সৈয়দ শাহ সেলিম আহমেদ
বাংলাদেশ ছাত্রলীগ-আমার প্রাণের সংগঠন। এক সময় এই ছাত্রলীগের নেতৃত্বেই আপামর বাঙালি একত্রিত হয়ে পাকিস্তানী দুশমন আর হানাদারদের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে বাঙালির বিজয়ের পতাকা, লাল-সবুজের সেই দুর্নিবার অমলিন পতাকা বিশ্বের মানচিত্রে উড্ডয়ন করেছিলো।
এই ছাত্রলীগের ইতিহাস, গৌরবের ইতিহাস। ছাত্রলীগের ইতিহাস সাড়ে সাতকোটি বাঙালির বিজয়ের ইতিহাস।এই ছাত্রলীগ জন্ম দিয়েছিলো ৬৬র ছয়দফা আন্দোলনের, ৬৯র গণ-অভ্যুত্থানের, ৭০র সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামীলীগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি বাঙালির নিরঙ্কুশ ম্যান্ডেট এনে দিয়েছিলো, সর্বোপরি ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর পাকিস্তানী সুসজ্জিত ৯৩ হাজার সৈন্যদের হটিয়ে দিয়ে নিরস্র বাঙালি জাতিকে নিয়ে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ নামক এই রাষ্ট্রের জন্ম দিয়েছিলো।
এই ছাত্রলীগ জন্ম দিয়েছিলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তোফায়েল আহমেদ, আবদুর রাজ্জাক, নূরে আলম সিদ্দিকী, আবদুল কুদ্দুস মাখন, নূরে আলম জিকু, আ স ম আবদুর রব, শেখ ফজলুল হক মণি, শাজাহান সিরাজ, সিরাজুল আলম খান দাদা, শেখ শহীদ, শেখ হাসিনা থেকে আজকের আখতারুজ্জামান, মাহমুদুর রহমান মান্না, জাহাঙ্গীর কবির নানক, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ সহ অসংখ্য দেশ বরেণ্য খ্যাতিমান নেতৃত্বদের। বাংলাদেশের দুর্যোগ-দুর্বিপাকে এই ছাত্রলীগ ঝাঁপিয়ে পড়ার হাজারো দৃষ্টান্ত রয়েছে। সারা বাংলাদেশের এই প্রান্ত থেকে ঐ প্রান্ত পর্যন্ত এই ছাত্রলীগের রয়েছে হাজার বছরের বাঙালির সাথে নাড়ির সম্পর্ক। অথচ নিতান্তই ভাগ্যের নিষ্ঠুর পরিহাস এই ছাত্রলীগের নাম শুনলে বাংলাদেশের শহর থেকে অজোপাড়াগায়ের মা-ঝি, বাপ-দাদা, ভাই-বোনদের অন্তরাত্মা ভয়ে শিউড়ে কেঁপে উঠে।
ছাত্রলীগ আজ যেন এক ত্রাস, ঠ্যাঙ্গারো বাহিনীর নাম। ক্ষমতাসীনদের নতুন এক মাসলম্যান, আর এ বি এম মুসার ভাষায় আজকের নয়া এক কোটার নাম বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।কিন্তু কেন আজ এতো দুর্নাম, এতো ভয়ঙ্কর এক দানব রূপী ত্রাস সৃষ্টি কারী, খুনি, লুটেরাদের সহকারীর অপর নাম এই ছাত্রলীগ ? কেন এতো বদনাম ? এই ছাত্রলীগ হেন কোন কাজ নেই, হেন কোন দুষ্কর্ম নেই যা করতে পারঙ্গম নয়। নিরীহ বিশ্বজিৎ কে কুপিয়ে খুন করে উল্লাস প্রকাশ, বিসিএস পরীক্ষার ন্যায় সঙ্গত আন্দোলনে দা-কোড়াল, হকিস্টিক, চকচকে চাকু, আর নয়া অটোম্যাটিক পিস্তল উঁচিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের আন্দোলন ধূলিসাৎ আর ভঙ্গ করে দেয়ার আরো এক নতুন নাম এই ছাত্রলীগ। সারা বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলায় সরকারি-বেসরকারি সকল টেন্ডার, চাঁদাবাজি, মারামারি, খুনোখুনি আর প্রকাশ্য রাস্তায় অস্র উঁচিয়ে চলার উদ্যত, বেপরোয়া এক বাহিনীর নাম বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। এই কি ছিলো ৪০ বছরের বাংলাদেশের গৌরবোজ্জ্বল এক স্বাধীন-স্বকীয় ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশের ছাত্রলীগের বর্তমান এক কলঙ্কময় নাম, যা ছাত্রলীগের সকল সুন্দর অর্জনকে নিমিষেই ভূলুণ্ঠিত করে এখনকার তরুণ প্রজন্ম আর জনগণের মানস পটে এক ভয়ঙ্কর দানবরূপে আভির্ভূত হওয়ার অপর নাম এই ছাত্রলীগ।
পেছন থেকে ফিরে দেখা:
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে এই ছাত্রলীগের গৌরবোজ্জ্বল তরুণদের দেশপ্রেমিক নেতৃত্বদের সঠিক নির্দেশনা ও দেশ গড়ার কাজে অংশ গ্রহণের সুযোগ না দেয়ার ফলেই ছাত্রলীগের মধ্য থেকে ধীরে ধীরে যে বিদ্রোহী ক্ষোভ দানা বেধে উঠে, তা ক্রমান্বয়ে নানা ঘাত-প্রতিঘাত, নানা উত্থান-পতনে, নানা সামাজিক ক্ষত-ব্যাধির সাথে এই ছাত্রলীগের মধ্যেও ধীরে ধীরে সূক্ষ্মভাবে টুথপেষ্টের পেছন থেকে আলতো করে চাপ দিয়ে যেভাবে স্লো-মোশনে টিউব থেকে টুথপেষ্ট বের করে নিয়ে আসা হয়, বাঙালির এই গৌরবময় প্রতিষ্ঠানটিকে সঠিক দিক-নির্দেশনার অভাবে একের পর এক ক্ষমতার পালা বদলে ছাত্রলীগকে ব্যবহার করে ক্ষমতার সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করে সব কটা সরকারই ছাত্রলীগের লাগাম না টেনে ধরে বরং বেপরোয়া ও উদ্যত হতে সহায়ক ভূমিকা রেখে চলে। নিজেদের কায়েমি স্বার্থ হাসিলের জন্য, নিজেদের দলীয় আধিপত্য প্রতিষ্ঠা ও ধরে রাখার জন্য ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে নতুন নতুন অস্র আর কাচা টাকা তুলে দিয়ে ধ্বংসের সূচনা করার, ক্ষমতার সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করার সেই প্রবণতা থেকে ছাত্রলীগ এবং ছাত্রলীগ নামক সংগঠনটি কখনো বেরিয়ে আসার চেষ্টা করেনি। স্বাধীন দেশের উপযোগী ছাত্র রাজনীতি চর্চা না করার ফলে, দলীয় লেজুড় বৃত্তি আর ক্ষমতাসীনদের লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে ব্যবহ্রত হওয়ার ফলে দেশ স্বাধীনের পর থেকে আমাদের শিক্ষাঙ্গনে প্রতিনিয়ত অস্রের ঝন-ঝনানী যেমন দেখা গেছে, বহু ছাত্রের অকালে ঝরে যেতে দেখা গেছে, আর অন্যদিকে গোটা শিক্ষাঙ্গনে বিরাজ করেছে অস্তির, অস্থিতিশীল অবস্থা।বার বার সেশন জটের কবলে পড়ে শিক্ষাজীবন হয়েছে ব্যাহত।অথচ দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে সব চাইতে যা প্রয়োজন ছিলো জাতির এই মেধা, সাহসী তরুণ প্রজন্মের ঐ নেতৃত্বদের সঠিক দিক-নির্দেশনা ও জাতি গঠন মূলক উন্নয়ন পরিকল্পনার অধীনে নিয়ে এসে উন্নয়ন ও জাতি গঠনের কাজে লাগিয়ে দেয়া।তা না করার ফলে নানামুখী বিশৃঙ্খল অবস্থার সুবাধে বাঙালির সবচাইতে গর্বের এই প্রতিষ্ঠানটিকে ধীরে ধীরে নষ্টের দ্বারপ্রান্তে দেয়ার সকল ব্যবস্থাই গ্রহণ করার ফলস্বরুপই আজকের বাংলাদেশ ছাত্রলীগের এই অধঃপতন।গুটি কয়েক অছাত্র নেতৃত্বের আর আধুভাই মার্কা নেতা আর টেন্ডার বাজদের কবলে পড়ে গোটা ছাত্রলীগ আজ কলঙ্কিত। অথচ একে রুখার, পরিশুদ্ধ করার যেন কেউ নেই, অথচ এই ছাত্রলীগকে নিজেদের আধিপত্য ও দলীয় প্রভাব-প্রতিপত্তি ব্যবহারের জন্য ঠিকই ব্যবহার করতে তখন আর পিছুপা হননা।
স্বাধীনতার অব্যাহতি পর পরই যেমন, মাজখানে কিছুদিন বাদ দিলে মোটামুটি সব সময়ই ছাত্রলীগ বেপরোয়া ও উদ্যত আচরণ করে, ক্ষমতাসীনদের আস্কারা আর মদদে।
এরশাদের শাসনামলে ছাত্ররাজনীতিকে টাকা বানানোর মেশিন হিসেবে প্রতিষ্ঠা:
সব সরকারই যেমন ছাত্রলীগ এবং ছাত্র রাজনীতিকে নিজেদের হাতিয়ার ও ক্ষমতার সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করে একেবারে ছাত্র রাজনীতির বারোটা বাজিয়েছে, আর সেই বারোটা বাজানোর পেরেকে একেবারে সীল মেরে দেন হোসেইন মোহাম্মদ এরশাদ।এরশাদের ৮৪ সামরিক শাসনের সময়, তিনি এমন সূক্ষ্মভাবে ছাত্র সমাজের মধ্যে প্রথম বলা যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছাত্র রাজনীতি মানে টাকা আর ক্ষমতার সিঁড়ি- এই নীতি এমনভাবে ছাত্র-ছাত্রীদের মন-মনন মগজে গেঁথে দেন, ঐ সময় থেকে ছাত্রলীগ আর ছাত্র সংগঠনগুলো প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে টাকা, চাঁদাবাজি, টেন্ডার বাজী, অস্রবাজীতে লিপ্ত হয়ে পড়ে। ছাত্রনেতারা দেখতে পান, ছাত্রলীগ, ছাত্র রাজনীতি মানেই টাকা বানানো আর ক্ষমতার ভাগ-বাটোয়ারা, টাকা আর পেশী শক্তির আর ক্ষমতাসীনদের সিঁড়ি হিসেবে ছাত্ররাজনীতি এমনভাবে ব্যবহার হতে থাকলো, ছাত্রলীগ ও ছাত্ররাজনীতি তাদের গৌরবজনক ভূমিকার কথা বেমালুম ভুলে গিয়ে টাকা আর পেশী শক্তির পেছনে উলঙ্গ ভাবে ঝাঁপিয়ে পড়লো। ফলে যা হবার তাই হলো।ছাত্রলীগ ক্রমান্বয়ে এক লাঠিয়াল বাহিনী হতে থাকলো।খুন-খারাবি নিত্য-নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়ালো।পড়া-লেখা হয়ে পড়লো গৌণ। যদিও এরশাদ সরকার তার শেষ দিকে এসে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দূরহ এক কাজে হাত দিয়ে নিজ ছাত্র সংগঠন বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়ে ছিলেন, কিন্তু তাতে হীতে বিপরীত হয়েছিলো তার জন্য।কেননা তখন চাঁদাবাজি, টেন্ডার বাজী, অস্রবাজীতে ক্যাম্পাস সয়লাব হয়ে গিয়েছিলো, ছাত্রলীগ, ছাত্ররাজনীতিতে পচন ধরতে শুরু করেছিলো, হঠাৎ কোন কোরামিনে তা উপশম হওয়ার কথা নয়।
সুলতান মোহাম্মদ মনসুরঃ
ছাত্রলীগের এই দুর্নামে সমানভাবে ব্যথিত এক সময়ের ছাত্রলীগের সভাপতি,৮০ দশকের ছাত্র রাজনীতির সব চাইতে জনপ্রিয় ডাকসুর ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ সম্প্রতি ছাত্রলীগের এই কলঙ্কে একশ্রেণীর কতিপয় অছাত্র, আধুভাইদের ছাত্রলীগের নেতৃত্বে আনাকে দায়ী করেছেন। টেলিভিশন টকশোতে খুব সুন্দর ভাবেই বলেছেন, ছাত্রলীগের নেতৃত্বে থাকবে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী, তরুণ ছাত্র-ছাত্রী, কোন গুন্ডা, অছাত্র, ছাত্র নামধারী চাঁদাবাজ ছাত্র রাজনীতির নেতৃত্বে থাকলে বা নিয়ে আসা হলে অথবা উৎসাহিত করা হলে ছাত্ররাজনীতিতে ছাত্ররাজনীতির সুফলের পরিবর্তে এই রকম খুনোখুনি, টেন্ডার বাজী আর হল দখলের মহড়া ও সন্ত্রাস চলতেই থাকবে। জাতির বৃহত্তর স্বার্থে এই সব অছাত্রদের ছাত্র রাজনীতির নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে।ছাত্রলীগের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে সকলকে এগিয়ে আসার আহবান জানান।
মাহমুদুর রহমান মান্না:
স্বাধীনতা উত্তর ডাকসুর সব চাইতে জনপ্রিয় এবং সুন্দর টেবিল টক ও বক্তৃতার জন্য খ্যাতি অর্জনকারী, আজকের নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না সম্প্রতি তার এক লেখায় পরিষ্কারভাবে বলেছেন, ডাকসু নির্বাচনের অভাবহেতু জাতি আজ সঠিক ও যুগোপযোগী ছাত্র নেতৃত্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বিগত কয়েক বছরের মধ্যে ডাকসু নির্বাচন যদি ক্রমান্বয়ে হতো তাহলে জাতি এই সময়ের মধ্যে অনেক মেধাবী ছাত্র নেতাদের পেতো, যেমন করে জাতি পেয়েছিলো স্বাধীনতার পূর্বে ও অব্যাহতি পরে, ফলে ছাত্রলীগের নেতৃত্ব আজ যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে, ফলশ্রুতিতে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে কতিপয় অছাত্র আর টেন্ডার বাজদের দখলে খুন-খারাবি বেড়েই চলছে।
প্রথম আলোর বিশেষ সম্পাদকীয়:
আওয়ামীলীগের ৯৬ সালের সরকারের সময় এবং বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসীন হওয়ার পরে ছাত্রলীগের তাণ্ডব আর বেপরোয়া কার্যক্রমে প্রথম আলোর বিশেষ সম্পাদকীয় নিবন্ধে বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবরে প্রকাশ্যে আবেদন ছিলো- মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার ছাত্রলীগ সামলান। আফসোস জনপ্রিয় পত্রিকার বিশেষ কলাম প্রকাশিত হওয়ার পরেও ক্ষমতাসীনদের টনক নড়েনি, বরং ছাত্রলীগ আরো বেপরোয়া ও উদ্যত আচরণ করে গোটা ছাত্রলীগের ইতিহাসকে করে তুলেছে প্রশ্নবিদ্ধ।
আ স ম আবদুর রব:
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় যে ছাত্রনেতার মাথার পুরস্কার আইয়ূবশাহী লাখ টাকা ঘোষণা করেছিলো, ডাকসুর সর্বপ্রথম নির্বাচিত ভিপি, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও ছাত্র আন্দোলনের সেই অবিসংবাদিত নেতা, আজকের জাসদ(জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, স্বাধীন দেশের ছাত্র রাজনীতি আর স্বাধীনতার পূর্বেকার ছাত্ররাজনীতিকে এক ও সেইভাবে দেখলে কিংবা একইভাবে পরিচালিত করলে চলবেনা। স্বাধীন দেশের ছাত্র রাজনীতি ও ছাত্রলীগকে পরিচালিত করতে হবে নিজেদের সম্পূর্ণ স্বাধীন, স্বকীয় ও দলীয় লেজুড় বৃত্তি মুক্ত হয়ে ছাত্রদের কল্যাণে সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে ছাত্ররাজনীতি করতে হবে। আর তা না করার ফলে ছাত্রলীগ ও ছাত্ররাজনীতি আজ কলুষিত, চর দখলের মতো হল দখল আর টেন্ডার বাজী ও অস্রবাজীতে লিপ্ত। আমাদেরকে সেই অবস্থা থেকে অবশ্যই বেরিয়ে আসতে হবে। ডাকসু নির্বাচন অবিলম্বে ব্যবস্থা করতে হবে। প্রকৃত ছাত্রদের ও মেধাবীদের নেতৃত্বে নিয়ে আসতে হবে।
প্রাক্তন বিচারপতি শাহাব উদ্দিনের আহবান:
ছাত্রলীগের এই করুণ দুর্দশা আর ছাত্ররাজনীতির অস্রের ঝনঝনানিতে উদ্বিগ্ন হয়ে তখনকার তত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও প্রধান বিচারপতি শাহাব উদ্দিন জাতির কাছে ছাত্র রাজনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করার পাশাপাশি ছাত্র রাজনীতি বন্ধের ও আহবান জানিয়েছিলেন।
সর্বশেষ, প্রবীণ সাংবাদিক এ বি এম মুসা, যিনি নিজেও এক সময় আওয়ামীলীগের সাংসদ ছিলেন, আক্ষেপ করে বলেছেন, কোটা আরো একটা আছে, আর তাহলো ছাত্রলীগ। মুসা ভাইয়ের এই এক কথাতেই পুরো ছাত্রলীগের বর্তমান চিত্র ফুটে উঠেছে। এটা শুধু মুসা ভাইয়ের কথা নয়, বরং সারা বাংলাদেশের আপামর জনতার মনের কথা। আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নিজেও এই ছাত্রলীগের রাজনীতির মাধ্যমে জাতীয় নেতৃত্বে এসেছেন। অথচ ছাত্রলীগের এই বদনাম, কুখ্যাতি, খুনোখুনি, টেন্ডার বাজী, চাঁদাবাজি রুখার সাধ্য যেন আজ কেউ রাখেননা, বা একে দেখ-ভাল করার জন্য যেন আজ আর কেউ জীবিত আছেন বলে মনে হচ্ছেনা। কিন্তু এই ভাবে আর কতো? ছাত্ররাজনীতির নামে এইসব গুণ্ডামি, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, টেন্ডার-বাজী ছাত্রলীগের নেতৃত্বে আর কতোকাল চলবে? এইভাবে একটা জাতির মেধা মননকে ধ্বংস হতে দেয়া যায়না।
আমাদের পাশের দেশ ভারত, বার্মা, থাইল্যান্ড, গণচীন, জাপান, আর সুদূর আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানিপ্রভৃতি দেশেও ছাত্রদের নিজেদের সংগঠন রয়েছে, ছাত্ররাজনীতি সেই সব দেশেও আছে, নিষিদ্ধ নয়।সেখানকার ছাত্র রাজনীতির সাথে আমাদের দেশের ছাত্ররাজনীতির কোন তুলনা নয়, বরং সেই সব স্বাধীন দেশের ছাত্র সংগঠনগুলো কেমন করে পরিচালিত হয়, কেমন করে ছাত্ররাজনীতি চর্চা করে, ক্যাম্পাস কেন্দ্রিক, ছাত্র-ছাত্রীদের দাবী-দাওয়া ও সুযোগ-সুবিধা নিয়ে কিভাবে বিভিন্ন পর্যায়ে ও স্তরে দেন দরবার করে, প্রয়োজনের সময় আন্দোলন গড়ে তুলে, আজকে সময় এসেছে আমরাও তাদের মতো একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আমাদের ছাত্রলীগ, ছাত্র সংগঠনগুলোকে স্বাধীন দেশের উপযোগী করে ঢেলে সাজিয়ে স্বাধীন দেশের উপযোগী ছাত্ররাজনীতি, তথা গঠনমূলক ছাত্ররাজনীতি চর্চা করার আর টেন্ডার বাজী, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী আর দখল বাজী থেকে ছাত্রলীগ ও ছাত্র রাজনীতিকে মুক্ত করতে না পারলে আমাদের সামনে এক বিরাট অন্ধকারের সুড়ঙ্গ হাতছানি দিয়ে ডাকছে, যেখান থেকে আমরা কেউই রেহাই পাবোনা। সবাই মিলে কি একটা শুভ উদ্যোগ নেয়া যায়না ?
Salim932@googlemail.com
12th July 2013.UK