কাছে ইমেইল স্কাম নিয়ে ক্ষমা চেয়ে আলোড়ন তুলেছে, স্কুলগুলোর কারিকুলাম নিয়ে কনসাল্টেশন ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে-ঠিক সে সময় এডুকেশন সেক্রেটারিকে নিয়ে এমন তির্যক লেভেলিং মন্তব্য সকলের দৃষ্টি আকর্ষিত হয়েছে। ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটি নিউজ পেপারে জানুয়ারি মাসের শীর্ষ নিউজ শিরোনাম সহ অনলাইন মিডিয়া, বিবিসি রেডিও, টেলিভিশনে ব্যাপক আলোচনার খোঁড়াক জুগিয়েছে।
স্যার রিচার্ড ইতিমধ্যে নতুন ২ পাউন্ড কয়েন, যেখানে লর্ড কিচেনারের ইমেজ ডিসপ্লেয়িং ব্রান্ডিং করা হয়েছে, সে ব্যাপারেও মতামত ব্যক্ত করে বলেছেন, এটা “ইনএপ্রোপ্রিয়েট” হয়েছে। তিনি বলেছেন, আমাদের আরো গভীর ভাবে চিন্তা ভাবনা করা উচিৎ ছিলো, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের বিষয়ে আরো ব্যাপকভাবে তুলে ধরা উচিৎ ছিলো, যেখানে নতুন এই কয়েন পাবলিক বিতর্ককেই একেবারে বন্ধ করে ফেলেছে। তিনি বলেছেন, অবশ্যই এখানে বিভিন্ন জনের বিভিন্ন মত থাকবে, থাকতে পারে। কিন্তু এটাতে রেলরোডের পথের শেষ বা সমাপ্তি কিংবা রাস্তার শুরু হিসেবে দেখলে চলবেনা ।
লর্ড কিচেনারের ইমেজ এই কয়েন থেকে পরিবর্তনের ব্যাপারে শেফিল্ডের লেবার দলীয় কাউন্সিলর সিওন্ড-মইর রিচার্ডের পিটিশনের প্রতি তার সমর্থন ব্যক্ত করে বলেছেন, রিচার্ড ইতিপূর্বে দেশের ঐতিহাসিক প্রেক্ষিতের তাৎপর্য তুলে আনতে অনেক ভালো কাজ করেছেন । তার দেশপ্রেমিকতা প্রশ্নাতীত ।
যদিও বর্তমান কোয়ালিশন সরকারের সেন্টিনারি কোমেমোরেশান পরিকল্পনার ব্যাপারে তার সমর্থন থাকা সত্যেও মাইকেল গোভের সাথে ডেমোক্রেসি এবং ফ্রিডমের মূল্যবোধের প্রশ্নে প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের ভূমিকা নিয়ে বিস্তর ব্যবধান এবং তর্ক যুদ্ধ ব্যাপক টেনসের জন্ম দিয়েছে।
স্যার রিচার্ড বলেন, “ইতিমধ্যে প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের সৈনিকদের অনেক ডায়রি এবং লেটারস অবমুক্ত করা হয়েছে, তথ্য আবিষ্কৃত হয়েছে, ঐতিহাসিক তথ্য উদঘাটিত হয়েছে, যেখানে স্পষ্টতই সৈন্যরা ব্রিটিশ এম্পায়ারের জন্য যুদ্ধ করেছিলো, মাইকেল গোভের উদ্ধৃত ওয়েস্টার্ণ লিবারেল ডেমোক্রেটিক মূল্যবোধের জন্য নয়”। আর এই প্রেক্ষিতে এই অধ্যাপক রাগান্বিত হয়ে পাবলিকলি এডুকেশন সেক্রেটারিকে ডংকির সাথে তুলনা করে সমালোচনা করেন।
ইতিহাসের এই অধ্যাপক বলেন, “আমাদের ভুলে গেলে চলবেনা ১৯১৪ সাল পর্যন্ত ব্রিটেনে ডেমোক্রেসি ছিলোনা । ঐ সময়ে ৪০% প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষের ভোটাধিকার ছিলোনা।“
স্যার রিচার্ড আরো বলেন, “আমি পাবলিকলি মাইকেল গোভের সমালোচনা করছি এই কারণে যে তিনি স্কুলগুলোর ন্যাশনাল কারিকুলামের জন্য যে পার্সোনাল ড্রাফট তৈরি করেছেন, আমি আশা করবো তিনি সেটা উইথড্রো করবেন এবং আমার মনে হয় এই জন্য তিনি আমাকে ভুল বুঝবেননা”।
ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটির নিউজ পেপার ছাড়াও ব্রিটেনের মূলধারার বহুল প্রচারিত দৈনিক টেলিগ্রাফ, গার্ডিয়ান, টাইমস সহ সকল সংবাদ পত্রে ও শিক্ষা বিষয়ক ম্যাগাজিনগুলোতে স্যার রিচার্ডের এই মন্তব্য নিয়ে জানুয়ারি ২০১৪ ঠাসা ছিলো।
মন্তব্য: আমাদের দেশও গণতান্ত্রিক দেশ। এবং বলা হয়ে থাকে জনগণই ক্ষমতার মালিক। টেলিভিশনে নেতা নেত্রী আর মন্ত্রী সাংসদেরা গলা ফাটিয়ে সেটা বলে থাকেন। আমাদের দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন শিক্ষক জাতীয় ইতিহাসের সঠিক তথ্য নির্দেশিকা দিয়ে স্কুল কারিকুলাম নিয়ে এডুকেশন মন্ত্রী বা সংশ্লিষ্ট কর্তা ব্যক্তির এমন সমালোচনা করে পার পাওয়া দুষ্করই শুধু নয়, মন্ত্রীর আগে ভাগে মন্ত্রীর চ্যালা-চামুণ্ডা, গ্রুপ, সরকারি শিক্ষকদের গ্রুপ, ছাত্রলীগ ক্যাডার আর লাঠিয়ালরা শিক্ষককে সঠিক বক্তব্য বা সমালোচনা করার জন্যে বাসা থেকে ধরে নিয়ে আসতো নয়তো মেরেই ফেলতো। অথচ আমরা শিখছি, উন্নত হচ্ছি, গণতান্ত্রিক বলে দাবি করছি- যেমন করে ওরাও শিখছে, উন্নতি করেছে, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে।
প্রিয় পাঠক নতুন করে নতুনের জন্য ভাবুন।
salim932@googlemail.com
31st January 2014,London.