সকলের দৃষ্টি এখন ২৫ অক্টোবরের দিকে। কাউন্ট ডাউন শুরু হয়ে গেছে। সব জায়গায় এখন একটাই আলোচনা কী হতে যাচ্ছে ? আওয়ামীলীগ কি ২৪ তারিখ ক্ষমতা ছাড়ছে, নাকি পার্লামেন্ট দীর্ঘায়িত করে ক্ষমতায় ফিরে আসার নীল-নক্সা বাস্তবায়নের দিকে এগিয়ে যাবে, নাকি বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ১৮ দলীয় জোট রাজপথ, সড়ক পথ, নৌপথ দখলে নিয়ে সারা দেশ অচল করে দিবে ? আসলেই সর্বত্র এখন একটাই কানাঘুষা, একটাই আলোচনা। গতকাল পোশাক মালিকদের সংগঠণের সভায়ও একই সুর আলোড়িত হয়েছে, যদিও বিএনপির ডঃ মোশাররফ হোসেন বলেছেন, ২৫ তারিখে নেত্রী বিকল্প কিছু কর্মসূচী দেয়া ছাড়া গত্যন্তর দেখছেননা।
আমাদের রাজনৈতিক অচলাবস্থা আর বিশৃঙ্খলার সুযোগে ইতিমধ্যে বাটেক্সপোর এবারকার প্রদর্শনীতে বিদেশীরা আশানুরূপ অর্ডার করেনি। সকলেই ঘুরে ফিরে দেখেছে, আশা দিয়েছে অর্ডার দিবে। আমাদের পোশাক শিল্পের জন্য এটা এক অশনী শংকেত সন্দেহ নাই।
আওয়ামীলীগ একের পর এক কুশলী রাজনৈতিক খেলা খেলে চলেছে।হুমকী-ধামকী ও রাজনৈতিক হয়রানি ও ধরপাকড়ের সাথে বিরোধী নেতা-কর্মীদের উপর সরকারি নির্যাতনের মাত্রা যে আগের যেকোন সময়ের তুলনায় বেড়ে চলবে, তা ইতিমধ্যেই সরকারের তরফ থেকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। বিএনপির ২৫ তারিখের কর্মসূচী ঘিরে ইতিমধ্যেই ধরপাকড়ের অভাস পাওয়া গেছে। রিজভী আহমেদ জরুরী সংবাদ সম্মেলন করে তা জানিয়েছেন।
শেখ হাসিনা কুষ্টিয়ার তৃণমূল প্রতিনিধিদের সভায় সিগন্যাল পেয়েছেন নিশ্চিতভাবে তার সবেধন নীলমণি হানিফ-কামরুল-মেসবাহদের মতো নেতারা তৃণমূল নেতাদের সাথে সম্পর্কহীন হয়ে দলকে জনগণ থেকে একেবারে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে।আওয়ামীলীগ নেতা-মন্ত্রী, এমপিদের প্রতি দেশের জনগণ আর খোদ দলের তৃণমূল নেতাদের বিস্ফোরনম্মুখ অবস্থা ভিসুভিয়াসের লাভার ন্যায় বিস্ফোরনের অপেক্ষায় এখন ক্ষণ গণছে। শেখ হাসিনার কোন যাদুর দাওয়াই সে বিস্ফোরন টেকানো যাবেনা। সময় এখন পরিবর্তনের স্রোতের তালে ভাসছে।শেষ সময়ে এসে উন্নয়নের মহা জোয়ার আর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় দিয়েও আওয়ামীলীগের নেতা আর মন্ত্রী, ছাত্রলীগের তান্ডব ও লুটপাটের কেলেংকারি ডাকা যাবেনা।
শেখ হাসিনা জেনে শুনেই শেষ চেস্টা হিসেবেই সকল সরকারের ন্যায় পুরনো সেই দল ভাঙ্গা, বিশ্বাস-অবিশ্বাস আর নির্যাতন, মামলা, হামলা ভয়-ভীতি দেখিয়ে আন্দোলন দমানোর আর জনবিস্ফোরন রোধের ব্যর্থ চেস্টা করেই চলেছেন। তবে এটা ঠিক, শেখ হাসিনা বিগত চার বছরে বিএনপির আন্দোলন জমানোর ব্যর্থতার পাল্লার হিসেব কষে আত্মতৃপ্তিতে নতুন নতুন চমকের খেলায় মত্ত।বিএনপির সাংগঠণিক দুরাবস্থা আর জামায়াতের বিপর্যস্ত অবস্থার সুযোগে, একতরফা মুক্তিযুদ্ধের তকমার বাণিজ্য কেন্দ্রিক অবস্থানের কেন্দ্রবিন্দুতে আওয়ামীলীগ ও আওয়ামীলীগ ঘরানার সকলকে একাট্রা করে নিয়ে এসে বিএনপি ও মিত্রদের কোন ঠাসা অবস্থায় ভাবছেন, এখনকার প্রজন্ম হয়তো গত নির্বাচনের ন্যায় তাকে ও তার দলকে বিপুল ভোটে আবারো ক্ষমতায় নিয়ে আসবে। সেজন্য উম্মাদের ন্যায় উল্টো-পাল্টা বলা শুরু করে দিয়েছেন।
তিন তিনটি দেশীয় ও আন্তর্জাতিক জনমত জরিপ কিন্তু তা বলেনা। বরং বিএনপির প্রতি জন আস্থার প্রকাশ দেখে শেখ হাসিনা আবারো বেপরোয়া ও মরিয়া যেন তেন ভাবে ক্ষমতা ধরে রাখার জন্যে। প্রয়োজনে দুই বছরের জন্য জরুরী আইন জারি করে হলেও ক্ষমতায় তিনি ঠিকে থাকতে চান।বিএনপি নেত্রীকে এবং তার দুই ছেলে তিনি মামলা-হামলা অজুহাতে নিজের বলয়ের বিচারকদের দিয়ে বেগম জিয়া ও তারেক জিয়ার বিরুদ্ধে আদালতের রায় নিয়ে নির্বাচনে আটকে দিতে চান। বেগম জিয়ার অসুস্থ্যতার প্রেক্ষিতে সিঙ্গাপুর গমন এবং বিরোধী নেত্রী হিসেবে বিভিন্ন দেশের কর্মকর্তাদের সাক্ষাতের ও আলাপ-আলোচনার প্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা বেগম জিয়াকে আগামী নির্বাচনে হুমকী হিসেবে দেখছেন।সম্ভাব্য আন্দোলন দমন ও নির্বাচনী নীল নক্সা বাস্তবায়নের জন্য যে কোন অজুহাতে তিনি এখন বেগম জিয়াকে গ্রেপ্তার করতে উঠে পড়ে লেগে আছেন। দফায় দফায় নীতি নির্ধারকদের সাথে শলা পরামর্শ করে চলেছেন কি করে বেগম খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার ও নির্বাচন থেকে দূরে রাখা যায়।
কেননা শেখ হাসিনা জানেন, ৮৬ সালে এরশাদের অধীনে তিনি ও তার দল ১৫ দলীয় ঐক্যজোটের সাথে কি করে নির্বাচনে গিয়েও রাজনীতিতে নবাগতা হয়েও বিএনপির ক্রান্তিকালিন সময়ে ৭ দলীয় ঐক্যজোটের নেত্রী হয়ে সেদিন সমগ্র আন্দোলন-সংগ্রামের নিয়ামক শক্তিতে পরিণত হয়ে, এবং তারপরে বিগত তত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে শত নিপীড়ন-নির্যাতনে তছ নছ হওয়া ভেঙ্গে পড়া বিএনপিকে খাদের কিনার থেকে টেনে তুলে এককভাবে ঝড়ের ন্যায় সারা বাংলাদেশ চষে বেড়িয়ে অভূত পূর্ব নির্বাচনী রেজাল্ট এনে বিরোধী নেত্রীর আসনে বসে আছেন- ছেলেদের দূরে রেখে বেগম জিয়ার এই একক ক্যারিশম্যাটিক রাজনৈতিক ক্যারিশমা,- এখানেই শেখ হাসিনার সব চাইতে বড় ভয়। তাছাড়া দেশের সাধারণ জনগণের বৃহত্তর অংশের কাছে শত অপপ্রচার সত্বেও বেগম জিয়ার গ্রহণযোগ্যতার একটা অসাধারণ ইমেজ এখনো বিদ্যমান-গোয়েন্দাদের মাধ্যমে এই তথ্য পেয়েই শেখ হাসিনা আরো বেপরোয়া ও উদ্যত।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘ প্রতিনিধিদের কাছে খালেদা জিয়া অধিক গ্রহণযোগ্যতা পাওয়ায় শেখ হাসিনার সরকার এখন মরিয়া খালেদা জিয়াকে যেকোন ভাবে হউক রাজনৈতিকভাবে হেনস্থা ও বিপর্যস্ত করার জন্য। ধারণা করা হচ্ছে ২৫ তারিখের আগে-ভাগে অথবা আন্দোলনের সময় জনশৃংখলা বিঘ্নিত ও আদালতের মামলার রায় তড়িঘড়ি করে এগিয়ে নিয়ে এসে, আর জামায়াতের সহযোগিতার দোহাই একই সাথে সিঙ্গাপুর মিশনের কথিত দেশদ্রোহিতার অভিযোগ এনে গ্রেপ্তারের পায়তারা করছে সরকার।
দেশ ও জনগণের মুক্তির স্বার্থে খালেদা জিয়াকে এখন কঠোর আন্দোলনের দিকে ধাবিত হওয়া ছাড়া বিকল্প আর নেই- একথাটি বলেছেন বিএনপির প্রবাসী এক রাজনৈতিক গবেষক, যিনি দলের হাই কমান্ডের কাছে খুব একটা গুরুত্ব পাননা- যে কারণে তিনি নাম প্রকাশ করতেও চাননা, শহীদ জিয়াউর রহমানের উপর সারগর্ভ এক আন্তর্জাতিক মানের থিসিস নিয়ে তিনি খুব ব্যস্ত ।অথচ দলের জন্য তিনি নিবেদিত প্রাণ। লন্ডনের টেকনোক্রেট, ব্রিটিশ সরকারের কর্মকর্তা এই গবেষক আরো বলেছেন, জামায়াত ও সমমনাদের আর পেছনে ও গাছাড়া ভাব না করে বরং জোটের নিয়ামক শক্তি হিসেবে আস্থায় নিয়ে শরিকদের দুঃখে-কষ্টে সমানভাবে ব্যথিত ও সহমর্মিতা নিয়ে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের দিকে দৃঢ় পদক্ষেপে এগিয়ে যেতে হবে। কারণ সরকার খালেদা জিয়াকে একেবারে তলানীতে এসে ঠেকে দিয়েছে। তিনি আরো যোগ করেছেন, এখন জামায়াতকে ত্যাগ করলেও বিএনপির ভাগ্যে সেই তকমা লাগানো থেকে আওয়ামীলীগ ও তাদের মিত্ররা পিছু হটবেনা। আবার জামায়াতকে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বের প্রতি পূর্ণ আস্থায় নিয়ে একাট্রা হতে হবে, যেকোন অবস্থাতেই সরকারের কোন টুপের মুখে আন্দোলন থেকে পিছু হটা যাবেনা। ঐ বিশেষজ্ঞের মতে, আবার হেফজতের নেতাদের আস্থায় ও একাট্রা করে নিয়ে খালেদা জিয়াকে নিশ্চয়তা দিতে হবে, কেবল ভোটের রাজনীতিতে নয়, প্রকৃত পক্ষে আলেম-উলামাদের নিশ্চিত গ্যারান্টি হিসেবে সকল অবস্থাতেই বিএনপি ও তার নেতৃত্ব একক ও অনবদ্য। এর বাইরে দেশের অন্যান্য সকল শ্রেণী-পেশা ও ছোট ছোট দল ও নেতাদের পূর্ণ আস্থায় নিয়ে খালেদা জিয়াকে আওয়ামীলীগের লুটপাট ও অন্যায় জুলুমের বিরুদ্ধে বৃহত্তর যুগপথ প্লাট ফর্ম এখনি গড়ে তুলতে হবে। তিনি আরো যোগ করেছেন, একই সাথে বিএনপি ও তাদের সমমনা সকলকেই এখন থেকে পাড়ায় মহল্লায় জিয়া ব্রিগেডের ন্যায় সংগ্রাম কমিটি গঠণ করে একতরফা নির্বাচনের বিরুদ্ধে যেমন সোচ্চার হতে হবে। একই সাথে বেগম খালেদা জিয়াকে যাতে কোন অবস্থাতেই সরকার গ্রেপ্তার করে জেলে না নিতে পারে, ভারতের আন্না হাজারীর ন্যায় অহিংস আন্দোলনের দিকে সংগ্রাম কমিটির নেতৃত্বে বৃহত্তর জাতীয় শক্তির উন্মেষ ঘটানোর প্রক্রিয়া এখনি করতে হবে। বাংলাদেশের মানুষ এখন পরিবর্তন চাচ্ছে। নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে, জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য বৃহত্তর রাজনৈতিক শক্তির একাট্রা করে বৃহৎ আন্দোলন ব্যতিরেকে এই সরকারকে দমানো যাবেনা।বেগম খালেদা জিয়া কি ভেবে দেখবেন ? তার মতে, কেননা আগামী নির্বাচনে বিএনপি জিতবে, সরকার গঠণ করবে-এমন ধারণায় বসে চুল পরিপাঠি করে আচড়িয়ে টেলিভিশনের পর্দায় হুমকী ধামকী দিয়ে আন্দোলন জমানো যাবেনা, জনগণের সাথে একাত্ম হওয়া যাবেনা। খেলাদা জিয়াকে এখন তৃণমূলের ও পরীক্ষিত নেতাদের কাছে টেনে নিতে হবে, মাঠের আন্দোলনে দলকে ঝাপিয়ে পড়তে হবে-এমন নেতাদের কাছে টেনে নিন। কারণ সময়, স্রোত এবং সুযোগ যারা হারায় ইতিহাসে মুছে যায় তাদের নাম। বঙ্গবন্ধু, জিয়াউর রহমান, মাওলানা ভাসানী মানুষের পালস, স্রোত ও চাহিদা সঠিকভাবে উপলব্ধি করতে পারতেন বলে তাদের নেতৃত্বে জাতি জেগে উঠেছিলো, আন্দোলন সংগ্রাম কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছতে পেরেছিলো। তারমানে এই নয় যে জ্বালাও-পোড়াও আর সম্পদ ধ্বংস করে, জনগনকে জিম্মি করে দেশ অচল করে দিয়ে দাবী আদায় করতে হবে-এমনটা গনোতন্ত্রের জন্য হুমকী স্বরূপ, তিনি আরো যোগ করেছেন।
শেখ হাসিনা জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবেন- বঙ্গবন্ধুর কন্যার কাছে মানুষ তাই আশা করে। একতরফা, একরোখা, একচোখা নীতি, স্বৈরাচারী মনোভাব থেকে সরে আসতে হবে, তা নাহলে পতন ঠেকানো যাবেনা।যুগে যুগে তাই হয়েছে। পাহাড় সমান জনপ্রিয় নেতাকেও স্বৈরাচারী মনোভাব আর জেদী ও অহংকারের কাছে জনতার আন্দোলনের কাছে পরাজয় মেনে নিতে হয়েছে। ইতিহাসের এই দায় ও শিক্ষা থেকে সকল পক্ষেরই শিক্ষা নেয়া উচিৎ। কারণ দেশ কারো একার নয়, কারো ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়। এদেশ- এদেশের ষোল-সতের কোটি জনগণের। কতিপয় লুটেরা আর দাম্ভিক নেতাদের দায়-ভার নিজের কাঁধে বহন করে দল ও জনগণকে কেন কষ্টের মধ্যে ফেলবেন- এ বোধ যত তাড়াতাড়ি হয়, ততোই মঙ্গল।
জয় হউক মেহনতি জনতার, জয় হউক আপামর জনতার।
Salim932@googlemail.com
১৩ অক্টোবর ২০১৩ .