সৈয়দ শাহ সেলিম আহমেদ-
(প্রথম কিস্তি- জোবাইদা রহমান পর্ব)
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ঘটনা প্রবাহ ও উত্থান-পতনের সাথে দুই মহীয়সী নারী -শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার সাথে আওয়ামীলীগ এবং বিএনপির ভূত, বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ ওতোপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। কোন কোন রাজনৈতিক তাত্বিক এবং পন্ডিতেরা স্বীকার করেন আর নাই করেন কিংবা নানা তত্বের আলোকে বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করেননা কেন- বাস্তব সত্য হলো বাংলাদেশ এবং এই বড় দুটি দল এখনো শেখ হাসিনা ওয়াজেদ এবং খালেদা জিয়াকে কেন্দ্র করেই আবর্তীত হচ্ছে। এর বাইরে এখন পর্যন্ত কোন চিন্তা ভাবনা তাদের নেতা কর্মীরা যেমন ভাবতে পারেননা, তেমনি বাস্তব সম্মতও নয়।মাঝখানে নানা মুনীর ষড়যন্ত্র তত্বের মাধ্যমে এমনকি মাইনাস-প্লাস তত্ব আর সংস্কারপন্থীদের মাধ্যমে শেখ হাসিনা এবং খালেদা জিয়াকে মাইনাস করার একটা ব্যর্থ চেষ্ঠার পরিণতির নির্মম পরিণতি আপনি আমি সকলেই কম বেশী দেখেছি ।
০২) বাংলাদেশের অনেক মহীয়সী নারী যুগের পর যুগ নানা উত্থান পতনের সাথে নিজেকে জড়িয়ে ব্যাপক অবদান রেখেছেন। সেটা যেমন শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতিতে কিংবা রাজনীতিতেও একই ধর্তব্য। এমনি ধারাবাহিকতায় না হলেও ভিন্ন এক আঙ্গিকে এবং দলীয় জনপ্রিয়তার উপর ভর করে শেখ হাসিনা এবং খালেদা জিয়া বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার একেবারে শীর্ষে অবস্থানের দুর্লভ গৌরবের অধিকারী। এই দুই নেত্রীর মাঝখানে আরো অনেকেই আছেন। তবে সেই সব আলোয় আলোকিত সকলেই এই দুই নেত্রীর আলোর নীচে নিজেকে বাঁচিয়ে এবং জ্বালিয়ে রাখলেও আরো একজন অতি সন্তর্পনে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নিজের অবস্থান জানান দেয়ার জন্য প্রাক-প্রস্তুতি বা রিহার্সাল পর্ব শুরু করেছেন, বলা যায় অনেকটাই সকলের অগোচরে তিনি রাজনীতির লাইম লাইটে দৃপ্ত পদে এগিয়ে আসছেন। এখন শুধু অপেক্ষা সময়, ক্ষণ ও দিন তারিখের। তিনি আর কেউ নন- সকলের পরিচিত, বিশেষ করে জাতীয়তাবাদী রাজনীতির লাখো নেতা কর্মীদের কাছে যার জনপ্রিয়তা আকাশছুয়ী, বিএনপির আজকের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সহধর্মীনী, মরহুম রিয়ার এডমিরাল এম এ খানের সুযোগ্যা কন্যা ডাঃ জোবাইদা রহমান।রাজনৈতিক পরিবারে জন্ম না নিলেও পিতার সামরিক-কৌশলী সান্নিধ্য যেমন তিনি পেয়েছেন, সেই সাথে রাজনৈতিক পরিবারের বধূ হিসেবে ডাঃ জোবাইদা রহমান নিজেকে অনেকটাই সকলের অগোচরে আদর্শ রমনীর সাথে সাথে একজন পরিপূর্ণ রাজনীতিক হিসেবেই তৈরি করে নিয়েছেন বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। আমাদের উপমহাদেশের রাজনৈতিক ঘটনা প্রবাহ ও বেনজির ভূট্রো, বন্দর নায়েক, ইন্দিরা গান্ধী সহ হালের ইয়াংলাক সিনাওয়াত্রার রাজনীতিতে অভিষেকের সূত্র জোবাইদা রহমানও যে রাজনীতিতে অভিষিক্ত হবেন- সেটা অনেকেই অনেক আগে থেকেই আচ করতে পেরেছিলেন। তবে ডাঃ জোবাইদার রাজনীতিতে আগমন যে ব্যতিক্রমধর্মী হবে সন্দেহ নেই। কেননা ইতোপূর্বে সংবাদ পত্রে নানা রিপোর্টের সূত্র ধরে খোদ বিএনপি এবং তারেক রহমানের ঘনিষ্ট সকলেই সংবাদ পত্রে জোবাইদার রাজনীতিতে আগমনের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু তার পরেও ঘটনা প্রবাহ কিন্তু জোবাইদার রাজনীতিতে অভিষিক্তের দিকেই দ্রুত গড়াচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।
০৩) এই সপ্তাহে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনেকটা নাটকীয়ভাবে কেবিনেটের মিটিঙয়ে জোবাইদা রহমানের শিক্ষাগত যোগ্যতার সাথে মেধা ও যোগ্যতার এবং পারিবারিক ঔজ্জ্বলতার প্রশংসা করেছেন। এই প্রশংসা একদিকে যেমন পজিটিভ এক ধারার সূচনার ইঙ্গিত অপরদিকে বিএনপি এবং নানা সন্দেহভাজনদের নেতিবাচক সমালোচনারও জন্ম দিয়েছে। বাংলাদেশের বিরাজমান সংস্কৃতি নেতিবাচক অবস্থাকে বড় আকড়ে ধরতে পছন্দ করে।
০৪) খালেদা জিয়া এবং লন্ডনে অবস্থানরত তারেক রহমান এর ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচনে অংশ গ্রহণের সম্ভাবনা ও সুযোগ অনেকটাই প্রশ্ন বিদ্ধ এবং রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ যেদিকে এগুচ্ছে, বলা যায় প্রায় দূরহ। ইতোমধ্যেই নির্বাচনী আইনে তারা অনুপযুক্ত হয়ে যাওয়ারই সম্ভাবনাই বেশী। যদি না আন্তর্জাতিক কোন চাপ বা বিশেষ ব্যবস্থায় বিএনপির অংশ গ্রহণ অপরিহার্য হয়ে পড়ে, সেক্ষেত্রে হয়তো সরকারকে ছাড় দিয়ে হলেও এই দুজনের একজনকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে হতে পারে। কিন্তু সেই সম্ভাবনা ১০০ ভাগের মধ্যে ০.০১ পার্সেন্টের কম। কেননা বিএনপির যে রাজনৈতিক ফোর্স -তা দিয়ে সেরকম পরিস্থিতি ২০১৯ সালের আগে করাটা দুষ্কর বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। ভারত প্রভাবিত রাজনৈতিক যে ফোর্স এবং অবস্থা আমাদের দেশে ক্ষমতায় অধিষ্টিত হওয়ার নিয়ামক শক্তি হয়ে আছে, সেখানে কেবলমাত্র ইউরোপের মাটিতে একটি মাত্র বৈঠকের মাধ্যমে নরেন্দ্রমোদীর মনোভাব আচ করাটা যে সহজসাধ্য ছিলোনা- সেটা বিএনপি এবং তারেক রহমান যেমন জানেন, তেমনি শেখ হাসিনার সরকারও ভালো করে জানেন, ২০১৯ পেরিয়ে গেলেও ভারতের রাজনীতি ও ক্ষমতার বলয়ে পরিবর্তন সাধিত হয়ে গেলেও বাংলাদেশের অংশে শেখ হাসিনার সরকারের অপরিহার্যতা বিরাজমান বাস্তবতায় ভারত, আমেরিকা এবং যুক্তরাজ্য সরকারের জন্য স্বস্তিদায়ক শুধু নয়, অনেকটা না চাইতে মেঘ এর মতোই।
০৫) ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচনে তাই বিএনপি সাধে হউক আর অসাধে হউক- বাধ্য হয়েই দলীয় ঐক্য এবং শৃংখলা আর সেই মরহুম রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আকাশ্চুম্বী জনপ্রিয়তাকে রাজনীতির মাঠে ধরে রাখার জন্যে দলীয় নেতৃত্বে জোবাইদা রহমানের বিকল্প যে কেউ হবেননা- সেটা নিঃসন্দেহে বলাই বাহুল্য। অবশ্য পারিবারিক নাটকীয় কোন দ্বন্ধ তৈরি হয়ে গেলে সেক্ষেত্রে তারেক রহমানের তনয়া হয়তো লাইম লাইটে চলে আসবেন, সেক্ষেত্রে তাকে সক্রিয় করার প্রয়োজনেও জোবাইদার প্রয়োজন পড়বে- যেহেতু তারেক রহমান কিংবা খালেদা জিয়া অনিচ্ছা সত্যেও রাজনীতির পর্দার আড়ালে চলে যাবেন। আর রাজনীতিতে জোবাইদার অভিষেক হয়ে গেলে স্বামী তারেক রহমানকে সাজা খেটে হলেও কিংবা সাজা মওকুফের মাধ্যমে ভিন্ন সমঝোতায় রাজনীতিতে ফিরে আসার পথও তৈরি হয়ে যাবে ধীরে ধীরে। রাজনীতিতে জোবাইদার অভিষেক যতো দেরি হবে, তারেক রহমানের রাজনীতির মাঠে ফিরে আসাও ততো দেরি এবং দুরহ হবে। সেজন্যেই খালেদা জিয়া সন্তর্পনে সব দিক বিবেচনা করেই আগে ভাগে জোবাইদা রহমানের জন্যে স্থায়ী কমিটির পদ শূন্য রেখেছেন।
০৬) দেশীয় রাজনীতির বলয়ের বাইরেও আন্তর্জাতিক বলয়ে বিএনপির রাজনীতির স্বচ্ছতা বিশেষ করে ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে দলীয় নেতৃত্বের স্বচ্ছতা ও আগামীর চাহিদা ও যুগের রাজনীতির সাথে তাল মেলাতে সক্ষম নেতৃত্বের প্রমাণ হেতু জোবাইদা রহমানকে বিএনপির হাল ধরতে হবে বা দিতে হবে। ২০১৯ সালে বাংলাদেশের রাজনীতির গোটা চাহিদা এবং চিত্র পাল্টে যাবে। নতুন করে সকল সমীকরন এবং রাজনৈতিক রণ-কৌশল দুই দলকেই সাজাতে হবে। তখনকার সমাজ চাহিদা ও সমাজ শক্তিসমূহের কাছে খালেদা জিয়া (এবং শেখ হাসিনা আরো কিছু পরে- সেটা আগামীকালের পর্বে ) একেবারে অনুপযুক্ত এবং অকার্যকর হয়ে যাবেন। যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে হিলারি যদি জয়ী হয়েও আসেন, তথাপি, এমনকি ভারতীয় নেতৃত্বে যদি পরিবর্তন হয়, তারপরেও পশ্চিমারা এবং ভারত খালেদা জিয়ার সাথে ( এবং আরো বহু পরে শেখ হাসিনার সাথে ) সন্ধি স্থাপন না করে নতুন নেতৃত্বের দিকেই এগিয়ে আসবে। বিএনপির চেয়ারপার্সন কিছুটা দেরিতে হলেও এই বাস্তবতা ধীরে ধীরে উপলব্ধি করতে সক্ষম হচ্ছেন বলেই জোবাইদার জন্য পথ প্রশস্ত করতে নিরবে হলেও সম্মত হয়েছেন সেটা বুঝাই যাচ্ছে।
০৭) সন্ত্রাস ও জঙ্গি ইস্যুতে বিএনপি আরো কোনঠাসা যেমন হবে, সরকারি দলের এই ইস্যুতে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলে নিজেরাও ধীরে ধীরে ২০১৯ সালের জন্যে সংকট ঘনীভূত করে তুলবে। সেই সংকটময় রাজনৈতিক মঞ্চে বিএনপি বিপর্যস্ত হয়ে যাবে। নেতা কর্মীরা নিষ্ক্রিয় ও দলত্যাগে কিংবা নির্জীব হয়ে যাবে অথবা সরকারী দলের ছায়ায় আশ্রয় নিবে। এই অবস্থায় বিএনপি আরো ভঙ্গুর হয়ে যাবে। মাঠের কর্মীরা নেতৃত্বহীন হওয়ার কারণে খালেদা জিয়া সংকটময় অবস্থায় পতিত হবেন, বিশেষ করে আদালতের রায়ের দন্ডিত হয়ে যাওয়ার পর। ব্যতিক্রম না হলে খালেদা জিয়া জেলেও যেতে পারেন। সেক্ষেত্রে নাজমুল হুদাদের মতো বিএনপির নেতাদের দল ভাগাতে ও ভাঙ্গাতে সহজ হয়ে যাবে। সেই অবস্থায় জোবাইদা হতে পারেন হতাশ ও বহু উপদলে বিভক্ত বিএনপিকে একীভূত করতে। যদিও তখনকার সময়ে সেই কাজ হবে বিশাল এক কঠিণ কাজ। সেক্ষেত্রে যতো আগে ভাগে জোবাইদার রাজনীতিতে অভিষেক হয়- ততোই বিএনপির জন্য মঙ্গল। তবে ২০১৯ সালের নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি জোবাইদাকে নিয়ে যে ভাবছে- সেটা যেমন বিএনপির গ্রিন সিগন্যালে জানান দেয়া হয়েছে, তেমনি সরকারি দলও যে প্রস্তুতি নিচ্ছে জোবাইদার সাথে প্রতিদ্বন্ধিতা করতে, পজিটিভ আগাম প্রশংসিত অভিনন্দনের আড়ালে জোবাইদার প্রশংসা- রাজনীতির সেই টার্নিং পয়েন্টের দিকেই নির্দেশ করছে। কেননা আওয়ামীলীগ বিএনপির জন্য রাজনীতিকে যেভাবে নিয়ে গেছে, আওয়ামীলীগের রাজনীতির স্বার্থে এখন জোবাইদার জন্য স্পেস করে দেয়া ছাড়া বিকল্প নেই।বিপরীতে আছে শুধু অগনতান্ত্রিক শাসন নয়তো একদলীয় স্বৈর শাসন, যা শেখ হাসিনা এখন আর চাননা এবং সেটার আর প্রয়োজনও নেই।
আগামীকাল- ২০২৫ সালে আওয়ামীলীগের হাল ধরবেন সজীব ওয়াজেদ জয় !
salim932@googlemail.com
10th August 2016, London