ক্ষমতার পাদপ্রদীপে অহংকার আর দাম্ভিকতাকে আশ্রয় করে হাটে-ঘাটে ও মাঠের জনতার ভাষা বুঝতে অক্ষম বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকার কি করে ঘুরে দাঁড়াবে, সেটাই এখন মিলিয়ন ডলার প্রশ্ন।আওয়ামীলীগের হাতে এমন কোন যাদু মন্ত্র নেই কিংবা এমন কোন হ্যামিলনের বাশীওয়ালাও নেই যে এসে বাঁশী বাজাবে আর সেই সুরে মন্ত্র-মুগ্ধের মতো তাবৎ বাঙালি বাশীওয়ালার পেছনে ছুটবে।এমন যদি হয়, তবে মন্দের ভালো বলতে হবে। তবে তা হওয়া আদৌ সম্ভব ও বাস্তব সম্মত কিনা, সেটাই হলো বিচার্য বিষয়।
বলা হচ্ছে, এমনকি খোদ প্রধানমন্ত্রী থেকে লন্ডনে অবস্থানরত আওয়ামীলীগ ঘরানার বুদ্ধির প্রোপাগান্ডায় সিদ্ধ হস্ত, এমন সবের মাধ্যমেও মিডিয়ায় চাউর, যে এতো উন্নয়ন কর্মকাণ্ড করার পরেও আওয়ামীলীগের ভরাডুবি কেন? খুব খাটি কথা। সত্যি সত্যি যদি দৃশ্যমান উন্নয়ন আওয়ামীলীগ করে থাকে, হাজারো, লাখো প্রোপাগান্ডা করে জনমতকে আওয়ামীলীগের উপর থেকে সরানোর বিভ্রান্তিকর কৌশল কি সম্ভব? নাকি আওয়ামীলীগের ঐ হাজারো উন্নয়নের ফিরিস্তি আমাদের দেশের হিসাব নিরীক্ষণ বিভাগের মতোই, যেখানে অতিরঞ্জিত করে কাগজে-কলমে সরকারের কর্তাব্যক্তিদের তুষ্টি করণের লক্ষ্যে গোঁজামিল হিসাব দেখানো হয়ে থাকে, যা বাংলাদেশের সকলেই অবগত। বাস্তবে মাঠে-ময়দানের চিত্র যেমন থাকে ভিন্ন, আওয়ামীলীগের অতি-আত্মবিশ্বাসী আর অতি দাম্ভিকতা পূর্ণ সরকারের জন্য মাঠের জনতার চিত্র কিন্তু একেবারেই বিপরীত, যা লন্ডনের প্রথিতযশা কলামিষ্টের সময়ের সাথে নিজের উত্থান-পতনের ডিগবাজির চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের মতোই সরকারের জনপ্রিয়তার ব্যারোমিটারের মাত্রা উঠা-নামাই করছেনা, একেবারে শূন্যের কোঠায় এসে ঠেকেছে (সিলেটের প্রবাসীদের ভুলে যাওয়া উচিৎ নয়, এই সেই বুদ্ধিজীবী, যিনি সিলেটের প্রবাসীদের কটাক্ষ করে নিবন্ধ লিখেছিলেন, জনরোষ থেকে বাচতে ফ্রান্সে গিয়েছিলেন কিছুদিনের জন্য, ফিরে এসে সিলেটের প্রবাসীদের সাথে আপোষ করে শেষ রক্ষা করেছিলেন, উনি সময়ে সময়ে রূপ, রং বদলান, যেমন করে রামধনু আকাশে উঠে আবার মিলিয়ে যায়, উনি সেরকম তত্ব ও তথ্য আবিষ্কার করে জনগণকে গিলানোর চেষ্টা করেন) আওয়ামীলীগ এবং তার শিষ্য ও বুদ্ধিজীবীরা বাংলাদেশের জনগণকে বেকুব ও বোকা মনে করে, মনে করে উচ্ছিষ্ট, অপদার্থ, আর ডাস্টবিনের কিংবা পচা-গলা নদীর পানি যাই খাওয়ানো হবে, এই বাঙালি হ্যামিলনের বাশীওয়ালার সুরে তাই খেয়ে যাবে। কিন্তু সময়টা যে এখন সেই কলি কাল নেই, প্রযুক্তির যুগ, মুহূর্তেই তাবৎ দুনিয়ার সব খবরাখবর মানুষের নখদর্পণে। মানুষ ও সোশ্যাল মিডিয়া এখন নিজেই এক একটা বিকল্প মিডিয়া হয়ে আছে।
আওয়ামীলীগ এতোই দাম্ভিক যে, সীমান্তে বিএসএফ দ্বারা আমার বাংলাদেশের মায়ের সামনে নিরীহ মেয়ে ধর্ষিত হয়, অথচ আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মণি ঠিক তার কিছু পরে সংবাদ ব্রিফিং করে, অথচ সীমান্তের ঐ ন্যক্কারজনক, জঘন্য, অমানবিক, পশুসুলভ আচরণ বিএসএফ করে বসে, সেটাতে থাকে নিরুত্তর।সীমান্তের জনগণকে পশুসুলভ আচরণ থেকে অরক্ষিত রেখে আওয়ামীলীগ কি করে ঘুরে দাঁড়াবে ?ঘুরে দাঁড়ানোর আদৌ কোন ইচ্ছা থাকলে বিএনপির ইফতার মাহফিলে হাজারো বাধা থাকলে প্রতিনিধি পাঠাতো।
ঢাকার বাতাসে জোর গুজব, সরকারের নীতি নির্ধারনীদের সাথে বনিবনা না হওয়াতে আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফ পদত্যাগ করেছেন, যদিও এর কোন সত্যতা কোন পক্ষ থেকেই স্বীকার করা হয়নি।শুনা যাচ্ছে, আওয়ামীলীগের গুরুত্বপূর্ণ পদ-পদবীতে পরিবর্তন হতে যাচ্ছে। সম্ভাব্য সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মোহাম্মদ নাসিমের নাম জোরে শোরে উচ্চারিত হচ্ছে।এক ডজনের মতো বর্তমান এমপি ও মন্ত্রী আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন বঞ্চিত হবেন। আশার কথা। কিন্তু, ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য সেই সব কি যথেষ্ট? জনগণের মনের ভাষা না বুঝে উপরি উপশম দলের জন্য কতোটুকু লাভ হবে, সেটাই হলো আসল বিবেচ্য। এখন পর্যন্ত আওয়ামীলীগ নিজেদের পলিসি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে যে মন-মানসিকতার তিমিরে ছিলো, সেখানেই আছে। দলকে চাঙ্গা করার লক্ষ্যে দৃশ্যমান কোন ব্যবস্থাই গ্রহণ করা হয়নি, বরং সেই সব অর্বাচীন, অহংকারী নেতা, মন্ত্রী, এমপি আর গুণ্ডাদের তাণ্ডব আর দাপটের কাছে জনগণ ও প্রশাসন গত সাড়ে চার বছর জিম্মি ছিলো, তাদের জন্য এখন পর্যন্ত সরকারের তরফ থেকে কোন কঠোর সিগন্যাল দেয়া হয়নি, বরং তাদেরকে দিয়ে এখনো নসিহত অনবরত বর্ষন করা হচ্ছে।
বলা হয়ে থাকে, আওয়ামীলীগ ও মহাজোট গত সাড়ে চার বছর দমন-পীড়নের সাথে বড় কৌশলী ও দাপটে বিরোধীদের সাথে খেলেছে। সেখানে বিএনপি ও তার মিত্ররা আওয়ামীলীগের কৌশলের কাছে পাত্তাই পায়নি। একেবারে খাটি কথা। একশোভাগ একমত, কিন্তু তারও আড়ালে আরো একটা কথা সত্যি, আওয়ামীলীগের এই একচ্ছত্র স্বেচ্ছাচারিতা আর দাম্ভিকতার বিপরীতে বিরোধীদল যে কৌশলী ভূমিকা নিয়ে একের পর আওয়ামীলীগকে বিরোধীদের বক্তব্য খণ্ডনের মধ্যে সরকারের পুরো প্রশাসন যন্ত্রকে ব্যতিব্যস্ত রেখে জনগণের থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়ার যে সুকৌশলী ও নীরব ভূমিকা নিয়ে এগিয়েছিলো, আওয়ামীলীগ সেখানেই বুদ্ধিবৃত্তিক জগতে মার খেয়ে বসে, যা ক্ষমতাসীনদের অগোচরেই রয়ে যায়। আর এই একটি সফলতার ক্ষেত্রে বিরোধীরা এতো সফল ও সরকারের বিরুদ্ধে জনতার ক্ষোভকে এমন দক্ষ ও নিপুণতার সাথে কাজে লাগিয়ে বাজিমাত করে দেয়, যা আগামীর নির্বাচনে আওয়ামীলীগের মহা-প্রলয়ের বার্তা এখনি আকাশে-বাতাসে ধ্বনি তুলে ক্ষমতাসীনদের মনোবলকে একেবারে ভেঙ্গে দিয়েছে, সেটাতো অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। কথায় বলে, অতি দাম্ভিকতা ও অতি অহংকার মানুষ সহ্য করেনা, স্বয়ং আল্লাহ-পাকও পছন্দ করেননা।আওয়ামীলীগ রাজনীতির সবকটা ফ্রন্ট ওপেন করে অরাজনৈতিক কৌশলে ও মিথ্যা-বানোয়াট স্টোরি সাজিয়ে রাজনীতির ময়দানে একচ্ছত্র ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রেখে ফাকা মাঠে ম্যারাডোনা সাজার হীন চেষ্টা করেছিলো, যা এখন তাদের জন্য বুমেরাং হয়ে ফিরে এসেছে।
মোহাম্মদ নাসিম এবং ওবায়দুল কাদের বেশ অকপটে জনতার মনের ভাষা বুঝতে পেরেই অনেকগুলো সত্য কথা বলেছেন। সেজন্য তাদের ধন্যবাদ। যদিও ওবায়দুল কাদের বেশ আগে থেকেই মাঝে-মধ্যে বিক্ষিপ্তভাবে নিজের মতামত বাস্তবতার আলোকে প্রকাশ করে আসছিলেন, কিন্তু সেই সব মতামত কেবল মতামতের পর্যায়েই রয়ে যায়, নীতি-নির্ধারনী কোন ফোরামে এই রকম বাস্তব বক্তব্য দিয়েছেন বা ইনসিষ্ট করেছেন বলে শুনা যায়নি। মোহাম্মদ নাসিম কিছুদিন আগেও আওয়ামীলীগের সেই সব অহংকারী নেতাদের সাথে সুর মিলিয়েই বক্তব্য দিতে অভ্যস্ত হয়েছিলেন, তবে সিটি নির্বাচনের পরাজয়ে দেরীতে হলেও বোধোদয় হয়েছে বলে অবশ্যই ধন্যবাদের দাবি রাখেন। কিন্তু জনগণকে মোহাম্মদ নাসিম আর ওবায়দুল কাদেরের মতো আওয়ামীলীগের নেতারা কি আশ্বাস দিবেন, কেমন করে আশ্বস্থ করবেন, জনতার বিশ্বাসকে ফিরিয়ে নিয়ে আসার জন্য কি জাদুমন্ত্র দিবেন, সেটাই দেখার বিষয়। এখনকার জনগণ চায়, শেয়ার মার্কেটে যে হাজী বাবা, শশ্রুধারি শুভ্র কাপড়ে পরিহিত সেই ব্যক্তি, যিনি আওয়ামীলীগ-বিএনপি-এরশাদ সকল আমলেই সমানভাবে ভাগ নিয়েছেন, সুযোগ নিয়েছেন, মরহুম কিবরিয়াকে যিনি ক্যাবিনেট কক্ষে ডুকে দেখে নেবার হুমকি দেয়ার ৩ মাসের মাথায় বৈদ্যের বাজারের জনসভায় কিবরিয়া নিহত হলেন,এলসেসিয়ান কুকুরের সেই রক্ষক হাজী বাবা ও তাদের মিত্রদের দ্বারা পূজিবাজার লুটে-পুটে সাহারা গ্রুপ হয়ে আবার বাংলাদেশে মানি কারসাজির সেই নায়কদের দ্বারা ৩০ লক্ষ মানুষকে পথে বসানো থেকে উত্তরণের কি মন্ত্র দিবেন মোহাম্মদ নাসিম ও ওবায়দুল কাদের? আওয়ামীলীগের লুটেরা ও সেই ডাক্তার উপদেষ্টার দুষ্কর্মের সহযোগিতায় সোনালী ব্যাংক লুট-পাট, হল-মার্ক, ডেস্টিনি, বিকাশ, রেলের কালো বিড়ালের কেলেঙ্কারি আর ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের তাণ্ডব, ফারুক, বিশ্বজিৎ, সাগর-রুণী হত্যা- কি হবে এতো সব কেলেঙ্কারির, মোহাম্মদ নাসিম, ওবায়দুল কাদেরকে তো সেই সব উপসর্গ উপশমের মলম জনতার গায়ে লাগাতে হবে।ছাত্রলীগ, যুবলীগ- টেন্ডার লীগ আর জায়গা-জমি, মসজিদ,মন্দিরের পতিত জমি সব দখলে ব্যস্ত, কি করে সেই সব পুনরুদ্ধার করে জনতার আদালতে ফিরিয়ে দেবে, আওয়ামীলীগকে ঘুরে দাঁড়ানোর আগে সেই সব আগে-ভাগে ভাবতে হবে।
মনে রাখা দরকার বাংলাদেশের জনগণ কখনো কিংবা কলিকালের ন্যায় আগের মতো আর গাজার মেশিনে ডুবে থাকেনা। তাই যেন তেন কোরামিন ইনজেকশন দিয়ে নির্বাচনী বৈতরণী পার পাওয়া যাবেনা। আর মানুষকে যারা বোকা ভাবে, মানুষকে যারা মানুষের মর্যাদা দেয়না, মানুষকে যারা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে, অবহেলা করে, ভয় দেখায়, লুটে-পুটে খায়, সাধারণ শান্তিপ্রিয় নিরীহ জনগণ সঠিক সময়ে সেই সবের জবাব দিতে কখনো ভুল করেনা, সিটি নির্বাচনেও করেনি, আগামীতেও করবেনা, যদিনা সঠিকভাবে শুধরানো না হয়।
Salim932@googlemail.com
13th July 2013.