সৈয়দ শাহ সেলিম আহমেদঃ
বর্তমান রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ এডভোকেট আগামীতে অবসরে যাবেন। মেয়াদ শেষের আগে তাই স্বভাবতই পার্লামেন্টকে রাষ্ট্রপতি নির্ধারন করতে হবে। তার উপর আগামীর ২০১৯ সালের নির্বাচন খুবই তাৎপর্য পূর্ণ। ২০১৯ সালের নির্বাচনকে আওয়ামীলীগের সরকার গণতান্ত্রিক লেভেল দেয়ার জন্যে সব রকমের ব্যবস্থা করবে। সংবিধানের ভিতরে যা আছে, তার মধ্য দিয়েই বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনকালীন সরকারের ব্যবস্থার মধ্যদিয়ে শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠণ করে সব দলের অংশ গ্রহণে নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে- সন্দেহ নাই। যদিও তার আগেই আওয়ামীলীগ সকল দলের নির্বাচনী এলাকা ও ষ্টেকহোল্ডারদের সব অবস্থানেই নিজেদের অবস্থান মজবুত করে নিবে। বর্তমান সেক্রেটারি ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে আওয়ামীলীগের সাংগঠণিক কাঠামো ও ভিত যে সেদিকেই মোড় নিচ্ছে- সহজেই অনুমেয়।
প্রশ্ন উঠেছে, সরকারের ভিতরে বর্তমান রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ এডভোকেটের মেয়াদ শেষান্তে এরকম অতি বিশ্বস্থ রাষ্ট্রপতি আওয়ামীলীগের ঘরে কে আছে, যদিও রাষ্ট্রপতি পদ সাংবিধানিক সরকারের অধীনে কেবলমাত্র আলংকারিক এক পদ। কিন্তু জরুরী সংকটকালীন সময়ে রাষ্ট্রপতিই হয়ে থাকেন জাতির অভিভাবক ও আশা ভরসার স্থল। তাই আব্দুল হামিদের মেয়াদ শেষে আওয়ামীলীগ পরিবারে এমন কে আছেন যিনি এই পদে অধিষ্ঠিত হতে পারেন।
আওয়ামীলীগের সম্মেলন যখন চলছিলো, তখন একদিন আগে তখনকার সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফ গণমাধ্যমে বলেছিলেন, কী হবে সেটা আমি এবং নেত্রী শুধু জানি। সৈয়দ আশরাফ প্রধানমন্ত্রীর সাথে এবং পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতির সাথে দীর্ঘ বৈঠকের পরেই একথাগুলো গণমাধ্যমে বলেছিলেন। আওয়ামীলীগের সম্মেলন ঘিরে সাধারণ সম্পাদককে নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে থাকায়, সেদিন কেউ সেই বক্তব্যের গূঢ় অর্থ নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামাননি। সবাই তখন ধরে নিয়েছিলেন সৈয়দ আশরাফ সম্মেলনের নেতৃত্ব নিয়ে কথা বলেছিলেন।কিন্তু সেদিন যে সৈয়দ আশরাফ শুধু নেতৃত্ব পরিবর্তন নিয়ে কথা বলেননি, সেটা সৈয়দ আশরাফকে যারা দীর্ঘদিন থেকে কাছে থেকে চেনেন, তারা জানেন। এমনকি এরকম কথা সরাসরি(শুধু নেতৃত্ব) তিনি গণমাধ্যমে নেত্রীর ইঙ্গিত ছাড়া চুম্বক আকারে বলবেননা- সেটাও সহজেই বোধগম্য।
এই মুহুর্তে শেখ হাসিনা এবং আওয়ামীলীগের সব চাইতে বিশ্বস্থ এবং কাজের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ, সৎ ও সাহসী হিসেবে সৈয়দ আশরাফ এবং বর্তমান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত- এদুজন ছাড়া খুব কমই আছেন বলা যায়। সৈয়দ আশরাফ এবং মুহিত শেখ হাসিনা সরকারের অতি বিশ্বস্থ এবং আপনজন। পৃথিবী ওলোট-পালট হয়ে যেতে পারে, কিন্তু এই দুজন শেখ হাসিনা পরিবারকে ছেড়ে কোথাও যাবেননা সেটা নিন্দুকেরাও এক বাক্যে মানেন।
শেখ হাসিনা ও রাষ্ট্রপতির সাথে আলাপ করেই এবারের সম্মেলনে সৈয়দ আশরাফ নিজেই ওবায়দুল কাদেরের নাম সেক্রেটারি হিসেবে প্রস্তাব করেছেন। শেখ হাসিনা চাচ্ছেন আওয়ামীলীগ পরিবারের কাছের স্বজন হিসেবে আব্দুল হামিদের স্থলাভিষিক্ত হবেন সৈয়দ আশরাফ। বিশ্বস্থতা ও আন্তরিকতায় সৈয়দ আশরাফের জুরি মেলা ভার। আর ব্রিটেনের ক্ষমতাসীন সরকারের সাথে শুধু নয়, বিরোধীদল লেবার এর সাথেও রয়েছে সখ্যতা সৈয়দ আশরাফের। ব্রিটেনের সাথে ঢাকার যে টানাপোড়েন সম্পর্ক রয়েছে, সৈয়দ আশরাফের মাধ্যমে দূরীভূত হতে সহায়ক হবে। শেখ হাসিনা নিজেই সৈয়দ আশরাফের টেবিলে এমন প্রস্তাব দিয়ে রেখেছেন। আশরাফ নিজেও অনেকটাই সম্মত বলে সূত্র নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে, হিলারি ক্লিনটন যদি ক্ষমতায় চলে আসেন, আর বিশ্বব্যাংক যদি বাংলাদেশের অনুকূলে যেভাবে আছে- সেভাবে যদি থাকে, যার কৃতিত্ব বর্তমান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের, যিনি বিশ্বব্যাংককে আবার ঢাকার সাথে কাজ করার জন্য ফিরিয়ে নিয়ে এসেছেন, বিশ্ব অর্থনীতির রিসেশনের সময়ও ঘরোয়া বিশৃংখলা সত্যেও অর্থনীতিকে শক্ত ভিত্তির উপর দাঁড় করিয়েছেন, প্রবৃদ্ধিকে রেকর্ড পরিমাণ ৭ এর ঘরে নিয়ে গেছেন, সেই আবুল মাল আবদুল মুহিতও রয়েছেন সরকারের পছন্দের তালিকায় একেবারের শীর্ষে। আবুল মালের অবসরে ডঃ এ কে আবদুল মোমেন হচ্ছেন মুহিতের স্থলাভিষিক্ত। এমতাবস্থায়, আবুল মালের মতো শততার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ও বিশ্বব্যাংক ও মার্কিন লবির কাছে আস্থাভাজন, মার্কিনীদের আস্থাভাজন মানেই ভারতীয় লবির কাছে অধিক গ্রহণযোগ্য- আজকের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও সেক্ষেত্রে আব্দুল হামিদ এডভোকেটের স্থালাভিষিক্ত হলে অবাক হওয়ার মতো কিছুই হবেনা। সেক্ষেত্রে সৈয়দ আশরাফ হতে পারেন ন্যায় পাল। আর এই সমীকরনটি নির্ভর করছে বিশ্ব রাজনীতি ও অর্থনীতির উপর। কেননা আজকের বিশ্ব এই সমীকরনের বাইরে যাওয়ার খুব একটা সুযোগ নেই। এই সমীকরনের সাথে নতুন যে বিষয়টি যুক্ত হচ্ছে, সেটা হলো ভুমধ্যসাগরে রাশিয়া ও ব্রিটেন এবং ন্যাটোর টেনশন বৃদ্ধি। ইতোমধ্যেই রাশিয়ার বর্ডারে ব্রিটেন তার দুর্দর্ষ সেনা ও ট্যাংক, ড্রোনস বসিয়েছে। রাশিয়া ভুমধ্যসাগরে যুদ্ধ জাহাজের সাথে আরো তিনটি সাবমেরিন পাঠিয়েছে, যাকে অনুসরন করছে ব্রিটিশ রয়াল নেভি ও ন্যাটো। এই টেনশনে সৈয়দ আশরাফ ও আবুল মাল আব্দুল মুহিত- যার পাল্লা ভারি হয়- তিনিই জয়ী হবেন। যদিও মুহিত অবসর মানেই অবসর- এমনটাই চাচ্ছেন। কিন্তু শেখ হাসিনার সরকার বিশ্বস্থ সঙ্গী দুজনের কাউকেই ছাড়তে চাচ্ছেননা।
salim932@googlemail.com
30th October 2016, London.