আমার ছোটভাই লোকমান হোসেন- মাওলার ডাকে চলে গেল না ফেরার দেশে

আমার ছোটভাই লোকমান হোসেন- মাওলার ডাকে চলে গেল না ফেরার দেশে

সৈয়দ লোকমান হোসেন চৌধুরী-টগবগে এক তরুণ, প্রাণচঞ্চল, কোমল প্রাণ। (www.syedshahsalimahmed.com) যেসময় আর দশটা তরুণের মতো হৈ চৈ খেলাধুলায় মেতে থাকার কথা, সেই সময় যেন টাকার মেশিন হয়ে উঠে। দিন রাত নতুন নতুন ব্যবসা আর নিউ ভেঞ্চার নিয়ে একের পর এক সাফল্য অনায়াসে ধরা দেয় লোকমানের হাতে। খুবই অল্প সময়ে লোকমান মিলিয়নারের খাতায় নাম লেখায়। ব্রিটেনের বাথ বৃস্টল থেকে রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ের মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে খুব অল্প বয়সেই। সাফল্য লোকমানের পিছু ছুটতে থাকে হন্যে হয়ে। একের পর এক ব্যবসা বৃদ্ধি করতে থাকে লোকমান। এরই মধ্যে বাথ থেকে মুভ হয়ে সান্ডারল্যান্ড চলে আসে পরিবারের অন্য সদস্যদের সাথে বসবাসের জন্য।সান্ডারল্যান্ড এসেও ব্যবসা আর হাউজিং বাণিজ্যে অভাবিত সাফল্য দেখাতে থাকে। পাশাপাশি স্থানীয় তরুণদের সংগঠিত করে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলে তরুনদের নিয়ে অসম্ভব এক সাড়া জাগিয়ে তুলে নর্থে।

আমার কাছে প্রায় সময়ই সে আসত। কথা বলত, অনেক পরিকল্পণা শেয়ার করত, ঝালাই করে নিত।আর বার বার বলত, ভাইয়া আমার সাথে ব্যবসা কর, পেছনে ফিরে থাকাতে হবেনা। গত কয়েকবছর ধরে বলা যায় হরহামেশাই ফোনে আমাকে অনুপ্রাণীত করত-আমাকে নিয়ে দেশে বৃহত পরিসরে কিছু করতে চায়। ছোট মামার সাথে রাদিস যখন করে (www.londontimesnews.com)  তখন মামা এবং লোকমান দুজনেই আমাকে নিজেদের সাথে থাকার জন্য অনুরোধ করেছিলেন।আমি যত্নের সাথে তাদের অফার ফিরিয়ে দিয়ে সাফল্য কামনা করেছিলাম। রাদিস উদবোধনের সময়ে আমার ভাই আবুল মাল আবদুল মুহিত যখন ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের জন্য রাদিসে যান, তখন সেদিনের অনুষ্ঠান যাতে আমি পরিচালনা করি, সেজন্য লোকমান এবং মামা এতো বিনীত অনুরোধ এবং টিকেট সহ ভ্রমণের ব্যবস্থা করেছিলেন, কিন্তু আমার আম্মার শরীর খুব খারাপ থাকায় (ডিমেনশিয়া রোগীর ২৪ ঘন্টা সেবা দরকার) আমি দুজনের অনুরোধ কোনভাবেই রাখতে না পারার অপারগতা জানালে লোকমান এবং মামা দুজনেই খুব দুঃখ পেয়েছিলেন।

রাদিস লোকমান এবং মামা দুজনকেই উদবেগ উৎকন্ঠার চরমে পৌছে দেয়। বিশাল এক প্রজেক্ট সফল করতে গিয়ে দুজনই কখন যে নিজেদের অজান্তে জীবন প্রদীপ নেভার একেবারে শেষ প্রান্তে চলে গিয়েছিলেন, দুজনের কারোরই কোন খেয়াল ছিলোনা। কেননা দুজনের হাতে সাফল্য যেমন ধরা দিচ্ছিল একের পর এক, (www.londontimes24.com)কিন্তু সেই সফলতার অবিমিশ্র এক ফলও জীবন প্রদীপ নিভু নিভু করে চলছিল। এতো উদবেগ, এতো উৎকন্ঠা, তারপর মানুষের কল্যাণে নিবেদিত থাকা, এর বাইরেও  দুজনের অন্যান্য বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ব্যবসা বাণিজ্য নিরবচ্ছিন চালিয়ে যাওয়া-সব মিলিয়ে দুজন দুই প্রান্তে ভীষণ এক ব্যস্ততার মধ্যে দিন যাপন করতেন।

লোকমান তার সমবয়সী বন্ধু মহলের কাছে খুব প্রিয় ছিলো। ছিলো খুব অমায়িক এক স্বজন।কাজের পর দীর্ঘ রাত অবধি বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়া তাকে করেছিল তাদের কাছে আরো প্রিয়ভাজন। (www.begum24.com) আমাকে সে ভীষণ শ্রদ্ধা করতো, ভালোবাসত।আমার দুলাভাই সৈয়দ খালেদ মিয়া অলিদ(সান্ডারল্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল সেন্টারের চেয়ার)ছিলেন তার খুব প্রিয় দুলাভাই এবং একজন মেন্টর।

বিগত তিন বছর যাবত সে স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে নার্সিং হোমে সারাক্ষণ নিবিড় তত্বাবধানে একধরনের অবচেতন অবস্থায় জীবনের শেষ জার্নির অপেক্ষার প্রহর গুনছিল। নার্সিংহোমে বেশ কয়েকবার দেখতে গিয়েছিলাম, কিন্তু সে ছিলো সমস্ত ধরা ছোয়ার বাইরে।বেশ কিছু তরুণকে আমি বলেছিলাম(www.newsoftheworld24.com) , তোমার ইমান যদি তাজা করতে চাও, তাহলে লোকমানের দিকে তাকাও, আর মসজিদের সাথে তোমার তাল্লুক গড়ে তোল। ৩ বছর আগে যেদিন তার স্ট্রোক করে কোমায় চলে যায়, সেদিন রমজানের রাত ছিল, মসজিদে তারাবিহ নামায পড়ে সেহরী খাওয়ার পরেই অসুস্থ্য হয়ে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যায় চলে যায়। কে জানত সেই যাওয়াই ছিলো তার একেবারের জন্য চলে যাওয়া। সেখান থেকেই ৩ বছর অবচেতন থাকার পর সেদিন সে মৃত্যুর কোলে ঢলে পরে (www.thechanneleight.com)।

মামার জন্য যেমন ভীষণ কষ্ট হয়, তেমনি লোকমানের জন্যও বড় কষ্ট হয়। আল্লাহপাক দুজনকেই জান্নাতের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় দিন-কায়মনোবাক্যে এই দোয়াই করি আর পরিবার পরিজনক সবাইকে সবরের নেয়ামত দান করুন আমিন (www.londonradio.net)

 

সৈয়দ শাহ সেলিম আহমেদ ।

লন্ডন, ১৩ জানুয়ারি ২০২১।