মৃত্যুর পরেও ফিরিয়ে আনা, আদালতের রায় এবং সম্ভাবনা

মৃত্যুর পরেও ফিরিয়ে আনা, আদালতের রায় এবং সম্ভাবনা

সৈয়দ শাহ সেলিম আহমেদঃ

 

বিজ্ঞানের ভাষা হলো এই হলে এই  হয়। এখানে কোন “যদি” খুব কমই থাকে। বিজ্ঞানের নব -নব আবিষ্কার সভ্যতাকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। বিজ্ঞানের ক্রম-উন্নতিতে আমাদের সভ্যতা এতো এগিয়েছে যে, আজকে মানুষ চাওয়া-পাওয়ার হিসেব আর যোগান ও চাহিদার মধ্যে ভারসান্যের সাথে সাথে রীতিমতো এক তীব্র প্রতিযোগিতাও এনে দিয়েছে।

cryogenic-case-1

তীব্র প্রতিযোগিতার মাত্রাকে মানুষের জীবনে সহনীয় এবং সভ্যতার বিকাশে সুন্দর ভারসাম্য রক্ষার জন্য রয়েছে নানা কৌশল ও ব্যবস্থা। আইন এমন এক ব্যবস্থা, যা সব কিছুকে একটা শালীনতা, ভদ্রতা, নীতি নৈতিকতার সাযুজ্য রেখে সুন্দরের সহাবস্থানে সহায়তা করে, পাশাপাশি সভ্যতার সেইভ গার্ড হিসেবেও কাজ করে থাকে।

 

মানুষ তার স্বাধীনতা, অধিকার, ক্ষমতা, কতৃত্বের ব্যাখ্যায় ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় বা লব্ধ অধিকার থেকে বঞ্চিত হলে প্রতিকারের আশায় আদালতের স্মরণাপন্ন হয়ে থাকে। আজকের বিশ্বের আদালত শুধু অধিকার, কর্তৃত্বের কিংবা হ্নত অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে কাজ করেনা, বরং বিজ্ঞান ও সভ্যতার ক্রমবিকাশে নানা ঘাত প্রতিঘাত ও সমস্যায় যে বহুমুখী সমস্যার মুখোমুখী হয়, সেই সবের জন্যেও আদালতের সিদ্ধান্তের দ্বারস্থ হয়ে থাকে, শেষ ভরসার আশ্রয়স্থল হিসেবে। নিকট অতীতে টার্মিনালি ইল কিংবা ক্লিনিক্যালি ডেড ব্যক্তি তার মৃত্যুর আইনত গ্যারান্টির জন্য আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার রেকর্ড থাকলেও মৃত্যুর পরেও তাকে সমাহিত বা শেষ কৃত্য না করে যাতে প্রিজার্ভ করে রাখা হয়, সে আবার এই পৃথিবীতে ফিরে আসবে বহুকাল পরে হলেও -এমন অভিনব কিংবা অসম্ভব বা আজব এক আশা নিয়ে আদালতের স্মরণাপন্ন যখন হয়, তখন কখনো কখনো আমাদের সাধারণের চিন্তার নাগালের মধ্যে না হলেও আদালতও  কোন কোন ক্ষেত্রে হতবম্ব না হলেও ব্যতিক্রম দৃষ্ঠান্ত স্থাপন করেন, বিজ্ঞানের নিখুত ব্যাখ্যার দিক নির্দেশনা দেয়ার জন্য, অর্থাত বিজ্ঞান যেখানে তার সূত্রের ব্যাখ্যার নৈতিকতা এবং আইনী ব্যখ্যায় হয়ে পরে স্থবির, আদালত তখন সামনে এগিয়ে এসে বিজ্ঞানের সেই নয়া আবিষ্কারের পথ চলায় দেখায় নির্দেশনা- এমনি এক কালজয়ী, যুগান্তকারি এক রায় দিয়েছে ব্রিটিশ হাইকোর্ট- যা এ যাবত কালের আইনের ব্যাখ্যায় শুধু বিরলুই নয়, ব্রিটেন এমনকি সারা বিশ্বের মধ্যে সম্ভবতঃ এটাই প্রথম ব্যতিক্রম ধর্মী নতুন এক রায়।

 

কি আছে সে রায়ে-

cryogenics

ক্যান্সারে মারা গিয়েছিল ১৪ বছরের মেয়েটি। কোন একদিন আবার তাকে বাঁচিয়ে তোলা যাবে, এমন আশায় নিজের দেহ হিমায়িত করে সংরক্ষণের অনুরোধ জানিয়েছিল মেয়েটি । আদালত তাঁর শেষ ইচ্ছের পক্ষে সম্মতি দিয়েছে।

 

মেয়েটি যখন হাসপাতালে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় চিকিৎসাধীন, তখন ব্রিটেনে হাইকোর্টের বিচারপতি পিটার জ্যাকসন তাকে সেখানে দেখতে পর্যন্ত যান। তিনি জানিয়েছেন, মেয়েটি যেভাবে তার দুর্ভাগ্যকে মেনে নিয়ে এর মুখোমুখি হয়েছিল, সেটি তাকে ভীষণভাবে নাড়া দিয়েছে।

 

গত অক্টোবরে ক্যান্সারে আক্রান্ত এই কিশোরী মারা যায়। এর পর তার দেহ কবর দেয়ার পরিবর্তে হিমায়িত করে সংরক্ষণ করা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে।মৃত্যুর আগে এই কিশোরী আদালতের বিচারকের কাছে চিঠি লিখে জানিয়েছিল, সে আরও বাঁচতে চায় এবং তার দেহ মাটিতে কবর দেয়া হোক সেটা চায় না।

 

“আমি মনে করি আমার দেহ যদি সংরক্ষণ করা হয় তাহলে ভবিষ্যতে আমার অসুখ সারিয়ে আমাকে পুনরুজ্জীবিত করা যাবে, বহু শত বছর পরে হলেও।”তবে মেয়েটির শেষ ইচ্ছে নিয়ে বিরোধ দেখা দিয়েছিল তার বাবা-মার মধ্যে। মেয়েটির মা তার এই সিদ্ধান্ত সমর্থন করলেও তার বাবা ছিলেন এর বিপক্ষে।তাই শেষ পর্যন্ত বিষয়টি আদালতে গড়ায়।

 

বিচারক মেয়েটির পক্ষে রায় দিয়ে বলেছে, তাদের এই সিদ্ধান্ত ‘ক্রায়োনিক্স এর পক্ষে বা বিপক্ষে নয়। মেয়েটির মৃতদেহ নিয়ে কী করা হবে, সেটা নিয়ে বাবা-মার মধ্যে যে বিরোধ দেখা দিয়েছে, সেটারই মীমাংসা দিয়েছেন তারা।মৃত্যুর আগেই মেয়েটি আদালতের এই রায় জেনেছিল। এই মামলায় তার মায়ের পক্ষের আইনজীবী জানিয়েছেন, আদালতের রায় শুনে মেয়েটি খুশি হয়েছিল।

 

Cryogenically frozen বা ক্রয়োনিক্স কি

cryogenic

মৃতদেহ সংরক্ষণের প্রক্রিয়াটিকে বলা হয় ‘ক্রায়োনিকস’। যারা এই পদ্ধতিতে মৃত্যুর পর তাদের দেহ সংরক্ষণ করতে চান, তারা বিশ্বাস করেন, বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির ফলে একদিন মৃত মানুষকে পুনরুজ্জীবিত করা যাবে এবং যে রোগে তারা মারা গেছেন তারও নিরাময় খুঁজে পাওয়া যাবে।ক্রায়োনিক্স এক বিতর্কিত বিষয়। এখনো পর্যন্ত কেউ নিশ্চিত নন, আসলেই এভাবে সংরক্ষণ করা দেহ কোনদিন পুনরুজ্জীবিত করা যাবে কীনা।তবে যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ায় এই পদ্ধতিতে বহু মানুষের মৃতদেহ সংরক্ষণ করা হয়। তরলায়িত নাইট্রোজেনে হিমাংকের ১৩০ ডিগ্রির নিচের তাপমাত্রায় এসব দেহ হিমায়িত করে রাখা হয়।

একটি দেহ এভাবে অসীম সময় পর্যন্ত রেখে দেয়ার খরচ ৩৭ হাজার ডলারের কাছাকাছি।

 

ব্রিটিশ আদালতের রায়-

jackson

জাস্টিস পিটার জ্যাকসন বলেছেন, মেয়েটি যেভাবে তার দুর্ভাগ্যকে মেনে নিয়ে এর মুখোমুখি হয়েছিল, সেটি তাকে ভীষণভাবে নাড়া দিয়েছে।  বর্তমানে মেয়েটির দেহ কবর দেয়ার পরিবর্তে হিমায়িত করে সংরক্ষণ করা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে।

 

মেয়েটি যখন হাসপাতালে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় চিকিৎসাধীন, তখন ব্রিটেনের হাইকোর্টের বিচারপতি পিটার জ্যাকসন তাকে সেখানে দেখতে পর্যন্ত যান।

 

তবে বিচারপতি জ্যাকসন বলেন, এটাই ব্রিটেনে প্রথম এবং সম্ভবতঃ বিশ্বের মধ্যেও প্রথম।

 

মেয়েটির চিঠি  এবং-

4096

মেয়েটি লিখেছিল, ‘আমার বয়স মাত্র ১৪ বছর। আমি মরতে চাই না কিন্তু আমি মার যাচ্ছি।’ চিঠিতে সে লিখেছিল: ‘আমি বিশ্বাস করি আমার দেহ সংরক্ষণ করা হলে আমি ভবিষ্যতে শত শত বছর পরে হলেও আমার অসুখ সারিয়ে আমাকে পুনরুজ্জীবিত করার সুযোগ পাবো।’

 

তবে মেয়েটির শেষ ইচ্ছে নিয়ে বিরোধ দেখা দিয়েছিল তার বাবা-মার মধ্যে। মেয়েটির মা তার এই সিদ্ধান্ত সমর্থন করলেও তার বাবা প্রথম দিকে ছিলেন এর বিপক্ষে। তার বাবা প্রক্রিয়াটির করচ ও এর ফলাফল নিয়ে চিন্তিত ছিলেন। এছাড়া তার যুক্তি ছিল, ধরা যাক, দু’শ বছর পর মেয়েটিকে পুনরুজ্জীবিত করা গেলো। তখন তো তার কোনো স্বজন থাকবে না। এ ছাড়া তখন তার কিছু মনে নাও থাকতে পারে। এ পরিস্থিতি সুখকর হবে না বলে মনে করেছিলেন তিনি।

 

তাই শেষ পর্যন্ত বিষয়টি আদালতে গড়ায়। তবে বাবাও শেষ পর্যন্ত তার অবস্থান পাল্টে বলেছিলন, তিনি তার মেয়ের শেষ ইচ্ছাকে শ্রদ্ধা করেন।

 

আদালতে মেয়েটির বাবার বক্তব্য-

 

আদালতে  মেয়ের বাবাও বলেছেন, যদি এই চিকিতসা ব্যবস্থা সফলও হয়, তথাপি অপেক্ষা করতে হবে আগামী ২০০ বছর, সে জীবনে আবার ফিরে আসার জন্য, তখন হয়তো এই গ্রহে আমাদের অনেকেই থাকবোনা, সে তখন আমেরিকার মাটিতে কাউকেই চিনবেনা, কোন আপনজনো থাকবেনা।

 

তবে শেষ পর্যন্ত তিনি মেয়েটির সিদ্ধান্তকে সম্মান জানান এবং  বলেন, এটাই তার শেষ এবং একমাত্র ইচ্ছা।

 

আদালত ক্রয়োনিক্স নিয়ে কন্ট্রোভার্সিয়াল বলেও নোটে উল্লেখ করেছেন। আদালত এটাও উল্লেখ করেছেন, এই ব্যবস্থার জন্য পরিবারের আর্থিক অবস্থা নেই। তবে মেয়েটির মা বলেছেন তিনি ফান্ড রেইজিং করবেন।

 

ক্রয়োনিক্স এবং বিজ্ঞান-

Frozen and brought back to life

মানুষের মৃত্যু হয়ে গেলে অথবা মৃত বা  ক্লিনিক্যালি ডেড মানে এখনো ব্রেন কিছুটা সচল রয়েছে, সেই অবস্থায় একজন মৃত মানুষের দেহ কে সম্পূর্ণ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রায় একেবারে হিমাংকেরও আরো নীচে  তাপমাত্রায় ফ্রোজেন করে সমগ্র দেহ বিশেষায়িত ব্যবস্থায় লিকুইডের মধ্যে র‍্যাপ করে পানিতে তথা বাক্সের মধ্যে ফ্রোজেন  করে রাখার নামই ক্রয়োনিক্স। এমনভাবে ফ্রোজেন  অথচ আইস নয়, টিস্যু সেল কোনভাবেই নষ্ট হয়না, অক্ষত রাখা হয়- বিশ্বাস করা হয় কোন একদিন আবার দেহে প্রাণ ফিরে আসবে। সম্পূর্ণ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে দেহ প্রিজার্ভ করা হয়। ব্যবস্থা অত্যন্ত ব্যয় বহুল। ব্যয় ৬০, ০০০ হাজার ডলার থেকে শুরু হয়ে ২৯৭ হাজার ডলার কিংবা ক্কেত্র বিশেষে আরো বেশী হতে পারে।

 

মৃত্য নিশ্চিতের আগে ক্রয়োনিক্স অবৈধ-

 

বর্তমানে আইনত নিষিদ্ধ জীবিত অবস্থায় ক্রয়োনিক্স করা- মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পরই কেবল এই ব্যবস্থা করতে হয়।লিগ্যালি ডেড মানে টোটালি ডেড কিন্তু কিছু ব্রেন সেলুলার তখনও হয়তো সচল- সেই অবস্থায় ক্রয়োনিক্স করা হয়। থিওরীট্যাক্যালি এই অবস্থায় ক্রয়োনিক্স কোম্পানি বলেছে, পরে দেহে প্রাণ ফিরে আসবে প্রিজার্ভ করে রাখা হয় সেজন্যে।

যখন ক্রয়োনিক্স শুরু করা হয়-

 

যখন কেউ ক্লিনিক্যালি মৃত ঘোষণা করা হয়, লিগ্যালি ডেড বলা হয়ে যায়, তখন ক্রয়োনিক্স টিম ব্যক্তির ওউথ, উইল অনুযায়ী সঙ্গে সঙ্গে এসে থাকে, টিম এসে পুরোপুরি কাজ শুরু করে দেয়, ক্রয়োনিক্স সাইন্টিস্ট, ডাক্তার, টেকনিশিয়ান সবাই মিলে এসে শুরু করেন, বিশেষ ইনজেকশন পুশ এবং দেহ র‍্যাপিং করার ব্যবস্থা শুরু করেন।

 

-২০২ থেকে -৩২০ ডিগ্রিতে র‍্যাপিং-

 

ক্রয়োনিক্স এর বডি প্রিজার্ভের জন্য হিউজ নাইট্রোজেন লিকুইড ছাড়া ও বিশেষ বক্স আর বডি -২০২ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রা থেকে -৩২০ ডিগ্রি ফারেন হাইটে প্রিজার্ভ করা হয়। প্রি-কুলিং বক্স থাকে ক্রিস্টাল ক্লিয়ার।

 

এখন পর্যন্ত ফলাফল-

 

এখন পর্যন্ত এই ব্যবস্থায় কোন মানুষ মৃত্যুর পর পৃথিবীতে প্রাণ ফিরে এসেছেন- প্রমাণ নেই। ক্রয়োনিক্স কোম্পানি বলছে, প্রথম ক্রয়োনিক্স প্রাণ ফিরে আসার সম্ভাব্য সময় ২০৪৫ সাল। আদৌ আসবে কিনা তারও কোন গ্যারান্টি নেই। তবে তারা নানা তথ্য, উপাত্ত, বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার মাধ্যমে তাই বলছে।

 

ক্রয়োনিক্স কোম্পানি-

robert wilson ettinger.jpg Robert Chester Wilson Ettinger (born December 4, 1918 cryopreserved 23 July, 2011) was the father of cryonics as a result of the publication and widespread distribution of his book, The Prospect of Immortality (Doubleday, 1964) and because of his unceasing, forty-nine year long advocacy of the cryonics. Ettinger experienced cardiorespiratory arrest at 1600 on 23 July, 2011 at the age of 92. He might justly also justly be called a father of Transhumanism on the basis of his 1972 book, Man Into Superman. taken from:- http://chronopause.com/index.php/2011/07/24/robert-c-w-ettinger-first-life-cycle-1918-to-2011/

সমগ্র পৃথিবীতে মাত্র ক্রয়োনিক্স তিনটি কোম্পানি আছে- যারা এই ব্যবস্থায় কাজ করে।১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এই কোম্পানিতে ১,১০০ সদস্য লাইফ ইনস্যুরেন্স সহ যাবতীয় ফি প্ল্যান পরিশোধ করছেন, যার শুরু ২০,০০০ ডলার থেকে।

 

১৯৭৭ সালে কোম্পানির ফাউন্ডার রবার্ট ইটিংটন  তার স্ত্রীর মৃত্যুর পর প্রিজার্ভ এর মাধ্যমে স্টোরেজ  করে রেখেছেন- এই আশায় একদিন সে ফিরে আসবে।

 

প্রশ্ন নৈতিকতা ও বিশ্বাসের –

ক্রয়োনিক্স নিয়ে আদালতের প্রথম রায় ও ক্রয়োনিক্স চালু থাকলেও প্রশ্ন উঠছে নৈতিকতা নিয়ে, সেই সাথে বিশ্বাস নিয়ে। আদি ও অকৃত্রিম  বিশ্বাসের বদ্ধমূলে আঘাত করা হচ্ছে- সেটা কতোটুকু সঠিক এবং এথিক্যাল সম্পন্ন- প্রশ্ন এখানেই ।

https://www.youtube.com/watch?v=uBzQki4rwF0

salim932@googlemail.com

18th November 2016, London