বিজ্ঞান হলো চাক্ষুস প্রমাণ চায়। আল্লাহর একত্ববাদ হল অদেখা বিশ্বাস, যার অপর নাম ঈমান। মুসলমান মাত্রই আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাসী। এটাই তার ঈমান। বর্তমানে করোনা ভাইরাস এবং লকডাউন ও তৎপরবর্তী অবস্থা নিয়ে বিশ্ব বলা যায় এক টাল মাটাল অবস্থায়। ছোট বড় সব দেশই আক্রান্ত এবং করোনা মোকাবেলায় হিমশিম খাচ্ছে। বিজ্ঞানীরা আপ্রাণ চেষ্টা করছেন করোনাকে বাগে আনতে। সফলও হবেন তারা। এটাই সৃষ্টির নিয়ম। করোনার কার্যকরী প্রতিষেধক কয়েক বছরের মধ্যে হাম ধনুষ্ঠংকারের মত আবিষ্কৃত হয়ে যাবে।
করোনা এবং লকডাউন ছাপিয়ে ব্রিটেনের ব্রিটিশ বাঙালি সমাজের অন্দর মহলে সকলের অগোচরে আরও এক মহামারিতে আক্রান্ত হয়ে যাচ্ছে। যা ড্রাগস কিংবা নেশা জাতীয় লাফিং গ্যাস বা নাইফ ক্রাইম গ্যাং এর চেয়েও ভয়ংকর কর রূপ ধারণ করতে পারে, যদি না এখনই কার্যকরী এবং সঠিক দাওয়াই প্রয়োগ না করা হয়।
চুপিসারে ছড়িয়ে পরা সেই মহামারি ব্যাধিতে বলার আগে ছোট একটা গল্প বলে নেয়া ভাল- যা দূর থেকে দেখা আর কাছে থেকে শুনা। গবেষকদের কিংবা ধর্মীয় স্কলারদের ফুট নোট হিসেবে হয়ত কাজেও লাগতে পারে। ব্রিটেন এবং লন্ডনে এক প্রাইমারি স্কুল ও কলেজের অফিস। দুটি পৃথক প্রতিষ্ঠান হলেও প্রতিষ্ঠান হিসেবে সমগোত্রীয়। সেখানে চাকরী করেন অন্যদের সাথে পাল্লা দিয়ে ব্রিটিশ বাঙালি ( এবং একটি নির্দিষ্ট এলাকার) নারী। দুটি প্রতিষ্ঠানেই দুজন নারী। উচ্চ শিক্ষিত এবং মেধাবী। প্রাইমারি স্কুলের হেডমিস্ট্রেস এবং কলেজের অধ্যাপিকা দুজনি দুই জায়গায় নিজ নিজ কলিগদের বেশ স্বাচ্ছন্দভাবে বাঙালি নারী কলিগকে দেখিয়ে বললেন ও আমার পার্টনার। আমরা দুজনেই লিগ্যাল পার্টনার(সমকামী)। স্কুলে যিনি শুনছেন তিনিতো থ। বলেন কি? মাথায় হিজাব, পরিপূর্ণ পর্দা। বাঙালি নারী সমকামী। পালটা প্রশ্ন ওর পরিবার কি জানে সে আপনার পার্টনার। উত্তর না। অথচ তিনি ( মহিলা) ঐ বাঙালি নারীর বাসায়(ফ্ল্যাটে) যান স্বচ্ছন্দে। কোন প্রকারের সন্দেহ ছাড়া। পরিবার জানে বান্ধবী আসছে-রেগুলর। কিন্তু তিনি(মহিলা) বললেন, তিনি তার পরিবার মেইন্টেন করছেন, তার রিলেশনশিপ মেন্টেইন করছেন এভাবেই। দুজনে একে অন্যের ফ্ল্যাট বাড়িতে নিরাপদেই রাত্রি যাপন করছেন কোন প্রকারের সন্দেহ ছাড়া। কলেজের প্রভাষিকারও মোটামুটি একই অবস্থা। দুজনে নারী হওয়ার সুবাধে পরিবারের সবার চোখকে ফাঁকি এবং সন্দেহের উর্ধে থাকতে পারছেন।
০২) আমাদের এই প্রজন্মের অনেক ছেলে মেয়ে এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা করছে কৃতিত্বের সাথে। বিজ্ঞান এবং এর নানা শাখা প্রশাখায় বিচরণ করতে গিয়ে এদের কেউ কেউ এথিষ্ট বিজ্ঞানী প্রফেসরদের সাথে নানা যুক্তি তর্কে পেরে উঠেননা। কারণ ইসলাম, আল্লাহর একত্ববাদ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীস এবং জীবন দর্শন নিয়ে জ্ঞানের সীমিত বা স্বল্পতার কারণে। যার সুযোগে এথিষ্ট সহপাঠী ও প্রফেসরদের সাথে আর্গুম্যান্টসে হেরে গিয়ে নিজেদের মধ্যে আল্লাহ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং দ্বীন ইসলাম নিয়ে সংশয় ও বিভ্রান্তিতে পরেন। বলা যায় ট্র্যাপে পরে যান। ফলশ্রুতিতে এদের মধ্যে কেউ কেউ নিজেদের একান্তজনদের কাছে এমন সব প্রশ্ন করে বসেন, যা সাধারণ শিক্ষিতদের জ্ঞানের সীমার আওতার বিহির্ভুত হওয়ায় চুপসে যাওয়ার সুযোগে সেই বিভ্রান্তিকে নিজেদের অজান্তে বা স্বেচ্ছায় প্রশ্রয় দিয়ে আল্লাহর অস্তিত্ব এমনকি ইসলাম সম্পর্কে অবিশ্বাস স্থাপন করে বসছেন। এরকম দুজন গবেষক( ব্রিটিশ বাঙালি) আল্লাহর অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন একান্তজনদের কাছে।
এই দুই গল্প শুনার পরেই ভাবছিলাম, আমাদের এখন নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখী হতে হবে আগামীতে, যা আমরা দক্ষতার সাথে যদি মোকাবেলা করতে না পারি তাহলে উত্তর প্রজন্ম ব্যররথ(দ্বীন এর ক্ষেত্রে) হয়ে যাবে। এরকম ইস্যু নিয়ে ইচ্ছা ছিল ইমাম সাহেবের সাথে শলা পরামর্শের। আল্লাহর কি অপরিসীম মেহেরবাণী ইমাম সাহেব নিজেই খুতবা পূর্ব বয়ানে এই দুই ইস্যু প্রায় একই রকমভাবে(তবে ইমাম সাহেব এর কাছে এভিডেন্স নির্ভর তথ্য রয়েছে) চমতকারভাবে উপস্থাপন করলেন, যা আমার ভারকে হালকা করে দিল।
ইমাম সাহেব বললেন, আল্লাহর শুকরিয়া টাওয়ার হ্যামলেটসে প্রায় ১৭টি মাদ্রাসা এবং ৩টি টাইটেল মাদ্রাসা রয়েছে। তার উপর ৬০টির মতো মসজিদ রয়েছে, যেখানে জুমআ এবং তারাবীহ কোথাও কোথাও দুতিনটি জামায়াত পর্যন্ত করতে হচ্ছে। আলহামদুলিল্লাহ, এক সময় রমজান ঈদ কখন আসত যেত আমাদের পূর্ব সূরীরা টেরই পেতেননা। সেই জায়গায় অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। সকলের মেহনতেই আজ ব্রিটেনের মাটিতে আপনার আমার ছেলে মেয়ে দ্বীন ইসলাম শিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছে। কিন্তু আমাদের এই জায়গায় এসে আত্মতৃপ্তির কোন স্থান নেই। কারণ আমাদের অগোচরে আমাদের সমাজে আরও এক ভয়াবহ রোগ ক্যান্সার করোনার চেয়েও আগ্রাসি হয়ে উঠবে-যদি না আমরা নিজে, নিজ পরিবার, নিজ ছেলে মেয়েদের পরিপূর্ণভাবে অন্যান্য শিক্ষার সাথে দ্বীন ইসলাম শিক্ষা না দেই। ইসলাম সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান না থাকলে এক সময় বিভ্রান্তি দেখা দিবে, সমকামীতা আপনার আমার অগোচরে বেড়ে যাবে, যেভাবে এই দু একটি ঘটনা ইতোমধ্যেই আমাদের সমাজে প্রচলন হয়ে গেছে। সেজন্যে দ্বীনের জন্য মেহনত করতে হবে।
ইমাম সাহেব বললেন, দেখুন ইসলামের ইতিহাসে রমজানে প্রথম যুদ্ধ বদরের যুদ্ধ বিরাট তাৎপর্য রয়েছে। যেখানে কমপক্ষে ৩১৩ সাহাবী নিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ১৩০০ কুফফারদের বিপরীতে যুদ্ধ করে দ্বীন ইসলামের সেই সহজ সুযোগ এবং ফায়দা আজ আমরা উপভোগ করছি- তাদেরচ সেক্রিফাইসের বিনিময়ে।
চলবে ।