Home » কলাম » গাজীপুর সিটি নির্বাচন-যেখান থেকেই পরিবর্তনের সূচনা

গাজীপুর সিটি নির্বাচন-যেখান থেকেই পরিবর্তনের সূচনা

রাজনীতি যেন একই জায়গায় থমকে আছে। মাজে-মধ্যে সংসদে উত্থাপ ছড়ানো ছাড়া রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনে খুব একটা উদ্যোগ সরকার কিংবা বিরোধী শিবির থেকে পরিলক্ষিত হচ্ছেনা। ঘড়ির কাটা টিক টিক করে ঠিকই বয়ে চলে, কিন্তু আমাদের রাজনৈতিক অচলাবস্থা যেন নিরসন হতে চাচ্ছেনা। বলা যায়, যে বা যারা এই অচলাবস্থা নিরসন করে জাতিকে স্বস্তি দিতে পারেন, তারা যেন কোথায় যেন এক অদৃশ্য সূতার টানে আটকা পড়ে আছেন। জাতির জন্য এটা কোন আশার সংবাদ নয়। ইতিমধ্যে রাজনৈতিক অঙ্গন গাজী পুর সিটি নির্বাচন নিয়ে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। প্রধান দুই দল এই নির্বাচনকে নিজেদের প্রেস্টিজ ইস্যূ হিসেবে নিয়েছে।

এক সংবাদে জানা গেলো ক্ষমতাসীন সরকার এবং তার পুরো প্রশাসন যন্ত্রই বলতে গেলে মরিয়া ১৪ দল প্রার্থী আজমতকে জেতানোর জন্য। বিরোধীদলও সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। পত্রিকার রিপোর্ট অনুযায়ী ক্ষমতাসীন জোট নির্বাচনকালিন সময়ে নিয়োজিত প্রিসাইডিং অফিসার থেকে শুরু করে নানান ছক এটে প্রশাসনকে ব্যবহার করে আজমতকে জয়ী করে নিয়ে আসার সব চেস্টাই অব্যাহত রেখেছে। মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মোহাম্মদ নাসিম সহ নারায়ণগঞ্জ মেয়র আইভী সহ সকলেই একাট্রা হয়ে নানা ষ্ট্র্যাটেজী করে চলেছেন আজমতের পক্ষে। একডজনের মতো সরকার দলীয় নেতা, ছাত্রলীগের সকল স্তরের ক্যাডার সহ সরকারী কর্মকর্তারা গাজীপুর চষে বেড়াচ্ছেন বলে সংবাদে প্রকাশ।বিরোধীদল ও কম যাচ্ছেনা। তারাও মরিয়া। সঙ্গে আছেন জাতীয় পার্টি ও হেফাজতের ভোট ব্যাংক। এই যখন সার্বিক অবস্থা তখন মীর্জা ফখরুল সরকারের উদ্দেশ্যে হুশিয়ারী উচ্চারন করেছেন, কারসাজি করে জনতার রায় ছিনিয়ে নিলে গাজী পুর থেকে সরকার পতনের লাগাতর হরতাল।নিঃসন্দেহে এই কথা বিশেষ রাজনৈতিক তাৎপর্যপূর্ণ ।

মজার ব্যাপার হলো, গাজীপুর ইলেকশন কে ঘিরে সরকারি এবং বিরোধী উচ্চ পর্যায় থেকে জাতীয় পার্টির নেতা হোসেন মোহাম্মদ এরশাদের সাথে ঘন ঘন দেখা করে সমর্থন আদায়ের সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। ইতিমধ্যে ১৪ দলের আজমত দেখা করে এরশাদের সমর্থন লাভের ব্যর্থ চেষ্টা করেছেন।এর পর পরই ১৮ দলের মান্নান এরশাদের সাথে দেখা করে আশীর্বাদ প্রাপ্ত হয়েছেন বলে সংবাদে প্রকাশ। মন্ত্রী, এমপি এবং উচ্চ পর্যায় থেকে এরশাদের সমর্থন আদায়ের লবিং-এ পরিস্কার গাজীপুর নির্বাচনের এরশাদ ও জাতীয় পার্টি বিরাট ফ্যাক্টর। এরশাদের ঘনিষ্ট এক নেতা বলেন, স্যার সারা দেশের জনগণের ক্ষোভের ও মতামতের সাথে একাত্ম হয়েই গাজীপুরে ১৮ দলের প্রার্থীকে সমর্থন দিয়েছেন। এটা ঠিক সারা দেশে এখন আওয়ামীলীগ সরকারের বিরুদ্ধে মানুষের ব্যাপক ক্ষোভ রয়েছে। মানুষ আওয়ামীলীগ সরকারের দাম্ভিকতা, অতি আত্মবিশ্বাসী, অহংকার, তাচ্ছিল্য, দূর্ণীতি, লুট-পাট, সন্ত্রাস, চাদাবাজী, ছাত্রলীগের টেন্ডারবাজী, দখলবাজী ইত্যাদিতে এখন অতিষ্ঠ। মানুষ এখন পরিবর্তন চাচ্ছে।

গাজীপুর নির্বাচনে আওয়ামীলীগের নির্বাচনী ফলাফলে জয় কিংবা পরাজয় যাই হউক না কেন, ক্ষমতাসীন সরকারের জন্য নিজেদের ভরাডুবি আর বিদায়ের ঘন্টার সূত্রপাত যে করবে তাতে কোন সন্দেহ নাই। নির্বাচনী ফলাফল কোনভাবে ম্যানিপুলেট করা হলে, সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ আর লাগাতর অসহযোগের সূচনা করবে। আবার আওয়ামীলীগের ভরাডুবিতে সারা বাংলাদেশে আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীদের মনোবল একেবারে ভেঙ্গে পড়বে। নিদেনপক্ষে সাধারণ মার্জিনে যদি আওয়ামীলীগ জিতেও যায়, ইতিপূর্বে সরকারের অহেতুক অরাজনৈতিক কর্মকান্ডের ফলে সরকার বিরোধী আন্দোলনের বিশৃংখলাময় পরিবেশের সূচনা করবে, যেহেতু ইতিমধ্যে চার চারটি সিটিতে বিরোধী জোট জয়ী হয়ে আছে।এখানে আওয়ামীলীগের জয় কিংবা পরাজয় উভয়টাই আওয়ামীলিগের জন্য বিপদের বার্তা বয়ে নিয়ে আসবে।আওয়ামীলীগ সরকারের শেষ সময়ে এসে স্থানীয় এই নির্বাচনী খেলা খেলতে গিয়ে নিজেদের ফাদেই ধরা খেয়ে যাচ্ছে। আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক আশরাফ সে কারণে এই সময়ে সাধারণ নির্বাচনের আগে সিটি নির্বাচনের বিরোধী ছিলেন বলে জানা গেছে।

গাজীপুর নির্বাচন তাই বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য এক টার্নিং পয়েন্ট হয়ে আছে। এখান থেকে হয় সরকার গ্রহণ যোগ্য নির্বাচনের দিকে আগাবে, নয়তো নিজেদের জান-মাল বাচাতে পঞ্চদশ সংশোধনীর উপর ভর করে সুপ্রীম কোর্টের ব্যখ্যা নিয়ে জনগণের সার্বভৌমত্বকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আইনের মার-প্যাচে আরো কিছুদিন ক্ষমতা অব্যাহত রেখে তৃতীয় অরাজনৈতিক শক্তির হাতে দেশকে ঠেলে নিজেদের নিরাপদ এক্সিট রুট খুঁজবে। নিজেদের দাম্ভিকতা আর অহংকারের কারণে তবুও বিরোধী জোটের সাথে নেগোসিয়েশন করবে বলে মনে হয়না। আর করবেনা বলেই আজকেও সেই অর্বাচীন মন্ত্রীকে দিয়ে হুংকার দিয়েছে, জাতীয় পার্টি ছাড়াও মহাজোট ক্ষমতায় আসবে।

এই মুহুর্তে রাজনৈতিক অচলাবস্থার নিরসনের ক্ষেত্রে দুটি পথই খোলা। হয় বিরোধীদের সাথে আলোচনা করে সমাধানে পৌছা, নয়তো বিরোধীদের আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া আর সরকারের কঠোর অবস্থান, যা দেশকে করে তুলবে অস্থিতিশীল। যা কারো কাম্য নয়।আর এই অবস্থায় সমঝোতা যদি হয়, তবে আরো যে কতো রক্তপাত, কতো সময়, কতো হুংকার হবে, সেটা নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারেননা।

Salim932@googlemail.com
২রা জুলাই ২০১৩

Please follow and like us:
Pin Share
One Comment

Add a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Follow by Email
YouTube
Pinterest
LinkedIn
Share
Instagram
error: Content is protected !!