আওয়ামীলীগের বিশ্ব-কূটনীতির পুরোভাগে এই উপমহাদেশের রাজনীতির ক্যাপ্টেন নয়াদিল্লী। যাকে কেন্দ্র করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ সকলেই আজ মূলত: এক ও অভিন্ন অবস্থানে।
রাজনীতির ডিপ্লোম্যাটিক ভাষা ও শব্দের বেড়াজালে ফেলে আমাদের আমজনতাকে কিছুকাল হয়তো বোকা বানিয়ে রাখা যাবে অথবা ডিপ্লোম্যাটিক অতি উঁচু মার্গের শব্দ চয়নের মাধ্যমে আপাতত: মার্কিন ও ভারত আকাশে হঠাত উদিত হওয়া রামধনুর ঝলকানির ন্যায় দুই বিরোধীদলের আন্দোলনের বেড়াজালে একে অন্যের পক্ষাবলম্বনের ইঙ্গিতপূর্ণ বক্তব্য প্রকাশ্য ও দৌড়ঝাঁপ করে রাজনীতির মাঠে কিছুক্ষণ যেমন আলোড়ন তুলে হাওয়ায় মিলিয়ে দেয়া যায়, ঠিক তেমনি একই রাজনৈতিক গেইমের কূটনীতিক খেলা শুরু করে দিয়েছে মার্কিনীরা ও ভারতীয়রা। উপমহাদেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, সমরনীতি, কূটনীতি নিয়ে যারা গবেষণা করেন, তারা জানেন এর পেছনের প্রকৃত তাৎপর্য। “ নয়াদিল্লীর স্বার্থের বিপরীতে, একই সাথে নয়াদিল্লীর সাথে টাই-আপ করে মার্কিনীদের স্বার্থের বিপরীতে বাংলাদেশের কাছ থেকে এমন কোন ব্যাপক স্বার্থ কোন অবস্থাতেই মার্কিনী কিংবা যুক্তরাজ্য বা ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেই।“ আজকের প্রেক্ষাপটে ও বিশ্ব রাজনীতির আবহাওয়ায় নয়াদিল্লীর ইন্টারেস্ট উপমহাদেশের অন্য যেকোন ইন্টারেস্টের চাইতে অনেক অনেক মূল্যবান মার্কিনী ও যুক্তরাজ্য সহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছে। মাজখানে ব্যতিক্রমধর্মী ইন্টারেস্ট নিয়ে অবস্থান করে আছে চীন নামক উদীয়মান নয়া শক্তি, যা নয়াদিল্লীর সাথে প্যাক্ট ও স্বার্থের জন্য চীনের অবশ্যম্ভাবী অবস্থান ও ভূমিকাকে মার্কিনীরা যেমন রুখে দিতে চায়, ঠিক তেমনি চায় যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিজেদের ইউরোকে নিরাপদ ও অবাধ রাখতে বিশ্বের যেকোন প্রান্ত থেকেই চীনকে রুখে দিতে বদ্ধ পরিকর। শুধু ভৌগলিক নয়, শুধু অর্থনৈতিক নয়, শুধু জনসংখ্যার আধিক্যে নয়, বরং সামরিক, অর্থনৈতিক, ভৌগলিক, বাণিজ্যিক- সকল স্বার্থের সীমাহীন সহাবস্থানের যোগান ও সরবরাহের ও আধিপত্য বিস্তারের সুযোগের প্রেক্ষিতে মার্কিন ও যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছে নয়াদিল্লীর গুরুত্ব অন্য যেকোন রাষ্ট্রের চাইতে অধিক গ্রহণযোগ্য। বাংলাদেশের বিরাজমান রাজনৈতিক অচলাবস্থার নিরসনে নয়াদিল্লীর সমর্থনের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নের এক ও অভিন্ন অবস্থানে থাকার হেতু এই সব দৃষ্টিকোণ থেকেই দেখতে হবে। দেখতে হবে, আধুনিক বিশ্বের সন্ত্রাস মোকাবেলা, জঙ্গি ও তালেবান, আল কায়দার প্রশ্নে অবস্থান, তথ্য প্রযুক্তির অবাধ ব্যবহারের একচ্ছত্র বাজার ব্যবস্থা সহ অন্যান্য বাণিজ্যিক সুবিধার অবস্থানের প্রেক্ষিতে। এদিকে দৃষ্টি না দিয়ে শুধুমাত্র জনপ্রিয়তার মাত্রার উপর ভর করে বিশ্ব কূটনীতির মোড়লেরা বাংলাদেশের রাজনীতিতে কে কতো বেশী শক্তি সঞ্চয় করেছে, কাদের পেছনে বেশী জনগণ, সেই সব খালি চোখে দেখালেও বিহাইন্ড দ্য সিনারীও অন্য কথাই বলে।“ সেই অন্যকথারই ধারাবাহিক অবস্থান আনন্দ বাজার, ইকোনোমিষ্ট, ইকোনোমিক টাইমস, টাইমস অব ইন্ডিয়া,বারাক ওবামার নয়াদিল্লীর সাথে কথামালার কূটনীতি-সবই একই সূত্রে গাঁথা।“ সেই একই সূত্রের গাঁথার মতোই আওয়ামীলীগের সরকার এতো কিছুর পরেও সেই ছকের ধারাবাহিকতায় একের পর এক সব করে যাচ্ছে। আওয়ামীলীগ সেই ধারাবাহিকতার বাইরে এখনো বেরিয়ে আসেনি। এবং বেরিয়ে আসবেওনা।বিএনপি ও তার নেত্রী কেবলমাত্র হরতাল, আন্দোলন, অবরোধ আর ঢাকার দূতাবাসের ডিপ্লোম্যাটদের মুখাপেক্ষীহয়ে অল্প বিস্তর কূটনীতি চালু রেখে বলা যায় আওয়ামীলীগের রকেটের গতির সাথে ভাঙ্গা বাসের যাত্রীর হয়ে বিএনপি অনেক দেরী ও ভুল করে ফেলেছে।
উপমহাদেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, বাণিজ্যনীতির প্রশ্নে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নয়াদিল্লীর সাথে এক হয়ে আছে- আপনি স্বীকার করেন আর নাই করেন। কারণ কেবলমাত্র হাসিনা আর আওয়ামীলীগ কিংবা খালেদা জিয়া আর বিএনপির জন্য নয়াদিল্লীর সাথে মার্কিনীদের অভিন্ন কূটনীতির বন্ধন বা বোঝাপড়া নস্যাৎ হয়ে যাবে-এরকম যারা ভাবেন তারা মূলত জনগণকে ও নিজদলকে ধোঁকা দেন।দেখতে হবে সার্বিক কূটনৈতিক বিচার-বিশ্লেষণে,- “এই মুহূর্তে হাসিনা নাকি খালেদা জিয়াকে নয়াদিল্লীর সাথে মার্কিনীদের প্রয়োজন।“ রাজনীতির অন্ধর মহলের এবং এই উপমহাদেশের আর্থ-সামাজিক-সমর-ব্যবসা-বাণিজ্য যারা জানেন, বুঝেন, তারা ভালো করেই জানেন, এই সব স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট প্রশ্নে বেগম খালেদা জিয়ার চাইতে শেখ হাসিনা ওয়াজেদ এই মুহূর্তে নয়াদিল্লী ও মার্কিন মুল্লুকের কাছে সবচাইতে বেশী প্রয়োজনীয়। শেখ হাসিনা ওয়াজেদ যেমন করে নয়াদিল্লীর থ্রোতে মার্কিন স্বার্থ দেখ-ভাল করতে পারবেন, বেগম খালেদা জিয়া সেই পর্যন্ত বোঝা-পড়ার পাঠশালায়ই অনেক পেছনে রয়ে গেছেন। যা তাদের জন্য প্রয়োজনের তুলনায় অনেক প্রশ্নের ও বাঁধার সৃষ্টি করবে, যা কূটনীতিতে অনেক টানা-পোড়েন নয়াভাবে শুরু হয়ে যাবে। আর বিশ্ব রাজনীতিতে মার্কিনীদের সাথে পেছন থেকে ছায়ার মতো অনুসরণ করে আছে যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এটা সকলেই জানেন। ইরাক, আফগানিস্তান, লিবিয়া,ফিলিস্তিন প্রশ্নে বারে বার সেটাই প্রমাণিত।
আমাদের কোন কোন পত্রিকা ওবামার বক্তব্যের সোজা-সাপটা ও নিজেদের মতো ব্যাখ্যা করে প্রতিবেদন প্রকাশ করে জনগণকে বিভ্রান্ত করতেছে। যা কিছুতেই কাম্য নয়। কেননা আজকের যুগ অবাধ তথ্য প্রবাহের যুগ। এখানে একজন গ্রামের সাধারণ সচেতন নাগরিকও কম্পিউটারে টিপ মেরে সারা বিশ্বের খবরাখবর নিয়ে থাকেন। এখানে তাই জনগণকে সঠিক সংবাদ ও অবস্থান জানানো জরুরী। তাদেরকে মোটিভেশন যেমন জরুরী, একইসাথে কূটনীতির এই খেলাটাও ডাইরেক্টলী অবহিত করা আরো জরুরী। আর এই জরুরী কাজের ফলে আমাদের দেশে অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার হিংস্রতা থেকে রক্ষা পেয়ে যাবে। কেননা নয়াদিল্লীর টাই-আপ নিয়ে মার্কিন কূটনীতির দরজা-জানালা যখন হাসিনার পালে ঢেউ তুলেই ফেলেছে, তখন অহেতুক প্রাণহানি আর সম্পদের ধ্বংস সাধন করে আর লাভ কি? আর এখনকার রাজনৈতিক প্রেক্ষিতে বিপ্লব সম্পন্ন করাও সম্ভব নয়। কেননা বিপ্লবের জন্য যেসব উপাদান দরকার সেসব অনেকটাই এখনো অনুপস্থিত বাংলাদেশে।
ইকোনোমিষ্ট শেখ হাসিনা ওয়াজেদের কোট নিয়ে যে প্রতিবেদন করেছে, সেখানে ডিপ্লোম্যাটদের কাছে আরো একধাপ এগিয়ে এনে দিয়েছে, বাংলাদেশের আগামীর সরকারের প্রশ্নে। একই সাথে সামরিক বাহিনীর কাছেও যথার্থ সিগন্যাল পৌঁছে দিয়েছে, সেনাবাহিনী প্রশ্নে হাসিনার কোন রিজার্ভেশন নেই। এতো পরিষ্কারভাবে পৃথিবীর কোন দেশেই ইকোনোমিষ্ট, আনন্দ বাজার, ইকোনোমিক টাইমস, টাইমস অব ইন্ডিয়া তাদের ফ্রন্ট ওপেন করে খেলেনি। শেখ হাসিনা ওয়াজেদের জন্য এই সব ফ্রন্ট যদি পারতো অথবা আইনসিদ্ধ হতো, তাহলে এরা সকলেই বাংলাদেশের মাঠে নেমে যেতো।অন্তত তাদের খেলা দেখে তাই মনে হয়।
শেখ হাসিনা ওয়াজেদের প্রশ্নে বিশ্ব কূটনীতি বিপরীত স্রোতে বইয়ে দেয়ার সূত্রপাত করতে পারতেন স্বয়ং বেগম খালেদা জিয়া। জাদুর চাবির কাঠির ন্যায় বেগম খালেদা জিয়া সেই সূত্রের সূচনা নিজের অজান্তেই হউক আর ব্যক্তিগত স্টাফ নির্ভর রাজনীতির সুবাধে হউক কিংবা ঢাকার দূতাবাস নির্ভর কূটনীতির জন্য হউক, সেই সুযোগ হারিয়ে ফেলেছেন। রাজনীতির দাবার চাল বেগম খালেদা জিয়াকে পেছনে ফেলে অনেক আগেই চলে গেছে-অন্তত কূটনৈতিক চালের সেই খেলার চাল।
ভারতের ইন্টেলিজেন্স উইংস র-এর প্রধানের জবানীতে আসামের দৈনিক প্রসঙ্গ যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, সেটাও বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। আইএসাইএর সাথে র-এর তুমুল লড়াই এটা স্বাভাবিক এবং ঢাকার সরকার পরিবর্তন প্রশ্নে র-এর সাথে আইএসআইএর বচসা চলবেই। পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি, ভঙ্গুর অর্থনীতি, আমেরিকার সাথে টাই-আপ, যুক্তরাজ্যের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের যে নয়া ধারা চলছে, তার বিপরীতে অবস্থান নিয়ে আইএসআই খুব একটা সুবিধাজনক অবস্থানে থেকে র-কে টেক্কা মেরে খালেদা জিয়াকে লাইম লাইটে নিয়ে আসবে, এমন ধারণাও বোধ হয় অমূলক হবে। কেননা র-যেখানে প্রকাশ্যে বলছে ১০০০০০ কোটির ফান্ড ঢাকার নির্বাচন প্রশ্নে, সেখানে আইএসআই একই সূত্র থেকে(ফান্ড প্রাপ্তি)ফান্ড নিয়ে একই প্রশ্নে কতোটুকু সুবিধাজনক অবস্থানে আসতে পারবে-সেটাও এখনকার সময়ে একটা বড় প্রশ্ন। র-তার ফান্ডের কথা আনুষ্ঠানিকভাবে জানান দিয়েছে, তখন নিশ্চয়ই এর বাইরে আরো বিশাল ফান্ডের যোগান নিয়ে মাঠে থাকবে-আমরা এমনটাই ধারণা করতে পারি।
ভারত, মার্কিন, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন আর ইন্টেলিজেন্স লিয়াজো বেগম খালেদা জিয়া বিগত পাঁচ বছরে যে কিছুই করেননি, তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ প্রকাশ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বেগম খালেদা জিয়াকে নির্বাচন বয়কট না করার আহবান আর র-এর প্রকাশ্য নির্বাচনী ফান্ডের আগাম ঘোষণা সেসবের ইঙ্গিত বহন করে।বেগম খালেদা জিয়া কি সেসব একটু ভেবে দেখছেন ?
(আগামীকাল থাকছে স্যুট-টাই পড়ে আন্দোলন আর নেতৃবৃন্দের সমঝোতার এরেস্ট ?)
Salim932@googlemail.com
9th November 2013.london.