Home » কলাম » মাইলামের ডেমোক্রেটিক ইন্টেরিম গভর্ণম্যান্ট, বিপরীতে মরিয়ার্টি`র ইউনুসের নেতৃত্বে লংটার্ম নিউট্রাল গভর্ণম্যান্ট

মাইলামের ডেমোক্রেটিক ইন্টেরিম গভর্ণম্যান্ট, বিপরীতে মরিয়ার্টি`র ইউনুসের নেতৃত্বে লংটার্ম নিউট্রাল গভর্ণম্যান্ট

ঈদ যেতে না যেতেই আগে থেকে প্রস্তুত হওয়া বাংলাদেশের আগামী সংসদ নির্বাচন ও এর সরকারের ধরন নিয়ে নানা হিসেব-নিকেশের সাথে সাথে প্রভাবশালী দুই দেশের সাবেক কূটনীতিকদের দেয়া ফর্মুলা মতো রাজনীতির অন্ধর মহলের ও কূটনৈতিক দূতিয়ালির চাল এর খেলা বেশ জোরে-শোরেই শুরু হয়ে গেছে।

দেশে ও বিদেশে বিশেষ করে লন্ডন, ভারত, মার্কিন মুল্লুকে এই দৌড়-ঝাপ এবং সচিবালয় ও গণভবনে এখন দিন-রাত গোপন শলা-পরামর্শের খবর দেশের গোপনীয় বাতাস ছাড়িয়ে লন্ডনের গ্লাসগো আর লন্ডন স্কুল অব ইকোনোমিকস ফ্যাকাল্টি আর ওয়াশিংটনস্থ র-আধ্যক্ষরের বিদেশী হোটেল লবি বেশ সরগরম।বাইরের এই দৌড়ঝাঁপের সরকারের দেশের ভিতরের শক্তিশালী ও মজবুত এক অংশ, বিরোধী রাজনৈতিক শিবিরের সবচাইতে চৌকশ অংশ আর ছোট ছোট বেশ কয়েকটি দলের ইতিমধ্যে এক ধরনের বুঝা-পড়া হয়েই আছে।সেনাবাহিনীর সবচাইতে প্রভাবশালী গ্রুপ আর সেনাবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা আর নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের একটি অংশ এই প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত।বাংলাদেশ সরকারের নীতি-নির্ধারনী অংশ ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও সাবেক ব্রিটিশ প্রভাবশালী কূটনীতিক উইলিয়াম বি মাইলামের দ্যুতিয়ালিকৃত ফর্মুলা মোতাবেক ডেমোক্রেটিক ইন্টেরিম গভর্ণম্যান্টের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয়ে অনেকটাই সম্মত, যার আভাস ঈদের আগে আওয়ামীলীগের সেক্রেটারি সৈয়দ আশরাফ কিশোরগঞ্জের কর্মীসভায় প্রকাশ্যে দিয়েছিলেন। রোজা আর ধর্মীয় ভাব-গম্ভীর পরিবেশের আড়ালে সৈয়দ আশরাফের ঐ বক্তব্য ঢাকা পড়ে গেলেও হাসিনার সরকার সেই ফর্মুলাকে শেষ ভরসাস্থল বা ট্র্যাম্প-কার্ড হিসেবে সকল হিসেব-নিকেশ করছেন। সেকারণেই আশরাফও ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন, ৭ দিনেই সংকটের সমাধান সম্ভব। মাইলাম উপস্থাপিত ফর্মুলা জার্মানি, ফ্রান্স, ইটালি, কানাডা সহ মধ্যপ্রাচ্যের চার্জ দ্য এফেয়ার্সের সমর্থন বেশ জোরালো ভাবে পাচ্ছে। এই প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত কূটনৈতিক সূত্র আভাস দিয়েছে, আওয়ামীলীগের ৪ জন, বিএনপির ৪ জন, জাতীয় পার্টির ৩ জন, জামায়াতের ২ জন, আর সুশীল সমাজের ৫ জন, সেনাবাহিনীর ৪ জন নিয়ে ডেমোক্রেটিক ইন্টেরিম গভর্নম্যান্টের অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা, যেখানে বর্তমান হাসিনার সরকার এই ইন্টেরিম গভর্ণম্যান্টের কাছে নির্বাচনের প্রচলিত নির্ধারিত নিয়মের আগে পদত্যাগ ও ক্ষমতা হস্তান্তর করবে।সেজন্য সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। বর্তমান সরকার ও বিরোধীদলেরও এতে অনেকটাই সায় রয়েছে। লন্ডন স্কুল অব ইকোনোমিকস এবং গ্লাসগো ইউনিভার্সিটির এক অধ্যাপকের দূতিয়ালিতে এই ফর্মুলা এখন অনেকটা সমঝোতার কাছাকাছি হিসেবে নীতি নির্ধারকরা দেখছেন। শেখ হাসিনার আসন্ন লন্ডন সফরের সময় এই প্রক্রিয়া আরো জোরে শোরে বিস্তর আলোচনার গতি পেতে পারে বলে ধারনা করা হচ্ছে। আর এই ফর্মুলা বাস্তবায়িত হলে আওয়ামীলীগ, বিএনপি, জামায়াত, জাতীয় পার্টি সকল দলের এবং বিশেষত তারেক রহমান ও সজীব ওয়াজেদ জয়ের রাজনীতিতে আগমনের পথও উন্মুক্ত হবে বলে রাজনীতি বিশেষজ্ঞদের ধারনা।আওয়ামীলীগের সরকারের সেইফ এক্সিট রুট নির্বিঘ্ন ভাবে ত্বরান্বিত হবে বলে তারা মনে করছেন। কানাডা, নেদারল্যান্ডস, অস্ট্রেলীয় দূতাবাসের কর্মকর্তারাও উভয় জোটের নীতি নির্ধারকদের কাছে এই প্রক্রিয়ার আভাসে সমর্থনের কথা জানিয়েছেন বলে একই সূত্র আভাস দিয়েছেন। একই কূটনৈতিক সূত্র লন্ডনে অবস্থানরত তারেক রহমান, ওয়াশিংটনে সজীব ওয়াজেদের ঘনিষ্ঠদের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন। হাসিনার সরকারের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে এখন এই প্রক্রিয়া কাজ করে চলেছেন বলে দাবী করেছেন। তারা ইতিমধ্যে বিরোধীদলের নেত্রীকেও এই বিষয়ে আশ্বস্ত করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। যার ফলে খালেদা জিয়া তিন চার দিন আগে বলেছেন, দাবী মেনে নিলে আন্দোলন করা হবেনা।

এই প্রক্রিয়ার বিপরীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রভাবশালী কূটনীতিক এফ মরিয়ার্টির লংটার্ম নিউট্রাল ইন্টেরিম গভর্ণম্যান্টের ফর্মুলায় হাসিনার সরকার নড়ে চড়ে বসেন। ফলে হাসিনা প্রকাশ্যে বলে বসেন অসাংবিধানিক সরকার ক্ষমতায় এলে দশ বছরেও ইলেকশন দিবেনা। তারই সমর্থনে ওবায়দুল কাদের ঈদের দিন বলতে বাধ্য হন উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে একটি সরকারের পর পর দুটার্মে নির্বাচিত হওয়া দরকার। মরিয়ার্টির এ প্রক্রিয়া নিয়ে ভারত এবং ড্যান মজীনা ও ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত যখন গওহর রিজভী ও আব্দুর রাজ্জাক সহ হাসিনা, খালেদার টেবিলে দৌড়-ঝাপ করেন, তখন সরকার ও বিরোধীদল অনেকটাই ভিতরে ভিতরে নড়ে চড়ে বসে। হাসিনার সরকার মূলত উভয় প্রক্রিয়াকে শেষ ভরসা স্থল হিসেবে নিজেদের এক্সিট রুট হিসেবে দেখছে। মরিয়ার্টির ফর্মুলা মতে তারেক রহমান কিংবা জয়ের সহসা রাজনীতির নতুন অভিষেকের পথ আপাতত রুদ্ধ হয়ে যাবে। বিএনপি তাই এখনো এই প্রক্রিয়াকে রিজেক্ট কিংবা গ্রহণ কোন কিছুই জানায়নি। আরেকটু সময় নিয়ে মাইলামের প্রক্রিয়াকে সামনে এগিয়ে নিয়ে আসার চেষ্টার সাথে জড়িত থাকতে চাচ্ছে। লংটার্মের ইন্টেরিম গভর্ণম্যান্টের এই প্রক্রিয়ায় ইউনুস কিংবা আবেদের নেতৃত্বে ( তবে ইউনূসের পাল্লা ভারি) সেনাবাহিনীর ৫ সদস্য সহ আওয়ামীলীগ-বিএনপির ২ জন করে, জাতীয় পার্টির ১ জন, জামায়াত থেকে ১ জন, অন্যান্য দলের ৩ জন, সুশীল সমাজের ৫ জন নিয়ে এই সরকার গঠিত হবে। এই সরকারের হাতে বর্তমান সরকার ক্ষমতা হস্তান্তর করে বিদায় নিবে।ফলে এই সরকারের কাউকে এরেস্ট কিংবা বিচারের মুখোমুখি করা হবেনা। ভারতের জন্য ট্রানজিট অব্যাহত রাখা, চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর, দ্বিতীয় কন্টেইনার ও গভীর সমুদ্র উপকূলে মার্কিনীদের উপস্থিতি, সেন্টমার্টিনের থ্রি-ডি প্রজেক্ট সুবাধে জিএসপি সুবিধা ফিরিয়ে দেয়া, টিফকা দ্রুততম সময়ে বাস্তবায়ন সহ ইত্যাদি সুবিধার বিনিময়ে ইউনুস-আবেদ-ব্যবসায়ীদের কেন্দ্রিক এই লংটার্ম ইন্টেরিম গভর্ণম্যান্ট ক্ষমতায় আসার পথে।আমেরিকায় তারেক রহমানের ভিসা জটিলতা এই প্রক্রিয়ার প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবেই সূত্র আভাস দিয়েছেন।

মরিয়ার্টি কিছুদিন আগেও বাংলাদেশ সফর করে গেছেন। ভারতীয় সাবেক কূটনীতিক শ আধ্যক্ষরের মরিয়ার্টির সফরের একই সময়ে ঢাকায় সরকার ও বিরোধীদলের রাজনৈতিকদলের নেতাদের সাথে দেখা করে গেছেন।ইতিমধ্যে মার্কিন মুল্লুকে গ্রামীণের ডঃ মোহাম্মদ ইউনুস সরকারী নীতি-নির্ধারকদের সাথে রুদ্ধদ্বার বৈঠকও করেছেন। আমেরিকা-ভারত সমর্থিত এই প্রক্রিয়ার সাথে ইইউ কিংবা মাইলামের ফর্মুলা কোন সাংঘর্ষিক হবেনা বোধগম্য কারণে। ছোট ছোট রাজনৈতিক দল, ডঃ কামাল, বি চৌধুরী, মাহমুদুর রহমান মান্না, আ স ম আবদুর রব সহ সকলেই অনেক আগে থেকে পরিবর্তন চাচ্ছেন। ভারতীয় ও মার্কিনীরা তা জেনে শুনেই এই প্রক্রিয়ায় শরিক রেখেই দৌড়-ঝাপ শুরু করে দিয়েছেন। এই প্রক্রিয়া যদি সফল হয় তবে অক্টোবর-নভেম্বরের ভিতরেই আসছে নতুন এই লংটার্ম ইন্টেরিম সরকার। ব্যবসায়ীদের বড় একটি অংশ এই প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত। সাবেক কূটনীতিকদের বড় একটি অংশ, সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন অংশ, বিভিন্ন ডোনার এজেন্সি এই প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত, কারণ সকলেরই স্বার্থ এক ও অভিন্ন। স্থিতিশীল, দীর্ঘমেয়াদি সরকার সকলেই চান। আর ইউনুস কিংবা আবেদ কেউই দীর্ঘমেয়াদী পূর্ণ সুযোগ ছাড়া অংশ গ্রহণে সম্মত নন। ওয়াশিংটনস্থ রাজনীতি বিজ্ঞানের এক প্রফেসর, যার বেশ কিছু গ্রন্থ ইতিমধ্যে বিশ্বব্যাপী আলোড়ন তুলেছে ইউনুস সহ ভারতীয় ও মার্কিনীদের সাথে মধ্যস্থতা করছেন। হাসিনা-খালেদার টেবিলে ভারত-মার্কিন সমর্থিত এই ফর্মুলা রয়েছে, উভয় দলের দুই নেত্রীর নিরাপদ ও শর্তসাপেক্ষে গঠনমূলক রাজনীতি চর্চার সুযোগ-সুবিধার আলোকে,যা অনেকটা তাদের দলেরও ক্ষমতায় অংশ গ্রহণের দীর্ঘমেয়াদি সুযোগ রয়েছে। তাই নীতি-নির্ধারকদের উভয় অংশই এখন দুটানায় বলে জানালেন এই প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত সাবেক এই কূটনীতিক। তারেক প্রশ্নে বিএনপি শেষ পর্যন্ত এই প্রক্রিয়ায় নাও জড়াতে পারে, কূটনৈতিক সূত্র এই ইস্যুকে মাথায় রেখেই হিসেব-নিকাশ করে এগুচ্ছে। আর বিএনপি জড়িত না হলেও পরিস্থিতি উত্তপ্ততার সুযোগে এই প্রক্রিয়া যে কার্যকর হয়ে যাবে, বিএনপি ও ১৮ দল এই হিসেব ভালোকরেই জানে। তাই আন্দোলন তীব্র করার ক্ষেত্রেও বিএনপি এখন দুটানায়। কেননা হাসিনার সরকার যত হার্ড লাইনে যাবে লংটার্ম ইন্টেরিম গভর্নম্যান্টের এই ফর্মুলা ততো আলোর মুখ দেখবে। আর হাসিনার সরকারে সেইফ এক্সিটের জন্য এই দুই প্রক্রিয়ার কোন প্রক্রিয়াই বাধা নয়- নীতি-নির্ধারকরা জেনে শুনেই তাই যা ইচ্ছা-খুশী তাই করছে। কখনো উদ্যত, কখনো সমঝোতা, কখনো বড় বেপরোয়াভাব- সবই এই দুই ফর্মুলার বহিঃপ্রকাশ। কেননা ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ সরকারের আ-অক্ষরের কর্মকর্তার সাথে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে মার্কিন সরকারের সেই সিগন্যাল জোরালোভাবেই দেয়া হয়ে গেছে, সরকারের কাছে এই সংবাদ আসার পর পরই হাসিনার সরকার এখন দুপথেই এগুতে কোন বাধ সাধবেনা। ভারত এই প্রক্রিয়ার সাথে জড়ানোতে হাসিনার সরকার বুঝে গেছে, দ্বিতীয় টার্মে কারচুপি বা যেন তেন ভাবে ফিরে আসার কোন পথ এখন আর খোলা নেই-যা করার দুই পথের এক পথেই করতে হবে।

১১ আগস্ট ২০১৩.

Please follow and like us:
Pin Share

Add a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Follow by Email
YouTube
Pinterest
LinkedIn
Share
Instagram
error: Content is protected !!