বিশ্বজিতের নির্মম হত্যাকান্ডঃআমরা যা করতে পারি-

বিশ্বজিতের নির্মম হত্যাকান্ডঃআমরা যা করতে পারি-

পৈশাচিকভাবে বিশ্বজিৎ হত্যাকান্ড-জাতি হিসেবে আমাদের করণীয়-

প্রিয় নাগরিকবৃন্দ, একটু কি ভেবে দেখবেন…

সৈয়দ শাহ সেলিম আহমেদ

বিশ্বজিৎ-কে যেভাবে পিঠিয়ে হত্যা করা হয়েছে, সভ্য সমাজে তা কেবল বিরলই নয়, আদিম-বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে। প্রিন্ট এবং ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া সহ অনলাইন দৈনিক এবং ব্লগ-গুলোতে এই নিয়ে রীতিমতো বিপ্লব ঘটে গেছে। সকলেই যেমন দল-মত নির্বিশেষে ধীক্কার দিয়ে চলেছেন, একই সাথে দূষীদের বিচারের দাবি জানিয়ে চলেছেন।

আজকাল প্রতিবাদের ভাষার এক বিরাট প্লাট ফর্ম দখল করে আছে অনলাইন মিডিয়া এবং ব্লগ। কিন্তু রাস্তার আন্দোলন, ভাঙচুর, হত্যা-বর্বরতা, রাস্তা দখল করে, যান-জট করে চলাচল বন্ধ করে দিয়ে বিক্ষোভ-প্রতিবাদের ভাষা প্রকাশের শ্বাশত সেই রাজপথ সহিংসতা এখনো আগের মতোই যেমন আছে, একই সাথে জ্বালাও-পোড়াও, ধবংসাত্নক নেতিবাচক রাজনৈতিক ও বিশৃঙ্খল কার্যক্রমও সমানভাবে জোরে-সোরে চলে আসছে।

একের পর হত্যাযজ্ঞ ঘটেই চলেছে, কখনোবা বন্ধুক দিয়ে গুলি করে, কখনোবা বোমা মেরে উড়িয়ে দিয়ে, কখনোবা গুপ্ত হত্যা, কখনোবা লঘি-বৈঠার নৃত্য করে হত্যার তান্ডব উৎসব প্রকাশ্য রাজপথে চলে,কখনো গুম করে, বাসা-বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয়- এই যে হত্যার মতো আদিম-বর্বর কায়দায় মানুষ হত্যা করার সামাজিক,রাজনৈতিক কু-সংস্কৃতি আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে চলে আসছে, তা থেকে রক্ষা কিংবা উত্তোরনের কোন পন্থা, কোন পথ, কোন ব্যবস্থা এখন পর্যন্ত কোন রাজনৈতিক দল, তাদের নানা সংগঠণ, সচেতন নাগরিক সমাজের কাছ থেকে তেমন জোরালো কোন বক্তব্য কিংবা পরিত্রাণের লক্ষ্যে কোন প্রতিবাদী কর্মসূচী এখন পর্যন্ত আসতে দেখিনি বা আমার নজরে আসেনি। অথচ, বাংলাদেশের সংঘাত-ময়, বিরাজমান রাজনৈতিক এবং আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে তা থেকে উত্তরণের পন্থা আরো আগে থেকে কাউকে না কাউকে শুরু করা উচিৎ ছিলো। এইভাবে একের পর এক বিশ্বজিৎ প্রকাশ্য দিবালোকে দা-চাপাতি-রড-ছুরি আর পিস্তল উচিয়ে, খুচিয়ে-খুচিয়ে, পিঠিয়ে আদিম-বন্য-জন্ত-জানোয়ারের মতো হিংস্র পন্থায় হত্যা করা হবে, আর আমরা অসহায় ভাবে চোখের জলে টেলিভিশনের পর্দায় দেখবো, তাতো হতে পারেনা ? এইভাবে আর কতো হত্যাযজ্ঞ চললে, নীতি-নির্ধারক আর প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকদের ঠনক নড়বে ?  অপরাধীদের আইনের আওতায় নিয়ে এসে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় নিয়ে এসে উপযুক্ত বিচারের ব্যবস্থা করা হবে? সময় এসেছে, আজকে এই সব প্রশ্নের যথাযথ জবাবদিহির এবং পক্ষ-পাতহীন ভাবে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করার।

কারণ, একের পর এক আদিম এই বর্বর হত্যাযজ্ঞের খেলা চলতে থাকলে, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে যেমন বিশৃঙ্খলা দেখা দিবে, একই সাথে সমাজের সুবিন্যস্ত কাঠামোও ভেঙ্গে পড়বে। মানুষের স্বাভাবিক মূল্যবোধ লোপ পেয়ে অসততায় ও আদিমতার পর্যায়ে চলে আসবে। ফলে ঘরে-ঘরে, পরিবারে-পরিবারে সংঘাত এবং হিংস্রতা বৃদ্ধিপাবে- যা আমরা কেউই সেই সব অশান্তি চাইনা। কিন্তু এইভাবে আর কতো?

বিশ্বজিতকে যে বা যারা প্রকাশ্য দিবালোকে খুন করেছে, তারা সকলেই অপরাধী এবং খুনী। এই সব খুনী এবং অপরাধীর কোন পরিচয়, কোন দলীয় ছত্র-ছায়া থাকতে পারেনা। আফসোস, স্ব-রাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থেকে, উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত এবং বৃহৎ রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় পর্যায়ের নেতৃত্ত্বের আসীন থেকে, যখন অপরাধী ও খুনীর পক্ষে প্রকাশ্যে সাফাই গাণ, তখন বড় অপমানিত ও লজ্জিত হই। লজ্জায় মুখ ঢাকার কোন পথ খোজে পাইনা। এই রকম জঘন্য অপরাধ সংগঠিত হওয়ার পরে ম খা আলমগীর কি করে সাফাই গেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঐ পদে এখনো সমাসীন থাকেন, আমার কিছুতেই বোধগম্য হয়না। এইসব লোকগুলো একেবারে মানবিক বিবেকশুন্য হয়ে আদিম ঐ খুনা-খুনির সংস্কৃতিকেই উৎসাহিত ও লালন করে চলেছে। তাই বলে এই রকম একজন বিবেকহীন ব্যক্তির কাছে গোটা জাতির বিবেকতো আর আত্নাহুতি দিতে পারেনা?

গত চল্লিশ বছরের বাংলাদেশের রাজনৈতিক, সামাজিক, আর্থিক অবস্থার দিকে একটু নজর দিলে স্বাভাবিকভাবে যে চিত্র চোখের সামনে ভেসে উঠে, আর তাহলো, আমাদের মাঝে প্রতিনিয়ত ঐ খুনা-খুনীর সংস্কৃতি ক্রমেই বেড়ে আজকের এই পর্যায়ে এসেছে। সন্দেহনেই, এইভাবে চলতে থাকলে, খুনা-খুনীর এই কু-সংস্কৃতি সকলের নাগালের বাইরে চলে যাবে। আজকে হয়তো একটু-আধটু প্রতিবাদ, মানব-বন্ধন,বিচারের দাবিতে সোচ্চার হতে দেখা যাচ্ছে, আগামীতে সেই সবের কিছুই আর অবশিষ্ট থাকবে কিনা সন্দেহ রয়েই যায়। কেননা, ৭০-দশকে যে খুনা-খুনী ছিলো শুধু মাত্র দলীয় কেন্দ্রীক, ৮০-র দশকে সেই খুনা-খুনী রাজনৈতিক এবং দলীয় আধিপত্য বিস্তারের সাথে মিশে ব্যবসায়িক এবং ক্ষমতায় আরোহন ও   প্রভাব বিস্তারের স্থান দখল করে আছে। আর আজকের দশকে সেই খুনা-খুনী সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে গিয়ে বিশ্ব মানব সভ্যতাকে করে তুলেছে প্রশ্নবিদ্ধ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগ এবং অধুনা কিছু এনজিও এই ব্যাপারে বেশ আশাব্যঞ্জক কাজ করলেও আমাদের সমাজের ও রাজনৈতিক অঙ্গনের এই বর্বর ও ন্যক্কারজনক খেলা থামানোর বা এ থেকে রক্ষার কোন উদ্দীপনা ও প্রেরণামূলক কার্যক্রম কাউকেই নিতে দেখা যায়নি।

কেননা, মানুষের মধ্যে সচেতনতা, মানবিক মূল্যবোধগুলো যদি জাগিয়ে তোলা না যায়, অন্যায়-অপরাধের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত প্রতিবাদী হাতকে সৃষ্টিশীল ফ্রেমের আওতায় নিয়ে এসে কার্য সৃষ্টি না করা যায়, তাহলে এই সব খুন-খারাবী, হত্যা-লুট একের পর এক বেড়েই চলবে। কেননা, শুধুমাত্র আইন এবং আইন প্রয়োগকারি সংস্থা দিয়ে সেই সব থেকে রক্ষা পাওয়া যাবেনা। তাছাড়া, যেখানে আমাদের মতো গরীব দেশে আইন এবং আইন প্রয়োগকারি সংস্থার কার্যক্রম ও এর ইতিহাস এই ব্যপারে খুব একটা আশাবাদী করেনা।

আজকে তাই আমাদের সর্বস্তরের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, এই কারণে যে, একের পর এক এই সব খুন-খারাবী আর চলতে দেওয়া যায়না। সেই লক্ষ্যে সচেতন নাগরিক সমাজকে দল-মত-নির্বিশেষে এগিয়ে আসতে হবেপ্রতিটি শহর, পাড়া,মহল্লায়, ওয়ার্ড-এ নাগরিক সচেতনতা মূলক কার্যক্রম পরিচালিত করতে হবে। বুদ্ধিবৃত্তিক কার্যক্রম যেমন বিভিন্ন উচ্চ শিক্ষামূলক প্রতিষ্টানসমূহে সুনির্দিষ্ট নীতিমালার মাধ্যমে পরিচালিত করতে হবে, একইসাথে সকল স্তরের জনগণকে এই জাতীয় উদ্দীপনামূলক কার্যক্রমে শরীক করতে হবে।

মনে রাখা দরকার, আপনার-আমার সন্তানদের আগামী ভবিষ্যৎ নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দময় করার জন্য ছোট-বড় কোন রাজনৈতিক দলসমূহ বোধগম্য কারণে এগিয়ে আসবেনা, বা তা করতে চাইবেওনা। তারা যদি তাই করে তাহলে তাদের নেতিবাচক, ধবংসাত্নক, লুট-পাটের রাজনীতি ও রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালিত করতে বাধাগ্রস্থ হবে, যাতে আপনারা সাধারণ জনগণ প্রতিনিয়ত হন তাদের বলির পাঠা। সময় এসেছে, আমরা যারা সাধারণ জনগণ, আর কখনো জেনে-বুঝে তাদের বলির পাঠা হতে যাবোনা।

 

সে জন্য ঃ-

০১) নাগরিক ফোরাম বা নাগরিক সমাজ ব্যপক সচেতনা সৃষ্টির লক্ষ্যে সরকারের উপর প্রতিনিয়ত চাপ অব্যাহত রাখা, যাতে অন্ততপক্ষে বিশ্বজিৎ হত্যাকান্ডের সাথে যারা জড়িত তাদেরকে নিরপেক্ষ তদন্তের আলোকে সুষ্টু ও প্রভাবমুক্ত বিচারের আওতায় নিয়ে এসে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করে এর রায়ের ব্যবস্থা করা। সেজন্য নাগরিক সমাজের বিভিন্ন সেক্টরের পরীক্ষিত এবং অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে বিভিন্ন ছোট-ছোট উপ-কমিটি গঠণ করে সুনির্দিষ্ট ছক বা পরিকল্পণা মোতাবেক কার্যক্রম পরিচালনা করা। যেমন আইন উপ-কমিটি শুধু মাত্র নির্দিষ্ট এজেন্ডার আলোকে আইনী সহায়তা যেমন দিবে, একই সাথে তথ্য-উপ-কমিটির সাথে সমন্বয় সাধন রেখে চলবে। একই রকমভাবে সরকারের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সাথে যোগাযোগ ও চাপ প্রয়োগের জন্য থাকবে আলাদা উপ-কমিটি। আর সম্মিলিতভাবে কেন্দ্রীয় নাগরিক সমাজ বা ফোরাম অথবা তাদের মনোনীত কমিটি সরকারের প্রধান ব্যক্তির সাথে লিয়াজো করে এই একটি ক্ষেত্রে আইনের প্রয়োগ যাতে যথাযথ ভাবে করা যায়, সেই চাপ অব্যাহত ও কমিটম্যান্ট যতক্ষণ না পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়, তার ব্যবস্থা অব্যাহত রাখা।

০২) নাগরিক সমাজ তাদের প্রচার-উদ্দীপনামূলক এই কাজকে জাতীয় পর্যায়ে নিয়ে গিয়ে সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা।

০৩) প্রতিটি জেলায় দলীয় রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত এবং দল-মত-নির্বিশেষে সর্বস্তরের জনগণকে এই কাজে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে ৭ বা ৯ সদস্যের বা ১১ সদস্যের কমিটি করে প্রচার-উদ্দীপনামূলক কার্যক্রম পরিচালনার ব্যবস্থা করা। প্রাথমিক কাজ হবে বিশ্বজিতের হত্যাকান্ডের সুষ্টু বিচার এবং পর্যায়ক্রমে খুন-খারাবী,লুট-পাট,নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে জনমত তৈরী ও শিক্ষামূলক ও অপরাধের বিরুদ্ধে মানবিক মূল্যবোধ জাগরনের কার্যক্রম পরিচালনা করা।

০৪) প্রতিটি জেলার এই কমিটি তাদের অধীনস্ত পাড়া-মহল্লা-ওয়ার্ড-এ ছোট-ছোট ৫ বা ৭ জনের বিভিন্ন উপ-কমিটি করে মানবিক মূল্যবোধ বিকাশের কার্যক্রম প্রচার ও প্রেরণা জাগানোমূলক কাজ করা

০৫) প্রতিটি জেলা তাদের অধীনস্থ থানা,উপজেলায় ছোট ছোট কমিটি করে এই সব সুনির্দিষ্ট কাজের প্রচার করা

০৬) আবার প্রতিটি থানা, উপ-জেলা তাদের অধীনস্ত গ্রাম-পাড়ায় একই ধরনের ছোট ছোট কমিটি করে প্রচার কার্যক্রম পরিচালিত করা।

এইভাবে একটি মাত্র ইস্যু নিয়ে জাতীয় উদ্দীপনা সৃষ্টি করে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌছাতে সমস্ত জনগণকে সম্পৃক্ত করে এগিয়ে যাওয়া কোন কঠিণ কাজ নয়।

আমাদের মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশে হাজারো সমস্যায় জর্জরিত। একক কোন প্রচেষ্টায়, এককভাবে এই সব বিরাজমান সমস্যাসমূহ রাতারাতি সমাধান করা সম্ভব নয়।

আমাদের লক্ষ্য হবে, একটাই বিশ্বজিৎ হত্যার সুষ্টু বিচার। অপরাধী যেই হউক তাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। কোন বাধাই এখানে বাধা হয়ে ঠিকে থাকতে পারবেনা। অন্তত এই একটা অপরাধের ক্ষমাহীন সুষ্টু বিচারের ব্যবস্থা করা হউক, ইনশাআল্লাহ এই সব হায়েনারূপী পশুসূলভ অপরাধ-এর মাত্রা রাতারাতি কম না হউক, টুঠি টিপে ধরতে পারার কারণে এর মাত্রাগত কম হতে বাধ্য হবে।

পাশাপাশি, অপরাধ, খুন, লুট, ধর্ষন-এর বিরুদ্ধে আমাদের জাতীয় উদ্দীপনা মূলক কার্যক্রমও পরিচালিত করতে হবে।

সেই লক্ষ্যে, সমাজ বিজ্ঞানী, মনোবিজ্ঞানী, রাষ্ট্র-দার্শনিকদের সমন্বয়ে ব্যপক আলাপ-আলোচনা করে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা তৈরী করে প্রচার, প্রেষণামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা। সেই সব নীতিমালা হতে হবে বা হওয়া প্রয়োজন সেই সবের আলোকে, যেমন-

০১) রাষ্ট্র- কোন অপরাধকে এবং অপরাধীকে লালন করবেনা- সেই প্রচার, এবং জনগণের মধ্যে সচেতনতা জাগ্রত করার লক্ষ্যে উদ্দীপনামূলক কার্যক্রম পরিচালনা

০২) সমাজ- অপরাধ, খুনী এবং নারী নির্যাতনের সহায়ক হবেনা, সেই লক্ষ্যে সামাজিক উদ্দীপনামূলক প্রচার কার্যক্রম পরিচালনা করা

০৩) খুন, বর্বরতা,নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে ব্যপক আইনী প্রটেকশন সামাজিক, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে প্রদানের ক্ষেত্র তৈরী করার লক্ষ্যে একটি সেক্টর টার্গেট করে রাষ্ট্রীয় এবং সামাজিক নিরাপত্তা ( সিক্যুউর) ব্যবস্থা করার কাজ করা

০৪) খুনী, লুটেরা যেই হউক তাকে আইনের কাঠগড়ায় নিয়ে আসার জন্য সমাজ, রাষ্ট্র, নাগরিকদের মধ্যে মজবুত ঐক্য গড়ে তোলার লক্ষ্যে কার্যক্রম পরিচালনা করা।

এখানে বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখা দরকার, লক্ষ্য ও নীতি-মালা যত ব্যপকভাবে বর্ণনা ও উপস্থাপিত হউক না কেন, টার্গেটকৃত কাজ এবং এর বাস্তবায়ন সুনির্দিষ্ট, সংক্ষিপ্ত এবং যত কম করা যায়, ততো ভালো, বিশেষ করে আমাদের মতো দেশের বিরাজমান বহুল সমস্যার প্রেক্ষাপটে এই দিকে বিশেষ নজর রাখতে হবে। কারণ এক সাথে যদি বেশ কিছু প্রোগ্রাম হাতে নেওয়া হয়, তাহলে কোন ফলতো হবেইনা, বরং জগাখিচুড়ী হয়ে ২০০৮ সালের ঐ তত্বাবধায়কদের মতো কাচা-পাকা আঙ্গুর ফল ঠকে পর্যবসিত হতে বাধ্য হবে।

তাই সকলকে বিবেচনায় নিতে হবে, যেমন-

আশু বা স্বল্প কিংবা অতি জরুরী একশন বা কার্যসূচী

ক) অবিলম্বে উচ্চ পর্যায়ের নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে বিশ্বজিতের প্রকৃত খুনীদের চিহ্নিত করে, গ্রেপ্তার করে, যথাযথ আইনের মাধ্যমে, দ্রুততম সময়ের ভিতরে, বিশেষ অধ্যাদেশ করে হলেও, বিচারের কাজ সম্পন্ন করে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান-এর ব্যবস্থা করা।এ লক্ষ্যে যা যা করণীয়, নাগরিক সমন্বয়ের মাধ্যমে, বিভিন্ন উপ-কমিটির মাধ্যমে সত্যিকারের প্রেষণামূলক প্রচার কার্য ও কর্মপরিকল্পণা বাস্তবায়ন, কৌশল, চাপ, প্রয়োগ ও অব্যাহত রাখা।

খ) বিশ্বজিতের বিচারের মধ্যদিয়ে গোটা অপরাধী ও খুনীদের কাছে পরিস্কারভাবে একটাই সিগন্যাল জাতীয়ভাবে দেওয়া, বাংলাদেশ আর কোন খুনী, লুটেরাদের প্রশ্রয় দিবেনা।

গ) বিশ্বজিতের হত্যার বিচার কার্য সম্পন্নের মধ্য দিয়ে উক্ত নাগরিক কমিটি/কমিটি সমূহকে সংশ্লিষ্ট একটি সেক্টরের একটি অংশ যথাযথভাবে শোধরানোর বা শুদ্ধি অভিযান পরিচালনা, আইনগত, প্রশাসনিক, রাষ্ট্রীয় এবং সামাজিকভাবে কি ভাবে ও কি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ আইনী প্রাতিষ্টানিক কাঠামোর মধ্যে পরিচালিত করা যায়,-এই ক্ষেত্র থেকেই টার্গেট করতে হবে দ্বিতীয় স্তরের কাজ বা পর্যায়ক্রমিক একশন বা কার্য। আর এক্ষেত্রেও হবে ঐ একটি অংশের সত্যিকারের গণতান্ত্রিক কাঠামোর মধ্যে নিয়ে এসে পরিচালনার কাজ।

স্বল্প মেয়াদী কাজের দ্বিতীয় পর্যায়-

 

উল্লেখিত গ-এর কাজ সম্পন্নের মাধ্যমে এর ধারাবাহিকতা কি করে রক্ষা করা যায়, এবং এর অন্যান্য আরো একটি অংশকে কোন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট করে গণতান্ত্রিক দায়বদ্ধতা ও কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসা যায়, সেই উদ্দীপনা ও প্রেষিতমূলক কাজ অব্যাহত রাখা। এই পর্যায়ে হতে হবে অনেক সংবেদনশীল, অনেক কৌশলী এবং আরো সুশৃঙ্খল এবং গণসংযোগমুখী।

এখানে যে কথাটি আপনাকে-আমাকে-সকলকে অত্যন্ত যত্নের সাথে মনে রাখতে হবে, আমাদের দেশের বিরাজমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় আওয়ামীলীগ ও বিএনপি-নামক বড় এই দুই দলের কাঠামোর ভিতরে এবং বাইরে ও এদের সকল তিক্ত বাস্তবতা ও স্বার্থ-সংশ্লিষ্টতা পুরোপুরি মেনে নিয়েই নাগরিক সমাজকে কাজ করে যেতে হবে। জনগণকে সম্পৃক্ত করে বাংলাদেশের বৃহৎ সৃজনশীল তরুণদের একীভূত ও উদ্দীপ্ত করে এগিয়ে গেলে সফলতা অবশ্যই আসবে। কারণ, আওয়ামীলীগ-বিএনপি-জাতীয়পার্টি-জামায়াত রাজনীতির সাথে যারা জড়িত, তাদের ছাড়াও বাংলাদেশের সিংহভাগ জনগণ এবং এর তরুণ সমাজকে একীভূত ও উদ্ভূদ্ধ করতে পারলে, সহজেই দেশ থেকে সকল জঞ্জাল ধীরে-ধীরে সাফ করে উন্নতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া কেবলমাত্র সময়ের ব্যপার,কঠিণ কোন কাজ নয়।

এ ভাবে আসবে নীতিমালা ও কাজের আলোকে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী কাজ বা টার্গেট।

বাংলাদেশের হাজারো-লাখো-কোটি জনতার সাথে আমিও চাই বিশ্বজিৎ সহ সকল নাগরিক হত্যার সুষ্টু বিচার। ওয়েব, কাগজ, আর মিডিয়ায় বারে বার লিখে বা বিপ্লব ঘটিয়েও এ ধরনের পৈশাচিক হত্যাকান্ডের সুষ্টু বিচার যেমন করা যাচ্ছেনা, একইভাবে এই সব আদিম বর্বর কায়দায় প্রকাশ্য দিবালোকে নাঙ্গা-তলোয়ার হাকিয়ে মানুষ খুনের এই বেপরোয়া কু-সংস্কৃতি দিনে দিনে বৃদ্ধি পেয়েই চলছে।

আমি বিশ্বাস করি, দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, প্রতিটি মানুষের ভিতরেই সুপ্ত রয়েছে একটি সুন্দর সংবেদনশীল মনন ও সৃজনশীল অবস্থা। তার ভিতরের পশুসূলভ দুষ্টু উপাদানকে হঠিয়ে দিয়ে সুন্দর, সংবেদনশীল, সৃজনশীল বৈশিষ্ট্যকে জাগিয়ে তুলতে হলে চাই- সুন্দর পরিবেশ, সুন্দর অবস্থা, সুন্দরের চর্চা। আমি আরো বিশ্বাস করি, মানুষের ভিতরকার এই সুন্দর অবস্থাটিকে জাগ্রত করতে প্রকৃত জাতীয় জাগরণমূলক, উদ্দীপনা মূলক প্রচার কার্যক্রম যদি একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও নীতিমালার মাধ্যমে যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সম্পন্ন করা যায়, জনগণ এবং তরুণ সমাজকে সম্পৃক্ত করে এগিয়ে নেয়া যায়, আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনের এই অধঃপতিত অবস্থা থেকে অবশ্যই আমরা ধীরে ধীরে উঠে আসতে পারবো- এতে কোন সন্দেহ নেই।

Salim932@googlemail.com

17th December 2012.UK

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *