বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, ঢাকা থেকে আগত অতিথি, সাংবাদিক, শুভানুধ্যায়ী ও দলীয় মনোনয়ন লাভের আশায় নানা ব্যক্তিত্বের লন্ডনে আনাগোনাও বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশের দুই বড় দলের দুই দিকপাল, তারেক রহমান ও শেখ রেহানা দুজনই লন্ডনে অবস্থান করছেন। সেজন্য দুদলের সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রার্থীদের ভিড় এখন এই দুই নেতার বাড়ীতে লেগেই আছে।
বিশেষ করে তারেক রহমানের বাড়িতে বাংলাদেশের বিভিন্ন পেশা ও নানান শ্রেণীর রাজনৈতিক নেতাদের আনাগোনা আগের যেকোন সময়ের চাইতে দ্বিগুণ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। হরহামেশা কোন না কোন ব্যক্তিত্ব, ব্যবসায়ী, রাজনীতিক, পেশাজীবী তারেক রহমানের আশীর্বাদের জন্য তার বাড়িতে ধর্না দিয়ে চলেছেন।বাংলাদেশের রাজনৈতিক আবহাওয়ার প্রেক্ষিতে ধারনা করা হচ্ছে তারেক রহমান আগামীর বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান নিয়ামক শক্তিতে আবির্ভূত হতে যাচ্ছেন। অন্তত দেশ থেকে আসা বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার লোকদের তারেক রহমানের বাড়িতে ধর্নায় তাই মনে হচ্ছে।বাজারে জোর গুজব তারেক রহমানের আশীর্বাদ ব্যতীত বিএনপি ও ১৮ দলের পক্ষে আগামীর নির্বাচনে মনোনয়ন প্রায় অসম্ভব। সেকারণেই ভিড় আরো বেশী বৃদ্ধি পেয়েছে। এদিকে শেখ রেহানার বাড়িতেও সমানতালে লোকসমাগম ও তদ্বির লক্ষ্যণীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
এখানে বিশেষভাবে লক্ষণীয় যে, আগামী মাসে বাংলাদেশের বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ব্রিটিশ সরকারের আমন্ত্রণে ব্রিটেন সফরে আসছেন। ব্রিটিশ সরকারের ফরেন অফিসের মুখপাত্র এ সংবাদ নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে ব্রিটেন সফররত বাংলাদেশের বিশিষ্ট লেখক, যায়যায়দিনের খ্যাতিমান সাংবাদিক শফিক রেহমান লন্ডন সফরে এসেছেন। গত বুধবার পূর্ব লন্ডনের এক সেমিনার হলে বাংলাদেশ ওয়াচ ও এক্সপার্টস নামক এক সংগঠনের সাথে মতবিনিময় কালে শফিক রেহমান বর্তমান মহাজোট সরকারের তীব্র সমালোচনা করে গণ বিরোধী কর্মকাণ্ড হিসেবে অভিহিত করেছেন। আদালতে যা হচ্ছে, তা দলীয় ক্যাডার ভিত্তিক আদালত হিসেবে আখ্যা দিয়ে শফিক রেহমান বলেন, এতে জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হচ্ছেনা।
বাংলাদেশ ওয়াচের সভাপতি ব্যারিস্টার তমিজ উদ্দিনের পরিচালনায় এ সভায় অন্যান্যের মধ্যে ইয়াজউদ্দিন সরকারের তথ্য উপদেষ্টা মুখলেসুর রহমান চৌধুরী, সাংবাদিক, গবেষক ফারুক চৌধুরী, সাংবাদিক, লেখক নজরুল ইসলাম বাসন, বিএনপি নেতা শরিফুজ্জামান তপন সহ আরো অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
ধারনা করা হচ্ছে, বিএনপির থিংক ট্যাঙ্ক প্রখ্যাত সাংবাদিক শফিক রেহমান বেগম জিয়ার সফরের অগ্রবর্তী টিমের সদস্য হিসেবে এবং আগামী নির্বাচনের কৌশল ও দলীয় ইশতেহারের বিষয়ে চূড়ান্ত করনের জন্য তারেক রহমানের সাক্ষাতের জন্যই ব্রিটেন আগমন করেছেন।
৫ মে শাপলা চত্বরের নৃশংস তান্ডব নিজের চোখে দেখেছি- শফিক রেহমান
এদিকে, আরেক অনুষ্ঠানে পরদিন লন্ডনে সফররত বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা, যায়যায়দিনের সাবেক সম্পাদক শফিক রেহমান বলেছেন, বিগত ৫ মে ঢাকার শাপলা চত্বরে সরকারের বিভিন্ন বাহিনী যে নৃশংস তাণ্ডব ঘটিয়েছে, তা আমি নিজের চোখে দেখেছি।শফিক রেহমান আরো বলেছেন, সেদিন রাতের বেলা সিএনজি রিক্সা যোগে তিনি ঘুরে ঘুরে তিনি সরকারি বাহিনীর নৃশংসতার দৃশ্য দেখেছেন। পুলিশের ও বিভিন্ন সোর্সের কাছ থেকে প্রাপ্ত সেই সব ভিডিও চিত্র তাদের কাছে আছে, যা সময়মতো প্রকাশ করা হবে।সরকারের দমন-পীড়ন, নিপীড়নের ভয়ে, বিপদের কথা চিন্তা করে সেই সব ভিডিও ক্লিপ এখন কেউ প্রকাশ করছেনা। তবে সময় মতোই সেই সব ক্লিপ প্রকাশ করা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন। গত শুক্রবার শফিক রেহমান পূর্ব লন্ডনের মন্টিফিউরি সেন্টারে ইউনিভার্সিটি অব ল বাংলাদেশ সোসাইটির উদ্যোগে রাজনৈতিক সংকট, জাতির প্রত্যাশা ও তারেক রহমান শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রধান বক্তার বক্তৃতায় উপরোক্ত কথাগুলো বলেছেন।
সংগঠনের সভাপতি আখতার মাহমুদের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিবিসি বাংলা বিভাগের সাবেক প্রধান, কলামিস্ট, সাংবাদিক সিরাজুর রহমান।
অনুষ্ঠানে শফিক রেহমান আরো বলেন, বাংলাদেশে এখন যা চলছে, তা কিছুতেই আইনের শাসন বলে কিছুই নেই, বরং এটা এক দানবীয় শাসন। তিনি শেখ হাসিনাকে জনগণের দাবী তত্বাবধায়ক সরকারের দাবী মেনে নিয়ে যেখানে খুশী সেখানে চলে যাওয়ার কথা বলেন। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা চাইলে বেলারুশও চলে যেতে পারেন।
শফিক রেহমান ৫ তারিখ শাপলা চত্বরের রাতে নিজের বাসায় আটকা পড়া, জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু শ্লোগানে তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ার ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, হেফাজতের লোকদের মতো তিনি নিজেও সেদিন খুব বিপদে ছিলেন।
অনুষ্ঠানে সিরাজুর রহমান তারেক রহমানের তৃণমূল রাজনীতির ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, তারেক রহমান কাছে থেকে শহীদ জিয়া ও বেগম খালেদা জিয়াকে দেখেছেন। তাই প্রচলিত উপরি কাঠামোর রাজনীতির বিপরীতে তিনি জনগণের তৃণমূল রাজনীতি শুরু করে দিয়েছেন, যা জনগণের ব্যাপক সাড়া মিলেছে। সিরাজুর রহমান জয় প্রসঙ্গে বলেন, তিনি শৈশবে বাবা-মায়ের সঙ্গে জার্মানিতে, পরে নয়াদিল্লী হয়ে সর্বশেষ আমেরিকাতে একজন আমেরিকান মহিলাকে বিয়ে করে সেখানে বসবাস করছেন। তিনি বাংলাদেশের রাজনীতি ও তৃণমূল রাজনীতি সম্পর্কে কোন ধারণা রাখেননা।
অনুষ্ঠানে অন্যান্য বক্তাদের মতো এই দুই অতিথিও মাহমুদুর রহমান ও আদিলুরের মুক্তি দাবী করেন।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি শায়েস্তা চৌধুরী কুদ্দুস, সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম এ মালিক, বিএনপির সাবেক আন্তর্জাতিক সম্পাদক মহিদুর রহমান, বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার এম এ সালাম, সিরাজুর রহমানের স্ত্রী সোফিয়া রহমান, ইমিগ্র্যাশন এডভাইজার কুমকুম আক্তার, সাবেক ডাকসু সিনেট সদস্য নসরুল্লাহ খান, এ এফ এম শামসুদ্দোহা, কামাল আহমেদ সহ আরো অনেকে।19/08/2013 – 11:10pm