উদ্ভট উঠের পীঠে চলছে দেশঃ হাসিনা জানেন, খালেদা জানেন, এরশাদও জানেন, জানেননা শুধু আমজনতা-

উদ্ভট উঠের পীঠে চলছে দেশঃ হাসিনা জানেন, খালেদা জানেন, এরশাদও জানেন, জানেননা শুধু আমজনতা-

হাসিনা জানেন, খালেদা জিয়া জানেন, এরশাদ ও জানেন। জানেননা শুধু আম জনতা। নেতা-নেত্রীরা যেমন করে বলেন, আজব এই দেশের আম জনতা সেদিকে বা সেমতোই ঝাঁপিয়ে পরেন।নেতা-নেত্রীর ডাকে জীবন বাজী রেখে রাজ পথ দখল নিয়ে চলেন।আম জনতা কখনো ভাবেননা, ভাবতে চাননা, কেন এই সংঘাত, সহিংসতা কিংবা কেন এতো আন্দোলন, কেন এতো রক্তের হুলি খেলা।

বার বার এই লাল সবুজের পতাকা কেন রক্তাক্ত ও ক্ষত বিক্ষত করা হচ্ছে।ক্ষমতার পালাবদল ঠিকই হয়, আম জনতা যে অবস্থায় থাকে, সেই অবস্থার আর পরিবর্তন হয়না।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার-বাংলাদেশের ষোল কোটি জনতার প্রাণের দাবী। কিন্তু বাংলাদেশ এমন এক দেশ যেখানে ১৯৭১সালের রক্তাক্ত স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ভয়াবহ স্মৃতি আর লাখো শহীদের রক্তের নদীর উপর পা রেখে সহাস্যে এখানকার জাতীয় নেতারা সেই পুরনো ও চিহ্নিত ঘাতকদের সাথে প্রয়োজনের সময় হাত মেলাতে দ্বিধা করেনা। যখন নিজের সুবিধা দেখে তখন সেই শত্রু হয়ে যায় গণতান্ত্রিক, আবার নিজের সুবিধার বিপরীতে সেই অপশক্তি হয়ে যায় চিহ্নিত শত্রু। অথচ এমন হওয়ার কথা ছিলোনা।

এই সব জাতীয় নেতারাই আমাদের তরুণ প্রজন্মকে আজ জাতীয় চেতনা বোধের উন্মেষ ঘটানোর থেকে স্থানচ্যুত করে আজকে নিজেরাও যেমন আছে বিভ্রান্তির মধ্যে, একইসাথে গোটা বাংলাদেশকে অস্থিতিশীলতার কালো থাবার মধ্যে ফেলে দিয়েছে।
ডান, বাম, মধ্যপন্থী সকল পক্ষই সমানভাবে দায়ী। কেউ এককভাবে একে অন্যকে দোষারোপ করে ইতিহাসের দায় এড়াতে পারেননা।

সারা পৃথিবীর মধ্যে এমন কোন দেশ পাওয়া যাবেনা, যে তার দেশের নাগরিকেরা নিজ দেশের জাতীয় চেতনা ও জাতীয় ঐক্যের প্রশ্নে এক ও অভিন্ন। প্রতিটি দেশেরই তার নিজস্ব জাতীয়তাবোধের চেতনায় রয়েছে উজ্জীবিত। হোক সে দেশ যত বড় কিংবা যত ছোট।

আমরাই একমাত্র দেশ- যেখানে জাতীয় চেতবাবোধ জাগ্রত কিংবা ঐক্যের বিপরীতে বহুধায় শুধু বিভক্তই নই, বরং কারো মধ্যে সেই জাতীয় চেতনাবোধ জাগ্রত হলেই অংকুরেই কিভাবে একেবারে বিনষ্ট করে দিয়ে সমূলে ধ্বংস করে দেয়া যায়, তার সকল ব্যবস্থা এখানে রাজনৈতিক এবং একই সাথে রাষ্ট্রীয়ভাবে করা হয়ে থাকে। অথচ আমরাই আবার গর্ব করে দাবী করে থাকি, আমি ছাড়া আর সকলেই অপদার্থ কিংবা দেশদ্রোহী নয়তো রাজাকার কিংবা অপশক্তির দুসর। এভাবে কি একটা দেশ সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারে?

আর পারেনা বলেইতো এখানকার প্রফেশনাল, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক, সাংবাদিক, পেশাজীবী, রাজনীতিবিদ, অর্থনীতিবিদ, নীতি নির্ধারক, কামার, কুমার, শ্রমিক, জেলে, তাতে, ছাত্র-ছাত্রী, ব্যবসায়ী, রিক্সাওয়ালা, মজদুর সকলেই অজস্র ধারায় বিভক্ত। এতো বিভাজন যে, একে অন্যের মতামত সহ্য করার মতো সামান্যতম সহিঞ্চুতাও এখন আর কারো কাছে অবশিষ্ট নেই। টেলিভিশনের টক শো থেকে শুরু করে পত্রিকার কলাম, রিপোর্ট, মাঠের আন্দোলন, সংগ্রাম আজ সর্বক্ষেত্রেই সর্বগ্রাসী রাক্ষুসে এক ভয়াল বিভাজনমূলক অবস্থা বিরাজমান। আর এই নাড়ী থেকে উপর পর্যন্ত বিভাজন নিয়ে একটা দেশ, একটা সমাজ কেমন করে আজকের আধুনিক সভ্যতার এই উন্নত পৃথিবীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করবে- সেটাই বিরাট এক প্রশ্ন।

আমাদের এই ভয়াবহ বিভাজনমূলক রাজনীতি আর তার ভয়ঙ্কর বিভাজনমূলক খেলা সমাজের তথা একটি দেশের সবচাইতে শক্তিশালী অংশ তরুণ-তরুণীর বৃহৎ তথা বলা যায় সিংহভাগ অংশকেই আজ সেই ভয়াল বিভাজনের গিনিপিগেরে খেলায় পরিণত করে ফেলেছে। যার খেসারত গোটা জাতিকে হাড়ে হাড়ে দিতে হচ্ছে। যে জাতির তরুণ-তরুণীর সিংহভাগ এই নোংরা বিভাজনের খেলায় থাকে মত্ত, অন্ধ, মাতাল- আর যাই হউক সেজাতি কখনো বিশ্বের সমকক্ষতা লাভ করতে পারেনা।

আমাদের দেশ গরীব, জনসংখ্যার বিশাল চাপে জর্জরিত। এই বিশাল মানবগোষ্ঠীকে কি করে জনসম্পদে পরিণত করা যায়, আমাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য তাই হওয়া উচিত ছিলো। অথচ আমরা আছি কি করে এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে আরো সমস্যার ভারে জর্জরিত করে তাদের জীবন-যাপন অতিষ্ঠ করে তুলা যায়। ভাবখানা এই যেন, হে মনুষ্য সম্প্রদায় তুমি কেন এই জনপদে আগমন করলে? তোমার জন্যতো এই জনপদ নয়?

গরীব দেশে এখন শুধু সমস্যা আর সমস্যা। চারদিকে মানুষের হাহাকার। তার উপর এই বিশাল জনগোষ্ঠীর ক্রমাগত উর্ধ্বমুখী চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলছে। অথচ জনগণের এই উর্ধ্বমুখী চাহিদা নিরসনে এখানে নেই কোন ব্যবস্থা। কিন্তু ক্ষমতাসীন আর ক্ষমতায় যেতে উদগ্রীব আর রাস্তায় জ্বালাও-পোড়াও করে নিজেদের শক্তিমত্তা আর অস্তিত্বের জানানদেয়া অপশক্তি কিংবা রাজনৈতিক শক্তি সকল পক্ষই চায় এই জনগোষ্ঠীর কল্যাণ। কেমন করে করবে এদের কল্যাণ- কোন পক্ষের কাছেই নেই পরিষ্কার কোন ধারণা। সেজন্যেই এরা ক্ষমতায় থেকে যেমন করে আস্ফালন, ক্ষমতার বাইরে থেকেও নানা রঙিন আর বর্ণচোরা স্বপ্ন দেখিয়ে, আবার রাস্তায় জ্বালাও-পোড়াও করে পেশী শক্তি প্রদর্শন করে আমজনতাকে নেশায় বোধ কিংবা মোহশক্তির ঐন্দ্রিয় জালের মায়াময়ী মোহাবিষ্টের মাতালদের মতো মাতাল করে রাখতে বদ্ধপরিকর। জনগণও সূরা নাই পাত্র হাতে কাঁপিতেছে সাকি-এমনতর যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দুষ বলো-ভাবে উদ্ভট এক উঠের পীঠে চলছে এই বাংলাদেশ।

কিন্তু এমন করে আর কতোকাল চলবে ? ৪২ বছর কি খুব একটা কম সময় ? বিশেষ করে একটা জাতির অস্তিত্ব আর উন্নয়ন কৌশল নির্ধারণ ও বাস্তবায়নে ? টেকসই গণতন্ত্রের জন্যে ? জবাব কি দেবেন মান্যবর মহামতিরা ?
চলবে

Salim932@googlemail.com
14th December 2013,London.

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *