মাহে রমজানের অফুরন্ত ফজিলত নিয়ে কিছু কথা-

মাহে রমজানের অফুরন্ত ফজিলত নিয়ে কিছু কথা-

মাহে রমজানের অফুরন্ত ফজিলত নিয়ে কিছু কথা  

সৈয়দ শাহ সেলিম আহমেদ

মাহে রামাদান বা রমজান মাস মুসলমানদের জন্য আল্লাহর তরফ থেকে এক বিশেষ রহমত স্বরূপ।কোরআন এবং হাদীসে এই রমজান শরীফ সম্পর্কে সুস্পষ্ট বিধান এবং প্রতিটি সক্ষম মুসলমান নর-নারীর উপর এই রোযা বা সিয়াম সাধনা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে,সাথে সাথে এর অসংখ্য ফজিলত বর্ণনা করা হয়েছে।এক রেওয়াতে বর্ণনা করা হয়েছে,রোজাদারের পুরুস্কার স্বয়ং আল্লাহপাক তার বান্দাদেরকে প্রদান করবেন।অন্য এক হাদীসে বর্ণনা করা হয়েছে রোযা মুমিনের জন্য ঢাল স্বরুপ।

এই রমজান মাস আল্লাহর তরফ থেকে বান্দার জন্য রহমত-বরকত-মাগফেরাত হিসেবে অভির্ভূত হয়ে থাকে।হাদীস শরীফে(সহীহ বোখারী,সহীহ তিরমিযি,ইমাম হাম্বলী,ইবনে ক্বাসীর,প্রভৃতি)বর্ণিত আছে, বিশেষ করে সাহাবী ক্কাআব বিন ঊজাইর রাজি আল্লাহু তাআলা আনহু হতে বর্ণিত আছে যে, একদা জুমআর খুৎবা প্রদানের জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মিম্বরের প্রথম সিড়িতে পা রাখেন,তখন বলেন আমীন,দ্বিতীয় সিড়িতে যখন পা রাখেন,তখন বলেন আমীন,তৃতীয় সিড়িতে যখন পা রাখেন,তখন বলেন,আমীন।নামায শেষে সাহাবীরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এই তিনবার অস্বাভাবিক ধরনের আমীন,আমীন,আমীন বলার কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন,আমি যখন মিম্বরের প্রথম সিড়িতে পা রাখি,তখন জিব্রাইল আলাইহিসাল্লাম ওহী নিয়ে আসেন,বলেন,হালাক বা ধবংস হয়ে যাক, সেই সব ব্যাক্তি,যে রমজান মাসের রোযা পেলো অথচ গুনাহ মাফ করাতে পারলোনা,এর জবাবে আমি বললাম আমীন।দ্বিতীয় সিড়িতে পা রাখার সময় জিব্রাইল বললেন,ধবংস হয়ে যাক,সেই সব,যার সামনে আমার নাম নেওয়া হলো অথচ দুরুদ শরীফ পড়লোনা,জবাবে বলেছি আমীন । তৃতীয় সিড়িতে যখন পা রাখলাম,জিব্রাইল বললেন,ধবংস হয়ে যাক,সেই সব যে বা যারা তার মা-বাবা কিংবা উভয়ের যেকোন একজনকে পেলো অথচ তাদের খেদমত করে জান্নাত হাসিল করতে পারলোনা,জবাবে বলেছি আমীন।

প্রিয় পাঠক ভেবে দেখুন ফেরেশতাদের সর্দার জিব্রাইল আল্লাহর তরফ থেকে ওহী নিয়ে দোয়া করেছেন আর নবী-রাসূলদের সর্দার,সারা বিশ্বজাহানের জন্য রাহমাতুল লীল আলামীন,বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দোয়ার জবাবে বলেছেন আমীন।আসমান-জমীন ধবংস হয়ে যেতে পারে,কিন্তু আল্লাহর রসূলের আমীন কিছুতেই মিথ্যে হতে পারেনা।বলা যায় আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই দোয়াতে সীল বা মোহর মেরে দিয়েছেন। এই হাদীসের শুরুতেই বলা হয়েছে রমজান শরীফের কথা।রমজান মাস যখন শুরু হয়, তখন আল্লাহ পাক এই মাসের প্রথম রাতেই দশ লক্ষ বান্দাদের মাফ করে দেন,যাদের জন্য জাহান্নাম ওয়াজিব হয়ে আছে, এমন সব গুণাহগারদের মাফ করে দেন,লাইলাতুর ক্কদরের রাতে অসংখ্য,অগণিত বান্দাদের মাফ করে দেন,আর শেষ ২৯ তারিখ রাতে সারা মাসের যত মাফ করা হয়েছে তার দ্বি-গুন, আর ঈদের রাতে আরো দ্বি-গুন বান্দাদের গূনাহ মাফ করে দেন বলে হাদীসের বর্ণনায় রয়েছে।তবে ক্কবীরা গূনাহের জন্য তওবা করে মাফি চাওয়ার কথা বলা হয়েছে।

সাহাবী হযরত আবু হূরাইরা রাজি আল্লাহু তাআলা আনহু হতে বর্ণিত আছে যে, যে বা যারা পূর্ণ আন্তরিকতা ও বিশ্বাসের সাথে রমাজান মাসে দিনের বেলা যাবতীয় পাণাহার থেকে বিরত থাকবেন, রোযা রাখবেন, রাতের বেলা পরিপূর্ণ ঈমানের সাথে নামায পড়বেন, এবাদত-বন্দেগী করবেন, লাঈলাতুল-ক্কদরের রাতে জেগে এবাদত-বন্দেগী করবেন, আল্লাহ আজ্জা ওয়াজাল্লাহ বান্দার পেছনের সব গূণাহ মাফ করে দেবেন।ইমাম বোখারী, ইমাম মালেক, তিরমি্যি, ঈমাম আহমদ ইবনে হাম্বল,মুসলিম শরীফ, ইমাম আবু হাণিফা,আবু দাঊদ, বায় হাক্কী, যোয়াব আল ঈমাণ সহ প্রভৃতি কিতাবের অধিকাংশ হাদীস ব্যাখ্যাকারীদের উদ্ধ্বৃতিতে এই হাদীসের সত্যতা নির্ভুল ভাবে পাওয়া যায়।

হযরত আবু হোরাইরা রাজি আল্লাহু তাআলা আনহু আরো বর্ণনা করেছেন, রমজান মাসে বেহেশতের দরজা খুলে দিয়ে দোজখের দরজা যেমন বন্ধ করে দেওয়া হয়, একই সাথে সকল শয়তান ও জ্বীনদের তালাবদ্দ্ব করে রাখা হয়।রমজানের প্রতিটি দিন ও রাতে অসংখ্য অগণিত বান্দাদেরকে আল্লাহ পাক দোজখের আজাব থেকে মাফ করে দিতে থাকেন।

 

এই রমজান মাসে কেউ একজন রোযাদারকে এক ফোটা দুধ বা পানি বা খেজুর দিয়ে ইফতার করালে আল্লাহ পাক তাকে দোযখের আযাব থেকে মাফ করে দিবেন, তাকে ঐ পরিমাণ রিওয়ার্ড দিয়ে ভূষিত করা হবে, আল্লাহ পাক তাকে বেহেশতের ফাউন্টেন বা কউত্ত্বর থেকে পান করাবেন,যা কখনো সে তৃষ্ণার্ত হবেনা, এবং তা বেহেশতে প্রবেশ পর্যন্ত অনুভূত হবে।আবু হূরাইরা হতে আরো বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মাগফেরাতের দোয়া রমযানের শেষ রাতে গ্রান্ট হয়েছে,সাহাবীরা জিজ্ঞেস করলে ওটা লাইলাতুল ক্কদরের রাতে কিনা বললে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, না, কারণ আল্লাহ পাক তার বান্দার মজুরী রমজান পূর্ণ হওয়ার সাথে সাথেই দিয়ে দেন।বলাই বাহূল্য হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পূর্ণ নির্মল ও নেক শ্রেষ্ট নবী হওয়া সত্ত্বেও রমজানে আল্লাহর দরবারে এতো এবাদত বন্দেগী করেছেন, আর আমরাতো উনার উম্মত, আমাদেরও আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য বেশী- বেশী করে ইবাদত-বন্দেগী করা উচিৎ।

রমজান মাসের প্রতিটি সময়, প্রতিটি ক্ষণ অত্যন্ত মূল্যবান। অন্য যে কোন মাসে যেমন নির্দিষ্ট সময় বা শেষ রাতে বা তাহাজ্জুদের সময় বান্দার দোয়া কবুল হওয়ার কথা বলা হয়েছে, কিন্তু রমজান মাসে প্রতিটি সময় বান্দার দোয়া ক্কবুল হওয়ার কথা বলা হয়েছে।দিনে-রাতে আল্লাহ পাক তার রহমতের তজল্লী খুলে বান্দার নিকটবর্তী হয়ে গূণাহগার বান্দাদেরকে মাফ করে দিতে আছেন এবং তা চলতে থাকবে অনবরত একেবারে ঈদের রাত তথা জামায়াত পর্যন্ত।

এই রমজান মাসে শেষ দশ দিনের মধ্যে বেজুড় এক রাত লাঈলাতুল ক্কদরের রাত নামে কোরআন ও হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, যা হাজারো-লক্ষকোটি রাতের এবাদত বন্দেগীর চাইতে উত্তম রাত।লাঈলাতুল ক্কদরের রাতের ইবাদত বন্দেগীর অফুরন্ত ফজিলত বহু কিতাবে উলামায়ে কেরামবৃন্দ হাদীস শাস্র থেকে আলোকপাত করেছেন, তা আমরা সকলেই কম-বেশী জানি।একাগ্র চিত্তে এই রাতে এবাদত করলে বান্দার গোণাহ মাফ করে দেন আল্লাহ পাক।হাজারো রাত্রির এবাদতের চাইতে এই রাতের এবাদতের মর্যাদা সর্বোচ্চ, বলা যায়, আল্লাহ পাক রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই ওয়াসাল্লামের উম্মতদেরকে আগেকার নবী রাসূলদের উম্মতদের তুলনায় একরাতের নফল এবাদতের সাথে তখনকার উম্মতদের শত-হাজারো বছরের এবাদত বন্দেগীর উপরে অধিক মর্যাদা দিয়েছেন।সূরা দোখান এবং সূরা ক্কদরের বর্ণনা থেকে এই রাতের বিশেষ মাহাত্ম্য প্রতিফলিত হয়।

এই রমজান মাসেই কোরআন শরীফ নাযেল হয়েছিলো।সুতরাং আমাদের সকলের উচিৎ রমজানে বেশী বেশী করে কোরআন তেলাওয়াত করা।যারা কোরআন পড়তে পারেননা তাদের উচিৎ হলো মসজিদ, মক্তবের বা মাদ্রাসার ইমাম সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করে কোরআন তেলাওয়াত শিখে নেওয়া, এতে কোন দূষ নেই বরং অধিক সোওয়াব। যাদের হাতে সময় অল্প, বিভিন্ন প্রফেশনাল ও পারিবারিক কারণে ব্যাস্থ , তাদেরও উচিৎ অন্তত দিনে-রাতের কিছুটা সময় হলেও কোরআন তেলাওয়াত করা, একান্ত অপারগ হলে অন্তত সূরা ঈয়াসীণ, সূরা দোখান, সূরা মূলক, সূরা ক্কাহফ-এই সব ফজিলত ওয়ালা সূরা তেলাওয়াত করা।সূরা ঈয়াসীণকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমগ্র কোরআনের সারাংশ তথা কোরআনের হার্ট বলেছেন এবং তা তেলাওয়াতে মাগফিরাত লাভ হয়ে থাকে বলে উল্লেখিত আছে, একথা পাওয়া যায় মসনূদ ইমান,পৃষ্টা নং ২৮৬, ভলিউম-৭, হাদীস ২০৩২২- এ ।এই সূরা তেলাওয়াতের অসংখ্য সাক্ষাত ফজিলত রয়েছে।কোন পেরেশান ব্যাক্তি যদি সূরা ঈয়াসীণ তেলাওয়াত করেন, তবে সূরা তেলাওয়াতের শেষ হওয়ার আগেই ইনশাআল্লাহ তিনি এই সূরা তেলাওয়াতের ফললাভ করবেন,দেখা যাবে তার অনেক প্রশান্তি ফিরে এসেছে, এটা হাদীস শরীফে যেমন বর্ণিত হয়েছে, একইভাবে অনেকের বাস্তব জীবনেও তাই হয়েছে।সূরা দোখান রাতের বেলা তেলাওয়াত করলে আল্লাহ পাক বান্দার পেছনের গোনাহ মাফ করে দেন।জামে তিরমিযির পৃষ্টা নম্বর ৪০৬ এর ভলিউম নম্বর ০৪ এর ২৮৯৭ নম্বর হাদীস শরীফে বলা হয়েছে,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে কেউ সূরা দোখান যে কোন রাতের বেলা পড়লে ৭০,০০০ ফেরেশতা অনবরত তার মুক্তির জন্য দোয়া করতে থাকেন।একই কিতাবের ৪০৭ নম্বর পাতায় ২৮৯৮ নম্বর হাদীস থেকে জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাতের বেলা অর্থাৎ সোবে জুমা বারে এই সূরা তেলাওয়াত করলে আল্লাহ পাক বান্দার গূনাহ মাফ করে দেন।   

রমজান মাসে যেকোন এবাদতের দ্বিগুণ সওয়াব রয়েছে।অন্য যেকোন মাসের নফল এবাদতের চেয়ে রমজান মাসে এক রাকায়াত নফল এবাদতের ৭০ গূণ সওয়াবের কথা হাদীসে বলা হয়েছে, অন্য যেকোন মাসের ফরজ এক রাকায়াতের ৭০০ গূণ সওয়াব প্রদানের কথা বর্ণিত হয়েছে।কোন কোন রেওয়াতে এক রাকাতের বদলে ১৭০০ রাকাতের সওয়াবের উল্লেখ রয়েছে।সব চাইতে বড় কথা, স্বয়ং আল্লাহ পাক ঘোষণা করেছেন, রোযা আমারই জন্য, আর আমিই এর প্রতিদান দেবো।পবিত্র তিরমিয শরীফে সাহাবী হযরত আবু হূরাইরা রাজি আল্লাহু তাআলা আনহূ হতে বর্ণিত আছে যে, রোযাদারের দোয়া আল্লাহ পাক কবুল করে থাকেন।আম্মাজান আয়েশা রাজিয়াল্লাহু তাআলা আনহুমা হতে বর্ণিত আছে যে, রমজান মাস এলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চেহারার রঙ পরিবর্তন হয়ে যেতো, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেশী বেশী করে দোয়া করতেন, নামায, তেলাওয়াত করতেন বেশী বেশী করে।রমজান মাসের শেষ দশ দিন এতেকাফের বিশেষ ফজিলত সম্পর্কে হাদীসে বলা হয়েছে, এর ফলে দুই হজ্জ্বের সওয়াব লাভ করা যায়।সব চাইতে বড় কথা হলো, এতেকাফের ফলে বান্দার ভাগ্যে লাইলাতুল কদরের মহিমান্বিত রজনী ভাগ্যে জুটে থাকে, যা হাজার বছরের রাতের এবাদতের চাইতে উত্তম,ফলে বান্দার গোনাহ আল্লাহ পাক মাফ করে দেন।

রমজান মাসে এশার নামাজের পর জামায়াতের সাথে তারাবীহ নামায আদায় করা বিশেষ ফজিলত এবং সূন্নত হিসেবে বিশেষ মর্যাদা রয়েছে।বেশ কয়েক বছর ধরে দেশে-বিদেশে এক শ্রেণীর টেলিভিশন চ্যানেলে এবং মিডিয়াতে দেখা যায়,অহেতুক কিছু রেফারেন্স টেনে বিভিন্ন মাযহাবের কথা বলে তারাবীহ নামায বিশ রাকাত,কারো কারো জন্য আট রাকায়াত, আবার কারো কারো জন্য বিশেষ চার রাকায়াতের কথা বেশ জোরে-শোরে বলা হয়ে থাকে।এই নিয়ে দেখা যায় অনেকের মাঝে বিভ্রান্তি।

এই ব্যাপারে হযরত আবু হুরায়রা রাজিয়াল্লাহু আনহু,যাকে হাদীস শাস্রের সবচাইতে নির্ভর যোগ্য সর্বাধিক হাদীস উপস্থাপক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে সহীহ বোখারী শরীফ,মুসলিম শরীফ,তিরমিযি শরীফ,ইমাম আবু হাণিফা,ইমাম মালেক,ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল,ইমাম ক্কাসীর,আবু দাঊদ,বায়হাক্কী,ষোয়াব-আল-ঈমান,কাণজুল ঈমান,ইত্যাদিতে-তিনি বলেছেন,রাসূল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,যিনি বা যারা রমজান মাসে দিনের বেলা সকল প্রকার পাণাহার থেকে বিরত থাকবেন,পূর্ণ বিশ্বাস ও আন্তরিকতার সাথে আল্লাহর কাছ থেকে পুরস্কার বা মাফি চাইবেন,রাতের বেলা নামায-এবাদত করবেন,লাঈলাতুল ক্কদরের রাতে এবাদত করবেন,আল্লাহ পাক তাকে বা তাদেরকে মাফ করে দিবেন।তিনি আরো বলেছেন,রমজান মাসে জান্নাতের দরজা খুলে দেওয়া হয়,শয়তানকে তালাবদ্দ্ব করে রাখা হয়।এখানে নামায বলতে তারাবীহকে বুঝানো হয়েছে।রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিশ রাকায়াত তারাবীহ পড়েছেন বলে তিনি উল্লেখ করেছেন তার বর্ণিত হাদীসে,পরবর্তীতে হাদীস ব্যাখ্যাকারীরা আবু হুরায়রার হাদীসকে সবচাইতে নির্ভর যোগ্য বলেছেন।

হযরত সাঈব বিন য়্যাযিদ বলছেন, আমরা সাহাবীরা বিশ রাকায়াত তারাবীহ নামায পড়তে অভ্যস্থ হয়েছিলাম এবং খলিফা হযরত ওমর ইবনূল খাত্তাব-এর সময় থেকে সর্ব সম্মত ভাবেই বিশ রাকায়াত তারাবীহ পড়ার স্বীকৃতি প্রতিষ্টিত হয়ে যায়(এটা মিরক্কাত আল মাফাতিহ-আনওয়ারুল হাদীস গ্রন্থের ভলিয়ূম ২ এর পৃষ্টা ১৭৫ এ বর্ণিত হয়েছে)।

সাহাবী হযরত যাইয়দ ইবনে রুমান রাজিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, হযরত ওমর ইবনূল খাত্তাবের সময় থেকেই রমজানে ২৩ রাকায়াত(২০ রাকায়াত তারাবীহ,তিন রাকায়াত ভিতর নামায) প্রচলিত হয়ে আসছে,যা আমরা অভ্যস্থ ছিলাম।

একই রকম বিশ রাকায়াতের বর্ণনা আল্লামা আলা দীন আবু বকর ইবনে মাসূদ  আল ক্কাসানী এবং বদর-আল-দীন এর ঊম্মাতুল ক্কারী গ্রন্থের হাদীসের বর্ণনাতে বিশ রাকায়াত তারাবি নামাযের কথা বলা হয়েছে,রাসূলুল্লাহর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রেফারেন্স থেকে উদ্বৃত হয়েছে।

ইমাম তিরমিদি বলেছেন তিনির তিরমিদি শরীফে চ্যাপ্টার ওরশীপিং নাইটস অফ দ্য রামাদান পৃষ্টা ৯৮ তে বলেছেন, মেজরিটি সকল স্কলার,খলিফা, ইমাম,হাদীস বয়ানকারী,সাহাবী রাজিয়াল্লাহু আনহু সকলেই একমত তারাবীহ নামায বিশ রাকায়াত।ঊমর-আল ফতোয়াতে হযরত আলী রাজিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু সহ অন্য সকল সাহাবী বিশ রাকায়াতের কথায় মতামত দিয়েছেন।ইমাম আব্দুল্লাহ ইবনে মোবারক,ইমাম সূফিয়ান আল তাওহরী,ইমাম শাফি, সহ অন্য সকল ইমাম তারাবীহ বিশ রাকাত বলে অভিমিত জোর দিয়ে উল্লেখ করে মতামত প্রদান করেছেন।

বাবুল ফেইথ ঈনায়া এ শরীয়াই নূক্কায়ায়হ ইমাম মোল্লা আলই আল ক্কারী ইমাম বায়হাক্কীর অনুরুপ বিশ রাকাত তারাবীহ বলে মতামত দিয়েছেন,যেখানে তাদের মতে হযত আবু বকর,হযরত ওমর,হযরত আলী,হযরত ওসমান রাজিয়াল্লাহু আনহুদের রেফারেন্স টেনে মতামত বর্ণিত হয়েছে।

একইভাবে তাতোয়াই মারাক্কাই আল ফতোয়া(পৃ-২২৪)বলা হয়েছে আমীরুল মো-মেনীন হযরত আবু বকর রাজিয়াল্লাহু আনহু বিশ রাকায়াত তারাবীহ   পড়েছেন এবং সেভাবে সকলেই পড়েছেন,বিশ রাকায়াতের ব্যাপারে খলিফা নির্দেশ দিয়েছিলেন।

যেইয়ি আল দীন ইবনে ণোজাইম আল মিসরী,ইমাম হানাফী,ইমাম শাফেই,ইমাম গাজ্জালী,ফতোয়াই আলমগীরী,ইবনে আবেদীন আল শামী, সহ অসংখ্য সাহাবী,ইমাম,ফতোয়ার গ্রন্থে তারাবীহ বিশ রাকায়াত বলে অভিমত দেওয়া হয়েছে।ফতোয়া আলমগীরীর সাথে ফতোয়াই সিরায়ায়াইতে ও একই কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

হযরত ওমর ইবনূল খাত্তাব,হযরত ওবাঈব অবনে ক্কায়াব একই মত দৃঢ়তার সাথে উল্লেখ করেছেন।(হাদীসের রেফারেন্স গ্রন্থ ফিক্কাহ আল মিল্লাহ,হযরত আল্লামা মুফতী জালাল আদ দীন ,দিল্লী থেকে ২০০১ ১৪২১ হিজরী প্রকাশিত)

সুতরাং দেখা যাচ্ছে তারাবীহ নামায বিশ রাকায়াত বলে সঠিক এবং এতে কম-বেশী করার কোন মানে হয়না।তাছাড়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজানে রাত ব্যাপী দীর্ঘ লম্বা নামায পড়েছেন,রাসূলুল্লাহর সকল সাহাবীহ রাজিয়াল্লাহু আনহু গণও একই মত পোষণ করেছেন।

রমজান মাসে সেহরী খাওয়া ও সূন্নত।তাবরানীর সোর আল সূহর কিতাবে সাহাবী ইবনে উমর রাজি আল্লাহু তাআলা আনহু হতে জানা যায়, তিনি বলেছেন, অবশ্যই আল্লাহ পাক এবং তার মালাইকা তথা ফেরেশতারা প্রতিনিয়ত মাফি প্রেরণ করেন যারা রমজান মাসে রাসূলুল্লাহর সূন্নত সেহরী খেয়ে থাকেন।

সেহরী খাওয়া যেমন সূন্নত একই সাথে এবাদত-বন্দেগীর ব্যাপারে এতে বিশেষ সহায়ক, ফলে যেমন আল্লাহর সাথে সরাসরি কথা বলার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই ওয়াসাল্লামের সূন্নত তাহাজ্জুদ পড়ার সূযোগ হয়, একই সাথে ফজরের নামায পড়ার ও সুযোগ লাভ করাযায়।এবং হাদীস শরীফে বলা হয়েছে সেহরী তাহাজ্জুদ ও ইফতারের সময় বান্দার দোয়া আল্লাহ পাক কবুল করে থাকেন।

 

ইফতারের সময় অযথা সময় নষ্ট না করে বরং এই সময় একাগ্র চিত্তে আল্লাহর কাছে নিজের গোনাহ মাফির জন্য ও কল্যাণ লাভের জন্য দোয়া করা উচিৎ, কারণ এই সময় দোয়া ক্কবুলের কথা বহু কিতাব-গ্রন্থের অনেক রেফারেন্স বুকে বিশেষ জোর দিয়ে বলা হয়েছে।ইফতারের খেজুর খাওয়া পর্যন্ত দোয়া ক্কবুল হয়ে থাকে।শেষ রাতে সেহরীর সময়ও দোয়া ক্কবুলের কথা হাদীসে উল্লেখিত আছে।  

রমজানের প্রথম দশ দিন এই দোয়া পড়তে পারেন, যা আল-হাকিম,ইমাম ইবনে হাব্বান আর আবু দাঊদ শরীফে বলা হয়েছে,আর তা হলো- লা ইলাহা ইল্লা আনতা,আল্লাহুম্মা আস্তাগফিরুকা লী জানবি ওয়া আসআলুকা রাহমাতিকা, আল্লাহুম্মা যিদিনী ঈলমা ওয়ালা তূযিগ ক্কালবী বাআয়দা ঈজ হাদাইতানী ওয়া হাবলী মিন লাদুনকা রাহমাতান ইন্নাকা আনতাল ওয়ায়াহাব,-যার মানে হলো আল্লাহ ছাড়া আর কোন মাবুদ নেই,ও আল্লাহ আমি তোমার কাছে আমার গুনাহ মাফি চহিতেছে,আমি তোমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি,ও আল্লাহ আমাকে জ্ঞান দান করো,আমার হ্রদয়-মন-অন্তকরণ কে শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে রক্ষা করে সঠিক পথে পরিচালিত করো,এবং তোমার দয়া থেকে আমার জন্য ক্ষমা মঞ্জুর করো,অবশ্যই তুমি ক্ষমা প্রার্থনাকারী দয়ালু দাতা।

আরো সহজ এবং সংক্ষিপ্ত ভাবে তিরমিয শরীফে বলা হয়েছে, আল্লাহুম্মাগ ফিরলী ওয়ারহামনী ওয়াজবুরনী ওয়াহদীনী ওয়ারযুক্কনী।প্রথম দশ দিনে বেশী বেশী করে এমন দোয়া করা উচিৎ।

অবশ্যই বেশী বেশী করে কোরআন তেলাওয়াৎ করা জরুরী,কারণ এই রমজানেই কোরান নাযিল হয়েছে।

রমজানের দ্বিতীয় দশ দিন কোরআন তেলাওয়াতের সাথে সাথে বেশী বেশী করে এই দোয়া করা যেতে পারে,যা সহীহ বোখারী শরীফে ভলিউয়ূম ৮ এর পৃষ্টা ২১২-৩ এর নাম্বার ৩১৮ তে বলা হয়েছে, আল্লাহুম্মা আনতা রাব্বি লা-ইলাহা ইল্লা আনতা খালাক্কতানী ওয়া আনা আব্দুকা,ওয়া আনা আলা আহদীকা, ওয়াহদীকা মা-স ত্বাথায়তা আঊয়্যূযুবিকা মীন শাররী মা-স থাথায়তা আবু-উ-লাকা বিনিঈমাতিকা আলাঈয়া,ওয়া আবু-উ-বিযানবী ফাগফিরলী ফাইন্নিহু লা ইয়াগফিরু জুনুবা ইল্লা আনতা।

আল তাবারীনিতে এক বিশেষ দোয়ার কথা বলা হয়েছে, যেমন- আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা বিনিঈমাতিকা সা-বিআগাতিল লাতি আনয়ামতা বিহা আলায়ু ওয়াবালায়িকাল লাজি ইবতিলাইতানি ওয়াবিফাজলিকাল লাজি আফজালতা আলায়ু আন তুদখিলানিল জান্নাতা আল্লাহুম্মা আদখিলনিল জান্নাতা বিফাজলিকা ওয়াআমান্নিকা ওয়ারাহমাতিকা।

রমজানের তৃতীয় দশ দিনে বেশী বেশী করে এই দোয়া করা যেতে পারে,যা আবু-দাঊদ, আহমদ শরীফে বর্ণিত হয়েছে,আর তা হলো- আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল জান্নাতা ওয়ানাঈমাহা ওয়া বাহজাতাহা ওয়া আউয়ূযুবিকা মিনান নারি ওয়া সালা সিলিহা ওয়া আগলালিহা।

অথবা পড়তে পারেন,যা আহমদ ইবনে মাজাহ তে উল্লেখিত আছে,আর তা হলো- আল্লাহুম্মা ইন্নি আসয়ালুকাল জান্নাতা ওয়ামা ক্কাররাবা ইলাইহা মিন ক্কাঊলী আঊ আমালী ওয়া আয়ূযূবিকা মিনান নারি ওয়া ক্কাররাবা ইলাইহা মিন ক্কায়লী আও আআমালী ওয়া আস আলূকা আন তাজয়াআলা কুল্লা ক্কাজাঈ ক্কাজাইতাহু লী খাইরা।

আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে পবিত্র রমজান মাসের পবিত্রতা রক্ষা আর তা থেকে পরিপূর্ণ সকল নেয়ামত আহরণ করার তৌফিক দান করুন,আমিন।

আল্লাহ পাক সকলের সহায় ও মঙ্গল করুন-এই হউক আমাদের প্রার্থনা।

Salim932@googlemail.com

30th  July 2012,UK.

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *