লন্ডনের চিঠিঃ(০১)- ফখরুল-তারেক বৈঠক, রোশনারার নেতৃত্বে ৪৬ এমপির বার্কলেসের সিদ্ধান্তে ক্যাম্পেইন শুরু

লন্ডনের চিঠিঃ(০১)- ফখরুল-তারেক বৈঠক, রোশনারার নেতৃত্বে ৪৬ এমপির বার্কলেসের সিদ্ধান্তে ক্যাম্পেইন শুরু

তারেক রহমানের সাথে মির্জা ফখরুলের রুদ্ধদ্বার বৈঠক:

সোমবার বিকেলের দিকে লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে লন্ডন সফররত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম লন্ডনস্থ তারেক রহমানের বাসায় সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হন। এসময় যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি শায়েস্তা চৌধুরী কুদ্দুস, সাধারণ সম্পাদক কয়ছর এম আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।

শুরুতেই মহাসচিব তারেক রহমানের স্বাস্থ্যের খোজ-খবর নেন এবং পরিবারের কুশলাদি জিজ্ঞেস করেন।
মির্জা ফখরুল দেশ থেকে নিয়ে আসা বিভিন্ন জরিপ ও দলীয় তৃণমূলের নেতাদের জরিপের প্রেক্ষিতে বেশ কিছু সুপারিশ, বিভিন্ন জেলা, মহানগর, ঢাকা মহানগর কমিটি পুনর্গঠন এবং মহিলা দলের সার্বিক করণীয় বিষয়াদি উপস্থাপন করেন। এই সময় দলীয় মহাসচিব ঢাকা থেকে সাথে করে নিয়ে আসা জরিপের ভিত্তিতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থীদের যাবতীয় তথ্য, আর্থিক, সাংগঠনিক, দলীয় নেতা-কর্মীদের সাথে যোগাযোগ ইত্যাদি সম্বলিত প্রায় ৪৫০ জনের বেশী একটি তালিকা তারেক রহমানের কাছে হস্তান্তর করেন।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন, দলীয় সাংগঠনিক কাঠামো পূণর্বিন্যাস ছাড়াও আন্দোলনের বিভিন্ন কৌশল নিয়ে ৪০ মিনিটের মতো এ বৈঠক দেশ ও জনগণের নানান দিক নিয়ে আলোচনা হয়। ফিরতি বৈঠকে তারেক রহমানের দলীয় একশন ফর্মুলা ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের হাতে দেয়া হবে, যেখান থেকে আগামীতে বিএনপিকে দলীয়ভাবে চাঙ্গা ও আন্দোলনের জন্য ত্যাগী ও বিগত সময়ে মাঠের রাজনীতিতে সরব নেতাদের তারেক রহমানের গুড বুকে থাকাদের নাম অন্তর্ভুক্ত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সন্ধ্যার খানিকক্ষণ পর মির্জা ফখরুল ও তারেক রহমান দুজনে ৩৫ মিনিটের মতো এক রুদ্ধদ্বার বৈঠকে মিলিত হন। এসময় যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক কক্ষের বাইরে অবস্থান করেন।

আজ বিকেলে পূর্ব লন্ডনের জগন্নাথপুর উপজেলার প্রাক্তন ছাত্রদল নেতাদের আয়োজনে যুক্তরাজ্য বিএনপির নবনির্বাচিত কমিটির সম্মানে ইফতার মাহফিলে দলীয় ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল, কেন্দ্রীয় নেতা আমীর খসরু মাহমুদ সহ যুক্তরাজ্য বিএনপির নেতা-কর্মীরা উপস্থিত থাকবেন বলে দলীয় সভাপতি শায়েস্তা চৌধুরী কুদ্দুস জানিয়েছেন।

আগামীকাল ১৭ জুলাই লন্ডনে হাউস অব লর্ডসের আমন্ত্রণে ‘ডেমোক্রেসি, গুড গভার্ণ্যান্স অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে মির্জা ফখরুলের নেতৃত্বে বিএনপির প্রতিনিধিদল অংশ নিবে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ সরকারের সংস্থাপন উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের নেতৃত্বে আওয়ামীলীগের প্রতিনিধিদল সেমিনারে অংশ নিতে লন্ডনে পৌঁছেছেন।

রোশনারা এমপির নেতৃত্বে লেবার দলের ক্যাম্পেইন-

বেথনাল গ্রিন বো এলাকার এমপি রোশনারা আলীর নেতৃত্বে লেবার দলীয় ৪৬ এমপি দেশটির বিকাশমান বাংলাদেশী মানি ট্রান্সফার এজেন্সি রক্ষায় জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণে সরকার ও বার্কলেস ব্যাংকের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, এসব প্রতিষ্ঠান উন্নয়নশীল দেশগুলোতে রেমিটেন্স প্রেরণ করে থাকে এবং তারা ব্রিটেনের উন্নয়ন প্রচেষ্টার অংশীদার। ব্রিটেনের মানি ট্রান্সফার এজেন্সি উন্নয়নশীল দেশের অগণিত পরিবারের কাছে অর্থ প্রেরণে লাইফ-লাইন হিসাবে কাজ করে। মঙ্গলবার লন্ডন থেকে ব্রিটিশ লেবার এমপি রোশনারা আলীর অফিস থেকে প্রেরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলা হয়।

ব্রিটিশ ছায়া আন্তর্জাতিক উন্নয়ন মন্ত্রী ও এমপি রোশনারা আলী এ আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি সম্প্রতি হাউস অব কমন্সে সংশ্লিষ্ট এমপি, অর্থ স্থানান্তর সংস্থা এবং আগ্রহী গ্রুপগুলোর সঙ্গে এক বৈঠকে মিলিত হন। এমপিরা অন্তত ৬ মাস সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখার জন্য বার্কলেস ব্যাংকের প্রতি আহ্বান জানান যাতে সরকার ও নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানগুলো মানি ট্রান্সফার এজেন্সি রক্ষায় ব্যাংকিং সেক্টরের সঙ্গে কাজ করতে পারে।

রোশনারা আলী বলেছেন, আমি আমার নির্বাচনী এলাকার বহু লোক এবং ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চিঠি পেয়েছি। তারা বার্কলেসের সিদ্ধান্তে উদ্বিগ্ন। পূর্ব লন্ডনে অর্থ স্থানান্তর ব্যবসা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেসব লোক তাদের পরিবার ও বন্ধুদের কাছে অর্থ প্রেরণ করে তাদের কাছে তা আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

সম্প্রতি বার্কলেস ব্যাংক যুক্তরাজ্যের অর্থ স্থানান্তর সংস্থাগুলোর জন্য রক্ষিত রেমিট্যান্স একাউন্ট প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয়। এতে ব্রিটেনের হাজার হাজার লোক ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অস্বাভাবিক রেমিট্যান্স স্থানান্তরের প্রেক্ষিতে এবং ইতিমধ্যে বৃহৎ আর্থিক প্রতিষ্ঠান এইচ এস বি সি ব্যাপকভাবে আর্থিক জরিমানার প্রেক্ষিতে বার্কলেস ব্যাংক এই ঝুঁকি নিতে চাচ্ছেনা। আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটির কড়া নজরদারির প্রেক্ষিতে বার্কলেস ব্যাংক লাভজনক এই রেমিট্যান্স একাউন্ট প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয়। গত ১০ জুলাই বুধবার পর্যন্ত প্রাথমিকভাবে এসব একাউন্ট স্থগিত করার ঘোষণা দিলেও পরবর্তীতে নানা চাপে আগস্ট পর্যন্ত সময়সীমা বৃদ্ধি করা হয়।উল্লেখ্য এই মানি ট্রান্সফার এজেন্সিতে অনেক বাংলাদেশী ব্রিটিশ চাকরী করেন, ফলে তারা সকলেই চাকরী হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছেন।

ইতিমধ্যে বাংলাদেশী ফাইন্যান্স হাউসগুলো বিকল্প উপায়ে হাবিব ব্যাংক বা অন্য কোন ব্যাংকের সাথে রেমিট্যান্স প্রেরণের একাউন্ট খোলার চেষ্টা করতেছে বলে এই খাতের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। ব্রিটেনের বিদ্যমান আইনে বাংলাদেশী ব্যাংক ও ফাইন্যান্স হাউস বা ব্যাংকের বুথকে রেমিট্যান্স ট্রান্সফার ব্যবসা করতে ব্রিটেনের ব্যাংকে একাউন্ট খোলার নিয়ম রয়েছে।

বার্কলেসের এই সিদ্ধান্তের ফলে প্রবাসী এবং বাংলাদেশী ব্যাংকের বুথ মারাত্মক সংকটের মুখোমুখি হতে চলেছেন। বহু প্রবাসী তাই উদ্বিগ্ন ।বৈধ পথে সরকারের রেমিট্যান্স পাঠানোর সুযোগ বন্ধ হয়ে গেলে বা বাংলাদেশী ব্যাংকের বুথদের বিকল্প একাউন্ট না খোলতে পারলে রেমিট্যান্স পাঠানোতে হুন্ডি ব্যবসায়ীদের খপ্পরে চলে যাওয়ার সমূহ আশংকা রয়েছে।

Salim932@googlemail.com
16th July 2013.UK

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *