রেপ, হত্যা, নির্যাতন-এই হলো নর্থ কোরিয়ান জেলের অজানা তথ্য জানালো এমনেষ্টি ইন্টারন্যাশনাল

রেপ, হত্যা, নির্যাতন-এই হলো নর্থ কোরিয়ান জেলের অজানা তথ্য জানালো এমনেষ্টি ইন্টারন্যাশনাল

নর্থ কোরিয়ার জেলে যারা রাজনৈতিক বন্ধী হয়ে যান, তাদেরকে গোপন এই জেলের মধ্যে নিজেদের কবর নিজেদের দ্বারা রচনা করে সেখানে পুঁতে রাখা হতো, আর মহিলা বন্দীদের ধর্ষণের পর গায়েব হওয়ার বিরল নজীর এই জেলের রেওয়াজে পরিণত – এমনি এক রিপোর্টে সম্প্রতি নর্থ কোরিয়ান জেল সমূহের বন্দীদের প্রতি এমন অমানবিক ও লোমহর্ষক ঘটনার বর্ণনা দিয়ে এমনেষ্টি ইন্টারন্যাশনাল রিপোর্ট প্রকাশ করেছে।

নর্থ কোরিয়ার জঘন্য দুই জেল কাওয়ানলিসো ১৫ ও ১৬ নামের জেলের বন্দীদের প্রতি অমানবিক টর্চার, নির্যাতন, হত্যা, গুম, ধর্ষণ আর মাত্রাতিরিক্ত হাড় ভাঙ্গা খাটুনী ও পরিশ্রমের ফলে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ার দৃষ্টান্ত সহ রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে।

রিপোর্টে এই অভিযোগগুলো সাবেক জেলবন্দী ও অফিসিয়ালদের সাক্ষাতকার ভিত্তিক নেয়া তথ্য সমূহ সন্নিবেশিত করেই প্রকাশিত হয়েছে বলে এমনেষ্টি দাবী করছে।

এমনি একজন সিকিউরিটি অফিসার, যিনি মিঃ লী নামে পরিচিত, ১৬ ঐ জেলে কর্মরত ছিলেন, তিনি এমনেষ্টি ইন্টারন্যাশনালকে ১৯৮০ ও ১৯৯০ সালের মধ্যে নটরিয়াস ঐ জেলসমূহে কিভাবে বন্দীদের নির্যাতন করা হতো তার লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন। লী জানিয়েছেন, ঐ সময়ের ঐ ১৬ নামক জেলে বন্দীদের ফোর্স করে বাধ্য করা হতো অমানবিক পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজেদের কবর নিজেরা খুঁড়ে সেখানে নামার জন্য, তারপর হাতুড়ি দিয়ে ঐ বন্দীর গর্দানে পিঠিয়ে হত্যা করে কবরে পুতে রাখা হতো। প্রিজন অফিসারেরা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বন্দীদের কাঠের ষ্টিক দিয়ে পিঠিয়ে হত্যা করতো। নারী বন্দীদের রাতের বেলা অফিসারদের জন্য সার্ভিসের ব্যবস্থা করে নিয়ে যেতো, তারপর আর তার কোন খুঁজ মিলতোনা। এইভাবেই নারী বন্দীদের রেইপ করার পর একেবারে তাবাই করে ফেলা হতো। হিউম্যান রাইটস গ্রুপ বলছে, এই ধরনের নৃশংস রেইপ শুধু মাত্র রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের নারীদের সাথেই করা হতো বলে তারা জানতে পেরেছে।

রিপোর্ট বলছে, প্রিজনদারদের অত্যন্ত ভয়ঙ্কর এক পরিবেশে দিন রাত অমানুষিক পরিশ্রম করতে বাধ্য করা হতো, অথচ পর্যাপ্ত খাবার দেয়া হতোনা, এমনকি বিশ্রামের জন্যও পর্যাপ্ত সময় দেয়া হতোনা। ফলে দিনের পর দিন এমন অসহ্য পরিশ্রমের ফলে বন্দীদের জীবনী শক্তি ক্ষয় হয়ে যেতো।

 

কিম ইয়ং সুং নামের এক বন্দী যিনি ১৫ জেলে ১৯৮০ ও ১৯৮৯ এর সময়কালীন সময়ে জেলে ছিলেন, তিনি বলেন, তিনি দেখেছেন, তার সাথের দুই বন্দীকে কেমন নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়েছিলো। প্রকাশ্যে জেলের মধ্যে তাদের বিচার করা হয়েছিলো- কাঠের টুকরো দিয়ে পিঠিয়ে মারা হচ্ছিলো, তারপর একেবারে কাছে থেকে তাদের মাথায় তিন তিনবার করে মাথায়, বুকে এবং পায়ে গুলি করা হচ্ছিলো, যাতে নিশ্চিত করা হচ্ছিলো যে ওরা মৃত হয়ে গেছে।

এই রিপোর্টের এমনেষ্টি ইন্টারন্যাশনাল নর্থ কোরিয়া রিসার্চার মিঃ রাজীব নারায়ণ নর্থ কোরিয়ান অথরিটির দৃষ্টি আকর্ষণ করে ঐ দুই বন্দী শিবির ক্লোজ করে দেয়ার আহবান জানিয়েছেন।

উল্লেখ্য এই দুটি বন্দী শিবিরে কেবলমাত্র রাজনৈতিক বন্দীদের রাখা হতো, কোন প্রকারের চার্জ ছাড়াই। বিচারের মুখোমুখি করা হতো নিজেদের ইচ্ছামাফিক, অত্যন্ত নির্দয় আর নিষ্ঠুরভাবে তাদের নির্যাতন করে হত্যা করা হতো, নারীদের সভ্রমহানি করে হত্যা করে লাশ তামাদি করে দেয়া হতো। ভুক্তভোগী জনগণ বা তাদের স্বজনেরা জানতো তারা শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে জেলের মধ্যে আছে হয়তো, অথচ নিয়তির নিষ্ঠুর সেই ঘৃণিত যন্ত্রণাময় কাহিনী অজানাই থেকে যেতো বহু বছর ধরে।

টিকা- গুয়ান্তানামো বে বন্দি শিবিরের পর নর্থ কোরিয়ার রাজনৈতিক বন্দী শিবিরের অজানা অধ্যায় এবার বিশ্ব মিডিয়ার মুখ দেখলো। জনকল্যাণের নামে দেশে দেশে এই সব সরকার ও ডিক্টেটরেরা কি ভয়ানক অমানবিক কর্ম করে যাচ্ছে অবলিলায় ।

বাংলাদেশের জেল জীবনের অজানা অধ্যায় নিয়ে কেউ সাহস করে এগিয়ে অনুসন্ধান করে আলোর মুখে নিয়ে আসুন-এখানে কেমন আচরণ করা হয় বন্দীদের সাথে।

Salim932@googlemail.com
5th December 2013,London

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *