অপারেশন কোড নেইম (০২)

অপারেশন কোড নেইম (০২)

দেশে দেশে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা সমূহের অপারেশন কোড নেইম নিয়ে অনেক থ্রিল, মুভি, গোয়েন্দা কাহিনী নির্ভর চলচ্চিত্র, তথ্য চিত্র, ম্যাগাচিত্র নির্মিত হয়েছে।সেই সব জনপ্রিয়তাও পেয়েছে। বাংলাদেশের এক সময়কার গোয়েন্দা কাহিনী নির্ভর মাসুদ রানা সব শ্রেণীর পাঠকদের কাছে সমাদৃত ছিলো। ভারতে, ব্রিটেনে, আমেরিকায় সর্বত্র মুভি সাম্রাজ্যে গোয়েন্দা কাহিনী নির্ভর এবং এই কোড অপারেশন নির্ভর ছবি বক্স অফিসে হিট সুপার হিট করে থাকে। সিনেমা জগতে ফ্যান্টাসির সাথে  অপারেশন কোড নেইমের ছবি বিশাল বাণিজ্যিক সফলতা এনে দেয়।  ২০১৮ সালের সিনে জরিপে দেখা যায়, দর্শকদের পছন্দের শীর্ষে কোড নেইম নির্ভর থ্রিলার মুভি।

০২) এরকম একটি নাম না বলা ছবির গল্প। কাহিনীটি এরকম। স্থান ফ্রাংকফুর্ট, জার্মানি। স্টারবাক কফি শপ। তখনো করোনায় বিশ্ব আক্রান্ত হয়নি। করোনার কোন খবর নেই। বিশ্ব তখন নানা প্রতিযোগীতায় উম্মত। সর্বত্র ব্যস্ততা। ব্যস্ত কফি শপের এক কোনায় তিন বন্ধুর দেখা। একজন রাশিয়ান-যিনি রাশিয়ান ইন্টেলিজেন্স ডিপার্টম্যান্টে কাজ করেন। অন্যজন ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার অফিসার। দুজনের পরিচয় পেশাদারিত্বের মাধ্যমে।তৃতীয় একজন মার্কিনী যিনি আদতে ব্যবসায়ী। তবে রাজনীতি অর্থনীতির কলকাঠি নাড়াচাড়ায় সিদ্ধহস্ত। বিশাল ব্যবসায়ের স্বার্থে মার্কিন ব্যবসায়ীকে এমনটাই করতে হয়।তিন জনের আলাপ বেশ জমে উঠেছে। রাশিয়ান অফিসার চাকুরী জীবন শেষ করে ইউরোপে অবসর যাপনের ইচ্ছা। কিন্তু চাইলে সব কিছু হয়না। সাধ সাধ্য আর কঠিণ বাস্তবতা বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তিনি যে কাজ করেন, সেই কাজের সময়কালীন সময়ে নির্দিষ্ট এসাইনম্যান্টের বাইরে যাওয়ার খুব একটা সুযোগ নেই। অবসর জীবনে চাইলেও ইউরোপ কিংবা ব্রিটেনের মতো অধিক গণতান্ত্রিক দেশে জীবন যাপনে আছে নিজ দেশ থেকে অজস্র বাধা বিপত্তি।সতীর্থ বন্ধুর সাথে শেয়ার করছিলেন।সেক্ষেত্রে নিজ দেশের টার্গেটপূরণের দায়িত্বও কাধে চলে আসতে পারে-যদিও অবসর।

ভারতীয়  অফিসার শুনেই যাচ্ছিলেন। এবার নিজের মনের জানালা খুলে দিলেন সতীর্থ বন্ধুর কাছে। জানালেন রাশিয়ান বন্ধু যা ভাবছেন, তার চেয়ে এডভান্স তিনি ভাবছেন। তিনি ভাবছেন আর কটা বছর কাজ করেই তিনি গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের সুযোগ নিয়ে এডভান্স অবসরে চলে যাবেন যাতে জীবনকে ইচ্ছে মতো উপভোগ করা যায়। রাশিয়ার বন্ধুর চোখ তখন কপালে। বলছে কী? এও কী সম্ভব? আমরাতো ওয়ান ওয়ে ট্রেনের যাত্রী-যেখানে এন্ট্রান্সের সুযোগ থাকে, এক্সিটের কোন রাস্তা নেই। কারণ তার মতে, আমরা যে কাজ করি সেটা রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ গোপণীয় এবং স্পর্শকাতর সংস্থা এবং তার সাথে জড়িয়ে আছে রাষ্ট্রের অনেক গোপণীয় ইস্যু।ইচ্ছে করলেও এই চাকুরীতে ঢোকার পর জীবনকে আর নিজের মতো উপভোগ করার সুযোগই নেই। এডভান্স অবসর কিংবা ছুটি-এরকম ট্রেন্ড রাষ্ট্রের অন্যান্য সংস্থায় সম্ভব হলেও আমাদের ক্ষেত্রে সেটা অসম্ভব। সেটা জেনে শুনেইতো আমরা এমন চাকুরীতে ঢুকেছি জাতির সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দেয়ার জন্য-যতক্ষণ না রাষ্ট্র নিজে থেকে আমাদেরকে সংস্থার বিধি মোতাবেক অবসর না দেয়। সেক্ষেত্রেও থাকে কিছু শর্ত, যা অবশ্য পালনীয়। মার্কিন ব্যবসায়ী কফির কাপে চুমুক দিচ্ছিলো আর ট্র্যাম্পের মতো গড় গড় করে বলছিলো -রাশিয়াতে না হলেও ভারতে সেটা সম্ভব হলেও হতে পারে, যদিও নাটকীয় কোন পরিকল্পনা বাহিনীর না থাকে-এই বলে মার্কিন ব্যবসায়ী বন্ধু মাথা ঘুরিয়ে উপরের দিকে তাকিয়ে থাকেন।তিন বন্ধুর আলস আলাপে ট্রেনের সময় চলে আসে। যে যার গন্তব্যের ট্রেন ধরে।

০৩) তিন বছর পর রাশিয়ার সেই বন্ধু লন্ডনে নাটকীয়ভাবে মারা যাওয়ার সংবাদ পায় ভারতীয় সেই অফিসার-সে তখন ইটালিতে এসাইনম্যান্ট শেষে নয়াদিল্লির প্লেন ধরতে তটস্থ। একই বছর মার্কিন ব্যবসায়ী অটোয়ায় নিজ ফ্ল্যাটে মৃত্যুর খবর পত্রিকায় শিরোনাম হয়। আর ভারতীয় অফিসার নাটকীয়ভাবে রোড এক্সিডেন্টে মৃত্যুবরন করে। মেধাবী চৌকস অফিসারের আকষ্মিক মৃত্যুতে পত্রিকা ও মিডিয়ায় ঝড় বয়ে যায়।

 

চলবে….

 

 

(এটি একটি রমা রচনা)