তোফায়েল, মেনন, আমু, ইনু জাঁদরেল রাজনীতিক। বাংলাদেশের রাজনীতির অন্ধ গলির সব নাট-বল্টু ওদের নখদর্পনে। তাই হাসিনার সরকারের জনপ্রিয়তার ধ্বসের সময়ও সব জেনেশুনেই উনারা (ইনু আগেই মন্ত্রী)সর্বদলীয় সরকারের এই আজগুবি মন্ত্রী পরিষদে যোগ দিয়েছেন। মহাজোট সরকারের মন্ত্রী পরিষদে যোগ দেয়ার জন্যে দুবছর আগে তোফায়েল, মেননকে আহ্বান জানানো হলেও উনারা যোগদেননি। বোধগম্য কারনেই।
আওয়ামীলীগের লুট-পাটের ভাগীদার হয়ে নিজেদের গায়ে লাগাতে চাননি বলেই ঐ সময় যোগ দেননি। অথচ সরকারের শেষ সময়ে এসেই মেনন, তোফায়েল, আমু, জিয়া উদ্দিন বাবলু, আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, আনোয়ার হোসেন মঞ্জু সবাই একে একে যোগ দিলেন কেন? শুধুই কি নির্বাচন? না কি অন্য কিছু?
তোফায়েল, মেনন, আমু ভালো করেই জেনে মন্ত্রী পরিষদে যোগ দিয়েছেন। চলমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় দেশে নির্বাচন করার মতো পরিস্থিতি খুব একটা নেই বা সকল দলের বিশেষ করে বিএনপি বিহীন নির্বাচন করে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির যেমন উন্নতি করা যাবেনা, দেশ বিদেশেও সেটা গ্রহণ যোগ্য হবেনা। তারপরেও উনারা এরকম রিস্ক কেন নিলে? টাকা নাকি অন্য খেলা ?
আমু, মেনন, তোফায়েল এই অন্য হিসেব এখন আস্তে আস্তে যখন অনেকের কাছে দৃশ্যমান হচ্ছে, তখনি মন্ত্রী পরিষদে যোগ দিতে লাইন ধরে আছেন কর্নেল অলি, পার্থ, মাহি, বি চৌধুরী সহ আরো অনেকেই।হালের সর্বশেষ খবর, কর্নেল অলি তিন কোটি টাকার বিনিময়ে মন্ত্রী পরিষদে যোগ দিতে তৈরি হয়ে আছেন, মাহি চেয়েছেন বাবা বি চৌধুরী সহ তিনজন দলীয় মন্ত্রী, পার্থ একাই মন্ত্রিত্ব চেয়েছেন।এই লাইনে আরো অনেকের নাম এখন উচ্চারিত হচ্ছে। কারণ তারা সকলেই এখন বুঝে গেছেন এই নব গঠিত আজব সরকারের স্থায়ীত্বকাল দীর্ঘায়িত হতে যাচ্ছে।
হাসানুল হক ইনু, ওবায়দুল কাদের প্রকাশ্যেই বিএনপিকে সর্বদলীয় মন্ত্রীপরিষদে যোগ দিতে আহ্বান জানিয়েছেন।
কেমন হয় বিএনপি যদি সরকারের আহ্বানে সাড়া দিয়ে, দেশকে নিয়ে দেশী বিদেশী ষড়যন্ত্রের ডালপালা এখনি রুখে দিতে ও অযথা জান-প্রাণ ও সম্পদ হানি থেকে বাচাতে মন্ত্রী পরিষদে যোগ দিতে শর্ত দিয়ে বসে, বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার পূর্বক সর্বদলীয় মন্ত্রী পরিষদে যোগ দানের নিশ্চয়তা দিতে হবে।যদি এমনটি হয়েই যায়, তাহলেতো আওয়ামীলীগের এতো সাধের সাজানো বাগান ও ২০২০ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় টিকে থাকার সাধ ও স্বপ্নের সমাধি এখানেই মারা যাবে। তোফায়েল, মেনন, আমু, মঞ্জু, এরশাদেরা যে ছক একে দুই বছরের জন্য মন্ত্রী সভায় যোগ দিয়েছেন, সেই স্বপ্নের ফানুস তারেক রহমানের মন্ত্রী সভায় যোগদানের মধ্য দিয়ে বাতাসে মিলিয়ে যাবে। বিএনপির হাই কমান্ড যদি আওয়ামীলীগের সুপার ডিপ্লোমেটিক খেলার বিপরীতে সুপার ডিপ্লোমেটিক একই খেলা খেলে, তাহলে বাংলাদেশের আগামীর রাজনীতির পূর্ব নির্ধারিত এবং দেশের বাইরে থেকে ছক একে নির্বাচনী খেলার ঐ রাজনৈতিক রোড ম্যাপের ইতি ঘটে যেতে বেশীক্ষণ সময় লাগবেনা। তারেক রহমানের যতই সমালোচনা করা হউক না কেন, এখনো বাংলাদেশের অলিতে গলিতে তারেক রহমানের তারুণ্য নির্ভর, তৃণমূল রাজনীতির ক্রেজ আকাশচুম্বী। এটা হাসিনা যেমন জানেন, বিএনপিও জানেন। তারেক রহমানের অনুপস্থিতে আওয়ামীলীগ ও সজীব ওয়াজেদ জয় কেন্দ্রিক যে রাজনৈতিক পরিমণ্ডল সৃষ্টি করে আমেরিকা-ভারত এককভাবে খেলে যাচ্ছে, তারেক রহমানের সর্বদলীয় সরকারের যোগদানে সেই একক স্বত্বার ডিপ্লোমেটিক ও রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মে বিভাজন ও নতুন সুর ও ধারা সৃষ্টি হতে বাধ্য, এটা সকলেই জানেন। ব্রিটেন ও মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ভারত ও আমেরিকার সাথে একক ও সমানতালে পা নাচিয়ে চললেও তারেকের উপস্থিতিতে ব্রিটেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, মধ্যপ্রাচ্য, এমনকি খোদ ভারতের ডিপ্লোমেসিতে নতুন মোড় নিয়ে আসবে, যা চীন নামক উদীয়মান ব্যাঘ্র নাটাইয়ের ঘুড়ি দক্ষতার সাথে চাল চালাতে সুবিধাজনক অবস্থানে চলে আসবে। বিএনপির ভেতরের ঘাপটি মেরে থাকা সুবিধাবাদী অংশ যারা সরকারের সাথে লিয়াজো করে মাঠের আন্দোলন চাঙ্গা হতে বাধার সৃষ্টি করছে, তাদেরও ফন্দি ফিকির নষ্ট হয়ে যাবে, বরং তারেক ভক্তি হয়ে তারেক বন্দনায় নতুন এক আন্দোলনের জোয়ার বয়ে যাবে।
রাজনীতিতে একা নিজে সুবিধাজনক অবস্থানে খেলে নিজের শক্তিমত্তা ও কুশলী খেলোয়াড়ের পরিচয় দেয়া যায়না, সেজন্য চাই শক্তিশালী প্রতিপক্ষ। বিএনপি এবং আওয়ামীলীগ কি তারেকের জন্য এই স্পেস দিয়ে খেলতে চাইবেন ?
(প্রিয় পাঠক এই ব্লগের সাথে রিলেটেড ব্রেকিং নিউজ সজীব ওয়াজেদ জয় ও তারেক রহমানের লন্ডনে গত শনিবারের বৈঠক দেখুন প্লিজ-আসছে প্রিয়তে)
Salim932@googlemail.com
21st November 2013, London.