সৈয়দ শাহ সেলিম আহমেদ-
ব্রিটেনের রাজনীতিবিদ, হিউম্যান রাইটস গ্রুপ আর ক্যাম্পেইনরেরা সক্রিয় ও সোচ্চার হচ্ছেন জাতি সংঘের পাওয়ারফুল বডি হিউম্যান রাইটস কাউন্সিলের সৌদি আরবের চেয়ারম্যানশিপের বিরুদ্ধে। বছরব্যাপী সৌদি আরবের মানবতাবিরোধী কার্যক্রমের ক্যাম্পেইন তুলে ধরে তারা ব্রিটেনের সরকার প্রধানকে চাপ প্রয়োগের কৌশল করে যাচ্ছেন। ক্যম্পাইনর আর সৌদি আরবের ইউএন হিউম্যান রাইটস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান এর চেয়ারে বসার বিরোধীরা এখন তারা প্রধানমন্ত্রী টেরেজা মে`র দিকে তাকিয়ে আছেন। তারা সরাসরি থেরেজা মেকে সৌদি আরবের এই ইউএনএইচআরসির চেয়ারম্যান পদের বিরোধীতা ও চাপ প্রয়োগের জন্য আহবান জানিয়েছেন।
সৌদি আরব যখন ইউএন হিউম্যানরাইটস কাউন্সিলের চেয়ারম্যানের পদ পেয়ে যায়, তখন সারা বিশ্বের বিশেষ করে মানবতাবাদী আর লিবারেল রাজনীতিবিদদের জন্য ছিলো আচমকা এক সংবাদ। সবাই হতচকিত হয়ে গিয়েছিলেন। ব্রিটেনের প্রায় সব কটা মিডিয়ায় তখন সরগরম এবং প্রধান শিরোনাম ছিলো সৌদি আরবের এই চেয়ারম্যান শিপ প্রাপ্তি। তখনকার প্রাইম মিনিস্টারের দিকে সেদিন মিডিয়া অঙ্গুলি তুলে সৌদি রাজপরিবারের কাছ থেকে উপঢৌকন পেয়ে এমন কাজ করার কূট কৌশলের সমালোচনা করা হচ্ছিলো। যদিও সেদিন ডাউনিং ষ্ট্রীট থেকে বরাবরের মতোই এধরনের কোন কিছুর ইঙ্গিতের বিরোধীতা করে আসছিলো।
সৌদি আরব যখন হিউম্যান রাইটস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান পদের অধিকারি হয়ে যায়, তখনি আরেকটি সংবাদ ছিলো আরো চমকপ্রদ ও আচমকা এক সংবাদ। ব্রিটেন সৌদি আরবের কাছে বিশাল বাজেটের অস্র বিক্রির চুক্তি ও তাদের সামরিক সরঞ্জাম আধুনিকায়নের কথা বলে সেদিন মিডিয়ায় বিবৃতি দেয়া হয়েছিলো।যদিও মানবাধিকার ক্যাম্পেইনরেরা বিরোধীতা ও প্রতিবাদ করেছিলেন।
আগামী ১৩ই সেপ্টেম্বর ২০১৬ হচ্ছে ভোটাভুটির সময়। এই সময়কেই মানবাধিকার আর রাজনীতিবিদেরা সুবর্ণ সুযোগ হিসেবে থেরেসা মে যেন সৌদি আরবের বিরুদ্ধে ভোট দেন- সেটাই আহবান করেছেন। তাদের বক্তব্য হলো- গত ১ বছর ধরে সৌদি আরন ইয়েমেনে বোম্বিং করছে প্রচন্ডভাবে, শিরচ্ছেদ করে শাস্তি দিচ্ছে, অসংখ্য ফাসি এবং মানবাধিকার কর্মীদের আটক ও গ্রেপ্তার করছে।
ব্রিটেনের এই সব উদার গণতান্ত্রিক রাজনীতিক আর মানবাধিকার ক্যাম্পেইনরদের বক্তব্য হলো এহেন দেশ ইউএন হিউম্যান রাইটস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান পদে আসীন হয়ে হিউম্যান রাইটস নিয়ে বৈঠক কল ও আবারো আহবান বসলে তা হবে কলঙ্ক। সেজন্যে তারা বিরোধীতা করছেন আর টেরেজা মে`কে আহবান জানাচ্ছেন।
বিশ্ব মানবাধিকার দিবসের প্রাক্কালে তাদের বক্তব্য যদিও তাতপর্যপূর্ণ, তথাপি তাদের এমন আহবানে ব্রিটিশ সরকারের খুব একটা সাড়া নেই। ব্রিটেন বরাবরের মতোই ধনী রাজপরিবারের সাথে দহরম মহরম ও ব্যবসা বাণিজ্য পুরোদমে চালিয়ে যাচ্ছে।
লিবারেল ডেমোক্রেট পার্টির ফরেন এফেয়ার্স মুখপাত্র টম ব্রেক সৌদি আরবের ব্যাপারের ব্রিটিশ সরকারের এমন এন্ডলেস এক্সকিউজের সমালোচনা করেছেন তীব্র ভাবে। এমনেস্টি ইন্টারন্যাশনালও ইয়েমেনে সৌদি হামলার সমালোচনা করে বলেছে ইউকে সৌদি আরবের এই পদ রুখে দিতে বা স্থগিত করে দিতে ভুমিকা নিতে পারে।
এক হিসেবে দেখা গেছে, এ পর্যন্ত ইয়েমেনে সৌদি হামলায় ৫,৫০০ ইয়েমেনির মৃত্যু হয়েছে, ২.৫ মিলিয়ন লোক বাস্তুহারা হয়েছেন, আর অর্ধেকেরও ইয়েমেনি খাদ্যাভাবে পড়েছেন।
কনজারভেটিভরাও দাবী করছে, হিউম্যান রাইটস কাউন্সিলের ভোট গোপনীয় কিন্তু তা সত্যেও তাদেরও দাবী এ ব্যাপারে স্বচ্ছতা এবং সৌদির ব্যাপারে সরকারের অহেতুক এক্সকিউজের অবসান। তাদেরও দাবী বিশ্ব মানবাধিকার দিবসের দিনে সৌদি আরবের অমানবাধিকারের কার্যক্রমের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার এবং পদক্ষেপ গ্রহণের।
উল্লেখ্য গত বছর উইকিলিকসে প্রকাশ হয়েছিলো ২০১৩ সালে সৌদি আরবের হিউম্যান রাইটস কাউন্সিল পদ পেতে ইউকের সাথে সিক্রেট ট্রেড ডিল হয়েছিলো, যদিও ইউকে এখনো সৌদি আরবের পূণরায় নির্বাচিত হওয়ার জন্যে আন্তর্জাতিক অঙ্গনের ভোটাভূটির ব্যাপারে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানায়। ফরেন অফিসের মুখপাত্র এব্যাপারে বলেন, আন্তর্জাতিক ইলেকশনের ভোটের প্রসেসিং বিষয়ে প্রকাশ করতে “অন হার ম্যাজিস্টি” পলিসি হলো প্রকাশ্যে না বলা বা প্রকাশ না করা।
লন্ডনের বাংলা মিডিয়ার একজন সিনিয়র সাংবাদিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দেশে দেশে যখন মানবাধিকার ভুলুন্ঠিত হয়, ইরাক, লিবিয়া, প্যালেস্টাইন, সিরিয়া, বাংলাদেশ- তখন এই উদার রাজনীতিক আর মানবাধিকার ক্যাম্পেইনরেরা থাকেন নীরব, এখন সৌদিআরব তার ঘোষিত ইসলামিক শরীয়া আইন অনুযায়ী দেশের ভিতরে যে শাস্তি মূলক ব্যবস্থা করে আসছে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তার সক্ষমতা ও কূটনীতির জানান দিচ্ছে, তখন কেন তার বিরোধীতা ? অবশ্য তিনি বলেন, দেশে দেশে এমনকি সৌদি আরবে মানবাধিকার রক্ষা ও সমুন্নত রাখা উচিৎ বলেও অভিমত দেন।
১৯ আগস্ট ২০১৬-লন্ডন