##মুশতাক এই সুযোগটাই ৭৫ নিয়েছিল-আওয়ামীলীগের নেতারাই সেই একই ক্ষেত্র তৈরি করে দিচ্ছেন
##হিসাবটা যেমন পরিষ্কার, ম্যাসেজটাও তেমনি পরিষ্কার হওয়া দরকার-আব্দুল মোমেন ভারতকে সেই ম্যাসেজটাই দিয়েছেন।
সৈয়দ শাহ সেলিম আহমেদ। লন্ডন থেকে ।
০১) বাংলাদেশের রাজনীতি, অর্থনীতি কেবলমাত্র বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটির মধ্যে সীমাবদ্ধ-এমন কায়েমী সূত্র নিয়ে যারা এখনও রাজনীতি, অর্থনীতিকে দেখেন, বিশ্লেষণ করেন কিংবা রাজনীতি ও রাষ্ট্রনীতি চালু রাখতে চান, তারা এই শতাব্দীর সবচাইতে ঘুণে ধরা, পচা, দুর্গন্ধময়, বস্তাপচা মরা লাশ ছাড়া আর কিছুই নয়। তাদের দ্বারা আর যাই হউক, পুকুরের জলে জারমুনির ফেনার ন্যায় বুদ বুদ সাময়িক তুলে শোরগোল ও মিডিয়া কাভারেজ সাময়িক পেতে পারেন, কিন্তু বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটির অগ্রগতি ও উন্নতি এবং আজকের পৃথিবীর আধুনিক বিজ্ঞান, প্রগতি, প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে সামনে নিয়ে চলার জন্য একেবারেই অনুপযুক্তই শুধু নন, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, বিশ্বের নতুন ভরকেন্দ্রের রাজনীতি, নয়া বিশ্ব অর্থনীতি এবং নয়া ডিজিটাল টেকনোলজি বুঝতে, আত্মস্থ করতে, প্রয়োগ করতে একেবারেই ব্যর্থ। ফেসবুকে সুন্দর ছবি আর কতিপয় ছন্দমাখা স্ট্যাটাস আর লাখো লাইক মানেই নয় যে, এরা বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, নয়া বিশ্ব রাজনীতি, অর্থনীতি বুঝেন।
০২) মনে রাখা দরকার, কোভিড নাইন্টিন উত্তর বিশ্ব রাজনীতি অর্থনীতি যে পর্যায়ে গিয়ে দাড়িয়েছিল, ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধ আর চীন-তাইওয়ান টেনশন, সাথে ইসরায়েল-প্যালেস্টাইল সম্পর্ক মাড়িয়ে আরব বিশ্বের সাথে ইসরায়েলের নয়া কূটনীতিতে বিশ্ব রাজনীতি, বিশ্ব অর্থনীতি, বিশ্ব টেকনোলজি নতুন এক মোড় নিয়েছে। এই নতুন মোড়ের সব কেন্দ্রেই যেমন ভারত এক বিরাট অবস্থানে রয়েছে, ঠিক তেমনি বাংলাদেশ চাক বা না চাক, ভারত-চীন-মার্কিন-ইসারেয়েল প্রেক্ষিতে উপমহাদেশে বাংলাদেশ এই নতুন বিশ্ব ভরকেন্দ্রিক রাজনীতি, অর্থনীতি এবং টেকনোলজিতে জড়িয়ে আছে-জ্ঞাতে কিংবা অজ্ঞাতে। এই নতুন বিশ্ব ভর কেন্দ্রিক রাজনীতি, অর্থনীতি, টেকনোলজি অনেকেরই এখনো চিন্তা, চেতনা ও কল্পণারও অতীত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডঃ এ কে আব্দুল মোমেন-এই নতুন বিশ্ব ব্যবস্থা কেন্দ্রিক রাজনীতি, অর্থনীতি, টেকরাজনীতিতে যতটুকু সম্ভব বাংলাদেশের স্বার্থে বা অনুকুলে নিয়ে নয়া বিশ্বের টেক-রাজনীতিতে বলা যায় চ্যালেঞ্জ হিসেবে বঙ্গবন্ধুর মতো বিশাল দুঃসাহস নিয়ে বিশ্ব পরিমন্ডলে খেলছেন অতি সঙ্গোপনে। টেক-কেন্দ্রিক নয়া রাজনীতির এই সূত্র আজকের আওয়ামীলীগ নেতৃত্ব কিংবা আওয়ামীলীগের পুরনো নেতৃত্ব কারও বোধগম্যের শুধু বাইরে নয়, বিরোধী রাজনীতিক বিএনপি কিংবা গণতন্ত্র মঞ্চ কারও নখদর্পনে এবং চিন্তা ও কল্পণার অতীত। যেকারণে আমরা দেখি, একজন শেখ হাসিনা ১৫ আগস্ট ৩২ নম্বরে আওয়ামীলীগের শ্লোগান থামিয়ে দিয়ে জানতে চান সেদিন সবাই কোথায় ছিল-যখন লাশটি পড়েছিল ৩২ নম্বরে? শেখ হাসিনা এই সিগন্যালের পরের দিনই পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় থাকা কেন ভারত এবং বাংলাদেশ উভয়ের জন্য জরুরী খোলাখুলি সেটা বলেন। বাস আর যায় কোথায়? আব্দুল মোমেন কিংবা প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের দুজনের কারও বক্তব্য বিশ্লেষণ না করেই খোদ আওয়ামীলীগ নেতারা বিএনপি-জামায়াতের ভাষায় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের বিরোধীতা এমনভাবে করে যেন সরকার এখনি বিদায় নিতে হবে, যেমনটা বিএনপি, জামায়াত গণতন্ত্র মঞ্চ বলে। তফাতটা হলো এতোদিন বিএনপি জামায়াত বলছে, এখন ওবায়দুল কাদের,আব্দুর রহমানরা বলছে।
০৩) উপমহাদেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, টেকনোলজিতে ভারত এবং চীন অতি গুরুত্বপূর্ণ এক শক্তি। এই উভয় শক্তি আবার টেকনোলজির শীর্ষে থাকা ইসরায়েল, রাশিয়া এবং মার্কিনীদের সাথে ব্যবসা, বাণিজ্য, অস্ত্র, সামরিক অর্থাৎ সব ক্ষেত্রেই জড়িয়ে আছে। এই পাঁচের মধ্যে আবার ব্যবসায়িক সম্পর্ক থাকলেও সামরিক ও অস্ত্র তৈরি ও বিক্রিতে একে অন্যের আবার চরম বৈরি এবং প্রতিদ্বন্ধি। ভারত-মার্কিন একই বলয়ে থাকলেও ভারত-রাশিয়া-ইসরায়েল সম্পর্কও গভীর। আবার মার্কিন-ইসরায়েল সম্পর্কও অনেক গভীরে। চীনের সাথে মার্কিনীদের বৈরিতা থাকলেও বাণিজ্য সম্পর্ক জিইয়ে রেখে সামরিক সম্পর্কে দ্বন্ধ জিইয়ে চীন-রাশিয়া-ইসরায়েল সম্পর্কও সর্বজনবিদিত। বাংলাদেশের শেখ হাসিনার সরকার ভারত-চীন-মার্কিনীদের সাথে যেমন কাজ করছে, তেমনি সমানভাবে রাশিয়ার সাথেও কাজ করছে। হালের ভারত, মধ্যপ্রাচ্য ও তার্কি তিন ইস্যুতেই ইসরায়েলের সাথেও অঘোষিতভাবে কাজ করছে, সেটা বলাই বাহুল্য। এই কূটনীতির অনেক কিছুই খোলাখুলিভাবে লেখা যাবেনা, শুধু ফুটনোটে এবং মোটাদাগের হরফে যে কথা না বললে নয়, ভারত, চীন কিংবা মার্কিন কেউই শেখ হাসিনার সরকারের সাথে কাজ করতে অস্বচ্ছন্দবোধ করছেনা। ইসরায়েল, মধ্যপ্রাচ্য, ইরান, রাশিয়াতো প্রশ্নাতীত।
০৪) ভারতের সীমান্ত রাজ্যগুলোতে যে সন্ত্রাসের ঝনঝনানি দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছিল, বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন শেখ হাসিনার সরকারের জিরো টলারেন্স নীতির কারণে ভারত তার অখন্ডতা যেমন আজ নিরবচ্ছিন্নভাবে ভোগ করছে, বিনিময়ে বাংলাদেশও ভারতের কাছে আশা করে সীমান্তের এই পারের দেশ বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় শেখ হাসিনার সরকার থাকার জন্য রোহিঙ্গা ইস্যুতে মায়ানমারকে চাপ দেয়া, সাম্প্রতিক সময়ের কিছু বিশিষ্টজনের আন্তর্জাতিক ক্যাপিটাল ও লবিষ্টদ্বারা মার্কিন কংগ্রেসে বাংলাদেশ বিরোধী যে চাপ অব্যাহত আছে, সেটা রোধকল্পে দুইদেশ একসাথে কাজ করা, বৈশ্বিক জ্বালানি ও খাদ্য ইস্যুতে চলমান ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশও ভারতের মতো জ্বালানি, তেল, খাদ্য যাতে সহজে ও নিরাপদে পায়, বিদ্যুৎ সরবরাহ যাতে পায়-সেব্যাপারে ভারত শেখ হাসিনা সরকারের স্থিতিশীলতায় বিশ্ব পরিমন্ডলে ইসরায়েল,রাশিয়া, মার্কিনীদের সাথে ছোট দেশ বাংলাদেশকে সাপোর্ট ও সহায়তা করতে পারে। এবং সেটা করা দরকার এই কারণে যে, এতোদিন শেখ হাসিনার সরকার ভারতকে যা দিয়েছে, বিনিময়ে সময় এসেছে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি, খাদ্য, বিদ্যুৎ ইস্যুতে বাংলাদেশ যাতে পশ্চিমা জোটের বিরোধীতা কিংবা সেংশনের মুখে না পরে-সেটা ভারত যেমন কাজ করবে, তার্কি, মধ্যপ্রাচ্যও তখন কাজ করবে। আব্দুল মোমেন এর মতো লোক বলেই সরাসরি ভারতকে এটা বলতে পেরেছেন। হলফ করে বলতে পারি, বাংলাদেশের কোন ব্যক্তির পক্ষে বর্তমান বিশ্ব সংকটময় সময়ে ভারতকে এভাবে বলার মতো দুঃসাহস দেখাতে পারা দূরে থাকুক, বলার চিন্তাও করতে পারতোনা। আব্দুল মোমেন ৫ সেপ্টেম্বরের শেখ হাসিনার ভারত সফরের মোক্ষম সময়ের আগেই বলেছেন-যাতে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার শেখ হাসিনাকে এই জ্বালানি তেল, বিদ্যুৎ আর খাদ্য এই তিন ইস্যুতে বিশ্ব বাজারে বাংলাদেশকে আশ্বস্থ ও বিশ্বস্থতায় নিবে-এমনটাই -নরেন্দ্র মোদীর কাছ থেকে বাংলাদেশ আজ আশা করে। বাংলাদেশ যখনি তার জ্বালানি সংকট মোকাবেলায় রাশিয়ার বাজারের দিকে যাবে, মার্কিনীরা খড়গ হাতে এগিয়ে আসবে। তখন কী হবে? এমনকি ফেডারেল সরকারের হাতে বাংলাদেশের যে এসেট, বাংলাদেশ ব্যাংকের যে রিজার্ভ আছে সেটাও বন্ধ হয়ে যাবে। তখন কী হবে? পারবে ওবায়দুল কাদের কিংবা অন্যরা মার্কিনীদের সেংশন আটকাতে। নাকি সেই পথে যাতে না আসে-তার আগাম ব্যবস্থা বাংলাদেশ করা। বিরোধীরা চাচ্ছে বাংলাদেশও শ্রীলংকার মতো অবস্থা হতে। চলমান জ্বালানি তেল ও বিদ্যুৎ সংকট চলতে থাকলে জনগনের দূঃসহ অবস্থা হবে। সেই সংকট থেকে উত্তরণের এই মুহুর্তে বিকল্প পথ রাশিয়ার সস্তা তেল কিংবা ইউক্রেনের খাদ্য অথবা রাশিয়া ইউক্রেন হয়ে ভারত, মধ্যপ্রাচ্য, তার্কি, ইসরায়েল বা তৃতীয় পক্ষ হয়ে বাংলাদেশের জন্য সুযোগ আদায় করা। আব্দুল মোমেন এবং শেখ হাসিনা জানেন, জাতিসংঘ কোটায়ও এই সংকট মোকাবেলা সম্ভব নয়। ক্রমাগত সংকট- একের পর এক সংকট আসতে থাকবে-যা মোকাবেলা করা হবে অসম্ভব। ইউরোপ, যুক্তরাজ্য এই সংকটে ত্রাহি অবস্থায়, মার্কিনীরা অর্থিক সংকটে। বাংলাদেশকে ইউরোপ কিংবা মার্কিনীরা তেমন সহায়তা দিতে সক্ষম হবেনা-যতোটুকু এই মুহুর্তে বাংলাদেশের দরকার। হিসাবটা যেমন পরিষ্কার, ম্যাসেজটাও তেমনি পরিষ্কার হওয়া দরকার। আজকের কূটনীতিতে সেটাও জরুরী।মান্দাতার আমলের কূটনীতি দিয়ে আজকের কূটনৈতিক সংকট মোকাবেলা করে ফল আনা যাবেনা।
০৫) ভুলে গেলে চলবেনা, ১৯৭৫ সালে আওয়ামীলীগ নিজেদের মধ্যে চরম রেষারেষি, চরম অন্তর্দ্বন্ধে ভুগছিল, যদিও তখন বঙ্গবন্ধু ক্ষমতায়। বঙ্গবন্ধুকে ক্ষমতায় রেখেও আওয়ামীলীগ নেতৃত্ব ঠিক আজকের মতো নিজেদের মধ্যে সীমাহীন দ্বন্ধ আর বিরোধীতা চলমান। কোথায় শেখ হাসিনার সরকারের হয়ে জনগনের কষ্ট লাঘবে কাজ করবে, তা না করে বিএনপি-জামায়াত-গণতন্ত্র মঞ্চের ন্যায় একই ভাষা, একই বক্তব্য দিয়ে সরকারের শুধু বারোটা বাজাচ্ছেনা বরং মুশতাকের মতো ঘাপটি মেরে থাকা ষড়যন্ত্রের কুশীলবদের উস্কে দিচ্ছে। “প্রধানমন্ত্রী যেমন বলেন, তখন শুনি। যখন বলি তখন তিনি শুনেন। এটাই শেখ হাসিনা। সেজন্য তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আওয়ামীলীগে নেতৃত্ব দেয়ার মতো সঠিক যোগ্য বিশেষকরে আজকের বিশ্ব রাজনীতি, অর্থনীতির এই ভর কেন্দ্রিক নয়া রাজনীতির নেতৃত্ব খুজে পাইনা।“
০৬) যে কথার অবতারনা না করলেই নয়, আওয়ামীলীগ নেতৃত্বের মনে রাখা দরকার আব্দুল মোমেন কিংবা মুহিত পরিবার খড়কোটার মতো আওয়ামীলীগে ভেসে আসেনি। একটু পড়া লেখা করে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ও মুক্তিসংগ্রামের দিনগুলোতে চোখ বুলানোর আহবান জানাই। তাতে জ্ঞান বাড়বে বৈ কমবেনা। বঙ্গবন্ধু এবং বঙ্গবন্ধু পরিবার, আওয়ামীলীগ ও আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে আবদুল মোমেন কিংবা মুহিত পরিবারের সম্পর্ক কখন থেকে-সেটা ফেসবুকে কতিপয় অতি উৎসাহী ওবায়দুল কাদেরের নিজের ভাষায় “হাইব্রীড” (ওবায়দুল কাদেরের কাছ থেকে ধার নিলাম) নেতাদের কাছ থেকে জনগনের জানার কোন প্রয়োজন নেই। ইতিহাসই যুগে যুগে কথা বলে। আর সত্য কখনো চাপা দেয়া যায় না। তার আপন মহিমায় অন্ধকার ভেদ করে ভোরের আলোয় উদ্ভাসিত হয়। এটাই নিয়ম।
২০ আগস্ট ২০২২। লন্ডন ।