পররাষ্ট্রমন্ত্রীর যত অপরাধ-“আমি তোমাদের লোক,তোমাদের জন্যই কাজ করছি সারা জীবন”

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর যত অপরাধ-“আমি তোমাদের লোক,তোমাদের জন্যই কাজ করছি সারা জীবন”

সেলিম। বিগত ৪০ বছর যাবত প্রবাসিরা চোখের পানি ফেলেছে, চিৎকার করে বলেছে, আওয়াজ, মিছিল আন্দোলন করেছে নিজেদের দাবী দাওয়া নিয়ে, দশকের পর দশক লবি করেছে-কেউ প্রবাসিদের কথা ভাবেনি, ক্ষমতায় গিয়ে প্রবাসিদের খোজ নেয়া দূরে থাকুক, প্রবাসিদের দাবি বাস্তবায়নের চেষ্টাও করেনি।

বাংলাদেশের, এমনকি বাঙালির বিগত ৫০ বছরের ইতিহাসে প্রবাসিদের নিয়ে প্রবাসে এবং দেশে থেকে প্রবাসিদের আপনজন হিসেবে প্রবাসিদের দাবি দাওয়া বাস্তবায়নে দেন দরবার এবং ক্ষমতায় গিয়ে প্রবাসিদের সাথে এতোবেশী মাখামাখি, যেন প্রবাসিদের ভাই বন্ধু আপনজন, সব সময় খোজ নেয়া, টেলিফোন, ভিডিও বার্তা, টেক্সস্ট ম্যাসেজ, এমনকি পরিচিত অপরিচিত যেকেউ প্রবাস থেকে যখনি যে সুযোগ চাইছেন সাধ্যের সমস্ত কিছু উজাড় করে দিয়ে যিনি এক পায়ে প্রবাসিদের জন্য নিবেদিত-বলা যায়, প্রবাসিদের সেবক, খোদ মন্ত্রী পরিষদ এবং প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত বলেন প্রবাসিদের জানপ্রাণ মন্ত্রী-এরকম কারও নাম যদি এক বাক্যে চোখ বুঝে বলতে হয়, তিনি হলেন আজকের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডঃ এ কে আবদুল মোমেন। প্রবাসে থেকেও যে খ্যাতিমান অর্থনীতির অধ্যাপক শুধু প্রবাসিদের কথা ভেবেছেন, ক্ষমতায় গিয়ে প্রবাসিদের জন্য প্রথম দিন এবং প্রথম ঘন্টা থেকে প্রবাসিদের স্বার্থে সরকারি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন-তিনি আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন।

বঙ্গবন্ধু যখন প্রথম ক্ষমতায় আসীন ছিলেন, তখন আজকের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন সরকারি অফিসার(মন্ত্রীর সচিব হিসেবে)। আবদুল মোমেন তখনি বঙ্গবন্ধুকে দিয়ে শুরুতে প্রবাসিদের ওয়েজ আর্নার্স স্কীমের( যার সুফল আমাদের লক্ষ লক্ষ প্রবাসিরা পাচ্ছেন) বিলের চালু করার কৃতিত্বের দাবিদার-অথচ জীবনে কখনো সেই কৃতিত্ব জাহির করেননি।

বিগত ৫০ বছরে প্রবাসিদের জন্য আবদুল মোমেনের চিন্তা ও কাজের কথা বাদ দিয়ে, সব পেছনে ফেলে, ক্ষমতায় গিয়েই প্রথম দিন থেকে প্রবাসিদের কল্যাণে ডঃ আবদুল মোমেন যে সব অপরাধ করেছেন, প্রবাসিদের নিজেদের লোক হিসেবে সব কিছু জলাঞ্জলি দিয়ে প্রবাসিদের কল্যাণে যেসব কাজ করেছেন, সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-

১। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব নেয়ার আগেই তার বড় ভাই সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সহায়তায় সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রবাসিদের নাগরিকত্ব আইন বিল পুণর্বিবেচনা, কেন যুক্তিসঙ্গত নয়, কেন প্রবাসিদের অমর্যাদা হবে-দীর্ঘ ৩০ মিনিটের বেশী সময় প্রধানমন্ত্রীকে একান্তে দৃষ্ঠিগোচরীভুত করার প্রয়াস পান। কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে কখনো এসব কাজের কথা প্রকাশ করেননি। পররাষ্ট্র মন্ত্রী হিসাবে দায়িত্বভার গ্রহণের পরবর্তী মূহূর্তে  পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন এমপি বর্হিবিশ্বে অবস্থানরত এক কোটিরও আধিক প্রবাসীদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়াদির সম্প্রসারন ও উন্নয়ন এবং বাংলাদেশের দূতাবাস কর্তৃক প্রদত্ত সেবার মান ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে মনোনিবেশ করেন।এ উদ্দেশে তিনি সুচিন্তিত কর্মপরিকল্পনা প্রনয়ন করে দূতাবাসসমূহকে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান করেন। যার সুফল প্রবাসিরা দূতাবাস থেকে তাৎক্ষনিক সেবা এবং প্রবাসিদের সাথে যোগাযোগ সমন্বয় সহ সকল কার্যাদি সেবা দ্রুততার সাথে পাচ্ছেন।শুধু কি তাই, বাংলাদেশ জন্ম হওয়ার পরেই এই প্রথম কোন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগের আগে সংসদীয় কমিটির কাছে দূত হয়ে আগামী তিন বছর তিনি প্রবাসি ও দেশের জন্য কি কি কাজ ও কর্মপরিকল্পনা করবেন- সেসব উপস্থাপনের ব্যবস্থা করেন। তারও আগে সমস্ত দূতাবাসের দূতদের তাদের কর্মপরিকল্পনা সরকারের কাছে পেশের জোরালো ভুমিকা নেন। যার ফলে দূতাবাস, দূত, স্টাফের মধ্যে কাজের গতি, জবাবদিহিতার পরিবেশ, প্রবাসিদের সাথে দূতাবাসের সমন্বয় ও যোগাযোগ বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়।

২।পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কর্ম পরিকল্পনার আওতায় এবং তারই অনুপ্রেরণায় দূতাবাসসমূহ অতি দ্রুততার সাথে (২৪/৭) টুয়েন্টিফোর আওয়ার হেল্পলাইন প্রবর্তন, দূতাবাস এ্যাপস চালু এবং নিবিড় মনিটরিং ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কন্স্যুলারসেবাসহ অন্যান্য কার্যক্রম কার্যক্রম, প্রবাসীদের কল্যাণে আরো দক্ষতার সাথে চালিয়ে যেতে সক্ষম হচ্ছে। এর পাশাপাশি দূতাবাস আয়োজিত বাংলাদেশের বিভিন্ন জাতীয় দিবসসহ বাংলাদেশের ভাবর্মুর্তি বিনির্মাণ কার্যক্রম ও উদ্যোগে প্রবাসী বাংলাদেশী নাগরিক এবং তাদের পরবর্তী প্রজন্মদেরও উত্তরোত্তরভাবে সম্পৃক্তকরণ সম্ভব হয়েছে। ফলশ্রুতিতে নতুন প্রজন্ম জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের গৌররবময় সংগ্রামী জীবনে বাঙালি জাতীয়তা বিনির্মাণে তার মূল্যবোধ ওচেতনা এবং বিশ্ব শান্তি ও শৃঙ্খলার ক্ষেত্রে তার অমূল্য অবদান সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হয়ে উঠেছে।

৩।প্রবাসী কল্যাণ সহায়ক রাষ্ট্রীয় নীতি নির্ধারনের ক্ষেত্রে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সক্রিয় ভূমিকা  পালন করছেন, যার ফলশ্রুতিতে প্রবাসীগণ রেমিট্যান্সকৃত অর্থের উপর ২% প্রণোদনাসহ বাংলাদেশে তাদের বিভিন্ন প্রকার সমস্যা সমাধানে সহায়তা পূর্বের তুলনায় অধিকতরভাবে লাভ করতে সক্ষম হচ্ছেন।

০৪। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর জোরালো ভূমিকার কারণে প্রবাসে জাতীয় পরিচয়পত্রের মত গুরুত্বপূর্ণ নাগরিক দলিল ইস্যু করা সম্ভবপর হচ্ছে। বিদেশে প্রবাসীদের চাকুরী এবং অর্থনৈতিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় সমুন্নত ও উন্নয়নের লক্ষ্যে তিনি নিয়মিতভাবে  বিভিন্ন  রাষ্ট্রের  পররাষ্ট্র মন্ত্রীসহ,  আইন  প্রণেতা  ও  নীতিনির্ধারনে  দায়িত্ব প্রাপ্ত   গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের  সাথে  যোগাযোগ, টেলিফোন, ভিডিও কনফারেন্স, চিঠি প্রভৃতির মাধ্যমে  রক্ষা  করে   চলেছেন।  অতি  সম্প্রতি  গতকাল  তিনি  আয়ারল্যান্ড-এর  উপ- প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র মন্ত্রীর কাছে বাংলাদেশী দক্ষ আইটি পেশাজীবিসহ বিভিন্ন পেশাজীবিদের অধিকতর নিয়োগের জন্য জোরালো আবেদন রেখেছেন। বিদেশে বাংলাদেশীদের অর্থনৈতিক খাত সম্প্রসারণের লক্ষ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রী আয়ারল্যান্ডসহ বেশ কয়েকটি দেশে জরুরীভিত্তিতে দূতাবাস স্থাপনের কার্যক্রম গ্রহণ করেছেন।

৫।প্রবাসীদের সংকটময় পরিস্থিতিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রী তিনি সার্বক্ষণিকভাবে সজাগ থেকে দিকনির্দেশনা ও নিবিড় তদারকির মাধ্যমে প্রবাসীদের দু:খ-কষ্ট লাগবে সচেষ্ট থাকেন। কভিড-১৯ এর কঠিন চ্যালেঞ্জিং সময়ে বিদেশে বাংলাদেশী নাগরিকগণ চাকুরীর ক্ষেত্রে  অনিশ্চয়তায় না ভোগেন সে জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট দেশের মন্ত্রীদের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষাপূর্বক এ বিষয়ে অনুরোধ জ্ঞাপন করে যাচ্ছেন। এর পাশাপাশি তিনি তার সীমিত সামর্থের মধ্যে বিদেশে অবস্থানরত আর্থিক  কষ্টে অতিবাহিতকারী ভাই-বোনদের জন্য ত্রাণ সামগ্রীও পৌছে দিচ্ছেন। ইতোমধ্যে তিনি যুক্তরাজ্যসহ কুয়েত, সৌদি আরব, মালয়েশিয়া ও মালদ্বীপে ত্রাণ সামগ্রী প্রেরণ করেছেন। এ উদ্যোগে তাঁকে যারা সহায়তা করেছেন তিনি তাদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছেন।

৬।  বৈশ্বিক  মহামারী  মোকাবেলায়  বাংলাদেশের  অবদান চিরভাস্বর  করার  জন্য  তিনিই প্রথম  পাবলিক  হেল্থ ডিপ্লোম্যাসী বা জনস্বাস্থ্য কূটনীতির ধারণা বাংলাদেশের জন্য নতুন ও অর্থবহভাবে প্রবর্তন করেন। এর আওতায় বাংলাদেশের জরুরী ঔষধ ও সুরক্ষা সরঞ্জাম বিদেশে উপহার ও রপ্তানীর পাশাপাশি কভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন বাংলাদেশে প্রস্তুত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে।

৭।পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীর্ঘ দিন প্রবাসে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন পর্যায়ে সফল কর্মজীবন ও প্রবাসজীবন অতিবাহিত করেছেন। এ সময়েই তিনি প্রবাসীদের কল্যাণমূলক কার্যক্রমের উদ্যোগ নিয়েছেন এবং এ উদ্দেশ্যস্বেচ্ছা শ্রম দিয়েছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাকে পররাষ্ট্র মন্ত্রী  দায়িত্ব অর্পণ করলে তিনি বঙ্গবন্ধুর চিন্তা-চেতনা এবং তাঁর দীর্ঘ প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা ও কূটনৈতিক প্রজ্ঞা- এ দুটোর সুসমন্বয় করে প্রবাসী কল্যাণসহ বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের কূটনৈতিক অগ্রযাত্রাকে মর্যাদার সাথে সমুন্নত রাখছেন।

ইতোমধ্যে অনেক কাজ এবং নতুন নতুন কর্ম পরিকল্পনা তিনি এগিয়ে নিয়ে আসছেন। প্রবাসিদের আরও কিভাবে সম্পৃক্ততা বাড়ানো যায়-সেই ব্যবস্থাও তিনি সাজাচ্ছেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেনই বাংলাদেশের মন্ত্রী পরিষদের মধ্যে – প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরে, একমাত্র মন্ত্রী, যিনি যেকোন প্রবাসিদের টেলিফোন, টেক্সস্ট, ইমেইলের জবাব সঙ্গে সঙ্গে দিয়ে থাকেন, সাক্ষাত, সরাসরি যোগাযোগ, এমনকি প্রটোকলের ধার না ধেরে সরাসরি যোগাযোগ করে মন্ত্রীপরিষদ ও নিরাপত্তাবাহিনীর বিরাগভাজন হয়েছেন। যখনি যে বিষয়ে তার স্মরণাপন্ন হচ্ছেন পবিত্র দায়িত্ব মনে সেটা করার জন্য উঠে পরে লেগে থাকেন। এসবই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর অপরাধ। অপরাধ বলেই প্রবাসিদের নিজেদের আপনজনকে কতিপয় স্বার্থান্বেষী, স্বাধীনতা বিরোধী, বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর চিহ্নিত ঘোরতর বিরোধী, এক সময়ের শিবিরের চিহ্নিত ক্যাডার, আজকের প্রবাসে নতুন খোলসে প্রবাসিদের একটি স্বার্থান্বেষী রাজনৈতিক চক্রের ক্রীড়নকদের খেলার চালে পরে নিজেদের আপনজনকে সুপার কম্পোজে খন্ডিত বক্তব্যগুলোকে কাট ও জোড়া লাগিয়ে ভিডিও বানিয়ে বাজারে ছেড়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে সাধারণ ও নিরীহ প্রবাসিদের কাছে বিভ্রত ও বিতর্কিত এবং বিভ্রান্তি ছড়িয়ে প্রবাসিদেরকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মুখোমুখী দাড় করানোর হীন চক্তান্ত ও চেষ্টায় উঠে পড়ে লেগেছে-যা অধিকাংশ প্রবাসিদেরকে করছে ব্যথিত ও মর্মাহত। এই চিহ্নিত স্বাধীনতা বিরোধী, বঙ্গবন্ধুর বিরোধী, পাকিস্তানী ও কাস্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মদদে, চিহ্নিত অপরাধীর মাস্টার প্ল্যানে মোটা অংকের তহবিল নিয়ে ফাকা মাঠ গরম করে প্রবাসিদের নাম ভাঙ্গিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছে, যাতে অধিকাংশ সাধারণ প্রবাসিদের কোন সমর্থন নেই। সরকারের উর্ধতন মহলও ঐ চিহ্নিত ষড়যন্ত্রকারীদের প্রোপাগান্ডা, বাংলাদেশ বিরোধী প্রচারণা সম্পর্কে সচেতন থাকবেন বলে নিরীহ ও সাধারণ প্রবাসিরা সেটাই আশা করেন।