বাংলাদেশের রাজনীতি এবং এর আগামীর নির্বাচন প্রশ্নে দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের সাথে বিশ্ব কূটনীতির দুই শক্তিমান দিক পালদের পর্দার আড়ালের তৎপরতার সাথে সমানতালে পাল্লা দিয়ে এতোদিন সমানভাবে সক্রিয় ছিলো চীন ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। হঠাত করে সেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের সাথে পর্দার অন্তরালে মধ্যপ্রাচ্যের শক্তিশালী ও বৃহৎ দেশ সৌদি আরবও তৎপরতা শুরু করে দিয়েছে বলে বিশ্বস্ত কূটনৈতিক সূত্র অবহিত করেছেন।
সূত্র আরো জানিয়েছেন, সৌদি আরবের হঠাৎ প্রবেশ এটা আচমকা এবং অনেকটা অনির্ধারিত মনে হলেও ভারত ও মার্কিনীদের সাথে সৌদি আরবের নানামুখী সম্পর্ক ও পাকিস্তান, বাংলাদেশ, আমিরাত,শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া প্রভৃতি সরকারের সাথে সৌদিদের অর্থনৈতিক ও ব্যবসায়িক এবং কোন কোন ক্ষেত্রে এ অঞ্চলের কয়েকটি মুসলিম দেশসমূহের ধর্মীয় যোগসূত্র থাকার কারণে সৌদিদের বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রবেশ অনেকটাই মার্কিন ছকের অংশ বিশেষের সাথেই মিল হিসেবে দেখতে চাচ্ছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকেরা।
ভারত ও মার্কিনীদের সাথে সৌদি আরবের এই নীরব ও অতি সঙ্গোপনে তৎপরতার প্রেক্ষিতে অনেকেই ধারণা করছেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ড্রামাটিক কোন এক পরিবর্তন এখন যেকোন সময়ই দেখতে পাওয়া যাবে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নিজেও সৌদি আরব সফর করে এসেছেন। সেখানে মহানবীর (রা:) রওজা মোবারক জিয়ারতের সময় সৌদি রাজপরিবারের রাষ্ট্রীয় প্রটোকল এবং গ্র্যান্ড মুফতীর উপস্থিতিতে রাজপরিবারের সাথে আলোচনার কিঞ্চিৎ আভাস, সৌদি গেজেট না দিয়ে শুধু মাত্র ফ্রন্ট লাইনে প্রধানমন্ত্রীর রওজা মোবারক জিয়ারতের ক্যাপশন ছবি প্রদর্শনী অনেক নাটকীয় পরিবর্তনে সৌদির আগমনী বার্তার ইঙ্গিত হিসেবেই অনেকেই দেখছেন। জানা গেছে সৌদি আরবের সাথে বাংলাদেশ ইস্যুতে মালয়েশিয়ার অসুস্থ নেতা মাহাথির মোহাম্মদের বিশেষ এনভয়ও থাকতে উদ্যোগী হয়েছেন। ভারতীয় ও মার্কিন কূটনীতিকেরা ইন্দোনেশিয়াস্থ দূতাবাসের রাজনৈতিক দূতকেও কাজে লাগিয়েছেন গ্রাউন্ড ওয়ার্ক করার জন্য। সূত্র বলছেন, প্রধানমন্ত্রী সৌদির অনুরোধের প্রেক্ষিতে আরো অনেক নমনীয় এবং মার্কিন চাপে সংলাপের বন্ধ দরজা খুলে দিতে উদ্যোগী হয়েছেন। ( ছবি সৌদি গেজেট )
মার্কিন ষ্টেট ডিপার্টম্যান্টের কর্তা ব্যক্তিরা দুই প্রধান দলের আগামী দিনের দুই শীর্ষ তরুণ নেতাদের এই ম্যাসেজই দিয়েছেন, নিজেদের মধ্যে সংলাপ ও সমঝোতার উদ্যোগে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এগিয়ে নেয়ার জন্যে উদ্যোগী ভূমিকা নিতে। বলা যায়, ষ্টেট ডিপার্টম্যান্টের অনুরোধ ও দিকনির্দেশনা থেকেই দুই বৃহৎ দলের দুই তরুণ নেতা সংলাপের ক্ষেত্র প্রস্তুত করে দিয়েছেন, যা এখন সুপ্ত ও নমনীয় অবস্থায় রয়েছে। আর তারই ফলস্বরূপ দুই তরুণের বৈঠকের পর পরই আশরাফ-ফখরুলের মধ্যে সংলাপ শুরু হয়। যদিও তারা দুই প্রবীণ রাজনীতিবিদ নিজেদের সেই কায়েমি ও সেকেলে স্বার্থ ও চিন্তার দারিদ্রতাহেতু মুক্ত ও অবাধ গণতান্ত্রিক চিন্তার ধারায় সহজেই নিজেকে উপস্থাপিত করতে না পারার ব্যর্থতা হেতু সংবাদ মাধ্যমে বৈঠক হয়নি, হয়েছে-এমন ধুম্রজাল সৃষ্টি করেছেন। যা আজকের যুগে এমন আচরণ কাঙ্ক্ষিত নয়। মার্কিন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের অনুরোধে হয়তো সংলাপের ধারাবাহিকতা চলবে, সরকারের মেয়াদও অটোমেটিক বাড়তে থাকবে……। আর সেই না বাড়ার জন্যেই বিশেষ এক দেশের সরকারের অনুরোধে আর মার্কিনীদের সহায়তায় অত্যন্ত সঙ্গোপনে সৌদি আরবের বর্তমান তৎপরতা বলে জানা গেছে।
“বাংলাদেশের তরুণেরা বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে যেখানে অনেক আগেই দ্রুতগামী ট্রেন কিংবা শব্দের তরঙ্গ প্রবাহের ন্যায় সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, বা গিয়েছে, সেখানে এতো বড় দুই দলের দুই মহাসচিব এখনো সেই পুরনো আমলের, মান্দাতার আমলের চিন্তা-চেতনা নিয়েই আছেন। যা সংলাপের নতুন সম্ভাবনার ক্ষেত্রকে অঙ্কুরেই ধ্বংস করে দেয়ার জন্যে যথেষ্ট ।“
বিরাজমান সংঘাত, সহিংসতা, সন্দেহ, অবিশ্বাস, ঘৃণার পাহাড়কে পেছনে ফেলে অসীম সাহসী যৌবনের দুই তরুণ যেখানে আগামীর রাজনীতির সুন্দর ও সহমর্মিতা ও সৌহার্দের রাজনীতির সূচনায় দুই যুগেরও উপরের নিজেদের রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, জিঘাংসাকে ভুলে গিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার পথ উন্মুক্ত করে দিলো, সেখানে পুরনো ও অভিজ্ঞ রাজনৈতিক নেতৃত্ব আরো একধাপ এগিয়ে এসে পথ দেখানোর বিপরীতে নোংরা হিংসার খেলায় মত্ত হয়ে আছে। এমতা অবস্থায় প্রতিক্রিয়াশীল ও সুবিধাবাদী স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী সুযোগের সদ্ব্যবহার করবেই এটাইতো স্বাভাবিক।
বিদেশী মুরুব্বীর বাইরে নিজেদের স-উদ্যোগে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার অবসান করে সুন্দর সমঝোতার সমাধান দেশ ও জাতির জন্যে অনেক কল্যাণ ও মঙ্গলময়, জাতি হিসেবেও আমরা মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবো অবলীলায়। এই বোধ কি হওয়া উচিৎ নয় ।
(কাল থাকছে আরো আপডেট সহ বিশেষ প্রতিবেদন )
Salim932@googlemail.com
23rd November 2013, London.