বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টিকারী ও “ এ ব্রিফ হিস্টরি অব টাইম ”-নামক বিজ্ঞানমূলক বইয়ের বেস্ট সেলার বইয়ের রচয়িতা বিখ্যাত সাইন্টিস্ট প্রফেসর হকিংস বিবিসির সাথে অতি বিশেষ এক আধুনিক, সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম সাংকেতিক কথা বলার বিশেষায়িত পদ্ধতি ও ইউথানেশিয়া পরিবেষ্টিত মাধ্যমে ইন্টারভিউ প্রদানকালে বলেছেন, আমরা যেখানে এনিমালস সমূহদের কষ্ট দিতে চাইনা, তাদের সুখ-দুঃখের সাথী হই, তাহলে মানুষকে কেন মৃত্যু বেছে নেয়ার মতো কাজ করবো ? এভাবে মানুষকে বিশেষ ইনজেকশন পুশ করে ইউরোপ ও পশ্চিমা বিশ্বের ধারনার সাথে প্রফেসর হকিংস দ্বিমত পোষণ করেছেন।
বেশ কিছুদিন হলো ব্রিটেনের আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে, বার্ধক্য ও মারাত্মক ঝুঁকিতে জীবন অতিবাহিত কারীদের বিশেষ ইনজেকশন পুশ করে স্বেচ্ছায় মৃত্যুবরণ করা নিয়ে জোরালো বক্তব্য ও বিতর্ক চলে আসছে।সাধারণত: দীর্ঘ অসুস্থ ও একেবারে টার্মিনালি ইল এমন লোকদের জীবনের উপর যারা একেবারেই ভীত-শ্রদ্ধ ও যাদের বেচে থাকার মতো আশা একেবারেই ফুরিয়ে গেছে বলে ডাক্তারি পরীক্ষা-নিরীক্ষায় দেখা গেছে, কোনমতে শুধু শ্বাস-প্রশ্বাস চালু রয়েছে, একেবারে চলাফেরা করতে অপারগ, মেশিন নির্ভর- এমন রোগী ও ব্যক্তিদের নিজেদের স্বেচ্ছায় যাতে মৃত্যুবরণ করে নেয়ার অধিকারের দাবিতে ব্রিটেনের কেয়ার সার্ভিস,টার্মিনালি ইল রোগী ও আদালতের মধ্যে এক ধরনের স্নায়ুযুদ্ধ চলছে। অনেক মানবাধিকার ও সোশ্যাল সার্ভিস অফিসার এবং আইনজীবী ও কিউসি এতে ভিন্ন ভিন্ন মত প্রদান করেছেন। ফলে এ নিয়ে সৃষ্ট বিতর্ক রয়েই গেছে। যদিও এ নিয়ে আদালতের এক ধরনের রুলও রয়েছে, তথাপি এর কোন নিষ্পত্তি আইনত: হয়েও হচ্ছেনা।
এমনি সময়, বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী, ব্রিটেনের সেলেব্রিটি, যিনি জীবনের গত ৫০টি বছর নিউরো মোটরের মাধ্যমে বেচে আছেন, চলা ফেরা, খাওয়া-দাওয়া, কথা-বার্তা এককথায় যার পুরো জিন্দেগী এই বিশেষ নিউরো মোটরের সাহায্যে নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে, সেই প্রফেসর হকিংস অত্যন্ত যুক্তিপূর্ণভাবে এভাবে মানুষের স্বেচ্ছা মৃত্যুবরণের বিরোধিতা করেছেন।
তবে প্রফেসর হকিংস বলেন, যারা একেবারেই অসুস্থ, সুস্থ হওয়ার মতো কোন ধরনের সুযোগ আর বর্তমান নেই, কেবলমাত্র তারা নিজদের তরফ থেকে যদি স্বেচ্ছায় মৃত্যুবরণ করতে চান, পরিপূর্ণ নিরাপত্তার ও অধিকারের সেইফগার্ড সহ কেবলমাত্র তাদের বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে। তবে এক্ষেত্রে অত্যন্ত যত্ন ও সূক্ষ্মবিচারের সাথে দেখতে হবে, তাকে কোন ধরনের চাপ কিংবা কোন ধরনের ইনফ্লুয়েন্স করা হচ্ছে কিনা এধরনের স্বেচ্ছা মৃত্যু বেছে নেয়ার জন্য। এক্ষেত্রে ব্যক্তির সার্বজনীন অধিকার ও নিরাপত্তার আইনের পরিপূর্ণ সেইফগার্ড থাকা প্রয়োজন, যাতে কোন অবস্থাতেই ব্যক্তির মানবিক ও সাংবিধানিক অধিকার ক্ষুণ্ণ করা না হয়।
প্রফেসর হকিংস যখন ২১ বছর বয়সে তার ডায়াগনোসিস করা হয়, তখন ডাক্তার তাকে বেশী কী আর দু-তিন বছরের জীবনে বেচে থাকার সংকেত দিয়েছিলেন, যেহেতু তখনি তার এই অবস্থা ও রোগের ব্যাপারে ডাক্তার নিশ্চিত ছিলেন তিনি আর ভালো হবেননা।
১৯৮৫ সালের নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে প্রফেসর হকিংস পার্মানেন্টলি লাইফ সাপোর্ট মেশিনে তার জীবন ধারন যখন ট্রান্সফার করা হয়,তখন তার প্রথম স্ত্রী ছিলেন জেইন হকিংস, যিনি ওই সময় হকিংস এর জীবনাবসানের পক্ষে অভিমত দিয়েছিলেন। ( ছবিতে প্রথম স্ত্রী জেইন হকিংস এর সাথে অসুস্থ্য হওয়ার আগে)-
কিন্তু ডাক্তারদের অপরিসীম চেষ্টা আর অধ্যবসায়ের ফলে প্রফেসর হকিংস মৃত্যুর সাথে যুদ্ধ করে জীবনের স্পন্দনে ফিরে এসে বিশ্বখ্যাত বই এ ব্রীফ হিস্টরি অব টাইম বই লিখে বিশ্বব্যাপী সাড়া ফেলে দেন ও বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে নতুন এক মাত্রা যুক্ত করেন। প্রফেসর হকিংস এর এই বই বিশ্বব্যাপী দশ মিলিয়নের মতো কপি বিক্রি হয়েছে।
প্রফেসর হকিংস এর রেয়ার এই রোগ এমএনডি ও এএলএস-এমিয়োট্রোফিক লেটারাল সিলোরোসিস অর লাউ গ্যারেক্স নামক ডিজিজ, যা সাধারণত: পাঁচ পার্সেন্টেরও কম সংখ্যক রোগীর ক্ষেত্রে সনাক্ত করে ডায়াগনোসিস করার পরে এক দশক বেচে থাকার বৈজ্ঞানিক প্রমাণ রয়েছে।
অবশ্য ২০০৬ সালে ইউথানসিয়ার মাধ্যমে প্রফেসর হকিংস বলেছিলেন, ভুক্তভোগীর অবশ্যই অধিকার রয়েছে তার জীবনাবসানের বা বেচে নেয়ার, তারপরেও তিনি যোগ করেছিলেন, যদি তা করা হয়, তাহবে এক বিরাট মিস্টেক ।
আর এখন প্রফেসর হকিংস এ ব্যাপারে নিজের মতামত দিয়ে বলছেন, হোয়াইল দেয়ার ইজ লাইফ, দেয়ার ইজ হোপ।
বর্তমানে প্রফেসর হকিংস এর বয়স ৭১ এর ঘর পেরিয়ে গেছে। তাকে দেখাশোনা করার জন্য ব্রিটেন সরকারকে ও ব্রিটেনের সাইন্টিফিক বডিকে প্রতিমুহূর্তের খরচ মিলিয়নের অংকে কষতে হচ্ছে।
বর্তমানে দ্বিতীয় স্ত্রী সহ প্রফেসর হকিংস-
(দ্য মেইল ও বিবিসি অবলম্বনে )
১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৩ .