বাংলাদেশ জবাব দাও, আজ হয়নি, কবে হবে পাপ মুক্ত ?
সাম্প্রতিক পর্ব:
মাত্র তিন কি চার-পাঁচ দিন আগে ইউরোপীয় হিউম্যান রাইটস ল ও ইউরোপীয় আদালতের সাথে বহু দেন-দরবার করে অবশেষে হিউম্যান রাইটস এক্ট-এর প্রতি বলা যায় অনেকটা তোয়াক্কা না করেই, ব্রিটেনের বৃহৎ জনগোষ্ঠীর স্বার্থ ও জাতীয় নিরাপত্তা এবং একই সাথে জননিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে ক্ষমতাসীন কোয়ালিশন সরকারের পক্ষে হোম সেক্রেটারি থেরেসা মে বেশ দৃঢ়তার সাথে তার সহকারী সেক্রেটারিকে সাথে নিয়ে মুসলিম ক্লারিক আবু কাতাদাকে ব্রিটেন থেকে জর্ডানের অথরিটির কাছে একরকম জোর করে পাঠিয়ে দেয়।সর্বাধিক গণতান্ত্রিক দেশ এবং বিশ্বে মানবাধিকার রক্ষার প্রথম কাতারের দেশ ব্রিটেন, এমনকি বহু মত, বহু বর্ণ ও বহু ভাষার দেশ এই ব্রিটেন হওয়া সত্বেও তার দেশের নিরাপত্তা, নাগরিকদের জন-নিরাপত্তা এবং এক্সট্রিমিষ্টদের প্রতি সরকারের জিরো টলারেন্স নীতির ফলেই সরকার অনেক টাকা খরচ করেও শেষ পর্যন্ত আবু কাতাদাকে ব্রিটেন থেকে বের করে দেয়।
সরকারের এ রকম সিদ্ধান্তের ফলে যদিও ইউরোপীয় আদালতে ব্রিটেনকে নানা প্রশ্নের এমনকি কঠোর কোন জরিমানা বা দণ্ডের মুখোমুখিও হতে পারে, তথাপি ব্রাসেলস এর কঠোর সিদ্ধান্তের কথা মাথায় রেখেও ব্রিটেন এক্সট্রিমিষ্ট এবং বোমা হামলার সন্ত্রাসী ঘটনায় জর্ডানে বিচারের মুখোমুখি করার জন্য তাকে তার নিজ দেশে পাঠিয়ে দেয়। বলা বাহুল্য বিরোধী লেবার পার্টি এতে সরকারের এই সিদ্ধান্তের সাথে পুরোপুরি একমত পোষণ করে। পার্লামেন্টে যেদিন থেরেসা মে আবু কাতাদার সাকসেসফুলি ডেপোর্টেশনের বিবৃতি দিচ্ছিলেন, তখন বিরোধী লেবার লেবার দলীয় শ্যাডো সেক্রেটারি থেরেসা মের এই সিদ্ধান্তে ধন্যবাদ জানিয়ে বক্তব্যও রাখেন।
পেছনের পর্ব:
চিলির ডিক্টেটর পিনোচেটের বিচারের মুখোমুখি করার জন্য ভগ্ন ও অসুস্থতায় এমনকি বয়োবৃদ্ধ পিনোচেটের সাহায্যকারী ছাড়া চলাফেরা করার মতো অবস্থাও সেদিন কোন বাধা হয়ে দাড়ায়নি। পিনোচেটকে সশরীরে বিচারের সম্মুখীন করা হয়।
মাজখানের সময়কালীন পর্ব:
সার্বিয়ার কসাই খ্যাত সার্ব কমান্ডার মিলোশ্লোভিকের স্বাস্থ্যগত সমস্যা এমনকি বহু আবেদন নিবেদনও আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি। মিলোশ্লোভিককে বিচারের সম্মুখীন করা হয়, আজও তা চলছে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন পর্ব:
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ হওয়ার বহু বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু সেই যুদ্ধক্ষেত্রে মানবাধিকার লঙ্ঘন আর পৈশাচিক বর্বরতার জন্য আজো সেই সব অপরাধী জেনারেল আর তাদের দোসরদের খুঁজে খুঁজে বিচারের সম্মুখীন করা হচ্ছে।
শেখ মুজিবের হত্যাকাণ্ডের বিচার:
এই আমাদের দেশেও জাতির জনকের হত্যাকারীদের বহু বছর পরেও অনেক কাট-খড় পুড়িয়ে অপরাধীদের আইনের আওতায় নিয়ে এসে বিচারের সম্মুখীন করে, তাদের রায় কার্যকর করা হয়েছে।
ব্রিটেনের এম-১৬ হত্যাকান্ডঃ
৫০ বছর আগে ব্রিটেনের এম-১৬ জনবহুল মোটর ওয়েতে উগ্রভাবে গাড়ী চালিয়ে হত্যাকাণ্ড করে ব্রিটেন থেকে পালিয়ে যায় কেনেথ নোল নামের অপরাধী। ভিন্ন নামে ভিন্ন দেশে ৫০ বছর পর্যন্ত জীবন-যাপন করার পর ব্রিটিশ স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড সেই এম-১৬ এর অপরাধীকে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে সক্ষম হয়, ব্রিটেনে ফিরিয়ে নিয়ে এসে সাজা কার্যকর করা হয়।
বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক আদালতের বিচার:
১৯৭১ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তি সংগ্রামের সময় বর্বর পাকিস্তানী সৈন্যদের সহযোগী হিসেবে যে গোষ্ঠী গোটা বাঙালির বিরুদ্ধে খুন, লুট, অগ্নিসংযোগ, মানবতা বিরোধী অপরাধ করলো, তাবৎ দুনিয়ায় যা স্বীকৃত অপরাধ এবং অপরাধী, তাদেরকে যথাযথ আইনের আওতায় বিচারের মুখোমুখি করতে গিয়ে কেন একের পর এক নাটক সৃষ্টি করা হচ্ছে, সরকারি ও বিরোধীদল কেন এক হয়ে এরকম মানবতা বিরোধী অপরাধের অপরাধীদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে জোরালো কোন ভূমিকা রাখতে ব্যর্থতা ও কারসাজির আশ্রয় নিয়ে রাজনৈতিক বালখিল্য শুরু করে দিয়েছে, উপরের ঐ সব সারণী এবং চাক্ষুষ দৃষ্টান্ত থাকা সত্যেও বাঙালি বড় অসহায়ভাবে ন্যাড়ি কুকুরের পিছে ছুটে চলেছে, তাবৎ দুনিয়ার মানবতাবাদী আর বিশ্ব বিবেক বড় অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে রয়, এই ভেবে, যে বাঙালি নিরস্র অবস্থায় বাঁশের লাঠি হাতে নিয়ে যুদ্ধ করে সশস্র ও সুসজ্জিত এক সামরিক শক্তিকে পরাভূত করে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়ে বীরের বেশে জেগে উঠেছিলো, সেই বাঙালি আজ মাছের চোখের মতো মিন মিন করে তাকিয়ে সার্কাসের জোকারের ভূমিকায়, এযে বড় বেমানান।
আজ হয়নি, আর কবে হবে এই বাংলা পাপ ও অভিশাপ মুক্ত? কবে হবে মানবতা বিরোধী অপরাধীদের যথাযথ বিচার?জবাব দিবে কি এই বাংলা ?
Salim932@googlemail.com
16th July 2013.UK