লেবার দলের নেতৃত্বঃ প্রিন্সিপাল ভার্সাস পাওয়ারের দ্বন্ধ! কে জিতে? (অডিও)

লেবার দলের নেতৃত্বঃ প্রিন্সিপাল ভার্সাস পাওয়ারের দ্বন্ধ! কে জিতে? (অডিও)

সৈয়দ শাহ সেলিম আহমেদ-

 

বাংলাদেশে যেমন ভিন্ন এক প্রেক্ষাপট ও  সম্পূর্ণ ভিন্ন এক বাস্তবতায় সর্ববৃহত বিরোধীদল বিএনপি চোখের সামনে বিশাল কর্মীবাহিনী ও নেতার দল হওয়া সত্যেও ক্ষয় থেকে ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে, ঠিক তেমনি না হলেও ব্রিটেনের সংসদীয় রাজনীতির অপরিহার্য এবং গুরুত্বপূর্ণ অথচ বৃহৎ বিরোধীদল লেবার পার্টি আজকে তাদের নেতা নির্বাচনে নীতি এবং ক্ষমতার দাপটে অসহায় বলা না গেলেও এই দুইয়ের দ্বন্ধে আজ সংকটজনক এক রাজনৈতিক অবস্থার জন্ম দিয়েছে। চোখের সামনে পরিষ্কার ভেসে উঠছে যে চিত্রটি, এতো বড় সংসদীয় রাজনীতির প্রাণ এক সময়ের ক্ষমতাসীন আর বর্তমানের প্রধান বিরোধীদল লেবার দল নিজ দল নেতা নির্বাচন করতে গিয়ে প্রিন্সিপল আর পাওয়ারের দ্বন্ধ প্রকাশ্যে নিয়ে এসেছে। এতো প্রকাশ্যে যে, সাধারণ ভোটাররা আজ সংক্ষুব্ধ- রীতিমতো টালমাটাল এক অবস্থা- তারা কাকে বেছে নিবে ? এই প্রশ্ন ঘুর পাক খাচ্ছে তাদের মাঝে। তারা কী প্রিন্সিপল কে বেছে নিবে, নাকি বুর্জোয়া রাজনীতির গড্ডালিকা প্রবাহে প্রিন্সিপলকে লাথি মেরে পাওয়ারকে আলিঙ্গন করবে ? লেবারদলের কর্মী, সদস্য আর ঝানু লেবারদলকে ফেলে দিয়েছে এই সংকটে।

 

জেরেমি করবিন- এমন এক রাজনীতিবিদ, যার সারা জীবন কেটেছে নীতি ও আদর্শকে আকড়ে ধরে জনগনের সাথে থেকে  রাজনীতি। জেরেমি করবিনের কাছে তাই প্রিনিসিপল বা নীতিই হলো আপ্তবাক্য, পাওয়ার বা ক্ষমতা হলো দ্বিতীয় সারির চিন্তা চেতনায়। এহেন জেরেমি করবিনকে পড়ন্ত বেলায় পার্টির নেতৃত্ব এবং তৃণমূলের নেতা কর্মীদের আস্থা, বিশ্বাস ও ভালোবাসা এবং ভোটের আমানত ধরে রাখার জন্য আপোষ করবেন, নাকি প্রিন্সিপলকে আকড়ে ধরে উজানের বায়ে লেবারের লাল গোলাপ রোপনের  শেষ চেষ্টা করে যাবেন- সেটাই এখন বড় প্রশ্ন। এস্টাবলিশম্যান্ট এবং লেবার এস্টাবলিশম্যান্ট এর সাথে ক্ষমতাসীন টোরি এস্টাবলিশম্যান্ট আজ একাট্রা পাওয়ারকে লেবারের নেতৃত্বে ফিরিয়ে আনতে।রোববার লেবার দলের সমাবেশে জেরেমি করবিন তার নীতি থেকে যে সরে যাবেননা, সেটা দৃপ্ত কন্ঠে যখন বলেন, ওয়েস্ট মিনিস্টারের ম্যাজিক আজ ভুলুন্ঠিত- গণতন্ত্রের ভিত্তিমূল আজ গ্রাউন্ডেড- জনতার হাতে, ওয়েস্টমিনিস্টার আমাদের রাজনীতি, আমাদের আইডিয়া, আমাদের সিদ্ধান্ত কন্ট্রোল করতে চায়- যা আজ সেই ম্যাজিক ভেঙ্গে পড়েছে। জেরেমির সাপোর্টাররা উজ্জীবীত হলেও শঙ্কা জাগে, এস্টাবলিশম্যান্ট পাওয়ার এর কাছে নীতি-নৈতিকতার পরাজয় কী হতে চলেছে? যদিও অসংখ্য নীতিবান সদস্যদের কাছে জেরেমি করবিনের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে।

 

অপরদিকে ওয়েন স্মীথ-  একজন পাওয়ার ম্যান। তার পেছনে রয়েছেন সেই পাওয়ারফুল পার্লামেন্টের কলিগ আর সম্প্রতি সেই দলে যোগ দিয়েছেন লন্ডন মেয়র সাদিক খানও। ওয়েন স্মীথের কাছে, পাওয়ার বা ক্ষমতা আগে, নীতি-নৈতিকতা দ্বিতীয় স্থানে। সেজন্যেই তিনি খোলামেলাভাবে বলেছেন,  ব্রিটেন আগামীতে তার মতো ক্রেডিবল প্রাইম মিনিস্টারের অপেক্ষায় আছে। এরপরেও আর কোন আর্গুম্যান্টস করার থাকেনা, পাওয়ার আগে না পরে , কেননা ওয়েনস্মীথ মিথলোজিতে ক্ষমতা ছাড়া লেবারদলের কোন নীতি আহরন সম্ভব নয়।

আজ থেকেই লেবার মেম্বারদের কাছে ৬৪০,০০০ ব্যালট পৌছে যাচ্ছে– নেতা নির্বাচনের জন্য। এটা এখনি  বলা অসম্ভব যে, লেবার দলের মেম্বাররা  ক্ষমতা ও নীতি -এই দুয়ের মাঝে কোনটিকে বেছে নিবেন। এমনকি এই মুহুর্তের জটিল নির্বাচনী অবস্থায় এটাও বলা অসম্ভব লেবার দলের কতো সংখ্যক পার্লামেন্টারিয়ান ও সাধারণ সদস্য এখন ওয়েনস্মীথের পাওয়ার ম্যানশিপ বা জেরেমি করবিনের প্রিন্সিপলের হাওয়ায় পাল তুলেছেন। কেননা ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব ওমন এক জিনিস– বিশেষ করে ওয়েস্টমিনিস্টারের এস্টাবলিশম্যান্ট যেখানে একাট্রা, সেখানে সিম্পল নীতি ও নৈতিকতার উপর ভর করে জেরেমি করবিনের সাথে শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত কতোজন নিজ নিজ ওয়াদার উপর টিকে থাকবেন সেটা বলা মুস্কিল। কেননা, বিশ্বের যে প্রান্তেই এস্টাবলিশম্যান্ট এন্ড পাওয়ার  একাট্রা হয়ে  মাঠে নেমেছে সেখানে সাধারণ নীতি ও প্রিন্সিপল অনেকটা অসহায়ভাবে পরাজয় বরনের রেকর্ডও রয়েছে, যদিও দু`একটা ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমও রয়েছে।

 

এখন দেখার বিষয় আজকের আধুনিক লেবার দল ও তাদের মেম্বাররা এই দু`য়ের মধ্যে কতোটুকু নিজেদের আত্মস্থ ও আপোষ করেন- তার উপরই নির্ভর করছে ২৪ সেপ্টেম্বরের ফলাফল। আধুনিক লেবার পাওয়ার এন্ড প্রিন্সিপলের মধ্যে  কোনটিকে কেমন করে বেছে নেয়- সেটাই ব্রিটিশ জনগন দেখবে ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬তে।

 

salim932@googlemail.com

23rd August 2016, London