সৈয়দ শাহ সেলিম আহমেদ। ব্রিটেনের তৃণমূল সমর্থক, আর তরুণ লেবার ভোটারদের সমর্থন নিয়ে জেরেমি কবরিন ইতিহাসের সব চাইতে জনপ্রিয় লেবার নেতা হয়েও ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচনে লেবার দলকে ক্ষমতায় যাওয়া শুধু নয়, ভরাডুবির হাত থেকেও রক্ষা করতে পারেননি। দলের চরম পরাজয়ের পর করবিনের নেতৃত্ব এবং দলীয় ঐক্য, সংহতি নিয়ে দলের ভিতরে ও বাইরে শুরু হয় চরম সমালোচনা। সলীয় সাবেক নেতা টনি ব্লেয়ার, গর্ডন ব্রাউন থেকে শুরু করে তৃণমূল ছাড়িয়ে জাতীয় পর্যায়ে শুরু হয় বিতর্কের ঝড়। সেই ঝড়ে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব হয়ে পরে বিপর্যস্ত ও দ্বিধাবিভক্ত। লেবার সেন্ট্রাল এক্সিকিউটিভ দলের ব্যর্থতা, পলিসি, স্ট্র্যাটেজি, নেতৃত্ব কোথায় খুঁত সব খুজে বের করতে করে রিভিউ কমিটি। ১৫ সদস্যের খুবই শক্রিশালী(পাওয়ারফুল) কমিটির সদস্য ছিলেন লেবার নেতা মিলিব্যান্ড, মানচেস্টার লেবার এর সেন্ট্রাল এমপি লুসি পাওয়েল, ম্যাকডোনালের সাবেক এডভাইজর জেমস মিডওয়ে, বার্মিংহাম লেডিউড এমপি শাবানা মাহমুদ প্রমুখ। এদের প্রত্যেকের বিগত দশক ধরে লেবার দলের নানা পলিসি নীতি নির্ধারনীর সাথে সংশ্লিষ্ট।
দেড়শ পৃষ্টার এই রিভিউ রিপোর্ট গতকাল গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। যেখানে রিভিউতে মোটা দাগের জেরেমি করবিনের নেতৃত্বের ব্যর্থতা, ব্রেক্সিট নিয়ে অস্পষ্টতা, দলের ভিতরে একে অন্যের প্রতি চরম বিদ্বেষ ও ঘৃণার বিষাক্ততা ছড়ানো, নির্বাচনী ইশতেহার ও স্ট্র্যাটেজীতে চরম অস্পষ্টতা ও লক্ষ্যহীন গন্তব্য- সব মিলিয়ে ২০১৯ সালের নির্বাচনী বৈতরনী পার হওয়ার জন্য তখনকার নেতৃত্ব ছিলো যেন পাহাড়ের উপর মই দিয়ে বেয়ে উঠার মত- সুনির্দিষ্ট নেগেটিভ গন্তব্যে চলা একটি দল ও দলের মাঝি-মাল্লা।
রিভিউ কমিটি সেই সাথে দলীয় এমপি চুকা উমা, লুসিয়ানা বার্গার নেতৃত্বে ইন্ডিপেন্ডেন্ট গ্রুপ গঠণকেও দলের অনৈক্য ও পরাজয়ের বড় ফ্যাক্টর হিসেবে দেখছে।
রিভিউতে বলা হয়, লেবারের অ্যান্টিসেমিটিজম ইস্যুতে অবস্থান পরিষ্কার করতে যেমন ব্যর্থতার পরিচয় দেয়, তেমনি ব্রেক্সিট ইস্যুতে নিজেদের অবস্থানও পরিষ্কার করতে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দেয়। বিপরীতে কনজারভেটিভ এই দুই মেজর ইস্যুতে নিজেদের অবস্থান সুনির্দিষ্টভাবে পরিষ্কার অবস্থান নিয়ে স্টপ জেরেমি করবিন-স্ট্র্যাটেজী দারুনভাবে কাজে লাগিয়ে ফলাফল নিজেদের ঘরে তুলে নেয়।
লেবারের মেজরিটি ৫০টি সুনির্দিষ্ট সিটেও লেবার দলীয় নির্বাচনী স্ট্র্যাটেজীর ব্যর্থতার জন্য হাত ছাড়া করে।
ইন্ডিপেন্ডেন্ট এই রিভিউ রিপোর্ট নিয়ে লেবার দলের মুখপাত্র বলেন, দল এই ইন্ডিপেন্ডেন্ট রিভিউ রিপোর্টকে স্বাগত জানিয়েছে এবং এখন দলীয় নীতি নির্ধারনী ফোরামে পূর্ণাঙ্গভাবে আলোকপাত করা হবে এবং দলকে আরো শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার জন্য সবাই মিলে কাজ করবেন।
১৫ সদস্যের ইন্ডিপেন্ডেন্ট রিভিউ রিপোর্টের কি পয়েন্ট-
০১) ২০১৯ সালের নির্বাচনে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছাড়াই অংশহগ্রহণ করে এবং ২০১৭ সালের পুরনো ম্যাসেজ অনেকের(সবার) জন্য লেবার-কিছু লোকের জন্য নয়-এই ম্যাসেজ প্রচারে ও পরিবর্তনীয় স্রোতের সাথে মিলিয়ে তুলে ধরতেও ব্যর্থ হয়(পৌছাতে পারেনি)।
০২) ২০১৯ সালের নির্বাচনে পরিষ্কার ছিলোনা কে নির্বাচনী অপারেশনাল ইনচার্জ ছিল-যার ফলে টক্সিক কালচার রুখতে ও নির্বাচন পরিচালনা স্ট্র্যাটেজী সাজাতে ও গুছাতে পারেনি দল ও নেতৃত্ব।
০৩) টোরিদের ডিজিটাল প্রচারণা ও টেকনোলজিতে লেবার দল ছিলো অনেক পিছিয়ে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে লেবার দলের ডিজিটাল প্রচারণা ছিলো পুরনো ও অদক্ষতায় পরিপূর্ণ, এমনকি লেবারের ম্যাসেজ নিজেদের দলের সর্বত্রও পৌঁছানো যায়নি, যা টোরিরা ডিজিটাল প্রচারণায় সীমাহীন ফায়দা তুলে নিয়েছে তৃণমূলে।
০৪) ব্রেক্সিট ইস্যুর যুদ্ধে লেবার কনজারভেটিভদের কাছে হেরে যায়-লক্ষ্যহীন ব্রেক্সিট স্ট্র্যাটেজীর জন্য। ফলশ্রুতিতে ২ লক্ষ নন-ভোটার লেবার থেকে তাদের দিকে ফিরে যায় এবং ভোট শেয়ারের দুই তৃতীয়াংশ তারা নিয়ে নেয়।
০৫) লেবারের মতো জাতীয় একটি দলের নির্বাচনী আসন টার্গেট পরিকল্পনা ছিলো অবাস্তব এবং এভিডেন্স নির্ভর ছিলোনা। যার ফলে সেই সব টার্গেটকৃত আসনে লেবারের মত জাতীয় দলের সমর্থন আদায়ে বড় অভাব দেখা দেয়।