সৈয়দ শাহ সেলিম আহমেদ, লন্ডন থেকে
নভেম্বরের শুরুতে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের অল পার্টি পার্লামেন্ট গ্রুপ চেয়ার অ্যান মেইন এমপির উপস্থিতিতে নিউ হোপ নামক বেসরকারি একটি সংগঠনের উদ্যোগে বাংলাদেশের মানবাধিকার ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে একটি দিনব্যাপী সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারটি যথারীতি ভালোভাবেই সম্পন্ন হয় এবং বাধ সাধে যখন এই সেমিনারের কিছু বক্তব্য বিভিন্ন দৈনিকে একটু ভিন্ন মাত্রায় প্রকাশিত হয়। বাংলা নিউজ, মানবজমিন, জিবিনিউজ ইংলিশ সেকশনে সহ অন্যান্য দৈনিকে এপিপিজি ও জামায়াতের ওয়েবসাইটের বক্তব্য একটু বিপরীত মুখী হওয়াতে লন্ডনের বাংলা কমিউনিটিতে সংবাদটি নিয়ে ঝড় বয়ে যায়। কোন কোন পত্র-পত্রিকায় এপিপিজির বাংলাদেশ হাই কমিশনের মাননীয় হাই কমিশনের সূত্র উল্লেখ করে অল পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপের চেয়ার অ্যান মেইন এমপির প্রেস রিলিজের কথা বলে সংবাদ পরিবেশন করা হয়। এপিপিজির প্রেস রিলিজের মাধ্যমে জামায়াতের ওয়েবসাইটের নিউ হোপের সেমিনারের মূল বক্তব্য ও বক্তাদের উপস্থাপনা ও বিষয় নিয়ে আরো বিতর্ক তুঙ্গে উঠে। বিদ্যমান বিতর্কের প্রেক্ষিতেই প্রকৃত ঘটনা জানার চেষ্টা করি।তার আগে দেখে নেই, সেদিনের সেমিনারের সংবাদ।
নিউ হোপ গ্রুপের চেয়ার ফয়েজ উদ্দিন এমবিই`র সভাপতিত্বে এতে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অল পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপের চেয়ার অ্যান মেইন এমপি, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতা মতিউর রহমান আকন্দ, জামায়াতের ইউরোপের মুখপাত্র ব্যারিস্টার আবু বকর মোল্লা, বিএনপির ইউকের নেতা আব্দুল মালিক, বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মহিদুর রহমান, টিভি প্রেজেন্টার আজমল মশরুর সহ আরো অনেকে।
বাংলা টিভির নিউজ রুমে নিউ হোপ নামক আয়োজক প্রতিষ্ঠান যে দাওয়াত নামা ও কর্মসূচী প্রেরণ করে, ঘটনা চক্রে ঐ সময়ে উপস্থিতির সময়ে আমার দৃষ্টি গোচরীভূত হয়। নিউ হোপ পরিষ্কারভাবে তাদের সেমিনারের এজেন্ডাতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে মিনিট সময় ধরে বিস্তারিত কর্মসূচী আগেই প্রকাশ করে সংবাদ মাধ্যমে।
কমিউনিটি এবং বাংলাদেশের মিডিয়ার অঙ্গনে এই সেমিনার ঘিরে যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে, তার প্রকৃত ঘটনা বা বক্তব্য জানার জন্যে আমরা যোগাযোগের চেষ্টা করি অল পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপের চেয়ার অ্যান মেইন এমপির সাথে, একই সাথে নিউ হোপ নামক প্রতিষ্ঠানের চেয়ার ও অন্যান্যদের বক্তব্য জানার জন্য যোগাযোগের চেষ্টা করি।জামায়াতে ইসলামীর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তাদের আন্দোলনের ব্যস্ততা ও নিরাপত্তার অজুহাতে যেহেতু ওয়েব সাইটে পুরো বক্তব্য বাংলা ও ইংরেজিতে দেওয়া আছে, তাই ওয়েব সাইটের ঠিকানা জানিয়ে দেয়া হয়। অ্যান মেইন এমপির সাথে যোগাযোগ করলে মাননীয় সাংসদ এবং এপিপিজি চেয়ার তার বক্তব্য সমেত প্রেস রিলিজ ইমেইলে প্রেরণ করেন। ফয়েজ উদ্দিন এমবিইর সাথে যোগাযোগের ব্যর্থতায় তার বক্তব্য এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি।
এপিপিজি অ্যান মেইন এমপির পক্ষে তার সিনিয়র পার্লামেন্টারি এসিসট্যান্ট জো কাওয়েল সংবাদ পত্রে প্রেরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলেছেন, সোমবারের নিউ হোপের সভা মুলতঃ ছিলো নন-পলিটিক্যাল ইস্যু, যা নিউ হোপের চেয়ার শুরুতেই এই বিষয়ে পরিষ্কার করেছিলেন। সভায় জামাতের কোন প্রতিনিধিত্বের ব্যাপারে এমপির এ ব্যাপারে কোন ধারণা পূর্ব থেকে ছিলোনা। জামায়াতের ওয়েবসাইটে অ্যান মেইন এমপির যে বক্তব্য প্রকাশিত হয়েছে, তার সাথেও এপিপিজি সম্পূর্ণ দ্বিমত পোষণ করেছেন।এপিপিজি সেমিনারের রাজনৈতিক বক্তব্যের সাথে জামায়াতের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বক্তব্যকে জামায়াতের মিসরেপ্রেজেন্টেশন হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এতে তিনি তার ক্ষুব্ধতা স্পষ্টতই প্রকাশ করেছেন, যাতে তিনি নিউ হোপের সাথেও আলাপ করে তার বক্তব্য পরিষ্কার করেছেন বলে প্রেস রিলিজে তিনি জানিয়েছেন। এপিপিজি বাংলাদেশ সহ বিভিন্ন দাতব্য ও চ্যারিটি প্রোগ্রামে উৎসাহ ও সহায়তার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে এধরনের পলিটিক্যালাইজড প্রচারণার প্রেক্ষিতে এপিপিজি আগামীতে যেকোন ধরনের এসোসিয়েশনে উপস্থিতির ব্যাপারে আরো পরীক্ষা-নিরীক্ষা এখন থেকে করবেন বলে জানিয়েছেন।
এদিকে জামায়াতে ইসলামী স্পষ্টতই এই বক্তব্যের বিপরীত অবস্থানে দাঁড়িয়ে বলেছে, ব্রিটিশ পার্লামেন্ট হাউসে সেদিন অ্যান মেইন এমপি উপস্থিত ছিলেন, সেখানে নিউ হোপের চেয়ার শুরুতেই বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন বলে জানিয়েছে। জামায়াত আরো বলছে তাদের উল্লেখিত দুই নেতা নিজেদের পরিচয় প্রকাশ সাপেক্ষেই সেমিনারে অংশগ্রহণ করেছিলেন। জামায়াত তাদের বক্তব্যে আরো বলেছে, তারা মিথ্যে তথ্য উপস্থাপন করেনি। প্রেস রিলিজ নিয়ে স্পষ্ট বক্তব্যের কোন অংশ খণ্ডন না করেই তারা বলছে, সেদিন বাংলাদেশের মানবাধিকার ও রাজনৈতিক সহিংসতা নিয়ে আলোচনা হয়েছিলো, যাতে বিএনপির নেতারাও অংশ গ্রহণ করেছিলেন।
মিডিয়া ব্যক্তিত্ব আজমল মশরুর তার সোশ্যাল নেটওয়ার্ক স্ট্যাটাসে সোমবারের সেমিনারে অল পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপের চেয়ার অ্যান মেইন এমপির উপস্থিতিতে বাংলাদেশের মানবাধিকার বিষয়ে সেমিনারের আলোকপাতের কথা বলেছেন।
5th November 2013.London.