টপ রেজিষ্ট্রার মার্ক রিমার ২০% বিয়ের ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করে ডাটা বা তথ্য প্রদান করেছেন সংবাদপত্রে, যেখানে পুলিশ দুই হাজারের মতো ওয়ার্নিং ইস্যু করে সতর্ক করে দিয়েছে ইউনিয়ন গুলোকে এই সব ভুয়া বিয়ের মাধ্যমে অবৈধ ইমিগ্র্যান্টরা ব্রিটেনের ইমিগ্রেশনের দুর্বলতার ও নানা ফাঁকফোকরের সুযোগ নিয়ে বছরের পর বছর ধরে আছেন, যা হোম অফিসের কাজের গতিকে শ্লথ করে দিয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন। এপিল, সন্দেহজনক বিয়ে আর এসবের প্রেক্ষিতে ব্রিটেনের ইমিগ্রেশন আইনে আবারো পরিবর্তন আসছে, ইমিগ্রেশন আইনে যুগান্তকারী পরিবর্তন এবং ব্যাপক ভিত্তিক কড়াকড়ি নিয়ে ব্রিটেনের হাউস অব কমন্সে গত ১০ অক্টোবর ২০১৩ নতুন বিল উত্থাপিত হয়েছে। আগামী বছরের মার্চের শেষ কিংবা এপ্রিলের দিকে এই নতুন আইন কার্যকরি হয়ে যাবে।
বিদ্যমান ইমিগ্রেশন আইনে যে সকল ক্ষেত্রে এপিল করার সুযোগ রয়েছে, নতুন আইনে সে সকল এপিলের সকল ধরনের অধিকার রহিত করেই নতুন বিল উত্থাপিত হয়েছে বলে পার্লামেন্ট সচিবালয় ও ইউকেবিএ ওয়েব সাইটে জানানো হয়েছে।হোম সেক্রেটারির অফিস সূত্রে জানা গেছে বর্তমান ইমিগ্রেশন আইনের ১৭ ধরনের এপিল সংক্রান্ত অধিকার নতুন প্রস্তাবিত বিলে রহিত করা হয়েছে।
প্রস্তাবিত নতুন আইনে যে চার প্রকারের এপিলের সুযোগ রাখা হয়েছে, সেগুলো হলোঃ-
০১) কেউ যদি হিউম্যান রাইটস সংক্রান্ত নির্ধারিত বিষয়ে হোম অফিস কর্তৃক সিদ্ধান্তে প্রত্যাখ্যাত হয়ে থাকেন।
০২) এসাইলাম প্রটেকশন ক্লেইম প্রত্যাখ্যাত হয়ে থাকলে
০৩) রিফিউজি স্ট্যাটাস প্রত্যাহার
০৪) হিউম্যান রাইটস স্ট্যাটাস প্রত্যাহার হয়ে থাকলে এপিলের সুযোগ রাখা হয়েছে।
উপরোক্ত এই চার ক্যাটাগরি ছাড়া অন্য সকল ধরনের আবেদন প্রত্যাখ্যান এবং হোম অফিস কর্তৃক সিদ্ধান্ত পরিবর্তন কিংবা প্রত্যাহারের জন্য কোন ধরনের এপিলের সুযোগ নতুন আইনে থাকছেনা বলে ইউকেবিএ মিডিয়া সূত্রে জানানো হয়েছে।
এমনকি, যে কোন ধরনের এন্ট্রি ক্লিয়ারেন্স এবং ফ্যামিলি বা স্পাউস ভিসার ক্ষেত্রে স্বামী বা স্ত্রীর লিভ টু রিমেইন ইন দ্য ইউকে-যা পূর্বে ইনডেফিনিট ভিসা হিসেবে সমধিক পরিচিত, সে ক্ষেত্রেও এপিল করার সকল ধরনের সুযোগ বাতিল করা হচ্ছে নতুন প্রস্তাবিত বিলটিতে।
হোম অফিস মিনিস্টার এবং ইউকেবিএ ওয়েব সূত্রে এ বিষয়ে যে ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে, তাহলো- তাদের মতে, প্রচলিত আইনে সিদ্ধান্ত গ্রহণে অহেতুক সময় এবং অর্থের অপচয় হয়ে থাকে।সেজন্য তারা মনে করছে, প্রস্তাবিত নতুন আইনে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং আর্থিক অপচয় রোধ করা যাবে।
খোজ নিয়ে জানা যায়, বর্তমানে বছরে ৭০ হাজারের মতো এপিলের শুনানি হয়ে থাকে। ইউকে বিএ এর মতে প্রস্তাবিত নতুন আইনের ফলে এপিলের এই সংখ্যা ৫৮ ভাগের কাছাকাছি কমে আসবে, যাতে হোম অফিস বছরে প্রায় ২১৯ মিলিয়ন পাউন্ডের মতো সাশ্রয়ী করতে সক্ষম হবে বলে তারা হিসেব কষে দেখেছেন।
এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, নতুন আইনে ব্যতিক্রম ক্ষেত্রে শুধু কিছু প্রশাসনিক পূর্ণর্বিবেচনা বা রিভিউ করার স্বল্পতম সময়ের এক সুযোগ রাখা হয়েছে। যেখানে আবেদন প্রত্যাখ্যানের দশ দিনের ভিতরে রিভিউ করার আবেদন করতে হবে এবং দশ দিনের ভিতরেই এর সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়া হবে। অর্থাৎ আবেদন প্রত্যাখ্যানের পরে এই দশদিনের ভিতর রিভিউ এর আবেদন করা হলে এই দশ দিন সিদ্ধান্তকালীন সময়ের ভিতরে দেশ ত্যাগ করতে হবেনা।
বিয়ের ক্ষেত্রেও বেশ কিছু যুগান্তকারী পরিবর্তন যোগ করা হয়েছে নতুন আইনে। বর্তমান আইনে বিয়ে রেজিস্ট্রি নোটিশের ক্ষেত্রে যেখানে দুই সপ্তাহ ছিলো, সেখানে ২৮ দিন করা হয়েছে। একই সাথে বিয়ের ব্যাপারে সন্দেহ তদন্তে ৭০ দিন পর্যন্ত দীর্ঘায়িত করা হয়েছে। ইমিগ্রেশনের কাছে তথ্য রয়েছে, প্রতিবছর ব্রিটেনে দশ হাজারের মতো ভুয়া বিয়ে রেজিস্ট্রি করা হয়ে থাকে। এ নিয়ে এক প্রতিবেদন গত কাল ডেইলি মেইলে ফ্রন্ট পেইজে প্রকাশিত হয়েছে। যেখানে এই বিদ্যমান আইনের ফাঁক ফোকরের সুযোগে ফেইক বিয়ে করে ইমিগ্রেশনের ভিসা সুবিধা ও বেনিফিট প্রাপ্তির সুযোগের অপব্যবহারের তথ্য নিয়ে সংবাদ বেরিয়েছে। ব্রিটেনের প্রভাবশালী রেজিষ্ট্রার মার্ক রিমার ডেইলি মেইলকে জানিয়েছেন, ব্রিটেনের ২০% বিয়ে সন্দেহমূলক।পুলিশ ১,৯০০ ওয়ার্নিং ইস্যু করেছে ইউনিয়নকে এই সন্দেহমূলক ও ভোগাস বিয়ের রেজিস্ট্রি নিয়ে।
এছাড়াও ইমিগ্রেশন এক্ট ১৯৯৯ এর ১০ ধারায়ও পরিবর্তন করে নতুন ১০(৫) উপধারা সংযোজন করা হয়েছে।নতুন ১৬৬ ধারা অন্তর্ভুক্ত করে সেক্রেটারি অব স্টেইট কে আইন প্রণয়নের ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে।
এর প্রেক্ষিতে নতুন আইনে আরো রয়েছে-
০১) এয়ারপোর্টে অফিসার যাত্রীদেরকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করার ক্ষমতা প্রদান
০২) যারা দেশ ছেড়ে যাবেন তাদের জন্য নতুন এক্সিট চেক নামের নয়া বিধান-এর ফলে আগমন ও বহির্গমনের যথাযথ তথ্য ও ডাটা কম্পিউটারে সংযুক্ত হবে
০৩) অবৈধ ইমিগ্র্যান্টদের বাড়ী ভাড়ার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি এবং ল্যান্ড লর্ডদের জরিমানার বিধান তিনহাজার পর্যন্ত থাকছে
০৪) এ অবৈধদের ক্ষেত্রে ড্রাইভিং লাইসেন্স সংক্রান্ত বিষয়েও কড়াকড়ি থাকছে
ছাত্র ও স্বল্প সময়ের জন্য যারা ব্রিটেনে থাকছেন। তাদের জন্য ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস-এনএইচএস এর সেবা পেতে ফি প্রদান করতে হবে
প্রস্তাবিত এই নতুন আইন এখন বিল আকারে হাউস অব কমন্সে উঠে গেছে। ইমিগ্রেশন মন্ত্রী মার্ক হারপার অবশ্য বেশ জোর দিয়ে বলেছেন, প্রস্তাবিত এই নতুন আইনে ব্রিটেনের ইমিগ্রেশনের দুর্বলা কাঠিয়ে অবৈধদের যাতে এপিল প্রসেস এর অজুহাতে দেশে থেকে গিয়ে পাবলিক ফান্ডের অপব্যবহার এবং অযথা সময়ের অপচয় না হয়, বরং দ্রুত সিদ্ধান্তের মাধ্যমে দেশ থেকে বের করে দেয়া যায়- সেজন্যই এই বিল আনা হয়েছে।আবেদন প্রত্যাখ্যানের পর এখন থেকে আর কেউ বছরের পর এপিলের মাধ্যমে থেকে যাবার ব্যবস্থা থাকছেনা।
স্কাই নিউজ ও বিবিসির অনুসন্ধানী এক রিপোর্টে দেখা গেছে, ইমিগ্রেশনে এমন অনেক কেইস রয়েছে যা ১৫/১৬ বছর ধরে এপিলের ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত দেয়া হচ্ছেনা, এমনও অনেক কেইস বিবিসির অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, বিগত ৭৫ বছর পর্যন্ত একটি কেইসের ব্যাপারে ইমিগ্রেশন থেকে সিদ্ধান্ত প্রদান করা হয়নি। অথচ সেই আবেদনকারী বছরের পর বছর ব্রিটেনে বসবাস করছেন, সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করছেন। স্কাই ও বিবিসির এই অনুসন্ধানী রিপোর্ট নিয়ে ইমিগ্রেশনে তোলপাড় যখন শুরু হয়, তখনি ইমিগ্রেশন নিয়ে এই নতুন করে ব্যাপক কড়াকড়ি এনে বিল উত্থাপিত হলো। বিরোধীদল লেবার অবশ্য ইমিগ্রেশনের কড়াকড়িতে তেমন একটা বিরোধিতা করছেনা, যা করছে শুধু মাত্র নামকা ওয়াস্তে।
লিবার্টি গ্রুপ এবং কতিপয় এনজিও তাদের যুক্তি দিয়ে নতুন আইনের বিরোধিতা করলেও অবৈধ ইমিগ্র্যান্ট ব্রিটেনের অর্থনীতির উপর কি রূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে- এমন তথ্য যাচাইয়ের কাজ চলছে বলে জানা গেছে।
বর্তমান কোয়ালিশন সরকার বছরে নেট ইমিগ্র্যান্ট কমিয়ে আনার যে লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করছে, নতুন আইন তারই উদ্যোগ বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করছেন।
ব্যারিস্টার তারেক চৌধুরীঃ
ইমিগ্রেশন লইয়ার, সম্পাদক-বাংলা পোষ্ট,লন্ডন
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করলে লন্ডনে কিংডম সলিসিটর ফার্মের কর্ণধার, ইমিগ্রেশন আইনে অভিজ্ঞ, জনপ্রিয় মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও সাপ্তাহিক বাংলা পোষ্টের সম্পাদক তারেক চৌধুরী বলেন, নতুন আইনে চেক এন্ড ব্যালেন্স না থাকার ফলে, স্পট রিফিউজালের ক্ষেত্রে এমন কেউ হোম অফিসের দক্ষ কোন অফিসার উপস্থিতি না থাকার ফলে এখানে কোন অবস্থাতেই যেমন ফেয়ার ডিসিশন আশা করা সুদূর পরাহত, একই সাথে প্রত্যাখ্যানের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ করে ডিসিশন রিভিউ বা এপিলের সুযোগ না থাকায় ব্যক্তির মানবিক যে ইউনিভার্সাল অধিকার, তা থেকে বঞ্চিত করা হবে।আবার এডমিনিষ্ট্রেটিভ রিভিউ এর যে সীমাবদ্ধ সুযোগ রাখা হয়েছে, তাও অপ্রতুল।একমাত্র বিকল্প যা থাকলো, তা শুধু মাত্র হাইকোর্টে রিভিউ আবেদনের মাধ্যমে চ্যালেঞ্জ করা, অথচ তা অত্যন্ত কস্টলি এবং সময় সাপেক্ষ ব্যাপার।হাইকোর্ট এবং হাইকোর্ট রিপ্রেজেন্টশনারের ফি সকলের পক্ষে বহন করাটাও বিরাট প্রশ্ন সাপেক্ষ। একই অবস্থা টায়ার-৪ এর ক্ষেত্রে হবে, যখন আইন কার্যে পরিণত হবে।পারিবারিক বা স্পাউস ভিসা রিফিউজের ক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনালে চ্যালেঞ্জ করার সুযোগ না থাকার ফলে অফিসাররা খামখেয়ালির মাধ্যমে বা পর্যাপ্ত দক্ষতার অভাবে অনাকাঙ্ক্ষিত তথা নেগেটিভ সিদ্ধান্ত দিয়ে দিবে, যা স্পাউস বা পরিবার জেনুইন সিকিং ভিসা ক্ষেত্রেও ভুক্তভোগী হবেন।
প্রয়োজনীয় লিঙ্ক-ইমিগ্রেশনের পরিবর্তন সংক্রান্ত বিল ও আপডেট জানতে ক্লিক করুন ও নির্দেশনা মতো ভিজিট করতে পারেন-
30th Sept 2013
http://www.ukba.homeoffice.gov.uk/sitecontent/newsarticles/2013/october/…
10th October new billhttp://www.ukba.homeoffice.gov.uk/sitecontent/newsarticles/2013/october/…
Salim932@googlemail.com
১৬ অক্টোবর ২০১৩ .