চীন-বাংলাদেশ ঘনিষ্ঠতা-ফের মাইনাস টু ফর্মুলা সক্রিয়ঃপর্দার আড়ালে ঢাকা নিয়ে নতুন খেলা….

চীন-বাংলাদেশ ঘনিষ্ঠতা-ফের মাইনাস টু ফর্মুলা সক্রিয়ঃপর্দার আড়ালে ঢাকা নিয়ে নতুন খেলা….

সৈয়দ শাহ সেলিম আহমেদ। চারদলীয় জোটের ক্ষমতার অবসানের পর এক নানা রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ছকে ক্ষমতায় আসে ফখরুদ্দিন মঈনুদ্দিনের সরকার। সেসময় বিদেশী দূতাবাসগুলোর সহযোগীতায় আর কতিপয় আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন সুশীলদের সহায়তায় রাজকীয়ভাবে রাজনীতিতে মাইনাস টু ফর্মুলার অভিষেকের নানা কৌশল ও নিরীক্ষা নিয়ে নিরাকরনে নিরাকরন করা হয়েছিলো। ঐ সময় দেশে বিদেশে মাইনাস টু ফর্মুলা বেশ আলোচিত সমালোচিত ছিলো। ফলশ্রুতিতে আওয়ামীলীগ প্রধান শেখ হাসিনাকে লন্ডন থেকে দেশে ফিরতে বাধা দেয়াও হচ্ছিলো। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া চাপ সত্যেও দেশ ছাড়তে রাজী হননি। মাইনাস টু ফর্মুলার নায়কেরা সহ বিদেশী দূতাবাস ও সুশীলদের ঐ প্রতিনিধি সকলেই কিন্তু রক্তপাতহীনভাবে মাইনাস টু ফর্মুলার বাস্তবায়ন চাচ্ছিলো। বিদ্যমান পরিস্থিতির আলোকে রক্তপাতহীন ফর্মুলা বাস্তবায়ন ছাড়া তখনকার কুশীলবদের হাতে বিকল্প খুব একটা ছিলোওনা। তবে পৃথিবীর রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ ও পটপরিবর্তনের ইতিহাস বলে রক্তপাতহীন অভ্যুত্থান কেবল একজন এরশাদ ছাড়া আর কারও বেলা খুব একটা সফলতার মুখ দেখেনি।

ফখরুদ্দিন মঈনুদ্দিনের সেই দীর্ঘ সরকারের নির্বাচনী বৈতরনী পেরিয়ে আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে চৌদ্দ দলীয় জোট ক্ষমতায় আসীন হয়। সেই যে আসীন হওয়া, একজন দক্ষ নাবিকের ন্যায় আওয়ামীলীগ সভানেত্রী সারা বিশ্বের নানা চাপ, প্রধান প্রধান শক্তিগুলোর নানা কৌশলী খেলার বিপরীতে  শেখ হাসিনা কখনো কখনো রাজনীতির মাঠের সব কটা ফ্রন্ট ওপেন, কখনও রাজনীতির পিচ্ছিল পথে একচ্ছত্র ক্ষমতায় নিয়ে, কখনো ছোট ছোট দলগুলোকে গণতান্ত্রিক রাজনীতির কৌশলে নিজের বলয়ে নিয়ে প্রতিপক্ষকে শুধু ঘায়েলই নয়, রাজনীতির মাঠ থেকে একেবারে কোনঠাসা করে কারও জন্য রাজনীতির স্পেস আর তেমন একটা না রেখেই রাজনীতি ও ক্ষমতার মঞ্চের সব আসন দখল করে নিজের মতো করে খেলে চলেছেন। একজন শেখ হাসিনার খেলার কাছে প্রতিপক্ষ দাড়াতেই পারছেনা। দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাশের দেশ ভারত, মায়ানমার, চীন ছাড়িয়ে পশ্চিমের দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, প্রাচ্যের দেশ যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আরব, কুয়েত, আরব আমিরাত সর্বত্র নিজের কৌশলী ও আত্মনির্ভর স্বাধীন কূটনৈতিক চাল আর দূরদর্শী এক রাষ্ট্রনায়কের মতো খেলে চলেছেন।কখনো কখনো পাশের দেশ ভারতের মতো শক্তশালী বন্ধু আর মার্কিন মুল্লুকের শক্তিশালী প্রেসিডেন্ট কিংবা ওয়াশিংটন ওভাল অফিসকে তোড়াই কেয়ার করে চলেন। শেখ হাসিনার এমন দূরদর্শী রাজনৈতিক কৌশলে বিশ্ব দরবারে তাকে কখনো একজন চরম কঠিণ এক রাষ্ট্রনায়ক, আবার কারও কাছে গণতন্তের এক নয়া মানবিকতায় পূর্ণ তৃতীয় বিশ্বের অবিসংবাদিত নেতা- এরকম দ্বিমাত্রিকতার সমন্বয়ে দেশে বিদেশে শেখ হাসিনা ব্যাপক আলোচিত এক নাম।এক সময়ের বাংলাদেশকে নিয়ে তাচ্ছিল্যকারী  ফোবর্স এবং ইকোনোমিষ্টের মতো দামী ম্যাগাজিনগুলো এখন বিশ্ব নেতাদের তালিকায় শেখ হাসিনাকে শীর্ষে না রেখে প্রতিবেদন যেন পুরোপুরি সম্পন্ন হয়না।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন বৈশ্বিক কৌশলী রাজনীতি ও রাষ্ট্রনায়কোচিত খেলায় হঠাত করে বাংলাদেশের পূর্বের দেশ চীনের  সাথে বন্ধুত্বের হাত প্রসারিত করে দিলে-শুরুতেই অনেকেই সেটাকে খুব একটা ভালো চোখে না দেখলেও খুব একটা গুরুত্ব দিতে চাননি। কারণ পশ্চিমা দূত পাড়া আর ভারতের নয়াদিল্লি ও ওয়াশিংটনের ওভাল অফিসের কল্পণারও বাইরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের মাঝখানে রেখে পুরনো বন্ধুর মনে আঘাত দিয়ে চীনের সাথে বন্ধুত্ব গড়ে তুলবেন। বিশেষ করে ভারত ও মার্কিনীদের প্রিয় ও আস্থাভাজন অর্থনীতির সাবেক অধ্যাপক ডঃ আবদুল মোমেনকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী করার পরে মার্কিনী ও নয়াদিল্লির কাছে অবিশ্বাস্য ছিলো চীনের সাথে বাংলাদেশের গভীর সম্পর্ক স্থাপন।সে সময় নয়াদিল্লির ডিপ্লোম্যাটদের আড্ডায় সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব বাবু বেশ আশ্বস্থ করেই বলেছিলেন, হাসিনা আমার মেয়ে, মোমেন আমার ছোট ভাই- ঢাকা চীনের দিকে গভীরভাবে যাবেনা।প্রণববাবু ও পশ্চিমা ডিপ্লোম্যাটদের সব হিসার নিকাশ উলটে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ফরেন মিনিস্টার আব্দুল মোমেন চীনের সাথে নাটকীয়ভাবে ঢাকার গভীর সম্পর্ক গড়ে তুলেন-যা চীনও সময়ে ও সুযোগের ঢাকাকে সেই গভীর বন্ধুত্বের মর্যাদা দিতে শুরু করেছে। যা নিয়ে ভারত সহ মার্কিন মুল্লুক এবং লন্ডন ব্রাসেলস সর্বত্র এখন উদবেগ উৎকন্ঠা। ওয়াশিংটন, লন্ডন, নয়াদিল্লি ঢাকাকে নিজেদের বলয়ে রাখার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে।

নয়াদিল্লি-ওয়াশিংটনের এই উদ্বেগ উৎকণ্ঠাকে নিজেদের রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের হাতিয়ার হিসেবে একশ্রেণীর মতলবাজ রাজনীতিক ও ১/১১র কুশীলবরা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের সহায়তায় পর্দার আড়ালে এখন সক্রিয়। সূত্র জানিয়েছে, ১/১১র কুশীলব আর দেশীয় কতিপয় মতলববাজ কট্রর রাজনৈতিক নেতা, কট্রর পন্থার অনুসারী, কর্পোরেট ব্যবসায়ী, সুশীলদের একটি অংশ সহ দেশী বিদেশী কয়েকজন গত ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহের শেষ দিকে পাশের দেশের দূতাবাসের কনস্যুলার সেকশনে ঢাকা, ওয়াশিংটন যৌথভাবে মিলিত হয়েছিলেন নিজেদের মধ্যে শলা পরামর্শ করে ঢাকা-বেইজিং সম্পর্ক খারাপ করে কিভাবে  নয়াদিল্লি ও ওয়াশিংটন এবং পশ্চিমাদের স্বার্থ রক্ষা করা যায়। ঢকাস্থ একটি দূতাবাসের জে ও এল আদ্যক্ষরের কর্তাব্যক্তিগণ ছাড়াও  মার্কিন বাঙালি, নিজ দেশের কর্পোরেট অঙ্গনের অতি স্মার্ট সুদর্শন সহ ১/১১র দুই কুশীলব উপস্থিত ছিলেন। সেই বৈঠকে ঢাকার দুটি ব্যাংকের মাধ্যমে ফান্ডিং সহ প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী  অফিসের মধ্যে দূরত্ব ও প্রধানমন্ত্রীর সাথে দূরত্ব, প্রবাসে বাংলাদেশীদের মধ্যে তথ্যের এমন বিভ্রান্তি নানা সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানো যাতে সাধারণের পক্ষে কোনভাবেই বুঝার উপায় না থাকে এর সত্য সত্যতা নিয়ে প্রশ্নের উদ্রেক না করে, কট্ররপন্থাদের একত্রিত করারও কৌশল ও দায়িত্ব বন্টন করে দেয়া। বিভিন্ন দূতাবাস নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে দিয়ে মিথ ও প্রবাসিদের উস্কে দেয়ার কৌশল কট্রর ও কিছুটা উদার খ্যাতিমান দুই সাংবাদিক উপস্থাপন করলে মার্কিন ও নয়াদিল্লি সহ অস্ট্রেলিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, মধ্যপ্রাচ্য, লন্ডন এর আওয়ামীলীগ ঘরানার বিভ্রান্ত ও কট্রর পন্থার সাথে সম্পর্কিতদের নিয়ে দ্বিতীয় বৈঠক করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলে সূত্রের দাবি।

পরবর্তীতে পশ্চিমা দূতাবাসের ব্যবহ্নত নিজস্ব একটি অ্যাপের মাধ্যমে ভার্চুয়াল মিটিং করে পূর্বের বৈঠকের আপডেট দেয়া হয়। যার ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি আমরা দেশে বিদেশে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর, সাবেক অর্থমন্ত্রীকে জড়িয়ে, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পরিবার জড়িয়ে জঘন্য মিথ্যাচার অত্যন্ত কৌশলে বেশ কিছু  কৌশলীদের দ্বারা প্রচার শুরু করা হয়-যাদের সকলেই সেই সব ভার্চুয়াল মিটিং এ উপস্থিত থেকে নির্দেশিত হয়ে আছেন-কিভাবে ঢাকার রাজনীতি ও কূটনীতিকে বিপর্যস্ত ও ব্যতিব্যস্ত করে তোলে প্রধানমন্ত্রীর অফিস ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর অফিসের সাথে দূরত্ব তৈরি করে ঢাকা-বেইজিং সম্পর্ক তিথিয়ে তোলা যায়, যাতে নয়াদিল্লি ও ওয়াশিংটন  লন্ডন ফায়দা তুলে নিতে পারে।

নতুন প্রজন্মের প্রযুক্তি ফাইভ জি ইস্যুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও বেইজিং এর মধ্যে তিক্ততা চলছে। বরিস জনসনের সরকারও বেইজিং এর সাথে সেই ফাইভ জি প্রযুক্তি চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছে। ইতোমধ্যেই ব্রিটেনে সেই নিষেধাজ্ঞার ৩১শে ডিসেম্বর ২০২০ থেকে শুরুর ঘোষণাও দিয়েছে। বেইজিং নয়াদিল্লির মধ্যে লাদাখ ইস্যুতে তিক্ততা হলেও ফাইভ জি ইস্যুতে বিশ্বের এই টাল মাটাল সময়ে বেইজিং নয়াদিল্লি ফাইভ জি প্রযুক্তিতে কাছাকাছি যে আসবেনা সেটা কেউ হলফ করে বলতে পারেনা। অবস্থা দৃষ্টে কিন্তু সেকথাই বলে।বেইজিং ঢাকাকে ফাইভ জি প্রযুক্তি ছাড়াও আরও অনেক অর্থনৈতিক সহায়তা দিতে সম্মত। ফাইভ জি প্রযুক্তি এখন তৈরি। নতুন প্রযুক্তি যখন আসে বিশ্বের কোথাও সেটাকে শুরুতে গ্রহণ করার রেওয়াজ এখন পর্যন্ত নেই। ফাইভ জি প্রযুক্তি নিয়ে যত বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে তার বেশীরভাগই রাজনৈতিক। বিশ্বের যে দেশই এটা থেকে দূরে থাকবে, আজকের পৃথিবীতে সেই দেশ পেছনে পরে থাকবে সন্দেহ নাই। সেটা ব্রিটেন হউক আর মার্কিন মুল্লুক হউক। নানাদিক দিয়েই বেইজিং এখন এগিয়ে। বেইজিং এর দুরন্ত গতিতে এগিয়ে চলায় বাধা বিপত্তি থাকবে।বেইজিং তার উদ্দেশ্য চরিতার্থে দেশ বিদেশে নানামুখী খেলা ও চাল চালবে এটাই স্বাভাবিক। সংশ্লিষ্টদেশকে নিজের উপযোগী কিরে নিয়ে বেইজিং কূটনীতির সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে হবে-নিরাপদ দূরতে থেকে দেশ ও জনগনের জন্য যতটুকু কল্যাণ নেয়া যায়-কৌশল ও দক্ষতার সাথে সেই চেষ্টাই করতে হবে ঢাকাকে। শুধু বেইজিং নয়, সবার সাথে বন্ধুত্ব-এইতো ঢাকার নয়া ইকোনোমিক কূটনীতি-যা এখন আলোর মুখ দেখতে কিছুটা হলেও শুরু করেছে।

 

চলবে

লন্ডন ১৫ জুলাই ২০২০

#salimlondontoday

 

1 Comment

Comments are closed