ফিরে দেখা সাধারণ নির্বাচনঃডঃ মোমেনের শেষ চালঃযেভাবে কূটনৈতিক পরিবেশ দ্রুত পালটে গেলো

ফিরে দেখা সাধারণ নির্বাচনঃডঃ মোমেনের শেষ চালঃযেভাবে কূটনৈতিক পরিবেশ দ্রুত পালটে গেলো

সৈয়দ শাহ সেলিম আহমেদ ।

তৃতীয় বিশ্বের ও উন্নয়নশীল দেশে দেশে সরকার পরিবর্তন ও রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে পশ্চিমা দেশ ও ইউরোপিয় দেশের দূতেরা গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রেখে থাকেন। এটা এখন ওপেন-সিক্রেট এবং একটি দেশের রাজনৈতিক আলোচনার প্রধান এজেন্ডা ও আলোচনার টেবিলে বা চায়ের টেবিলে আলোচনার খোড়াক জুগিয়ে থাকে।টেলিভিশনের টক শো ওয়ালাদের কাছে থাকে লোভনীয় ও ঈর্ষনীয় বিষয়।

বাংলাদেশের বিগত ১০ বছরকালের একটানা শাসন করা ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগের সরকার পরিবর্তনে দেশের ভিতরের ডঃ কামাল হোসেন এবং অ্যাসোসিয়েটসদের সাথে মিলে পশ্চিমা দেশ ও ইউরোপিয় দূতাবাসগুলো আধাজল খেয়ে বলা যায় মার্কিনীদের নেতৃত্বে অনেকটা প্রকাশ্যেই মাঠে নামে-যা উন্নয়নশীল কোন দেশের গণতান্ত্রিক রীতি নীতির ইতিহাসে এক ব্যতিক্রম এবং অনভিপ্রেতই বলা যায়। গণতান্ত্রিক রাজনীতির চর্চায় দুর্বল ক্ষমতাসীন সরকারের দুর্বলতার সুযোগে পশ্চিমাদূতদের ও তাদের জোটদের এমন প্রকাশ্যে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের খেলার সুযোগ বলে অনেক অভিজ্ঞ মহল মনে করে থাকেন। নাহলে পশ্চিমা দূত ও তাদের জোট সাধারণতঃ পর্দার অন্তরালে(এমনকি খোদ এরশাদের সরকারের সময় পর্যন্ত) কলকাঠি নেড়ে থাকেন। ৯০ এর পটপরিবর্তনের পর গণতান্ত্রিক পরিবেশে সেই পর্দার আড়ালের খেলা অনেকটা প্রকাশ্যেই চলে আসে-দুর্বল রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর অভাবে।

মার্কিনীদের তৎপরতায় অনেকটা বাধ্য হয়েই ক্ষমতাসীন সরকারের বিশেষ ও পরীক্ষিত বন্ধু ভারতের ক্ষমতাসীন সরকারও নিজেদের গুটিয়ে নিতে এবং এক ধরনের মৌনতাই সম্মতির লক্ষণের মতোই নীরব থাকে বাংলাদেশের রাজনীতির এই খেলায়। ক্ষমতাসীন সরকারের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কেবল একজন নেত্রী ও রাজনীতিক হিসেবে পশ্চিমা দূতদের প্রচন্ডচাপ ও ভারতের অবিশ্বাস্যরকমের নীরব হিমশীতল এক ভুমিকায় নিজের মতো করে এককভাবে যেমন খেলেন, তেমনি দেশের ভেতরে গড়ে উঠা পশ্চিমা দূতজোটদের রাজনৈতিক ফ্রন্ট ঐক্যফ্রন্টের চাপও মোকাবেলা করেন নিজের ষ্টাইলে। সেই ষ্টাইলে খেলতে গিয়ে কখনো কখনো শেখ হাসিনাকে অনেকটা বেহিসেবী এবং অরাজনৈতিক বাঙালি নিজস্ব ষ্টাইলের পন্থাও বেছে নিতে হয়েছে, যা অনেকের কাছে দৃষ্টিকটুও লেগেছে। কিন্তু রাজনৈতিক কৌশল এবং ব্লেইম গেইমে শেষ চাল বলতে কিছু নেই।

ক্ষমতাসীন সরকার যখন পশ্চিমা ও প্রতিবেশী ভারত সরকার কর্তৃক একেবারে হিমশীতল এক অবস্থানে বা রাজনৈতিক চালে হিমাংকের নীচে অবস্থান করছে, তখন সরকার প্রধান কূটনৈতিক দাবার চালে দক্ষ ও অভিজ্ঞতা এবং সফলতার এক গৌরবময় ট্র্যাক রেকর্ডের অধিকারি সাবেক কূটনীতিক ও অধ্যাপক ডঃ আবদুল মোমেনকে বাধ্য হয়েই সিনারিও নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়ার দায়িত্ব বিশেষ অ্যাসাইনম্যান্ট দেয়-যা সরকার প্রধান শেখ হাসিনা ছাড়া সমগ্র প্রশাসন ও রাষ্ট্রযন্ত্রকে রাখা হয় অনেকটাই ধোয়াশা ও অন্ধকারের মধ্যে। কারণ এই খেলা ছিলো পুলসিরাতের মিহি সরু পুল পার হওয়ার মতো। কেননা মার্কিনীরা এমন অবস্থার তৈরি ও ছক করে রেখেছিলো, যেখান থেকে এক্সিটের কোন রুটই খোলা ছিলোনা। যা ঐক্যফ্রন্টের ডঃ কামাল, মান্না, সুলতান, আ স ম রবকে করে তুলেছিলো দুর্দমনীয় এবং সীমাহীন আত্মতুষ্টি-ক্ষমতার পট পরিবর্তন হচ্ছেই। যেকারণে, ডঃ কামাল হোসেন নিশ্চিত পরিবর্তন জেনেই নির্বাচনে দাড়াননি।পশ্চিমা দূতদের ডঃ আব্দুল মোমেনের কূটনৈতিক প্রজ্ঞা, চাল, কৌশল এবং দ্যুতিয়ালির ম্যানেজ মাস্টার প্ল্যান সম্পর্কে যেমন অবহিত এবং সজাগও। তারা জানতো, মোমেন রাজনৈতিক  দেশীয় কৌশলের কাছে পেছনে পড়ে গিয়ে কূটনৈতিক এই খেলার সিনারিও থেকে অনেক দূরে। ক্ষমতাসীন সরকার মাহমুদ আলী ও শাহরিয়ার এবং গওহর রিজভীর উপর শুধু ভর করেই মাস্টার প্ল্যান এবং গেইম ও পালটা গেইম সাজাচ্ছে। পশ্চিমা দূত এবং তাদের জোট আর তাদের রাজনৈতিক ফ্রন্ট ঐক্যফ্রন্ট ও নেপথ্যের নায়ক ডঃ ইউনুছ যখন মার্কিন ও ভারত লবী নিয়ে ব্যস্ত সেই সুযোগে শেখ হাসিনা তার মোক্ষম কৌশল এবং চালটি খেলেন সবার অলক্ষ্যে ও অত্যন্ত কৌশলে-ডঃ আবদুল মোমেনকে সিনারিওতে ইন করেন।সিগন্যাল দ্রুত চলে যায় ভারতীয় ক্ষমতাসীন সরকার উচ্চ বলয়ে। ভারত নড়ে চড়ে বসে। পরিস্থিতি তখন দ্রুত পাল্টাচ্ছে। নির্বাচনের মাত্র ৭২ ঘন্টা বাকী। আইনশৃংখলা বাহিনী নানা ফর্মুলা ও কৌশল নিয়ে ব্যস্ত।

ভারত যখন আওয়ামীলীগের সরকারকে সিগন্যাল দিতে যাচ্ছে ঝানু কূটনীতিক ডঃ মোমেন তখন ভারতকে একটু থামিয়ে দিয়ে একদিন পিছিয়ে নেন। মোমেনের কূটনৈতিক কৌশল ইতোমধ্যেই ওয়াশিংটনে বিশেষ বার্তা চলে গেছে। বল তখন পশ্চিমা দূত ও তাদের জোটদের নাগালের বাইরে দ্রুত চলে যায়। ডঃ  কামাল যখন বুঝতে পারেন, খেলা তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে- ডঃ মোমেনের ক্যারিশম্যাটিক কূটনৈতিক শেষ চালে ঢাকার রাজনীতি সম্পূর্ণ শেখ হাসিনার নিয়ন্ত্রণে রেখে ভারতের আস্থায় অবিশ্বাস্যরকমের এক আনবিক বোমার চাইতেও দ্রুততম সময়ের মধ্যে ওয়াশিংটন-নয়াদিল্লী সমঝোতায় পৌছে যায়-ঢাকার মসনদে রাজনৈতিক পট পরিবর্তন নয় বরং শেখ হাসিনার সরকারকে নিজের মতো করে সরকার গঠণে সহযোগিতা করার বার্তায় ঢাকার দূত জোট ও ঐক্যফ্রন্টের কপালে তখন ভাজ উঠে ৩৮০ ডিগ্রি অতিক্রম করে। কূটনৈতিক এই যুদ্ধে মোমেন ও শেখ হাসিনা যখন যুদ্ধজয়ী নায়ক, তখন সারাদেশের ভোট বাক্সে ব্যালটে সিল মারা হচ্ছে। ভারতও তখন প্রকাশ্যে সিনারিও নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে আর রাখ ঢাক করেনি ও কূটনৈতিক বাধা হয়ে দাড়ায়নি মার্কিন জোট।

 

ক্ষমতাসীন শেখ হাসিনার সরকার এবার বহুল আলোচিত তার লন্ডন মিশন শুরু করবেন ঝানু ও দক্ষ কূটনীতিক ডঃ মোমেনকে দিয়ে। প্যালেস্টাইনিদের মতো লন্ডনের সেই আলোচিত নেতা ও তার বলয়কে দৌড়ের উপর তুলবেন এখন সেটা অনেকটাই পরিষ্কার। ভারত যেমন জানে, মার্কিনীরা ও ইউরোপ লবীও জানে ডঃ মোমেনের দ্যুতিয়ালি এক্ষেত্রে কতোটুকু প্রভাব বিস্তার করবে। লন্ডনের সেই নেতা এতোদিন শেখ হাসিনার সরকারকে লন্ডনে দৌড়ের উপর রেখেছিলেন, এবার শেখ হাসিনার সরকার মোমেন ডিপ্লোম্যাসির মাধ্যমে সেই দৌড়কে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে বিরোধীদের দৌড়ের উপর যে রাখবে, কূটনৈতিক, আইনি এবং রাজনৈতিক সকল মাধ্যমেই – সময় এখন দ্রুত সেদিকেই যাবে-অভিজ্ঞমহলের তেমনটাই ধারণা।

 

@salim1968, 2019