এই মুহূর্তে বাংলাদেশের রাজনীতিতে সব চাইতে আলোচিত, সব চাইতে বিতর্কিত দুই তরুণের নাম, সমকালীন সকল মিডিয়ায় ঝড় তুলেছেন, আর তারা হলেন বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান, লন্ডনে চিকিৎসাধীন, মরহুম রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের বড় ছেলে তারেক রহমান, আর অপরজন হলেন আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে ও মরহুম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতি সজীব ওয়াজেদ জয়। মজার ব্যাপার হলো এই দুই জনের মধ্যে কিন্তু জ্ঞাত, অজ্ঞাতসারে অদ্ভুত এক মিল লক্ষ্য করা গেছে, আর তাহলো, দুজনই বর্তমানে, কোন না কোন এক কারণে বা অদৃশ্য এক সূতার টানে বর্তমানে বিদেশে অবস্থান করছেন।
এই পর্যন্ত তথ্য যদি ঠিক থাকে, তবে এই দুজনই বিদেশের মাটিতে তাদের স্নেহ ও আদরের সবচাইতে নির্ভরতা ও ভরসার স্থল প্রিয় মা-এর আদরের বাইরে থেকে বিদেশের মাটিতে পবিত্র ঈদ উদযাপন করবেন। কাকতালীয় ভাবে এ দুজনের মধ্যে আরো ইন্টারেস্টিং মিল লক্ষ্য করা গেছে, দুজনই কিন্তু নিজস্ব পারিবারিক আবহের বাইরে থেকে স্ত্রী, সন্তান ও শ্বশুর পক্ষের আত্মীয়দের সাথে ঈদ উদযাপন করবেন।
আরো মজার ব্যাপার হলো, এই দুজনই সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে নিজেদের বক্তব্য, বিবৃতির মাধ্যমে বেশ আলোড়ন ও ঝড় তুলেছেন।বাংলাদেশের সকল প্রকারের মিডিয়া থেকে শুরু করে বিদেশের এবং বাঙালি মালিকানাধীন সর্বপ্রকারের অনলাইন মিডিয়ায় এ দুজনের সাম্প্রতিক বক্তব্য নিয়ে নানা আলোড়ন, আলোচনা, মতামত, বিশ্লেষণ, সমালোচনা, তর্ক, বিতর্ক চলছে, যেমন করে চলছে আমাদের গভীর রাতের টক শো গুলোতে। যেসব টক শো গুলোতে বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, রাজনৈতিক বিশ্লেষক অত্যন্ত জোরালো ও শানিত যুক্তি-তর্কের মাধ্যমে দুজনের তুলনামূলক একটা গ্রহণযোগ্যতার প্রেক্ষিত তুলে ধরার চেষ্টা করছেন। তাদের সাথে সমান তালে পাল্লা দিয়ে দুই দলের রাজনৈতিক কর্ণধারদের নানা তির্যক ও কিছুটা হালকা আক্রমণাত্মক রাজনৈতিক বক্তব্যের ভিতর দিয়ে অরাজনৈতিক বক্তব্যও প্রকাশিত হচ্ছে। জনগণ কিন্তু সকলের বক্তব্য খুব আনন্দের সাথে শুনছেন।
মোটা দাগের হরফে বলা যায় জনগণ এই দুই তরুণ নতুন প্রজন্মের রাজনৈতিক কর্ণধারকে নিয়ে এখন ভাবতে শুরু করেছেন। তার যথেষ্ট প্রমাণও পাওয়া যায়। চায়ের টেবিল থেকে শুরু করে কৃষকের মাঠের ধান আর হাল চাষের অবস্থান, হাট-বাজার, শহর, রেডিও, টেলিভিশন আর পত্র-পত্রিকায় এই দুই তরুণের বক্তব্য নিয়ে বাজার গরম করা চলতি অবস্থানে তাদের গ্রহণ যোগ্যতা ও তাদের নিয়ে নানা বক্তব্য ও সমালোচনার মাধ্যমে সহজেই আচ করা যায়, সন্দেহ নেই এই দুই তরুণ রাজনৈতিক নেতাকে নিয়ে আগামী দিনের বাংলাদেশের রাজনীতি ঘুর পাক খাবে, নিয়ন্ত্রিত হবে, আবর্তিত হয়ে এগিয়ে চলবে, যা এ দেশের রাজনীতিতে বেশ একটা পরিবর্তন এনে দিবে, অনেকেই এমন ধারণা পোষণ করছেন।
তারেক রহমান জিয়া এবং সজীব ওয়াজেদ জয়- এই দুজনের মধ্যে আরো এক মিল অবিশ্বাস্য ভাবে মিলে যায়। যেমন দুজনই রাজনৈতিক পরিবারের উত্তরাধিকার হয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে গরম হাওয়ার ঝড় তুলেছেন।
এতো কিছুর পরেও এই দুই তরুণের মধ্যে যে অমিলগুলো কষ্টের ও বেদনার সাথে বলতে হয়, আর তাহলো-(ক) তারেক জিয়া নিছক এক অসাংবিধানিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের প্রেক্ষিতে কতিপয় সন্দেহ প্রবণ ঘটনার অবস্থানের (যেহেতু এখনো বিচারাধীন) দায় মাথায় নিয়ে ব্রিটেনে অনিচ্ছা স্বত্বেও বলা যায় প্রতিকুল ও বিরুদ্ধ এক রাজনৈতিক স্রোতের বিপরীতে, নিজেকে ধরে রেখে, আগামীতে নিজের অবস্থানের জানান দিতেই, শারীরিক অসুস্থতার বোঝা নিয়ে ব্রিটেনে স্ত্রী, সন্তান নিয়ে ঈদ উদযাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন। বিপরীতে (খ) সজীব ওয়াজেদ জয় সম্পূর্ণ নিজের স্বেচ্ছায়, সমস্ত পরিবেশ ও রাজনৈতিক স্রোত, ক্ষমতা,প্রতিপত্তি অনুকূলে থাকা স্বত্বেও স্ত্রীকে নিয়ে অনেকটা নিজের আরাম-আয়েশ এবং তথায় কাজের প্রয়োজনীয়তা হেতু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ঈদ উদযাপন করছেন।
আরেকটা জিনিষ অদ্ভূদভাবে লক্ষণীয় যে, (ক)বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তি সংগ্রামে রাষ্ট্রপতি ও আমি মেজর জিয়া বলছি- সেই জিয়াউর রহমান কতিপয় সামরিক উর্দিপরা সেনাদের নিষ্ঠুর ষড়যন্ত্রের বুলেটের আঘাতে নির্মম ভাবে নিহত হয়েছিলেন। আজকের তারেক জিয়া সেই শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ছেলে। ঠিক একইভাবে (খ) আমরা দেখি, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তি সংগ্রামের অকুতোভয় ও অবিসংবাদিত মহান নেতা, বাঙালির মুক্তির বিজয়ের পতাকায় যা ছবি পত পত করে জ্বলে প্রতিনিয়ত, সেই মরহুম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও কতিপয় সামরিক উর্দিপরা সেনাদের নিষ্ঠুর ষড়যন্ত্রের বুলেটের আঘাতে নির্মমভাবে নিহত হয়েছিলেন। আজকের সজীব ওয়াজেদ জয় সেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতি। তবে সজীবের আরেকটি পরিচয় আছে, যা বহু আগেই সজীব ওয়াজেদ জয়কে ঘিরে আবর্তিত হওয়া অধিকতর যুক্তিসঙ্গত হতো। কিন্তু কেন যে সেই পরিচয়টি ডাকা পড়ে গেলো, তা বোধগম্য নয়। বাংলাদেশের সবচাইতে সফল পরমাণু বিজ্ঞানী মরহুম ডঃ ওয়াজেদ এর একমাত্র সন্তান সজীব।
এই কষ্টের ও দুঃখের মিলের সাথে বড়ই বেসুরভাবে যে অমিল লক্ষ্য করা যায়, আর তা হলোঃ-
০১. একজন তারেক রহমান জিয়া সময়ের স্রোতে ও আগামীর সাথে নতুনের ও পুরাতনের মিল খুঁজে নতুন বাংলাদেশ গড়ার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে তার দর্শন, তার চিন্তা, তার আগামীর রাষ্ট্র পরিচালনার রূপরেখা নিয়ে লন্ডনের রাজনৈতিক সমাবেশ থেকে দেশ ও জনগণের উদ্দেশ্যে নিজের বক্তব্য উপস্থাপনের মাধ্যমে সকলের নজর ও দৃষ্টি তারেক জিয়ার প্রতি অসম্ভব এক মোহনীয় ও জাদুকরী শক্তি নিয়ে আবদ্ধ করে চলেন। তারেক যখন বলেন, তখন যেন গোটা বাংলাদেশ বলে উঠে- এমন এক জাদুকরী মন্ত্র তারেক গোটা বাংলাদেশ ও বিশ্ব বাঙালির কাছে তুলে ধরেন। যার ফলে তারেকানুরাগি এবং তারেক বিরোধীশক্তি একাট্টা হয়ে মিডিয়ায় হুমড়ি খেয়ে পড়েন।পত্র-পত্রিকায় এ নিয়ে চলে বিস্তর আলোচনা, সমালোচনা, বিতর্ক। এখানেই তারেকের সব চাইতে বড় ক্যারিশমা। এ যেন এক ঐন্দ্রিয় মায়াময়ী জাদুকরী এক শিল্পী-যে রাজনীতির মাঠে রাজনীতির জাদু ফেরি না করেও প্রভাব বিস্তার করে চলেন।
০২. সজীব ওয়াজেদ জয় সম্পূর্ণ রাজনৈতিক প্রভাব-প্রতিপত্তি ও ক্ষমতার পাদপ্রদীপে থেকে ও সম্পূর্ণ রাজনৈতিক ক্ষমতা ভোগ করে নিজের অনুকূল স্রোত আর অনুকূল পরিবেশের সুযোগ নিয়ে যখন বলেন, তখন যেন আওয়ামীলীগও পেছন থেকে ছায়ার মতো দাঁড়িয়ে থেকে এমনকি খোদ সরকার প্রধানকে সজীবের বক্তব্যের পক্ষে সাফাই সার্টিফিকেট দিতে হয়। সজীব যখন বলেন, তখন বাঙালি ও বাংলাদেশ জেগে উঠার পরিবর্তে আওয়ামীলীগ বলয়ে ঝড় না তুলে নিজেদেরকে আরো বিতর্ক ও রহস্যের ডাল-পালা বিস্তারে ছেয়ে যায়।
এই দুই কষ্টের মিলের সাথে আরো একটা অসম্ভব এক মিলের সাথে সূক্ষ্মভাবে এক অমিল লক্ষ্য করা যায়, যা রেখাপাত টানতে আমাকেও অনেক দ্বিধা-দ্বন্ধে ফেলে দেয়। তারপরেও সত্যের মাপকাঠিতে কষ্টের সাথে বলতে হবে, তাই লক্ষ্য করার মতো যে- একজন শুধু মাত্র অসাংবিধানিক সরকারের সৃষ্টি হেতু মামলার ঝুলি মাথায় নিয়ে বিদেশে কষ্টকর জীবন-যাপন করেন, যার পেছনে বিতর্ক সমান তালে বয়ে চলে। অপরজন নিতান্ত আরাম-আয়েশের জন্য নিয়ম বহির্ভূত ড্রাইভিং করার অপরাধে সাজা প্রাপ্ত ও ফাইন পরিশোধ করে চলেন। একজন আধুনিক জীবনের সঙ্গী ও অভ্যস্ত হতে ড্রিঙ্ক এড়িয়ে চলেন, আরেকজন আধুনিকতার ছোয়ায় গা ভাসিয়ে ড্রিঙ্ক করাকে জীবনের এক অভ্যাসে পরিণত করে চলেন।
এখানে বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের আগামী রাজনীতির নিয়ামকের ভুমিকায় আসা দুই তরুনের জনগণের (Public Assett) দুর্লভ সম্মান জনক সম্পত্তি হিসেবে দেখা হচ্ছে, অন্য কোন কিছু বা ব্যক্তিগত জেদাজাদির স্থান নেই।
সন্দেহ নেই এই দুজন বাংলাদেশের আগামীর রাজনীতিতে এক বড় ধরনের ভূমিকা রাখবেন, যা আসন্ন সাধারণ নির্বাচনকে ঘিরে ব্যাপক মেরুকরণ লক্ষ্য করা যাবে। এই দুই তরুণের রাজনৈতিক ক্যারিশমা ও রাজনৈতিক দর্শন নিয়ে আসন্ন নির্বাচন বেশ ভালোভাবে জমে উঠবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। তবে সব নিঃসন্দেহের মাঝে যে সন্দেহ ভর করে উঠে, তাহলো, তারেক জিয়া চরম বিপরীত স্রোতের এই রাজনৈতিক অবস্থায় কেমন করে তিনি দেশে ফিরবেন, সেটা যেমন এক বিরাট প্রশ্ন, ঠিক একইভাবে সজীব ওয়াজেদ জয় কতোটুকুই বা পাশ্চাত্যের ঐ আরাম-আয়েশের জীবন পেছনে ফেলে বাংলাদেশের নিরন্ন জনগণের জন্য কতোটুকু সময় দিতে পারবেন, যেখানে পিরোজপুরে ভোটের আহবান জানিয়েই তিনি স্ত্রীকে নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমালেন ঈদের জন্য, স্রেফ এক মানবাধিকার কর্মীর টুইটারে হুমকি ও বাংলাদেশী বিরোধী রাজনৈতিক এক নেতার এফবিআইয়ের সাবেক কর্মকর্তার যোগসাজশের আদালতে জামিন না মঞ্জুরের সংবাদ শুনে, তরি-ঘড়ি করে তিনি সেখানে পাড়ি জমালেন, তাতে জনমনে সজীবকে নিয়ে ধুম্রজাল আওয়ামীলীগই তৈরির সুযোগ করে দিচ্ছে। তারপরেও আমরা আশাবাদী, এই দুই বৃহৎ দলের দুই তরুণ আগামীর বাংলাদেশের রাজনৈতিক পথ বিনির্মাণে এক বিরাট ভূমিকা রাখবেন।
৭ই আগস্ট ২০১৩ ।